বোরখাওয়ালী পর্বঃ০২

0
2095

#বোরখাওয়ালী
পর্বঃ০২
লেখাঃ Mst Liza

আমি মেয়েটির হাতের কাগজটা নিয়ে দেখে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলাম।তারপর বললাম,

-কার বাড়ির ঠিকানা এটা??
-আমার ফুপ্পির বাড়ির ঠিকানা।।।

আমি একটু অবাক হলাম।আর মনে মনে ভাবলাম এ কি সে? আচ্ছা, এই জন্যই হয়তো আমার মেয়েটাকে এতো চেনা চেনা লাগছে।না হলে এতো মায়া জড়ানো কেন এই বোরকাওয়ালীর চোখে।যা আমাকে ভেতর থেকে শুধুই তার দিকে টানছে। ভাবতে ভাবতেই আমার মুখে এক চিলতি বিজয়ের হাসি চলে আসলো।মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, খেয়াল করেছে আমি হাসছি।

-একি আপনি হাসছেন কেন?

(ভাবনার দেয়াল ভেদ করে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম)

-কোই না তো, হাসছি না।অনেকদিন পর বাড়িতে যাচ্ছি তো পরিবারের সকলে কত্ত খুশী হবে আমাকে দেখে তাই আর কি মনে মনে ভেবেই না কত্ত আনন্দ লাগছে।
-আচ্ছা ঠিকানাটা ভালো করে দেখেছেন আপনি?
-হ্যাঁ; দেখলাম তো।
-আপনার এলাকারই ঠিকানা বাড়িটা কি আপনার বাড়ির আসে পাশে? আপনি কি চিনতে পারবেন ঠিকানাটা?
-ঝট করে বলে উঠলাম চিনি তো।আমি না চিনলে কে চিনবে?
-জ্বি; আপনি চিনেন?
-না মাননে আমি আমার বাড়ির আসেপাশের কোনও বাড়ির ঠিকানা চিনবো না তাকি হয় নাকি? এই তো আমাদের বাড়ি থেকে দুই রাস্তার মোড় ঘুড়লেই এই বাড়িটা।
-যাক ভালোই হলো।আপনি আমাকে এই ঠিকানাটাই একটু পৌঁছে দিতে পারবেন? তাহলে আমি আপনার কাছে খুব কৃতজ্ঞ থাকবো।
-অবশ্যই পারব!! আরি..
-জ্বী, কি?
-কিছু বলবেন?
-না আপনি আমার নাম ধরে ডাকলেন তো!
-আপনার নাম বুঝি আরি?
-আরিয়া। ভালোবেসে সবাই আরি বলে ডাকে।কিন্তু আপনি আমার নাম যানলেন কিভাবে?
-কোই আমি তো আপনার নাম যানি না।আমি তো বললাম আরে।।ঐ তো দেখেন সামনের সিটে মহিলার কোলে বসা বাচ্চাটা সেই বাসে উঠেছে ধরেই কতোবার যে বমি করে যাচ্ছে!!

(মেয়েটি খেয়াল করল হ্যাঁ বাচ্চাটার অবস্থা খুব খারাপ)

কিছুক্ষণ পর,,,,

মেয়েটি ঘুমিয়ে আছে।আমি ডাকতে শুরু করলাম,

-এই যে মিস বোরকাওয়ালী!! সরি আরিয়া উঠেন এখানেই ঘুমিয়ে থাকার প্লান করেছেন নাকি?

আরিয়া ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে,

-কি হলো ডাকছেন কেন?
-এই বাসে করেই আবার ঢাকায় চলে যেতে চান নাকি?

বোরকাওয়ালী আই মিন আরিয়া চোখ ডলতে ডলতে মাথাটা একটু উঁচু করে ডানে-বামে, সামনে-পিঁছনে, তাকিয়ে দেখে পুরো বাস খালী।কোনও যাত্রী নেই।শুধু আমরা দুজন ছাড়া।

-একি আমি চলে এসেছি খুলনা শহরে?(হাতের ঘড়িটার দিকে তাকাতে তাকাতে বলল)
-কে বলেছে আমরা চলে এসেছি।
চোখদুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে!
-তাইতো এখনতো মাত্র (11:57 am) বাজে এত্ত তারাতারি কিভাবে আসলাম আমরা?
-কে বলেছে আমরা চলে আসছি?
-তাহলে বাসের অন্যযাত্রীরা গেল কোথায়?
-এটা লঞ্চ-ঘাট। লঞ্চ পার হয়ে এই কোম্পানির বাস ওপার পাবেন।সেখানে গিয়ে কোড নাম্বার 105 খুঁজে কোম্পানির বাসটিতে আপনাকে উঠতে হবে।
-আমি যদি বাস খুঁজে না পাই?
-এত্ত ভয় পান কেন আপনি? আমি আছি তো!তাছাড়াও আপনি বাস পর্যন্ত না পৌঁছালেও টিকিট কাটার সময় যেই ফোন নাম্বারটা দিয়েছিলেন তাতে ওরা ফোন করবে।এখনে বসে বসে না ভেবে চলুন আমার সাথে তা না হলে লঞ্চ ছেড়ে দিলে আমরা দুজন এখানেই থেকে যাব।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ; চলুন।

দুজন লঞ্চে উঠলাম..
-এই সিঁরি বেয়ে উপরে উঠে যান।
-কেন?
-আরে কত্তক্ষণ এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকবেন?উপরে বসার জায়গা আছে, দোকান আছে।গিয়ে বসতেও পারবেন আর কিছু খেতেও পারবেন।
-ওহহ, আচ্ছা চলুন।

দুজনে উপরে গিয়ে দেখি সারি সারি চেয়ার, টেবিল আর বেঞ্চ দখল করে সবাই বসে আছে।কেউ ভাত খাচ্ছে তো কেউবা চা বিস্কিট।
আমি বোরকাওয়ালীকে বললাম,
-এখানে খুব ভালো সরিসা ইলিশ রান্না পাওয়া যায় ভাত দিয়ে খাবেন নাকি?
-না
-তাহলে মুরগি?
-না
-কেন?
-আমি রোজা।
-ওহহ তাহলে চলুন ঐদিকটাতে গিয়ে বসি।

দুজনে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে আছি সামনা সামনি মুখ করে।আমাদের মাঝে একটি উচুঁ টেবিল যেটাতে বাম হাতটি ঠেকিয়ে ডান হাতটি গালে দিয়ে বসে বোরকাওয়ালীর সাথে কথা বলছি।আরিয়া বলল,

-আপনি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হলে খেয়ে নিন
-না
-কেন আপনিও রোজা?
-হ্যাঁ, আজকে শেষ রোজা কালই তো ঈদ।যানেন!! আমি প্রথম, সাতাস আর শেষ রোজাটা থাকি।
-আর মাঝখানের গুলো?
-ওগুলো থাকি না। একবেলা না খেয়ে থাকলেই আমার কলিজাটা শুকিয়ে যাই।তাই তো আমার ছোটবেলার থেকেই প্রথম, সাতাস আর শেষ রোজাটা থাকার অভ্যাস।
-ওহহ এই অভ্যাসটা নিজে করে নিয়েছেন তাহলে।
-না তাই নয় তবে।আমার খুব কস্ট হয়ে যায় ঢাকা শহরে এই গরমে রোজা থাকাটা সত্যি আমার শরীরের সাথে যাই না।
-আপনি কি যানেন, রমজানের রোজা ফরজ।ফরজ নামাজের ন্যায় ফরজ রোজাও পালন করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যাক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোজা রাখে, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে নিয়ে যায়।(সহীহ, বুখারী: ২৬৮৫)
-নেক্সট বছরের থেকে সবগুলো থাকবো! এই প্রমিছ।
(হাতের ৩ আঙুল দিয়ে গলাটা চিমটি কেটে বললাম)
-আমাকে প্রমিছ করে কি হবে আমি তো পরবর্তী বছরগুলো আপনি রোজা থাকলেন কিনা তা দেখতে আসবো না।আপনি বরং আল্লাহকে বলুন।আল্লাহ আপনাকে সেই তৌফিক দান করুক।
-আচ্ছা আপনার গরম লাগছে না?
-কেন?
-এই গরমে সেই কখন থেকে নিজেকে বোরকার আরালে ঢেকে রেখেছেন!
-সেটা তো আমি আপনাকে আগেও বুঝিয়েছি
-হুমম বুঝিয়েছিলেন।কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন ছিল আপনার কাছে??
-যেমন?
-তখন আপনি বলেছিলেন না? বিয়ে করবেন না বলে পালিয়ে এসেছেন সেটা আবার নিজের নিরাপত্তা জন্য এটা সত্যি আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।
-দেখুন এ বিষয়ে আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাইনা।
-না চাইলে বলবেন না!! তবুও আমি আপনাকে আপনার ফুপ্পি বাড়িতে পৌঁছে দেব।এতোটা রাস্তা আপনার সাথে চললাম আমার তো এটুকু যানার রাইট আছে।
-আসলে আমি নিজের কথা বাইরের মানুষের সাথে শেয়ার করি না।

চলবে…. ইনশাআল্লাহ…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে