বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১৭+১৮

0
1783

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৭

রিদকে বিদায় দিয়ে সবাই চলে আসে বাড়ি। রিদ প্রায় সময়ই এই বাড়িতে ছিলো। খুব হাঁসি খুশিই ছিলো সে। কিন্তু হটাৎ এমন কেনো করলো তা সবারই অজানা। রাত সেই আসার পর থেকেই বিষন্ন মনে বসে আছে ঘরে। সেই ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে দুজন। একসাথে কতোই না সময় পার করেছে তারা। বারান্দায় চেয়ারে বসে মস্ত বড় চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
একটু পর আরশি আসলো ওখানে। কিছুক্ষন রাতের সামনে দাড়িয়ে আছে কোনো কথা নেই মুখে।
রাত নিরবতা ভেঙে বলে উঠে,
– কি রে কিছু বলবি?
মাথা নাড়িয়ে “না”সুচক সম্মতি জানিয়ে আবার চলে গেলো আরশি।
রাত আবার বসে রইলো আগের মতো।
রাতের খাবার খেয়ে সোফায় একটু গা এলিয়ে বসে আছে সবাই। রুদ্র চৌধুরি উঠে নিজের রুমে চলে গেলো একটু আগে।
রাত্রি চৌধুরির মুখে চিন্তার ভাজ। রিদ ঠিকঠাক মতো পৌছাতে পারবে কি না?
– রিদ কি তোকে কিছু বলে গেছে?
গম্ভির গলায় রাতের দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুরে দেয় রাত্রি চৌধুরি।
– না মা, আমায় তেমন কিছু বলে নি। রিদ তার বেশির ভাগ কথাই আমার সাথে শেয়ার করতো। কিন্তু হটাৎ কেনো চলে যাচ্ছে তা অনেকবার জিঙ্গেস করলেও কিছু বললো না সে। বললো, মামা মামির কথা নাকি মনে পরছে খুব। তাই চলে গেলো।
– কেমন আছে কি করছে, ঠিকঠাক মতো পৌছাতে পরছে কিনা তাও জানিনা।
– টেনশন করোনা, সে পৌছালেই ফোন দিবে।
– আচ্ছা, ছেকা টেকা খায়নি তো আবার?
– আমি যতদুর জানি রিদের কোনো মেয়ে বন্ধুও ছিলো না। বাকিটা কে জানে। হয়তো আমার থেকে লুকাতেও পারে। কিন্তু এমন কোনো বিষয় নিয়ে আমার সন্দেহ হয়নি কোনো দিন।
– আমার বাবার বংশে একটাই মাত্র ছেলে। কোনো অসুবিধা না হলেই হয়। পৌছালে আমায় একটু জানাস, টেনশানে মাথাটা ধরে আসছে তোরা থাক তাহলে। আমার আবার না ঘুমালে ব্যাথা বাড়তেই থাকবে।
রাত্রি চৌধুরি সোফায় ভর করে উঠতেই বৃষ্টি গিয়ে এক হাত কাধে তুলে নিয়ে বলে,
– বেশি ব্যাথা করছে মা? চলেন আপনাকে রুমে দিয়ে আসি।
না আমি ঠিক আছি যেতে পারবো, তুমি এখানে আড্ডা দাও।
– না পারবেন না, আর মায়ের মুখের উপর মেয়েদের এতো কথা বলতে নেই। চলেন তো।
রাত্রি চৌধুরি কিছুক্ষন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
– আচ্ছা মা, আপনার কথাই চিরধার্য।
,
,
সকালে ঘুমের মাঝে হাতটা টেনে কেও তোলার চেষ্টা করছে রাতকে। কিন্তু আফসোস একটুও উঠাতে পারছেনা তাকে। এর আগে অনেক্ষন ধরে ডেকে না তুলতে পেরে এবার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছিলো বৃষ্টি। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
হাপ ছেরে বিছানার এক পাশে ধপাস করে বসে পরে বৃষ্টি।
“এভাবে মরার মতো কেও ঘুমায়? কানের কাছে বোম মারলেও মনে হয়না এই ঘুম ভাঙবে। ইচ্ছে করছে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি।
এবার পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা বারি দিলো রাতকে। তবুও রাতের কোনো সারা শব্দ নেই।
এবার একটু ঘাবরে যায় বৃষ্টি। বুকের বা-পাশটায় মাথাটা রেখে কান পেতে শুনতে থাকে হৃদপিন্ডের শব্দ।
বৃষ্টির ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তা আর হলোনা। ইন্টারে উঠেই গ্রুপ চেন্জ করেছিলো সে। ওসব বিজ্ঞান তার মাথায় ঢুকবেনা। এর চেয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকাই ভালো। পড়ার চাপও কম।
কিন্তু এই মুহুর্তে ডাক্তারি করার একটা চান্স পেয়ে গেছে বৃষ্টি।
হাত ধরে পাল্স চেক করে, না সব ঠিকঠাক। কয়েকদিন আগে মুভিতে দেখেছে হিরোর কোনো এক কারনে জ্ঞান ফিরছেনা। হিরোইন তখন বুকের উপর দু,হাত দিয়ে চাপ দিচ্ছে। তার পর ঠোটে ঠোট রেখে কি যেনো করলো, কিছুক্ষন পর লাফিয়ে উঠে গেলো হিরো।
বৃষ্টি রাতের পেটের উপর উঠে বসলো। হাত দিয়ে বুকে হালকা করে চাপ দিচ্ছে। পদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপ প্রয়োগ করতে কিছুটা লজ্জা গ্রাস করে নেয় তাকে। তবুও সে দেরি না করে রাতের ঠোটে ঠোট রাখে বৃষ্টি। কিছুক্ষন পর ছেরে দিয়ে দেখে রাতের এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। এবার জেনো সত্যিই ভয় গ্রাস করে নিয়েছে বৃষ্টিকে। কান্নার ভাব চলে আশে মুখে।
মুহুর্তেই যেনো খিক খিক করে হেসে উঠে রাত। যানো অনেক্ষন ধরে হাসিটা থামিয়ে রেখেছে সে। রাগের চরম পর্যায়ে নিচের ঠোটটা দাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বড় বড় পরে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। পেটের উপর বসা অবস্থায় এলোপাথারি কিল ঘুষি দিতে থাকে রাতের বুকে। রাত হাসতে হাসতে বৃষ্টির হাত দুটি ধরে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় তাকে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
– তোমার কাছ থেকে আদর পেতে হলে তো দেখছি রোজ রোজই নতুন নতুন এক্টিন করতে হবে। কিছুক্ষন আগে যভাবে বুকের উপর মাথা রেখে হৃদপিন্ডির আওয়াজ শুনছিলে ওভাবে আর কিছুক্ষন সুয়ে থাকোনা প্লিজ। অনুভুতিটা ছিলো অতুলনিয়।

নাস্তা সেরে অফিসে চলে যাচ্ছে রাত। বৃষ্টিকে কলেজে নামিয়ে দিবে যাওয়ার পথে। বর্ষা শেষ হতে চললো প্রায়। দু,এক মাস পর পরতে থাকবে হার কাপানো শীত।
সকাল থেকেই আকাশটায় মেঘলা মেঘলা ভাব। হলকা শিতক বাতাস বইছে। আকাশটা ঘিরে ফেললো মেঘ।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– আজ কলেজে যাবোনা আমি।
– কেনো?
– ইচ্ছে করছেনা আজ। ধরে নিন এটা একটা অনুরুধ, প্লিজ।
– তো কি করবে?
কোনো নির্জন রাস্তায় নিয়ে চলুন না।

গাড়ি এসে ব্রেক চাপলো একটা নির্জন রাস্তায়। রাতের ফোন টা বাজছে। দেখে মামির নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
– হ্যালো মামি, আসসালামু’আলাইকুম।
– ধুর বেটা আমি রিদ। তোর মামি হলাম কবে?
– ও তুই। পৌছেছিস ঠিক মতো? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
– না তেমন সমস্যা হয়নি। এইতো মাত্র এয়ার্পোট থেকে বের হলাম। তাই আম্মুর ফোন থেকেই তোকে ফোন দিলাম।
রিদ ও মামা মামির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রাখে রাত। দেখে পাশে বৃষ্টি নেই। সামনে তাকাতেই দেখে বৃষ্টির তালে তালে নাচছে সে। রাত মুখ দিয়ে একটা “চ” সুচক শব্দ করে গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টির দিকে হাটা ধরে। বৃষ্টি দৌড়ে এগিয়ে এসে রাতের হাত দু,টি ধরে ঘুরছে আর হাসছে। ঘুরতে ঘুরতে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাতের বুকের উপর ঢলে পরে সে।
– এই বৃষ্টিতে ভিজে তো এর আগেও একবার জ্বর বাধিয়েছিলে। এখন আবার শখ উঠছে নাকি?
– হুম। অসুখ হওয়া মানেই আপনার থেকে এক্সট্রা কেয়ার পাওয়া। ওফ কি যে ভালো লাগছে।
– ওরে বাদর, এবার কেয়ার নয়। তোমার মতো বাদরের লেজ ধরে মাথায় তুলে আছার দিবো।
– সমস্যা নেই, আমার কোনো ভয় নেই, কারন আমার লেজও নেই।
বলেই রাতকে ছেরে বৃষ্টির তালে তালে নাচতে থাকে বৃষ্টি। রাত বলে উঠে,
– গাড়িতে উঠো বলছি।
– না, আমি ভিজবো আজ, আপনার ভালো না লাগলে আপনি চলে যান। তবুও আজ এই বৃষ্টি ছেরে কোথাও যাচ্ছিনা আমি।
রাত এবার আর কিছু না বলে বৃষ্টির কাছে এসেই কোলে তুলে নেয় তাকে। হাটতে থাকে গাড়ির দিকে। বৃষ্টির হাতপা ছোরাছুরি। তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে আজ এখান থেকে কোথাও যাবেনা।

বারান্দায় বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। আজ এি বৃষ্টি দেখে মনে পরে গেলো, পুরুনো এক সৃতির কথা।
রাত না থাকায় রিদ যায় আরশিকে স্কুল থেকে আনতে। আসার পথে, সে কি তুমুল বৃষ্টি। রাস্তার পাশে একটা জায়গায় ফুলের চাষ করা হয়। সেখানে ফুল গুলো গোল খাচ্ছে বৃষ্ট ফোটায়। ফুল দেখে লাফিয়ে উঠে আরশি। তখন আরো ছোট ছিলো। রিদকে বলে উঠে, ভাইয়া আমায় ওই ফুলটা এনে দাও না। রিদ গাড়ি থামিয়ে চলে যায় সেখানে। ভিজতে ভিজতে আরশির জন্য নিয়ে আসে ফুলটা। আরশি মুখ কুচকে বলে উঠে,
– এটা না তো, ওই লালটার কথা বলছি।
রিদ আবার চলে যায়। লাল ফুলটা ছিড়ে পিরে আসতেই দেখে দুইটা কুকুর তাড়া করে আসছে তার দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে কয়বার পড়ছে তার হিসেব নেই। কোনো মতো কুকুর গুলোর হাত থেকে বেচে গাড়িতে এসে বসে রিদ। ভয়ে শরিরটা কাপছে তার। কুকুর গুলো এসে গাড়ির পাশে লাফাতে থাকে। গ্লাস থাকায় ভেতরে আসতে পারছেনা। আরশি ভয়ে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে রিদকে। রিদও কাপা হাতে এক হাত দিয়ে আরশিকে জড়িয়ে অপর হাত দিয়ে ড্রাইবিং করে চলে গেল সেখান থেকে।

ভাবতে ভাবতেই মায়ের ডাক পেয়ে উঠে চলে যায় আরশি। রিদের সাথে কটানো মুহুর্তগুলো কেনো বার বার মনে পরছে নিজেও জানেনা সে। হয়তো দুরুত্ব বেরে গেছে বলে।

কেটে গলো আরো কয়েকদিন।
সকালে মা আজ কেনো হটাৎ বাড়ি যেতে বলছে নিজেও যানেনা সে। আবার একা। বৃষ্টিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলো রাত। বৃষ্টি ভাবলো কলেজের সময়টাতে তার খোজ নেওয়ার তেমন কেও নেই। এই সময়টায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার চলে আসতে পারবে সে। কলেজে না ঢুকে। একটা গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো বৃষ্টি। কলেজ ছুটির আগেই আবার এখানে চলে আসবে সে। তাহলে কারো কাছে আর কৈফিয়ত দিতে হবেনা। বাড়ির সামনে গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরে বৃষ্টি। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খোলে বৃষ্টির মা।
– এসেছিস? আর কেও এসেছে?
– না মা, আমি কলেজ থেকে এসেছি, কেও জানেনা।
– আচ্ছা বস।
– এমন ইমার্জেন্সি ডাকার কারন কি মা?
– তোর রুমে যা, বুঝতে পারবি ডাকার কারনটা।
বৃষ্টি ঠোট ফুলিয়ে কিছু না বুঝার মতো করে হাটা ধরে রুমের দিকে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই যেনো অবাকের চরম সীমানায় সে। মুহুর্তেই একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠে সারা শরির।
কারন বিছানায়হাত পা গুটিয়ে বসে আছে বর্ষা। যার কারনে বৃষ্টির জীবনের মোড়টা পুরাই পালটে গিয়েছিলো।

To be continue……..

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৮

দুপুর ১টার কাছাকাছি। একটা রিক্সা ডেকে উঠে পরে বৃষ্টি। সূর্যটা প্রায় মাথার উপর। রোদের তাপে যেনো চারদিকে চোখ মেলে থাকাটা কষ্ট কর। বৃষ্টি তাকিয়ে দেখলো রিক্সা ওয়ালা চাচার দিকে। ঘামে চুপচুপে অবস্থা তার। তবুও থেমে থাকছেন না তিনি। গলায় ঝুলে থাকা গামছাটা দিয়ে একটু পর পর মুখের ঘাম মুছে নিচ্ছে।
বৃষ্টির মনে আসছে কয়েকটা প্রশ্ন। সারা দিন রোদে পুরে এতো পরিশ্রম করে কতো টাকা আয় করে সে? চার,শ পাঁচ,শ তাও কতো জনের কতো কথা শুনতে হয় তাদের। এতের মাসিক আয় কতো? ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো। আর কারো কারো কাছে এই টাকা এক দিনের সামান্ন রেষ্টুরেন্টের বিল। পৃথিবী টা সত্যিই অদভুত। এই রঙিন পৃথিবিতে কারো কাছে জীবন মানে বিলাসিতা, আর কারে কাছে এই জীবন মানে কোনো রকম খেয়ে পড়ে বেচে থাকা।
হু হু করে চলছে রিক্সা। কিছুক্ষন পর পৌছে গেলো কলেজের সামনে। যাক রাত আসার আগেই পৌছে গেছে সে।
কলেজ ছুটির পর প্রায় এক ঘন্টা ওখানে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। কিন্তু রাত আসার কোনো নাম গন্ধও নেই। বৃষ্টি ঠোট ফুলিয়ে গলা টেনে রাস্তার এদিক ওদিক দেখছে বার বার। সবাই চলে গেছে প্রায়।
একটু পর ছাউনির ভেতর কিছু ছেলে এসে বসলো।
ওখান থেকে একে অপরকে বলে উঠে,
– ও মাই গট, দিনে দুপুরে এই নিরিবিলি জায়গায়ও যে চাঁদের সন্ধান পাওয়া যায় জানা ছিলো না তো।
– আরে ওসব বাদ দে, মাইয়ার বডি ফিগার দেখেছিস? কে বানালো আপু?

ছেলে গুলোর এমন বাজে কমেন্টে ইচ্ছে করছে জুতা খুলে খুলে গালের উপর রক্ত জমাটের সীল বসিয়ে দিতে। কিন্তু ভয়ও করছে এখন। শুধু এক রাশ ঘৃনা নিয়ে হিজাবটা ঠিক ঠাক করে নেয় বৃষ্টি। ওদিকে রাতেরও আসার নাম গন্ধও নেই। রাগে কিছুটা হেটে একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে যায় সে। রাত আজ আসলোনা কেনো? প্রায় দের ঘন্টা ধরে দার করিয়ে রেখেও কোনো খোজ নেই তার। আমার প্রতি কি তার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে ধিরে ধিরে?

ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয় বৃষ্টি। বিছানায় বালিশের মাঝে দু হাত রেখে তার উপর থুতনিটা রেখে উপড় হয়ে শুয়ে আছে সে। আজকের সকালটা যেনো বার বার ভেষে আসছে তার চোখে।
সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখে বর্ষা বিছানায় সুয়ে সুয়ে কাদছে। বৃষ্টি গিয়ে বসে তার কাছে। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে তাকায় বর্ষা। বৃষ্টিকে জড়ি ধরেই হু হু করে কেদে উঠে বর্ষা।
ধিরে ধিরে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব খুলে বলে বৃষ্টিকে। আজ শুধু অন্য মনস্ক হয়ে চুপ চাপ সব শুনে যাচ্ছে বৃষ্টি।
কথার মাঝখানে বর্ষা বলে উঠে,
– আমার একটা অনুরুধ রাখবি বোন?
মুহুর্তেই যেনো বুকটা ধুক করে উঠে বৃষ্টির।
বর্ষা আর কিছু বলতে যাবে তখনই ডাক পরে মায়ের। তার মা ডাকছে তাকে। রুমের বাইরে গিয়ে দেখে বর্ষা আসার খবর পেয়ে তার বাবা অসময়েই ফিরে এসেছে বাড়িতে। মনে হচ্ছে অনেক ক্ষেপে আছে সে। বৃষ্টির সাথে কোনো কথা না বলেই তিনি গেলেন বর্ষার রুমের দিকে। ভয়ে বুক ধুপ ধুপ করছে বৃষ্টির। এখন কি বড় কোনো গন্ডোগোল লাগতে চলছে ঘরে?
কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমান করে, বর্ষার দিকে কিছুক্ষন রাগি ভাবে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায় সে। একটা সস্থির নিশ্বাস ছারে বৃষ্টি।
বৃষ্টিকে আর অনুরুধের কথাটা বলা হয়নি বর্ষার। তার বাবা বৃষ্টিকে দেখে রাগের ভাবে বলে উঠে,
– তুই আজ এখানে কেনো?
বৃষ্টি কাপা কাপা গলায় বলে উঠে,
– ম মা বলেছে আসতে।
– এসেছিস, দেখেছিস এবার চল তোকে দিয়ে আসি। আমি চাই না এখানে ইমোশনের মায়ায় পরে তোর ভবিশ্যৎ নষ্ট হোক।
তার পর কলেজ ছুটির আগে চলে যায় বৃষ্টি।
ফোনটা চার্জে দিয়ে চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে সে। চোখ খুলে দেখে প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। তখন চৈতি এসে ডেকে নিয়ে যায় তাকে ছাদে। গিয়ে দেখে আরশিও ওখানে।
,
,
সাজের বেলায় রাঙা গুধুলির আলোয়। চেনা অচেনা মানুষটার পাশে হাটছে আরশি। যার সাথে তার বিয়ের কথা চলছে। আশে পাশে তাকিয়ে হাটতেই আরশি মুখ ফসকে বলে উঠে,
– দেখেন ওই ফুলটা কি সুন্দর। আমাকে এনে দিবেন ওটা?
– ধুর কিসব জিনিসের প্রতি ইন্টারেস্ট তোমার? সামনে চলো দোকান থেকে ভালো দেখে ফুল কিনে দিবো তোমায়।
আরশি আর কিছু না বলে চুপ চাপ হাটতে থাকে। ভাবতে থাকে ভালোবাসাটা কোথায়? পছন্দের ফুলটাকে ছুরে ফেলে দিয়ে সামনে দোকান থেকে কিনে দিবে বলা লোকটার মাঝে? নাকি তার পছন্দ হয়েছে শুনে বৃষ্টির মাঝে ছুটে গিয়ে বেড়া টপকে কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে ফুল নিয়ে এসে হাসি মুখে তার কানের পাশে গুজে দেওয়া সেই রিদের মাঝে?
প্রায় সন্ধা হয়ে আসে। ফুচকার দোকান দেখে আরশি বলে উঠে,
– চলেন ফুচকা খাই,,,,
– এসব ফুটপাতের জিনিস কেও খায়? চলো সামনে রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে নিবো।
এবারও আরশির ভাবনায় আসে রিদের সাথে সেই এক প্লেটে বসে ফুচকা ভাগাভাগি করার মুহুর্তটা।
একটু আর চোখে লোকটার দিকে তাকায় আরশি। আজব মানুষ, হবু বৌয়ের কোনো ইচ্ছারই দাম নেই তার কাছে।

সন্ধার পর বাসায় ফিরে রাত। কিন্তু আসার পর থেকেই রাতের সাথে কোনো কথা বলছেনা বৃষ্টি।
– তা মোহারানী আজ কি নিয়ে রেগেছে তা জানতে পারি?
– আপনি আজ আমায় কলেজ থেকে নিয়ে আসেন নি কেনো?
– ওহ্ আই এম রিয়েলি সরি। আসলে খুব জরুরি একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম তো তাই। আর তোমাকে তা বলার জন্য কতোবার ফোন দিলাম কিন্তু প্রতিবারই বন্ধ পেলাম।
– ফোনের চার্জ ছিলোনা তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
রাত এবার পেছন থেকে বৃষ্টির কাধে থুতনিটা রেখে বলে উঠে,
– তো ম্যাডাম এবার বলেন দেখি দোষটা কি শুধু আমার নাকি আপনারও।
– মোটেও আমার না, আমি কি জানতাম নাকি যে এমন হবে?
– ওকে ম্যাডাম সব দোষ আমার মেনে নিলাম। এবার হ্যাপি? হ্যাপি হলে চলুন আপনার এই পাখির বাসার মতো এলোমেলো হয়ে থাকা জঙ্গটাকে একটু পরিচর্যা করি।
– জঙ্গল আসলো কোথা থেকে আবার?
– আপনার চুলের কথা বলছি ম্যাডাম।
বৃষ্টি রেগে হাতের কুনুই দিয়ে একটা গুতা দেয় রাতকে।
– মোটেও না, আমার চুল এমনিতেও খুব সুন্দর আছে।
– তো পরিচর্যা না করলে কি এই সুন্দর্য আর থাকবে? চলো চলো।
বৃষ্টিকে সামনে বসিয়ে মনোযোগ সহকারে চুলে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে রাত। আর তা চোখ বন্ধ করে মুগ্ধ মনে উপভোগ করছে বৃষ্টি।

বর্ষার সাথে কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে বৃষ্টির। বারবারই দেখা করতে বলছে বৃষ্টিকে। নানান দুশ্চিন্তার ভার যেনো অন্য মনস্ক করে তুলছে বৃষ্টিকে। মুখের হাসিটাও যেনো আগের তুলনায় কিছুটা বিলিন হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব ইচ্ছে জাগে। ইশ যদি জীবনের শেষটা সে কখনো আগে থেকে দেখতে পেতো তাহলে জীবন নিয়ে এতো টেনশন হতোনা তার। খুব ইচ্ছে হয় তার, এই গল্পের শেষটা একটিবার দেখতে।

গতকাল চৈতি গেছে ছুটিতে তার নিজের বাড়ি। বৃষ্টি রান্নঘরে গিয়ে রান্না করছে। রাত্রি চৌধুরিও আসে কিচেনে।
– বৌমা, তোমাকে ইদানিং কেমন গম্ভির মনে হয় কেনো? মনে হয় হাসি যেনো বিলিন হয়ে গেছে তোমার মুখ থেকে। কি হয়েছে তোমার? রাতের সাথে কোনো প্রব্লম হয়েছে?
– না মা তেমন কিছু না। সব তো ঠিকই আছে। আর এটা হয়তো আপনার মনের ভুল।
– না, তোমাকে যেনো ইদানিং একটু অন্য রকম দেখায়। তাই বললাম। মনে রেখো পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশি আঘাত পরে সোজা জিনিসের উপরেই।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কিছুদিন।বৃষ্টির ইয়ার ফাইনালও শেষ।
সন্ধার পর কফিরমগে চুমুক দিয়ে দোলনায় বসে রাত। আরশিকেও বসতে বললো ওখানে।
– আমার সেই বোন টার কয়দিন পর বিয়ে। বিশ্বাসই হচ্ছেনা আমার। কয়েক বছর আগেও এই বোনটার কাছ থেকে চকলেট খেয়ে নিলে ফ্লোড়ে বসে হাত পা ছোড়াছোরি করে কান্না করতো।
বলেই হো হোকরে হেসে দেয় রাত। রাগে ঠোট ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে আরশি।
রাত কফির মগে আবার চুমুক দিয়ে বলে উঠে,
– যে জন্য ডেকেছি তোকে। আমি তোকে কিছু প্রশ্ন করবো, উত্তর হবে হ্যা অথবা না।
– হুম বলো।
– রিদের সাথে কি তোর কিছু ছিলো?
– হটাৎ এই কথা বলছো কেনো ভাইয়া?
– আমি বলছি উত্তর হবে হ্যা অথবা না। রিদের সাথে কি তোর কোনো সম্পর্ক ছিলো?
– না।
– তোর প্রতি রিদের বা রিদের প্রতি তোর কারো মনে কি কোনো অনুভুতি তৈরি হয়েছিলো?
– তার কথা জানিনা। তবে আমার, না।
– রিদের চলে যাওয়ার কারনটা কি তুই?
– আমি কি করে জানবো? তাকেই জিগ্গেজ করো।
– ওহ্, আচ্ছা যা। আমার ধরনাটা হয়তো ভুল ছিলো। ভেবেছিলাম বিয়ের তো এখনো কিছুদিন বাকি। চাইলে সবই পাল্টে ফেলতে পারতাম। আর হ্যা, তোকে এভাবে বলার জন্য, সরি।

পড়ন্ত বিকেল, চারদিক টায় হালকা বাতাস বইছে। হালকা বাতাসে সামনে আশা চুক গুলো নারাচারা করছে। চুলগুলো কানের পেছনে গুজে আবার হাটতে শুরু করলো বৃষ্টি। গায়ে একটা কালো রঙের শাড়ি। হাতে কালো চুড়ি। আর পাশে থাকা রাতের গায়ে একটা কালো পান্জাবি। বৃষ্টির হাতের আঙুলের ফাক দিয়ে রাত আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে হাটছে দুজন। আজ শুক্রবার। তাই বিকেলে বৃষ্টিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো রাত।
রাতের ধরে থাকা হাতটা হাটতে হাটতে দুলাচ্ছে বৃষ্টি।
হটাৎ সামনে পড়লো বর্ষা। দুজনই থমকে দাড়ায় ওখানে। বর্ষা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাত ও বৃষ্টির এক হয়ে থাকা হাতের দিকে।
রাতও আচমকাই হাতটা ছেরে দিয়ে বর্ষার দিকে তাকায়।
বর্ষার উপস্থিতিতে রাত এভাবে হাত ছেরে দেওয়ায় একটু অবাক হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি যেনো মনে মনে প্রশ্ন করে উঠলো,
– এটা কি হলো?
বৃষ্টি চোখ তুলে জিগ্গাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে।

To be continue……….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে