ভাবিনি ফিরে আসবে পর্ব-০৩

0
882

ভাবিনি ফিরে আসবে
পর্বঃ০৩
রোকসানা আক্তার

আমি রুমে ঢুকতেই আমার ফোনটা বেঁজে ওঠে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকাতেই নাম্বারটি অপরিচিত মনে হয়। ইতস্ততাবোধ নিয়ে কানের কাছে মোবাইলটি গুঁজতেই ফোনের ওপাশ থেকে কড়া কড়া গলায় ভেসে আসে,
-যে ছেলে অন্য মেয়েকে পেতে নিজের গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ব্রেকাপ করে, সেই মেয়ে অতঃপর ভাবী হয়ে ঘরে আসলো !নাকি বন্ধকী ভাইকে দেওয়া হলো!!!

কন্ঠস্বরটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝতে আমার সমস্যা হলো না।সোহানা আজ এক বছর পর আমায় কল দিল!!কতগুলো স্মৃতির পাতা খোলাসা হচ্ছে ধীরে ধীরে।।
-সোহানা তুমি?হঠাৎ আমার মোবাইলে কল?
-কেন?কল দিয়ে অনেক বড় অপরাধ করে ফেললাম নাকি?
-না,না তা বলি নি।আজ ১ টা বছর চলে গেল,কারো সাথে কারো কথা হয়নি।
-কথা বলার মুখ রাখলেইতো!!যাইহোক,আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আপনার ভাই বিয়ে করলো কেন?
-সোহানা তোমার ভুল হচ্ছে কোথাও!তুমি এই ভুল বুঝাবুঝির কারণে আজও তুমি আমায় ঘৃণা চোখে দেখতেছো।উফস,সোহানা তোমাকে আমি কিভাবে বুঝাবো!!
-আমার বুঝতে হবে না!দু’টো বছর রিলেশন করে অনেক বুঝে ফেলেছি।আর হ্যাঁ,এখন বুঝেও কোনো লাভ নেই।কারণ, আগামী মাসে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে।আর বিয়ের পর কানাডা চলে যাবো।

এরইমধ্যে মা এবং শিমলা আমার রুমে এসে হাজির হয়।
-বাবা,ভালো করছিস ফাহাদের শ্বশুর
বাড়ি যেতে রাজি হোস নি।

আমি তরহর ফোনটা কেটে দি।আর মায়ের মলিন চেহারা খানা দেখে কাছে গিয়ে বুকে টেনে নিই মাকে।
-মা,তুমি শুধু আমায় দোয়া করবে।মায়ের দোয়ায় পৃথিবীর কোনো অশুভ শক্তি সন্তানের বিপদ ডেকে আনতে পারে না।
শিমলা আমাদের কথার ভাবাবেগ না বুঝে ভ্রু কুঁচকে বলে,
-ব্যাপার কি শাওন,আন্টি?কোনো সমস্যা হয়েছে?

শিমলাকে আমি চোখ টিপ মেরে ইঙ্গিত করছি যে ব্যাপারটা ওকে পরে বলবো,মায়ের সামনে নয়।
শিমলা বুঝে দু’পাশে মাথা নাড়ে।
আমি মাকে বুক থেকে ছাড়িয়ে মুখটি সামনে এনে বলি,
-আচ্ছা মা, তুমি এখন ভীষণ ক্লান্ত।যাও এবার একটু রেস্ট নাও মা।
মা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলেন,
-আচ্ছা তাহলে তোরা কথা বল আমি যাচ্ছি।
-আচ্ছা মা।

মা চলে যাওয়ার পর শিমলাকে হ্যাচকা টান দিয়ে বিছানার উপর বসিয়ে আমি পাশে বসি।
-শালা,তোর হাতটা তো একটা গণ্ডারের হাত!এত জোরে কেউ টান মারে?দেখ,হাতটা কত্তো লাল হয়ে গেছে!এখন মলম লাগিয়ে দে।
-তুই কি আমার ঘরের বউ নাকি যে মলম লাগিয়ে দিব?
-বউ না-ই হলাম,তুইতো জানিস আমি তোর জান।এই জানকে প্রাণের কথা বলতে বলীয়ান।
-আসছে আমার কবিরে…!!জীবনে তো একটা ছড়াও বলতে পারিস নি আবার আসছিস কবি কবি ভাব নিতে?
-কবি হয়ে ঘুরবো বৃন্দাবন। প্রিয় মানুষগুলোর থেকে আড়ালে রব চিরকাল!

শিমলার কথাটি শুনে আমার মুডটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।কারণ,সে একটা ছেলেকে একসময় অনেক ভালোবাসতো।তার নাম ছিল কায়েস।
কিন্তু কায়েস শিমলার সাথে ছলনাময়ী খেলা খেলে জিতো যায়।সে শিমলাে দূরে সরানোর জন্যে ক্যান্সারের রিজন দেখায়।শিমলা তা সত্যি সত্যি বিশ্বাস করে ফেলে এবং কায়েস যতদিন বাঁচবে, ততদিন তার পাশে থাকবে শিমলা। এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ছিল শিমলা ।তাও ছেলেটি নারাজ।সে কিছুতেই শিমলাকে কষ্ট দিতে চায় না।তাই শিমলা প্রিয় মানুষটির মুখে হাসি ফুটানোর জন্যে কায়েসের কথায় রাজি হয়ে কমিউনিকেট অফ করে দেয়।এভাবে,১ মাস,৬ মাস, ১২ মাস পার হয়। তারপরও শিমলা ছেলেটির অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে।
একদিন এসে বলবে,
শিমলা চলো,দু’জন একসাথে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাই।ওখানে কোনো শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারবে না।কিন্তু না,ছেলেটির কোনো খবরই শিমলার কাছে আসে না যেন দু’জন দু’পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন । শিমলা প্রায় ভেবেই নেয় কায়েস মারা গেছে। এ দুঃখ বুকে ধারণ করে প্রতিজ্ঞা নেয় শিমলা আর কারো সাথে নো রিলেশন এন্ড নো বিয়ে!!এভাবে অনেকদিন ওর একাকিত্ব জীবন কাটে।
একদিন,শিমলা ভার্সিটি যাওয়ার সময় কায়েসের বন্ধু রিদনের সাথে পথিমধ্যে দেখা হয়।তার থেকে জানতে পারে ক্যান্সারের রিজন দেখিয়ে সে শিমলাকে ছেড়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে এখন সংসার করতেছে।
পৃথিবীটা আসলেই স্বার্থপর!মানুষ ক্ষণিকে মানুষকে ভুলে যেতে পারে!
শিমলার কথা ভাবতে আমার মনটাও খারাপ হয়ে যায়।কারণ,সোহানার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে!ওর সাথে আমার রিলেশনটা যদিও টাইমপাশ ছিল,তবুও হৃদয়কোণে ওর প্রতি একবিন্দু হলেও মায়া জমেছিল। কারণ,ভালোবাসাহীনতায় ও আমি ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।।
-আমার মন খারাপ বিধায়, তুই ও মন খারাপ করে ফেললি?
শিমলার কথা শুনে হকচকিয়ে ওর মুখের দিকে তাকাই।
-তুই আমার মনের ভাষা বুঝলি কিভাবে রে?
-আমি যে তোর মনের মানুষ এজন্য।
এ বলে আবার খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে শিমলা। এবং আবার বলে,
-আচ্ছা এবার শোন,আমি যে কারণে তোদের বাসায় আজ থেকে গেছি,সে কারণের ফয়সালাটা আগে শেষ করি।
-কোন ফয়সালা?(ভ্রু কুঁচকে বলি)
-সে-কি! তুই মুহূর্তেই সব ভুলে যাস!আজ দুপুরে কি বলেছিলি আমায়?
শিমলাকে জঘন্য ঔ মহিলার কথা বলতে যেয়েও পারি না।মুখটা যেন বন্ধ হয়ে আসছে।শিমলা যদি আমায় খারাপ ভাবে, তখন? সবাই যদি আমার দোষ দেয়?ট্রিকিবাজরা অনেক মিথ্যেকেও সত্য উপস্থাপন করে।
নাহ,নাহ এই বিষয়টি আমার মাঝেই লুপ্ত থাকুক। কথাটি এড়িয়ে সোহানার কথা নিয়ে আসি।
-ওহ,হ্যাঁ হ্যাঁ।জানিস?সোহানার বিয়ে হতে যাচ্ছে।

-তাহলেতো,ছ্যাকা খেয়ে বসলি।আমি না একটা জিনিস ভাবি,জানিস সেটা কী?
-কী,বল?
-তুই বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে যার সাথে রিলেশন করেছিলি,সে মেয়েই তোকে এখন ঠকাচ্ছে?শুনে হাসি আসলো।
-তুই না সবসম কথা না বুঝে কথা বলিস!
-আচ্ছা শোন শোন ফান করছি।আর,এই তুই দিনকে দিন এত গোমড়ামুখর হচ্ছিস কেন রে?যে কোনো বিষয়ই সিরিয়াসভাবে নিচ্ছিস।নতুন কারো প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি রে?

-আবার সে একই কথা! দাৎ আমি গেলাম!
এ বলে বিছানা ছেড়ে উঠতেই শিমলা আমার হাতটা টান দিয়ে বিছানার উপর বসায়।
-শাওন, শোন?সোহানার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,কারণ ও তোর কপালে নেই।আর তুইতো ওকে নিজ থেকে ভালোবাসিস নি জাস্ট বাজি।বাজির ঠেলায় ছক্কা!এটাইতো!?আর তুইতো কখনো বলিস নি সোহানাকে মন থেকে ভালোবাসিস।
-হেলেদুলে মজা করাটাও অনেক সময় বাস্তব হয়ে যায় শিমলা,জানিস তুই?
-এখন কি ওকে পালিয়ে নিয়ে আসবি?তোর এখনো অনার্স শেষ হয়নি এন্ড ইউ ডোন্ট হ্যাভ এ্যানি জব!আই থিংক,মেয়ের বাবাও সোহানাকে তুলে দিবে না।পরে,অনেক ঝামেলা হবে।
-উফস,তুইতো আমার কথা বুঝছিস না শিমলা। আমি বলতে চাচ্ছি আমার উপর সোহানার এখনও ভুল ধারনা, সে এখনো আমায় ফ্রট ভাবে!!
-তা দিয়ে তুই কি করবি?
-আমি এত্ত কিছু জানি না। আর ব্যাপারটি হলো,ও-ও কখনো আমার থেকে কারণ জানতে চায়নি ব্রেকাপের। আমি ব্রেকাপের কথা উঠোতেই ও মহাখুশিতে ব্রেকাপ মেনে নেয় যেন সে বন্দী খাঁচা থেকে ছাড়াপাখি।শিমলা তুই জানিস না?যতদিন ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল,ততদিন ঝগড়াঝাটি, ভুল বুঝাবুঝি এরকম পরিস্থিতি ছিল!আমিও আর সহ্য করতে পারিনি।তাই রাগের বশে….
-তাই রাগের বশে এই জ্বালা থেকে বাঁচার জন্যে ভার্সিটির ওই গুন্ডি আপুর মাধ্যমে একটা রিজন ক্রিয়েট করে ব্রেকাপ,রাইট?তোরা ছেলেরা না আসলে ধোঁকাবাজ মেয়েদের মন নিয়ে খেলিস!
-পাগল হয়ে গেছিস,তুই?এসব কি বলছিস?এসব কিছুই না।
-আচ্ছা আমি মানলাম এসব ফল্ট! এবার আমায় বল,ওই আপুটি ragging এ ব্রেকাপ করাতে বাধ্য করিয়েছিলেন তোকে,তাহলে এখানে উনার কি স্বার্থ ছিল?আর এমনত নয় যে তোর ব্রেকাপের পরতো উনি তোর সাথে সম্পর্ক গড়তে লাফাচ্ছিল ,বরং পরে উনি ভার্সিটি থেকে উধাও।আই গেইজ,উনি কোনো প্রেতাত্মা ছিল নাতো?
শিমলা এ বলে খিলখিলিয়ে হেঁসে দেয়।কারণ শিমলা নিজেই জানে না এখন ওই ডাইনীটা আমার ভাইয়ের বউ!!!ভাবনা ঝেড়ে শিমলাকে বলি,

-প্রেতাত্মা নয়!উনার সেমিস্টার কম্প্লিট হয়ে যায়।আর কেন করিয়েছিলেন তার কারণ জানি না।
-আর তুইও একটা গাধা!কেউ থ্রেট দিলেই কি নিজের প্রিয় মানুষটিকে হারাতে হয়?
মুহূর্তে আমার মাথাটা নিচু হয়ে আসে।কারণ,একমাএ আমিই জানি কি হয়েছিল আমার সাথে।মানুষ যখন কোনো কূল খুঁজে পায় না,তখন তার শখের জিনিস গুলোকেও একসময় ছেড়ে দিতে হয়।

-জানি বলবি না।কারণ,যতবার জানার চেষ্টা করেছি,ততবারই এড়িয়ে গেছিস। আর শোন,সাথী তোদের বাসায় আজ থেকে গেলো,তোকে কিছু কথা বলার জন্যে!!

শিমলার কথায় মাথা উঁচিয়ে অনেকটা হকচকিয়ে যাই।
-মানে,কিসের কথা?
-জানিস,যে মানুষগুলো আমাদের পাওা দেয় না,ওই মানুষগুলোর পেছনে আমরা ছুটে চলি।কিন্তু আমরা কখনো কি ভেবেছি এর থেকেও বেশি নিজের অতি চেনা মানুষগুলোও প্রাণ উজাড় করে আমাদের ভালোবাসে,তবে আমরা তার মর্যাদা দিই না।
-তুই বলতে চাচ্ছিস,আমি সাথীর সাথে রিলেশন করি,এটাই?
-হু শাওন।সাথী দেখতে শুনতে খারাপ নারে।অনেক ভালো মেয়ে। তোকে সবসময় খুশিতে রাখবে,কখনো কষ্ট পেতে দিবে না।কষ্টটা বুকে চেপে রাখা কতটা যে কঠিন,সেটা আমিই জানি।তাই আমাদের ওই মানুষগুলোকে বেশি ভালোবাসা উচিত যারা আমাদের তাদের থেকেও বেশি ভালোবাসে।।
-হাউ ইজ ইট পসিবল,শিমলা!ও একটা ছোট বাচ্চা!এসব অর্থহীন কথা বলে হাসাচ্ছিস নাকি?
ওকে আমি আমার বোনের মতো দেখি,জাস্ট ইট।
-যাইহোক,যা-ই ভাবিস।আর মাএ ২/৩ বছর পর ১৮ বছর হবে,ততদিনে তুইও নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারবি।এখানে বয়স নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
তবে সাথীর সাথে একবার কথা বলে দেখিস।গেলাম প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। আজ নাচানাচি করে ক্লান্ত,তার উপর অনেক খেয়েছি।এখন শান্তির একটা ঘুম দিলে আরাম হবে।যাই।

শিমলা রুম থেকে প্রস্থান করে।আমি বুঝতে পারি,শিমলা চায় আমি সাথীকে ভালোবাসি আর সোহানাকে ছেড়ে দিই।কিন্তু সোহানাকে ও যেমনটি ভাবছে সোহানা তেমনটি নয়!!
সোহানার প্রতি ফিলিংসটা শূন্যহীন সবার সামনে,কিন্তু মনের গভীরে অনেকটা মায়া জমে আছে।
ইদানীং শূন্য রুমটায় একাকীত্ব অনুভব করতেছি।কারো সামনে লজ্জায় যেতে পারছি না।মাথায় কোনোকিছুই কাজ করছে না।
উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে সব। নাকি ঢাকায় ব্যাক করবো!
মনটাকে স্থির না রাখতে পেরে বিছানা থেকে উঠে দাড়াই।টিপটিপ পা পেলে দরজার দিকে হাঁটা ধরি।হুট করেই কারো শরীরের সাথে ধাক্কা খাই।তাকিয়ে দেখি,সাথী!!
-ত-তুমি?
-হ্যা,আমি।কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া?
-এ-এইতো মায়ের কাছে।বাবা কোথায় জানো?
-আঙ্কেল বসার রুমে।উনি আপনার চাচার সাথে একটু পর বাহিরে যাবে।
-ওহ।।ভেতরে আসবে?
-আসতে চাচ্ছি যদি অনুমতি দেন?
-আচ্ছা সমস্যা নেই আসো।
অন্যদিন থেকে আজকের দিনে সাথীর সাথে কথা বলতে কেন জানি ইতস্ততাবোধ করছি। অন্যসময় আসলে ওর সাথে শুধু দুষ্টমিতেই মেতে উঠতাম।আজ কথাও বলতে পারছি না।
সাথী বিছানার উপর গিয়ে বসে আর আমি চেয়ার টেনে বসি।
অনেকক্ষণ সে ও চুপ থাকে, এবং আমিও।তারপর ও কথার প্রলাপ ফেলে বলে,
-ভা-ভাইয়া,আপনাকে কিছু আজ সত্যি সত্যি কথা বলতে চাচ্ছি।

আমি লাগামহীন ভাবে বলি,
–আমি জানি তুমি কি বলবে!কিন্তু সেটা সম্ভব না।কারণ,তুমি এখনো অনেক ছোট,কিছুই বুঝো না।।
-ভাইয়া,আমি এখন ক্লাস টেনে পড়ি।আমি এখনো ছোট নই।আর,আমার সাথের অনেক বাব্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে।
-তা দিয়ে তুমি আমায় কি বুঝাতে চাচ্ছো?তোমার চঞ্চলতা, কিশোরী চালচলন এভরিথিং ছোট বাচ্চামোর মতো বিহেভ,সেখানে তুমি এসে আমায়…হাউ ফানি। প্লিজজ বোন ভাই হিসেবে বলছি,পড়ালেখায় মনোযোগ দে,ভালোভাবে পড়ালেখাটা শেষ কর।আমার মতো হাজারো ছেলে তোর লাইফে আসবে এবং যাবে। এসব কিছুই না।

আমি স্পষ্ট দেখতেছি সাথীর চোখে পানি।আর কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বলে,
-স্কুলের সবাই আমায় পছন্দ করে।আমি কারো প্রপোজাল একসেপ্ট করি না।সবাইকে বলি আমি আমার শাওন ভাইয়াকে ভালোবাসি।
-উফস,বোন।প্লিজজ কুল।এসব সবাই শুনলে রাগবে।
যা শিমলার কাছে গিয়ে শুয়ে পড়।ভাইয়া একটু বাহিরে যাচ্ছি।

এ বলে যে-ই উঠতে যাবো,ও আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর কেঁদে কেঁদে বলে,
-ভাইয়া,আমি আপনাকে ছাড়তে পারবো না।প্লিজ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিবেন না।আমি শুধু আপনাকেই চাই।আপনার জন্যে আমি সব করতে পারবো, ভাইয়া!!!

অনেক কষ্টে সাথীকে ছাড়িয়ে সিড়ি বেয়ে নিচের দিকে হাটা ধরি।বসার রুম শূণ্য। বাবা হয়তো চলে গেছেন।
আমি ড্রাইনিং টেবিলের সামনে যেতে দেখি মা প্লেট-বাঢী গোছগাছ করছেন।মায়ের কাছে গিয়ে বলি,
-মা,তোমাকে না বললাম রেস্ট নিতে?আর তুমি এসব করছো কেন?বাড়ির কাজের লোকরা কোথায়?
-নিজের বাড়ি নিজে যেভাবে সাজিয়ে রাখি অন্যে কি সেভাবে পারে, বাবা?
-হয়েছে,এখন নানান তালবাহানা শুরু করবা।আর যেটা বলার জন্যে আসছি আমি আগামীকাল ঢাকায় ব্যাক করছি।

মা অনেকটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকান।
-ঢাকা যাবি মানে?তোর ভার্সিটি না অফ?
-হু,হোস্টেলে উঠবো!!
-কত মাস পর আসলি,ক’টা দিন থাক না বাবা?
-মা আমি আর পারতেছি না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।একটু খোলা জায়গায় দম নিতে পারলে মন শান্তি পাবে।

মা আমার মনের বেদনা বুঝতে পেরে আশ্বাস দিয়ে বলেন,
-আচ্ছা,আমি তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখি।
-আচ্ছা মা।এ বলে সদর দরজার দিকে হেটে একটু বাহিরে আসি আজ কতটা দিন পর বাড়িটিকে অন্যরকম সজ্জিত দেখতেছি। লাল,নীল বাতি পুরো বাড়িটিকে আলাদা করে তুলেছে।হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড়ে আসতেই পাবাজ দৌড়ে আমার সামনে আসে।হাঁপিয়ে হা্ঁপিয়ে বলে,
-একা একা ঘুরতে বের হইলি কেন?শিমলা,সাথী ওদের নিয়ে একটু বের হলেতো আমি সাথীর সাথে একটু টাইমপাশ করতে পারতাম।
ভ্রু কুঁচকে বলি,
-সাথীর সাথে টাইমপাশ?ছোট মেয়ের সাথে আবার কিসের টাইমপাশ?
-দোস্ত তোকে তো আমার বলাই হয়নি। তোর কাজিনটা দেখতে সেই!!যতবার দেখি,ততবার প্রেমে পড়ি।
-পাগল হয়ে গেছিস তুই?এসব কি বলছিস!!আর ওতে বাচ্চা একটা মেয়ে!!বয়স মাএ ১৫ বছর।
-তা নিয়ে আমার সমস্যা নেই দোস্ত।আমার মাস্টার্স কম্প্লিট করতে এখনো ২ বছর বাকি।ততদিনে ও ১৮ তে পা দিবে।
-ও হায়ার স্টাডি করবে।আর ওর সাথে এসব পাগলামো কথা বলিস না। ওর মন নষ্ট হয়ে যাবে,প্লিজজ ভাই।কারণ,ও আমার বোনের মতো!!
-দোস্ত পাগলামোর কথা তো পরে।ও তো আমার সাথে কথাই বলতে চায় না।আজ কতবার চেষ্টা করলাম একটু বলতে,কিন্তু না তোর কাজিনের তো সেই ভাব।মাগোমা,ছোট হলে কি হবে,দেমাক বয়স থেকেও অপ্রতুল।

এরই মধ্যে বাবা চলে আসেন।উনি ঘরের মধ্যে ঢুকে যান। আমি পাবাজকে ইশারা দিয়ে বলি,
-তুই বাড়ি যাবি?নাকি আজ আমাদের বাড়ি থাকবি?
-ভাবলাম তোদের বাড়ি থাকবো।আচ্ছা, দোস্ত আসল কথা শোন?আজ এত্তবড় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেল কিছুই বললি নাতো আমায় এখনও!!
প্লিজজ ইগনোর দিস টপিকস।আমি চলে যাচ্ছি।
এ বলেই ঘরের দিকে হাটা ধরি আর পিছু পিছু পাবাজ।
সদর দরজায় আসতেই বাবার রাগেস্বরের আওয়াজ শুনতে পাই।
-ওরকম বেয়াদব ছেলে কথা আমায় বলছো কেন?এ বাড়ি থাকবে নাকি থাকবে না তা দিয়ে আমি কি করবো?আর আমাকে এসব কথা কখনোই বলবে না,ওকে?
-মা ভীতুমনে কিছু বলতে যেয়েও বলার লেশটুকু মুখে লেগে আছে।
আমি আর দাড়িয়ে না থেকে মাথানিচু করে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতেই বাবা আমায় দেখে ফেলেন এবং খেলখেলিয়ে বলেন,
-ওরে না বলছি?আমার চোখের সামনে না আসতে?ফাহাদের মা ওকে বলো ও যদি ঢাকায় যেতে চায়, তাহলে ঢাকায় চলে যেতে!!আমি ওর ছায়াও দেখতে চাই না!!

সাথী দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবটা শুনে ভ্যাবাছ্যাকা খাচ্ছে।হয়তো ভাবছে,বাবা আমাকে এসব কেন বলছেন!!!
আমি আর একমুহূর্ত দাড়িয়ে না থেকে রুমে এসে দরজাটা আঁটকে দিই।দরজার সামনে সাথী এসে আওয়াজ তুলে বলে,
-ভাইয়া দরজা খুলো?প্লিজজ ভাইয়া রাগ করো না?
আমি দরজার এপাশ থেকে বলে উঠি,
-সাথী ভাইয়া ঠিক আছি।তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।আর হ্যাঁ পাবাজ কোথায় রে ওকি আমাদের ঘরে?.
-হু,উনি আঙ্কেলের সাথে বসে আছেন।
-যাইহোক, ও কথা বলতে চাইলেও ওর সাথে কথা বলবি না।
-আচ্ছা ভাইয়া।
-যা তোর রুমে যা।
সাথী হয়তো চলে যায়।আমি আর কোনো আওয়াজ শুনতে পাইনি।আমার মনটা বিষন্ন রকম খারাপ হয়ে যায়।।হৃদয়ের এসব অন্তর্ঘাত বেদনা বলার মতো কাউকে পাচ্ছি না।শিমলাকে বলতে যেয়েও ওর পাল্টা জবাবে ভীতুর মতো কাবু হয়ে যাচ্ছি।

সোহানার কথা কেন জানি আজ খুব করে মনে পড়ছে।হয়তো সোহানাকে বলতে পারতাম মনের যত অবচেতন কথা।কিন্তু সব বলতে যেয়েও জড়তা মনে আপন মানুষগুলো থেকে দূরে থাকি।তাদের পর করে দিই।
তারা আমায় ভুল বুঝে,ভুল বুঝে দূরে চলে যায়।যেমনটি, আজ সোহানা করতেছে!!
হে খোদা,এই পৃথিবীতে আমার সবকিছুইতো কেড়ে নিলে।একটু নাহয় রেখে দিয়ে আমায় বাঁচার সুযোগ করে দাও।।।বুক ফেঁটে কান্না আসে আমার!!!কাঁদতে পারছি না।সবকিছুই বিতৃষ্ণা লাগতেছে।।।
মাথাটা বালিশের উপর এলিয়ে দিই।আর ভাবি,
-সবাই আমার পর হয়ে গেল!সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেল।দূরের মানুষ গুলোও এবং কাছের মানুষ গুলোও!!!

রাতে মা এসে দরজা অনেক বার নক করে যায় কিছু খাওয়ার জন্যে।আমি তখন যে দরজা বন্ধ করি একদম সকাল বেলায় দরজা খুলি।
হাতে জামা-কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে মায়ের সাথে এক টক্কর দেখা করি। মা আমাকে দেখেই কেঁদে দেন।
আমি শুধু চুপচাপ মায়ের মমতাটে শুঁকে নিই এবং মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিই।
-আমার জন্যে চিন্তা করো না, মা।আমি আবার আসবো!কারণ, সব রাক্ষসের কবলে তোমায় একা থাকতে দিবো না।ভালো থেকো, মা।

এ বলে মাকে এড়িয়ে আসতে মা আমাকে শাওন বলে ডাক দেয়।
-জ্বী,মা?
মা চোখগুলোয় অনেক কড়াভাব এনে বলে,
-ফাহাদের বউ তোর সাথে কেন এমনটি করলো,কারণ বলবি মাকে বাবা?
আমি একটা অভিমানী মুঁচকি হাসি দিয়ে বলি,
-আবার যদি ফিরে আসি মা,তখন শুনবে।
চলবে….

(আপনাদের কি মনে হয়?এখানে নায়িকা কে হবে?সাথী,দিবানি নাকি সোহানা?)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে