বোরখাওয়ালী পর্বঃ ১১

0
1283

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ১১
লেখাঃ Mst Liza
,
আমি জঙ্গি? আমি রোহিঙ্গা? আর আপনি কি? আপনি তো একটা ফাঁটা বাশঁ!

হোয়াট ফাঁটা বাশঁ? ব্রু কুচকে বলল মেঘ।

ফাঁটা বাশঁ বোঝেন না? কারও পুরো কথা না শুনে নিজের চিন্তাকে তার উপর দুম করে চাপিয়ে দেওয়াইকে বলে ফাঁটা বাশঁ।

কি বলতে চাও তুমি?

সেটা শুনার ধৈর্য কি আপনার কাছে আছে?

দেখও আর কৌতুহল না বাড়িয়ে যা বলার তারাতারি বল?

সিনিয়র ভাইয়া, আপুরা আপনাকে এখানে হাত, পা, মুখ বেধেঁ ফেলে রেখে গেছে।আর আপনি কিনা ভাবলেন আমি এমনটা করেছি? হুট করে কতোগুলো কথাও শুনিয়ে দিলেন!

ওহহ সিটট, আমি এটা আগে কেন ভেবে দেখি নি?
ছরি আয়াত! আসলে আমার মাথার ঠিক ছিল না।কিছু মনে করো না তুমি।বলে মেঘ ভালোলাগার দৃস্টিতে চেয়ে দেখে বোরখার আবরনে ঢাকা আয়াতের মায়াবী চোখদুটোর পানে।কিছুক্ষণ পর মেঘ ক্লাসরুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

মেঘ বুঝতে পেরেছে এটা তাহলে লাবন্য আর তার বন্ধুদেরই কাজ।মেঘ হন্য হয়ে পুরো ভার্সিটিতে লাবন্যকে খুজেঁ চলেছে।অবশেষে ক্যান্টিনে গিয়ে লাবন্যকে পেল।লাবন্যরা খুব হাসাহাসি করছে।

এই যে শুনুন? মেঘ গিয়ে লাবন্যকে ইঙ্গিত করে ডাকছে।

লাবন্য ঢং করা মুখ নিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি?

আপনি ছাড়া আর কাহাকে ডাকিতে পারি আমি? যদি একটু আমার সাথে আসিতেন! আসলে আপনার সাথে একান্তে আমার কিছু কথা ছিল?

লাবন্য ফ্রেন্ডদের বলল, তোরা এখানে থাক আমি আসছি।বলেই ঢং করে হেলে দুলে মেঘের সাথে ফাঁকা ক্লাসরুমটার মধ্যে ঢুকলো।

লাবন্য ক্লাসরুমে ঢুকতেই মেঘ ভেতর থেকে দরজার সিটকানিটা বুজিয়ে দিল।

ওদিকে লাবন্যর সান্ডপান্ডরা ক্লাসরুমের দরজার বাইরে আঠার মতো চিপকে আছে, কান পেতে শোনার চেস্টা করছে ভেতরে কি হচ্ছে!

দরজাটা বন্ধ করলেন কেন?

ইচ্ছে হয়েছে তাই!

মানে?

মানেটা কাছে এসেই বোঝায়?

কি করবেন?

মেঘ লাবন্য দিকে আগাচ্ছে।আপনাকে!

মেঘ লাবন্যর খুব কাছে চলে আসলো।আর লাবন্য চোখটা বন্ধ করে নিল।

মেঘ ঠাসসসসসস! করে একটা চর বসিয়ে দেয় লাবন্যর গালে।

লাবন্য গালে হাত রেখে, আপনি!

ঠাসসসসস। আরেকটা চর।

আমাকে মারছেন কেন?

ঠাসসস!

আমি কি করে..

ঠাসস!

দেখুন আপনি কিন..

ঠাসস!

লাবন্য যত কথা বলছে। ততো চর খাচ্ছে।যতো কথা বলছে ততোই ঠাসসস! ঠাসস! করে মেঘ চর মারতেই আছে। একসময় দুজনেই হাপিঁয়ে গেল।বেঞ্চের উপরে বসে দুজনে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।

আর যদি তোমাকে কখনও দেখেছি এই ধরনের কাজ করতে!

কি করেছি আমি?

মেঘ আবার রেগে যাই।রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকায় লাবন্যর দিকে।

লাবন্য দেখেই ভয়ে চুপসে যায়। হ্যাঁ আমিই করেছে।সব আমি করেছি।আমাকে আর মারবেন না প্লিজ!মুখ তুতলে কথাগুলো বলে।

আজকের মতোন মাফ করে দিলাম।২য় বার যেন এই ভুল না হয়। মনে থাকবে?

হ্যাঁ! থাকবে।ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় লাবন্য।

ওসব কি ড্রেস পরো।ট্রি সার্ট কি মেয়েদের ড্রেস? তার উপর গিট দিয়ে ছোট করে রেখেছো! পরপুরুষকে নাভি দেখাতে ভালো লাগে বুঝি? এই দেখও মেয়ে, স্বামীকে দেখানোর জন্যও কিছু বাঁচিয়ে রাখো।ফের যদি কোনও দিন এসব পোশাক গায়ে দেখছি না! তাহলে সব খুলে পেক্টোল জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেব।আর তোমাকে!

লাবন্য চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে!

তোমাকে সেই অবস্থায় ক্লাসরুমের মধ্যে ফেলে রেখে দিয়ে চলে যাবো, মনে থাকে যেন!
মেঘ রাগি লুক নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ায় আস্তে করে দরজার সিটকানিটা খুলতেই দরজার সাথে চিপকে থাকা লাবন্যর সব সান্ডপান্ডরা ধরাম দিয়ে পরে।মেঘ তাদের দিকে একটু রাগি লুকে তাকিয়ে তারপর চলে যায়।

মেঘ চলে গেলে লাবন্য ভ্যাআআআ করে কেঁদে দেয়।নেহাল দৌড়ে এসে লাবন্যকে জড়িয়ে ধরে আর বাকি সবাই এসে লাবন্যর পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে থাকে।নাহহ নাহ কাদেঁ না আমাদের লাবু কত্ত ভালো মেয়ে, তাই না? এ তোরা বল সবাই! হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ! খুব ভালো! খুব ভালো!

কান্নাজড়িত কন্ঠে, আমি কি খুব খারাপ বল নেহাল? আজ পর্যন্ত কেউ আমার ড্রেস নিয়ে এধরনের কথা বলি নি।কেউ আমার গায়ে সামান্য টোকা পর্যন্ত দেয় নি।আর ওই ছেলেটা কিনা? ভ্যাআআআ করে কাদঁতেই আছে লাবন্য।এতোটা লজ্জা হয়তো আগে কখনও পাই নি লাবন্য।অথচ আজ লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার।

সন্ধ্যার পর,,
আয়াতের পড়াই মনই বসছে না।বইয়ের পাতায় মুখ গুজে শুধু ভেবেই চলেছে, লাবন্য আর তার সান্ডপান্ডরা কি যেনে গেল আয়াত সব দেখেছে! মেঘ কি আয়াতের নাম বলে দিল তাহলে? ওরা যানলে তো আমাকে ছাড়বে না।নাহহ এভাবে থাকলে হবে না কিছু একটা করতেই হবে! কিন্তু কি? কিছু একটা ভেবে আয়াত ঝট করে সহপাঠী রূপালীকে ফোন দিল।

আসসালামু আলাইকুম।

ওয়া আলাইকুমুস সালাম।কেমন আছো রূপালী।

এইতো ভালো। তো কি মনে করে ফোন দিলে?

আসলে আমার একটা হেল্প লাগবে তোমার থেকে!

কিসের হেল্প?

মেঘের ফোন নাম্বারটা আমার একটু লাগতো।যদি তুমি একটু ম্যানেজ করে দিতে পারতে!

মেঘের ফোন নাম্বারটা তো আমার কাছে নেই তবে হ্যাঁ রবিনের কাছে থাকতে পারে।আমি কি তোমাকে রবিনের নাম্বারটা দেব?

না আসলে খুব দরকার তাই! আমার মেঘের নাম্বারটাই লাগবে!

আচ্ছা ঠিক আছে আমি বুঝেছি! আমি তাহলে রবিনের থেকে নাম্বারটা নিয়ে তোমাকে ব্যাক করছি!

ওকে।থ্যাংকস।

কিছুক্ষন পর,,
হ্যালো আয়াত!

হ্যাঁ, রূপালী বলো, মেঘের নাম্বার পেয়েছো?

হ্যাঁ, পেয়েছি।নোট কর।

ধন্যবাদ তোমাকে রূপালী।

আরে না ধন্যবাদের কি আছে! বাট মেঘের নাম্বারটা দিয়ে কি করবে তুমি?

সে আমি তোমায় কাল ভার্সিটিতে এসে বলব।ওকে আল্লাহ হাফেজ।

আল্লাহ হাফেজ।

আয়াত আর দেরি না করেই মেঘকে ফোন দিল।

হ্যালো; আসসালামু আলাইকুম কে?

ওয়া আলাইকুমুস সালাম, মেঘ আমি আয়াত?

হ্যাঁ বল আয়াত ফোন কেন করেছো?

আসলে আজকের ঘটনাটা আমি দেখেছি সেটা আপনি লাবন্য আপুদের যানাবেন না।তাহলে..

তাহলে কি? কেমন মেয়ে তুমি, সামান্য কথাটা বলতে রাতের বেলা একটা ছেলেকে ফোন করেছো? এটা কথা বলার মতো কোনও বিষয় হলো? দেখ আমি মেয়েদের সাথে খুব বেশী একটা প্রয়োজন ছাড়া কখনও কথা বলি না।আর এ বিষয়ে আমি আর কারও কোনও হেল্প চাই না।তুমি যতটুকু করেছো তারজন্য ধন্যবাদ।এখন আমার বিষয়টা আমাকেই বুঝতে দাও! বলেই কেটে দিল।

আয়াত আবার ফোন করল।কিন্তু পুরো কথা না শুনেই মেঘ আবার কল কেটে দিল।তারপর মেঘ নিজেই আয়াতকে ফোন করল, জানার জন্য যে তার নাম্বারটা আয়াতকে কে দিয়েছে?

আয়াত নামটা বলার সাথে সাথেই মেঘ আবার ফোন কলটা কেটে দিল।তারপর আয়াতের নাম্বারটাই ব্লক করে দিল।মেঘ এই আয়াত মেয়েটার সাথে কথা বলতে চাই না আর কখনও।কিন্তু কেন তার উত্তরও তার যানা নেই।হয়তো মায়ায় পরে গেছে নয়তো লাবন্যর প্রতি ভালোলাগাটা তার মধ্যে এখনও পুরোপুরি ভাবে সৃস্টি হয় নি।খুব দোটানার মধ্যে আছে মেঘ।

পরেরদিন ভার্সিটিতে,,
লাবন্য শাড়ি পড়ে আসে।মেঘের চরের দাগগুলো মেকাপের আড়ালে এমন ভাবে ঢেকে রেখে এসেছে যে আজ আরও বেশী দাড়ুন দেখতে লাগছে লাবন্যকে।সবাই দেখে খুব অবাক।ওয়াও লাবু তোকে তো একদম ডানাকাটা পরীর মতো দেখতে লাগছে।

আহহ রোজ! শাড়িতে কখনও কাউকে ডানা কাটা পরী দেখাই না! লাবন্যর মাথায় শাড়ির আচঁলটি তুলে দিয়ে নেহাল আবার বলল ওকে আজ একদম বউ বউ লাগছে!

লাবন্য একটু স্ট্রাইল দিয়ে হেটে বলতে গেল, দেখতে হবে না কে শাড়ি পড়ে এসেছে? আমাকে সবার ভালো লাগতেই হবে।অমনি মেঘকে সামনে দেখতে পেয়ে, নারভাস হয়ে, হাই হিলের টানে পায়ের কাছে শাড়ি বেধেঁ যাওয়ায় পরে গেল।লাবন্যর এভাবে পরে যাওয়ায় ভার্সিটির সকল স্টুডেন্টরা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।লাবন্যর এবার খুব লজ্জা লাগছে।

মেঘ লাবন্যর কাছে এসে ডান হাতটা বারিয়ে দিল।লাবন্য প্রথমে গতকালের কথা ভেবে মেঘের হাতটা ধরতে চাইলো না।তারপর মেঘ ধমক দেওয়াই মেঘের হাত ধরে লাবন্য উঠে দাড়ালো।

আয়াত ভার্সিটিতে এসেই মেঘ আর লাবন্যকে খুব কাছাকাছি হাত ধরা অবস্থায় দেখে অবাক হয়।ইয়া আল্লাহ! এতো কিছুর পরেও মেঘকে ওই মেয়েটার সাথে এভাবে দেখতে পেলাম।আর আমি একটু সামান্য ফোন করায় মেঘ আমাকে অত্তগুলো কথা শুনিয়ে ব্লক করে দিল।ঠিক আছে! ওই মেঘও লাবন্যর মতোই।মেঘের সাথে আর কথাই বলব না।লুচু আফ্রিকান এনাকন্ডা, নাইজেরিয়ান হাতি আর যা তা মনে আসছে না।কাল রাতে আমাকে জ্ঞান দিয়ে এখন নিজেই সবার সামনে লাজ-লজ্জা বিলীন করছে।

এখানে দাড়িয়ে একা একা কি “বির বির” করছো তুমি আয়াত?

আসলে রূপালী গতকাল…আয়াত রূপালীকে গতকালের কথাগুলো সব বলে।

মোনা আয়াতের বলা কথাগুলো শুনে নেয়।আর লাবন্যকে গিয়ে বলে।লাবন্য শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।ওই বোরখাওয়ালীর এতো সাহশ? কাল নবীন বরণ উৎসব।আর কালই ওকে এর মাষুল চুকাতে হবে!

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে