বোরখাওয়ালী পর্বঃ ০৮

0
1304

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ ০৮
লেখাঃ Mst Liza

রিক্সার বুট ফেলে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে, যানো দাদু রিকশায় ওঠার মজাটাই আলাদা, প্রকৃতির ঠান্ডা স্নিগ্ধ বাতাস আর একটা শান্তির তিপ্ত প্রচ্ছাস যা তুমি ওসব দামি গাড়িতে খুজেঁ পাবে না!

ঠিক বলেছ দাদুভাই তুমি না হলে আমি এসব যানতেই পারতাম না।তোমার দাদি তো কখনও এসব বুঝতে চাই না।তার কাছে সব বুড়ো বয়সের হেংলামোপনা।তুমি আছো বলেই না এতোকিছু উপলব্ধি করি!

হি হি।দাদি আর তুমি এতো ঝগড়া কেন কর বল তো!

ওটা ঝগড়া না দাদুভাই ওটা তো আমাদের টোনাটুনির ভালোবাসা।

সে তুমি যাই বল দাদির থেকে কিন্তু আমিই বেশী স্মার্ট।

রিক্সা এসে ভার্সিটির সামনে দাড়ালো।
তো দাদুভাই তোমাকে কখন নিতে আসবো আমি?

সে আমি তোমাকে ক্লাস শেষে ফোন করে যানিয়ে দেব।রিক্সা থেকে নেমে ভার্সিটির ভেতরে যেতে যেতে বলে গেল দাদুকে।

আয়াত ভার্সিটির ভেতরে ঢুকেই দু’এক জনের কাছে ক্লাস কোথায় জিজ্ঞেসা করে যেই ক্লাসে ঢুকতে যাবে দূর থেকে খেয়াল করল সিনিয়ররা জুনিয়রদের সাথে রেগিং করছে।

লাবন্য হচ্ছে রেগিং মাস্টার।সাথে তার চেলাপালারাও আছে।নেহাল, রোজ, টোমি, মোনা, টিনা। এরা একটি ছেলেকে ধরে হাতে ফুল ধরিয়ে দিয়ে বলেছে লাবন্যকে প্রপোজ করতে।আর লাবন্য ক্লাসরুমের সামনে একটি বেঞ্চের উপর বসে পায়ের উপর পা তুলে পায়ের পাতা নাচাচ্ছে ।

দূর থেকে দেখে বুঝতে পারছে আয়াত।মেয়েগুলোর মধ্যে কোনও পোশাক আশাকের ধরণ নাই।পড়নে সর্ট কার্ট স্কার্ট আর ছোট ছোট টপস।লাবন্যর চোখে একটা ব্লাক এন্ড হোয়াইট সানগ্লাস আর মাথায় লেয়ারকাট চুলগুলো উচুঁ করে ঝুটি বেধেঁ রাখা।ঝুটির নিচের আধ্যেকটা আবার নীলচে কালার করা।কথা বলছে যেভাবে বডি হেলিয়ে দুলিয়ে মনে হচ্ছে যেন মাথার ঝুটিটা ঘাড়ের এপাশ থেকে ওপাশে গিয়ে পরছে। বেচারা ছেলেটার নাজেহাল অবস্থা সে আর পালাবে কোথায় ৫জনে যে ঘিরে রেখেছে।

কি হলো যা প্রপোজ কর! দেখছিস না লাবু সেই কখন থেকে বসে আছে।মোনা বলল ছেলেটাকে।

আমায় আপনারা ছেড়ে দেন ভাইয়া, আপুরা।আপনারা তো আমার বড়।আমি সিনিয়র আপুকে কিভাবে প্রপোজ করব? প্লিজ যেতে দেন আপনারা আমায় ছেলেটা হাটু গেরে বসে দুই হাত জোড় করে অনুরোধ করছে ওদেরকে।

দেখ কি বলে! বড় আপু বলে নাকি প্রপোজ করা যাবে না! তারাতারি প্রপোজ কর বলছি! তোর পর আমাদের আরও অনেককে স্বাগত জানাতে হবে।রোজ ছেলেটির সার্টের কলার চেপে ধরে বলল কথাটা।

আয়াত আর একটু এগিয়ে খেয়াল করল ক্লাসরুমের সামনে আরও অনেক স্টুডেন্ট লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আয়াত বুঝতে পেরেছে এরা সবাই হয়তো নবাগত স্টুডেন্ট।সবাইকে হেনস্ত করার জন্যই ওরা লাইনে দাড় করিয়েছে। এক একজনের থেকে মজা নিয়েই তাই ছাড়ছে।

আয়াত এবার ওদের সামনে গিয়েই দাড়ালো।একি এসব কি করছেন আপনারা? ক্লাস টাইম কি শুরু হয় নি?

ওরা সবাই আয়াতের কথা শুনে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখে….

এ কিরে দোস্ত আমাদের ভার্সিটিতে ভুত আসছে! টোমি গিয়ে টিনার পিছঁনে লুকায় কথাটি বলে।

আহহ কি হচ্ছে টা কি টোমি দেখছিস তো মানুষ।লাবন্য কথাটি বলে এবার বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়ালো।
আপনি কে খালাম্মা? আয়াতকে প্রশ্ন করল লাবন্য।

জ্বি আমি আয়াত।কলেজে আজ আমার প্রথম দিন।

আয়াত আর কিছু বলার আগেই সবাই মিলে জোড়ে হেসে দিল।
এ দেখ দেখ খালাম্মারাও ভার্সিটিতে পড়তে আসে।লাবন্য বলল।

আয়াত গম্ভীর ভাবে বলল দেখুন আমি মোটেই খালাম্মা নই।

তাই বুঝি? তাহলে এমন ঢোলেঢালা বোরকা আর এইসব হাত, পা মোজা এগুলো কি? এসব বুঝি এখনকার নিউ ফ্যাশান? লাবন্য বলছে আর ওর চেলাপেলারা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

দেখুন আমি আপনাদের মতো আলর্টা মর্ডাণ না।আমি আমার মায়ের শিক্ষায় বড় হয়েছি। যেটাকে আপনি ঢোলাঢালা বোরকা বলছেন সেটাকে ইসলামের দৃস্টিতে অনেক সম্মাণ এবং মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।এটাকে পর্দা বলে।যা নারীর সুন্দর্য্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।এসব তো আপনারা বুঝবেন না কারণ আপনাদের চোখে ডিজিটাল যুগের চশমা পরে আছেন।আমি পর্দা করি কারণ এই পর্দা আমার রক্ষা কবজ, এই পর্দায় আমায় নিরাপত্তা দেই এবং এই পর্দায় আমার রাসূলেরর নির্দেশ। আমি আমার রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে জাহান্নামে যেতে চাই না।এক দমে বলে কথা গুলো আয়াত।

তাই বুঝি? হা হা হা আবারও হেসে দেই সবাই।অনেক কথা যানো তো মেয়ে।তারপর সেই ছেলেটার দিকে ঘুরে তাকিয়ে লাবন্য আবার বলে, তো কি যেন বলছিল ছেলেটা? সিনিয়র আপুকে প্রপোজ করা যাবে না তাই তো! ঠিক আছে এই খালাম্মা তো তোরই ক্লাসমিট নে একে প্রপোজ কর!
কি হলো কর! ধমক দিয়ে বলল।

ছেলেটি ভয়ে ভয়ে আয়াতের সামনে এসে দাড়ায়।অতিরিক্ত নারভাসে ছেলেটির কপাল থেকে ঘাম ঝড়ছে।যখনই হাতের ফুলটা আয়াতের সামনে এগিয়ে দিল ছেলেটির পিঁছনের থেকে কারও মৃদু কন্ঠের আওয়াজ আসল।

কি হচ্ছে কি এখানে?

সবাই হা হয়ে আছে।নেহাল, রোজ, টোমি, মোনা, টিনা বলল এটা আবার কে’রে লাবু?

লাবন্য তাকিয়ে শুধু হা হয়ে আছে।মনে মনে বলছে এত্তো সুন্দর ছেলেটা! ওয়াউউউ সো কিউট! হ্যান্ডস্যাম ড্যসিং বয়।কি বডি ফিগার! একদম হিরো টাইপ ছেলেটা।একে যদি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাতে পারতাম! কথাগুলো বলছে আর মনে মনে গদগদ হচ্ছে।

আমি কিছু জিজ্ঞেসা করেছি! এখানে কি হচ্ছে?

তার আগে বলেন আপনি কে? নেহাল তাকে প্রশ্ন করল।

আমি এখানের নিউ কেমেস্ট্রি টিচার।এখন আমার ক্লাস টাইম।তাই ক্লাস নিতে এসেছি।কড়া গলাই বলল।

ওহহহ স্যার! এই ইনি তো স্যার! আসলে স্যার আমরা সিনিয়ররা জুনিয়রদের সাথে আলোচনা করতে এসেছিলাম নবীন বরণ অনুষ্ঠানটা কেমন করে আয়োজন করলে এদের ভালো লাগবে।লাবন্য কথাটা একটু নারভাস হয়ে বলল।

ওহহহ ঠিক আছে।এটা নিয়ে তোমরা পড়ে কথা বলবে।এখন ক্লাস টাইম নিউ স্টুডেন্টরা যাদের ক্লাস আছে ক্লাসে এসো।

স্যার আপনার নামটা যদি একটু বলতেন? লাবন্য যানতে চাইলো।

মেঘ রহমান।রাগি লুকে বলল তোমাদের আর কিছু যানার আছে?

না স্যার। আপনার সাথে আমাদের যখন ক্লাস হবে তখন যেনে নেব।এই চল তোরা আমাদের তো এখন ইমপ্রটেন্ট একটা ক্লাস আছে ঢং করে বলেই লাবন্য তার সান্ডপান্ডদের নিয়ে চলে গেল।

চলেন স্যার ক্লাস নেবেন একজন স্টুডেন্ট বলল।

কে ক্লাস নেবে? আমিও যে স্টুডেন্ট ওদের টাইট দিলাম! মেঘ কথাটি বলেই হেসে দিল।

তারমানে আপনি আমাদের টিচার না? ওদের বোকা বানিয়েছেন? আয়াত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল মেঘকে।

হুমম। আমিও স্টুডেন্ট তোমাদের সাথেই ১ম বর্ষে পড়ি।

আয়াত ছেলেটির পা থেকে মাথা অবদি দেখছে আর মনে মনে বলছে ছেলেটাকে তো দেখে মনে হয় না আমাদের বয়সের! যাই হোক ছেলেটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে!

তারপর সবাই হো হো করে হাসতে হাসতে ক্লাস রুমের মধ্যে ঢুকলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে