বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-১২

0
1900

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ_১২

রাতকে এভাবে দেখে হাত পা যেনো অবস হয়ে আসছে বৃষ্টির। নিজের চোখ কেই যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে আর সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। রাতও হতভ্বম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। ওদিকে তৃষ্না এখনো জড়িয়ে ধরে আছে রাতকে। যেনো পরিস্থিতির দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। রাতও আজ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। মুখে যেনো কিছু বলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে।
আর এক মুহুর্তও ওখানে না দাড়িয়ে থেকে মুখ চেপে কান্না করতে করতে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায় বৃষ্টি। রাত তৃষ্নাকে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দেয়। তৃষ্নার দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে ছুট দেয় বৃষ্টির পিছন পিছন।
পেছন থেকে অনেকবার ডাকলেও কোনো সারা দেয়না বৃষ্টি। নিচে গিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে যায় বৃষ্টি। রাত দৌড়ে গিয়ে গাড়ির পাশে দাড়িয়ে বৃষ্টিকে বলতে থাকে,
– প্লিজ বৃষ্টি একবার আমার কথাটা শুনো তুমি।।
বৃষ্টি শান্ত ভাবে ড্রাইভারকে বলে উঠে। ভাইয়া চলেন।
গ্লাসটা উঠিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো বৃষ্টি।

দুপুরে উত্তপ্ত রোদে ওখান থেকে কিছুটা দুরে নাদিটর পাড়ে গিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। হাকলকা মরে যাওয়া ঘাসের উপর তার ছায়াটা যেনো সাদা কাগজে কালো পেন্সিল দিয়ে একে দেওয়া ছায়ার মতংো বুঝা যাচ্ছে এমন রোদ। ছাতি ফাটা রোদ যাকে বলে। নদীর পানিও কোমে যাচ্ছে ধিরে ধিরে ধরে। শীত এলে হয়তো আরো কমে যাবে। তার জীবনটাও আজ এই নদির মতো মনে হচ্ছে তার। নদী যেমন বর্ষায় পানিতে ভর্তি থাকে তখন মনে হয় তার সব চাওয়াই আজ পরিপূর্ন। আবার যখন ঋতু পরিবর্তনে শুকিয়ে যায় তখন মনে হয় এই প্রশান্তি টা ছিলো শুধু কিছু মুহুর্তের জন্য। তেমনই আজ বৃষ্টির জীবনটা। এতোদিন ভেবেছিলো বর্ষার সেই সতেজ নদীটার মতো স্বচ্ছল। কিন্তু জানতোনা এভাবে ঋতু পরিবর্তনের আগেই সেই জোয়ার শুকিয়ে ফাটা মাটিতে রুপ নেবে। কপালের ঘাম ঘাম বেয়ে মাটিতে পরছে তার। পেছন থেকে ড্রাইভাল লোকটা বলে উঠে, আপা চলেন, এভাবে ভর দুপুরে খারা রোদে বসে থাকা ঠিক না। কোনো উত্তর দিলোনা বৃষ্টি। আশে পাশে পরিবেশটা আরো অসহ্য লাগছে। সেখান থেকে উঠে গাড়ি করে সোজা বাড়ি পৌছে গেলো সে।

বাসায় প্রবেশ করে কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে চলে গেলো বৃষ্টি। শরিরের ঘাম গুলো শুকিয়ে গেছে এতোক্ষনে।
রাত্রি চৌধুরি সবে খাবার শেষ করে উঠেছে। হাত ধুয়ে সোজা চলে গেলো বৃষ্টির রুমে।
তখন বিছানায় বসে বসে কাদছিলো বৃষ্টি। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঝটপট চোখের পানি মুছে নিলো বৃষ্টি। এমন ভাব ধরে বিছানায় বসলো যাতে কিছুই হয়নি। রাত্রি চৌধুরি তার কাছে এসে বসলো।
– এতো তারাতারি চলে এলে, সব ঠিক টাক আছে তো?
– হুম মা।
– পাগলটা কি সারপ্রইজ’ড হয়নি?
বৃষ্টি জোর পূর্বক হাসি দিয়ে আবারও বলে উঠে,
– হুম।
মনে মনে বলতে থাকে। “আমি নিজেই তো আজ অনেক বড় সারপ্রাইজ’ড হয়ে গেছি মা। রাত্রি চৌধুরী আবারও হাসি মুখে বলে উঠে,
– পাগলটার কি রাগ ভেঙেছে?
– হুম।
রাত্রি চৌধুরি হাসির রেখা টেনে বলে উঠে,
– আমি জানতাম আমার ছেলেটা আর যাই হোক আর রাগ করে থাকতে পারবেনা। রাত ছোট বেলা থেকেই এমন। যতই রাগ করুক না কেনো, হালকা একটু ভালোবাসা আর তার পছন্দের কিছু জিনিস পেলেই রাগটা পানি হয়ে যেতো। তুমিও আস্তে আস্তে সব বুঝে যাবে। মিশে যাবে রাতের প্রতিটি শিরার সাথে। এক চাহোনি দেখেই বলে দিতে পারবে সে কি চায়। জানিনা আর কতোদিন এভাবে থাকবো? একটাই ছেলে আমার। এই শেস বয়সেও নাতি-নাতনি নিয়ে খেলা সব দাদা দাদির ই শখ। জানিনা আমাদের সেই শখ টা পুরন হবে কিনা? জানিনা কবে এই ঘরটায় ছোট্ট ছোট্ট পা দৌড়া দৌড়ি করবে? দোয়া করি দিনটা যেনো খুব তারাতারিই আসে। আর তুমি অনেক শুখি হবে মা। শুধু আমার পাগল ছেলেটাকে সামলে রেখো, যদি কখনো আমরা হারিয়ে যাই। তো খেয়েছো?
– হুম, আপনার ছেলের সাথেই খেয়ে নিয়েছি।
বৃষ্টি যদিও খায়নি, তবুও মিথ্যা বলেছে শাশুরিকে। তার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছেনা। আশেপাশে কিছুই ভালো লাগছেনা। চার পাশটায় মনে হয় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মিথ্যা না বললে, রাত্রি চৌধুরি খাইয়েই ছারতো তাকে। মাঝে মাঝো খুব লোভ হয় বৃষ্টির, এমন একটা ফ্যামিলিকে খুব আপন করে পেতে। আচ্ছা সে কি এই ফ্যামিলির আপন কেও?

সেখানে আর না থেকে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লো বৃষ্টি। পুরু গতিতে শাওয়ার অন করে ফ্লোড়ে বসে পরে সে। চোখে বার বার ভেষে উঠছে তৃষ্না আর রাতের দৃশ্যটা। নিশ্চুপ হয়ে কান্না করছে সে। কেনো হচ্ছে তার সাথে এমন? অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়েটা হলো তার। তাও আবার অন্যরকম ভাবে। ছিলোনা কনো প্রস্তুতি। পরিবার একটিবার জানতে চাইলোনা তারও কোনো মনের মানুষ আছে নাকি? কিছুই জিগ্গেস করেনি তাকে। শুধু মান সম্মান বাচাতে তসর সম্মতি নিয়ে বৌ সাজিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে এই বাড়ি। মাত্র কয়েকদিনের কেয়ারে কিচ্ছু ভুলে যায়নি সে। বাশর রাতেও সেই ফিন ফিনে রুমটা কাপিয়ে তোলা থাপ্পরটাও ভুলেনি। গাল পুলে গিয়েছিলো সেদিন। দু,দিন ব্যাথা ছিলো গালে। কিচ্ছু ভুলেনি। হ্যা, ভুলে যেতে চেয়েছে তার সাথে কি হয়েছে। মনে রাখলে তো আর সব আবার আগের মতো ফিরে পাওয়া যাবেনা। এতোদিনের রাতকে দেখে একটু হলেও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিলো মনে। চেয়েছিলো সব ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করবে সে। কিন্তু এভাবেই কি সব শুরু করা যায়? সব সহ্য করে কি পরে থাকা যায়? কেনো তার জিবনটা বার বার ঘুচিয়ে তুলতে চাইলেও এমন এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে? কেনো? কেনো? কেনো? প্রশ্ন।

কান্নার গতিটা এবার আরো বেড়ে গেলো বৃষ্টির। চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাদছে সে। সবে মাত্র ইন্টার শেষ করে, অনার্সে একটি বছর পার হলো। তার মাঝে এতো কিছু ঘটে গেলো তার সাথে। এতো চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কি তার আছে? কম বয়সি মেয়েদের ধর্যটাও এতো শক্ত না। কিছু চেয়ে তা না পেলেও অভিমান ভর করে মনে। আর সেই বয়সেই সে, একটা পরিবারকে ঘুচিয়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে। নিজের সব ইচ্ছা বিষর্জন দিয়ে হলেও চেষ্টা করে যাচ্ছে সে। তারও কি অন্য আট দশটা মেয়ের মতো স্বামির ভালোবাসা নিয়ে সংসার ঘুচিয়ে তুলতে ইচ্ছে করেনা? তার তা না হয়ে, এই বয়সেই নিজের স্বামির বুকে দেখেছে অন্য একটা মেয়েকে। এর চাইতে আনন্দের মুহুর্ত আর কিই বা হতে পারে? কেনো তার সাথে এমন হচ্ছে বার বার। কেনো? কেনো? কেনো? এই সব কেনোর উতর সে আজ পেতে চায়। এসব ভাবতে ভাবতে শুধু বেড়ে চলছে কান্নার গতি। আর তা চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ।

ঘন্টা খানেক পর দরজায় আওয়াজ পেতেই চেন্জ হয়ে বাইরে আসে বৃষ্টি। রাতকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছে সে। রাত পেছন থেকে বৃষ্টির হাতটা ধরে টান দিয়ে মিশিয়ে নেয় তার সাথে।
– ছারুন প্লিজ। অসস্থি লাগছে আমার।
– আমি টার্চ করলে তোমার অসস্থি লাগে?
– লাগে এখন সব লাগে। ছারুন আমায়?
– আগে আমার পুরু কথাটা শুনো তুমি। তার পর তুমি যা ইচ্ছে তাই করো।
– কি শুনাবেন আপনি? যে ওই মেয়েটার সাথে যে আপনার সম্পর্ক আছে তা আমাকে জানাতে মনে নেই তাই তো? আমি আপনার কাছ থেকে কোনো কিছুরই জবাবদিহি চাইছিনা। সো আপনার জবাবদিহিতার প্রয়োজন নেই। আর আমি বা আপনার কে? শুধু নামেই মাত্র সম্পর্কটা। আর আমাদের মাঝেও কি এমন কিছু হয়েছে? যার কারনে আমি কষ্ট পবো? নো ওয়ে। যে আমার ইমোশন বুঝেনা তার জন্য কষ্ট পাওয়ার কোনো মানেই হয়না। আর অনয় মেয়ের সাথেপ্রেম করুন, ফুর্তি করুন, যাই করুন, কিছুই মনে করবো না আমি। দিনের পর দিন অন্য মেয়ের সাথে ফুর্তি করে আমার কাছে ভালো সাজার কোনো প্রয়োজন নেই।
“” ঠাস,,,
বৃষ্টির গালে আচমকাই একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় রাত। ছল ছল দৃষ্টিতে রাতের দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে বৃষ্টি। অন্য একটা মেয়ের জন্য আজ আমার গায়ে হাত তুললো রাত। এটাই বুজি আমার ভাগ্য।
রাগের বসে হটাৎ কি করে ফেললো তা নিয়েও আফসোস শুরু হয়ে গেলো রাতের। বৃষ্টি দৌড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করায়, ফ্যালফ্যাল ভাবে চেয়ে আছে রাত। কিছুক্ষন দাড়িয়ে ৎেকে সেও ঢুকে যায় ওয়াশ রুমে।

রাতের ব্যাগটা এখনো সোফায় পরে আছে। ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু একটা বাইরে বের হয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা হাতে নিতেই রাগটা ঘৃনায় পরিনত হতে থাকে। ব্যাগ থেকে বেছিয়ে এলো মেয়েদের একটা ছোট্ট কাপর। ছি! এতটা নিচে নেমে গেছে রাত?

নিচে গিয়ে টেবিন থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো বৃষ্টি। তবুও যেনো উত্তেজন কমছেনা তার। হাতে থাকা গ্লাসটা জোড়ে ছুড়ে মারে ফ্লোড়ে। কাচ বাঙার শব্দে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে রুদ্র চৌধুরি।
– কি ব্যাপার তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেনো? রাত কি কিছু করেছে?
– না বাবা। এমনিতেই পানি কাওয়ার সময় গ্লাসটা পরে গেছে।
– তোমার কিছু হয়নি তো?
– না বাবা।
রুদ্র চৌধুরি একটু জোড়ে বলে উঠে,
– এই চৈতি। কোথায় তুই। এখানে এসে কাশ গুলো পরিস্কার করে দে তো।
– না বাবা আমি করে নিচ্ছি সমস্যা নাই।

সন্ধার পর রুদ্র চৌধুরিকে বলে নিজের বাড়ি চলে এলো বৃষ্টি। আর এক মুহুর্তেও ওই বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করছেনা তার? এতো দিন ধরে তৈরি হওয়া স্বপ্নটা আজ থেকে দুই ভাগে বিভক্ত।

To be continue………..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে