বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৯

0
1675

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৯

গতকাল থেকে আর রিদের সামনে যায়নি আরশি। থাকুক সে তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে। আমি তার কে? কেও না। হয়তো এক সময় অনেক কিছুই মনে করতো আমায়। কিন্তু আমি তার সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারিনি।

আজ চলে জাবে রাত, বৃষ্টি, আরশি ও তার বাবা-মা। রিদ ও বৃষ্টি বসে আছে সোফায়। ব্রেকফাস্ট করে একেক জন একেক কাজে বেস্ত। কেওবা বাইরে হাটতে গেছে, আর কেও চলে গেছে অফিসে। আর কেও দরজা বন্ধ করে গোমড়া মুখে বসে আছে ঘরে। আর রিদ ও বৃষ্টি বসে আছে সোফায়।
– আরশি আজ কলেজে যাবেনা?
– কি জানি, সকাল থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে দেখছি। আচ্ছা রিদ ভাই, গত কাল যে মেয়েটা এসেছিলো সে আপনার তো ফ্রেন্ড তাই না?
– হুম, কলেজ ফ্রেন্ড। দেশে ফিরার পর দেখা হয়েছে তাই বাড়িতে নিয়ে এলাম। আর তাছারা তাকে এখানে নিয়ে আসার অন্য একটা কারণ ও আছে।
– হুম জানি, আরশি।
– ভাবি,
– হুম,,,,,
– আরশি আর আমার সম্পর্কে কেও জানুক আর নাই জানুক। তোমার মোটামুটি কিছুই অজানা নয়। আমার দুর্বলতা সম্পর্কে আরশিকে না জানালেই ভালো হবে।
– আরশি কিন্তু এখন পুরোপুরিই আপনাকে ভালো বাসে। আর আপনিও আরশিকে। তাহলে কেনো এমন ছন্নছারা হয়ে আছেন।
– শুনেন ভাবি, কখনো ছেরে যায় ভাবোবাসার মানুষ মাঝ পথে একা ফেলে, ছেরে যায় তারা না চাইতেও উজার করা ভালোবাসা পেলে। তাই আমি চাই আবেগ নয় ভালোবাসার মানেটা আরশি বুঝতে শিখুক। আমাদের মাঝে আগে এতো কিছু হওয়ার পরও যদি আমি আরশির কথায় দুর্বল হয়ে পরি তাহলে তার কাছে আমার আত্মসম্মান টা কোথায় গিয়ে দাড়াবে বলুন। আমি চাই যতোটা কষ্ট আমি পেয়েছি ঠিক ততোটা কষ্ট এখন সে পাক। যেদিন আরশি ভালোবাসার মানে পুরোপুরি ভাবে বুঝতে শিখবে সেদিন আমি তাকে নিজের করে নিবো।
বৃষ্টি একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে সোফায় হেলান দিয়ে বলে উঠে,
– আজব ভালোবাসার বিস্তার আপনাদের মাঝে। আচ্ছা আরশি যদি ভালোবাসার মানে বুঝতে বুঝতে অন্য কারো ডাকে সাড়া দিয়ে ফেলে তাহলে?
– আপনার কি মনে হয়?
– বলা তো যায়না, এই বয়সে মেয়েরা বিবেকের চাইতেও আবেগ কে প্রধান্য দেয় বেশি। হয়তো দেখা যাবে, আপনার কাছে থেকে অবহেলা পেতে পেতে তার কাছে মনে হবে, অন্য কেও তাকে আপনার চাইতে বেশি ভালোবাসে তখন যদি সে তার ডাকে সারা দিয়ে দেয়?
– আচ্ছা ভাবি একটা কথা বলুন, আরশি কি আমায় আগে ভালো বাসতো?
– আমার জানা মতে, না।
– তাহলে সে অন্য কোনো ছেলের সাথে রিলেশনে জড়ায় নি কেনো?
– সেটা আরশিই ভালো জানে।
– কারণ আমি ছোট বেলা থেকেই আরশির পাশে ছায়া হয়ে তাকতাম যাতে তার কাছে কেও ঘেসতে না পারে।
– আপনাদের দুজনই অদ্ভুত, কখন যে মতি গতি পল্টি খায় তার কোনো হিসেব নেই।
রিদ মাথা ঝাকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো সেখান থেকে।

আরশিকে ডেকে কলেজে দিয়ে এলো রিদ। যদিও আরশি রিদের সামনে পরতে ইচ্ছে করছে না তবুও নিরুপায় হয়ে তার সাথেই যেতে হলো তাকে।
ক্লাসে আজ কোনো মনোযোগ নেই তার। মন মরা হয়ে বসে ছিলো ক্লাসে।
– কিরে এমন ভাব ধরে বসে আছিস, মনে হয় জামাই অন্য কাওকে নিয়ে ভেগে গেছে সুন্দরি।
হটাৎ কারো কথায় আরশি পেছনে ফিরে দেখে, তৃনা। মেয়েটা সত্যিই অনেক বিরক্তি কর। ছেলেদের মতো চলাফেরা। মাস্তন গিরি। আরো কয়েকটা মেয়ে আছে এমন। ওদের কাজই কাওকে বিরক্ত করা। তাই কিছু না বলে চুপ চাপ বসে আছে আরশি।
মেয়েটা একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে আরশির পাশে বসে।
– ওমা, সুন্দরির দেখি কতো দেমাগ।
গতকাল থেকেই মন মেজাজ চরম পর্যায়ে আরশির। মেয়েটার বিরক্তিগুলো কিছুক্ষন দাত চেপে সহ্য করে, উঠেই ঠাস করে একটা চর মেরে দেয় মেয়েটাকে। রাগে ফোস ফোস করছে আরশি। মেয়েটাও রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি খুন করে ফেলবে আরশিকে।
ওখানে তাদের মাঝে ঝামেলা হওয়ায় ক্লাস শেষে প্রন্সিপাল অপিস কক্ষে ডাকলো আরশি ও তৃণা কে। তাদের অভিবাবক কে ফোন দিলো স্যার। আরশির সব খানে বাবা মায়ের পর লোকার অভিবাবকের জায়গায় রিদের নাম ও নাম্বার দেওয়া। কারণ সব খানে রিদ নিজেই তার নামটা দিয়েছে, যাতে কোনো প্রব্লেম হলেই সে জানতে পারে।
রিদকে ফোন করে কলেজে নিয়ে এলো স্যার। লাইফে প্রথমবার এমন হলো আরশির সাথে তাই ভয়ে রিদের পেছন গিয়ে তার হাত ধরে লুকিয়ে আছে আরশি।

ড্রাইবিং করছে আর হাসিতে লুতুপুতু খাচ্ছে রিদ। পাশে বসে রাগে জ্বলছে আরশি।
– বাব্বাহ্, তুই দেখি আজকাল কলেজে মারামারিও করিস। তোর দেখি অনেক সাহস। চেষ্টা করতে হবে কলেজে ছেলে ভিপি বাদ দিয়ে তোকে ভিপি বানিয়ে দিতে।
– তুমি বক বক বন্ধ করবে রিদ ভাই? চুপ চাপ গাড়ি চালাও।
– আচ্ছা কি নিয়ে লাগলি রে?
– ওফ চুপ করো তো।
রিদ ড্রাইবিং করছে আরশি চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাগ্যিস অভিবাবকের জায়গায় রিদ ভাইয়ার নাম ছিলো। আব্বু অথবা ভাইয়া জানলে আজ বারোটা বাজিয়ে ছারতো আমার।
– মেয়েটা সব সময় এমন করে, আজ একটু বেশিই করেছিলো তাই নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারিনি। প্লিজ বাড়িতে কাওকে কিছু বলোনা প্লিজ।

বিকেলে চলে গেলো সবাই বাড়ি। রিদ ও তার বাবা মাকে যেতে বললেও গেলোনা তারা। অস্ট্রেলিয়াতে সব কিছু বিক্রি করে দেশে চলে আসলো তারা। এখানেই সব শুরু করবে তারা। তাই এখন একটু ঝামেলায় আছে। পরে সময় করে যাবে তারা। আর রিদ তো আগে মাসে ২৫ দিনই ওখানে পরে থাকতো।

সন্ধার পর পড়তে বসলো আরশি। বৃষ্টি হর্লিক্স বানিয়ে তার সামনে রেখে পাশে বসলো। হর্লিক্স দেখে একটু অবাক হলো আরশি। ভ্রু কুচকে বৃষ্টির দিকে তাকায় সে। বৃষ্টি একটু হেসে বলে উঠে,
– আরে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখন তো তোমার শক্তি প্রয়োজন তাই না? তা না হলে কলেজে তৃনার সাথে ঝগড়া করবে কি করে?
আরশি চোখ বড় বড় করে তাকায় বৃষ্টির দিকে।
– তুমি জানলে কি করে? রিদ ভাইয়া বলেছে তাই না?
– হুম, বললো, এখন থেকে তোমাকে ভিটামিন যুক্ত খাবার খাইয়ে শক্তি শালি গড়ে তুলতে।
আরশি দাত দিয়ে নিচের ঠোট টা কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে মাথাটা এদিক ওদিক ঢুলিয়ে বৃষ্টিয়ে বলে উঠে,
– যাওতো ভাবি।
রিদের বাচ্চা রিদ। কতো বার হাতে পায়ে ঘরে বললাম কাওকে বলিস না বলিস না। তাও মুখে আটকে রাখতে পারলো না এটা। আজ বাচিয়ে মনে হয় এভারেষ্ট জয় করে ফেলেছে।
– এই ভাবি,,
– আবার কি?
– রিদ ভাই কি বাবা মা ভাইয়াকেও কথাটা বলে দিয়েছে?
– না শুধু আমায় বললো। ওরা কিছু জানেনা। আমিও বলিনি।
– ভালো করেছো এখন যাও। আরশি দাত মুখ খিচে টেবিলে একটা হাত দিয়ে আঘাত করলো।

কিছুক্ষন পর বাবা মায়ের চেচামেচিতে দৌড়ে নিচে চলে যায় আরশি। শুনতে পায়, বাবা মাকে বলছে,
– আমার এখনি হসপিটাল যেতে হবে।
– কেনো? এখন হসপিটালে কেনো?
– রিদ নাকি এক্সিডেন্ট করেছে। এখন হসপিটালে আছে। আমাকে এখনি যেতে হবে।
– দাড়াও আমিও আসছি।
– না তোমার যাওয়ার দরকার নেই। বৃষ্টির এই অবস্থায় তাকে এভাবে ফেলে যাওয়ার দর কার নেই। তাছারা রাতও এখনো ফিরেনি। কতো সমস্যা টমস্যা আছে। আমি একাই যাচ্ছি।
আরশির বুকটা কেপে উঠে ধুক ধুক করে। মনে পরে গত কাল রাতে অচেনা লোকটার কথাটা। আমাকে থাপ্পর মারায় রিদ ভাইয়াকে ছারবেনা সে। তাহলে কি এক্সিডেন্ট টা সে ই করিয়েছে? ভাইয়া এখন কেমন আছে? কিছু হয় নিতো তার? উত্তেজনা মুলক ভাবে আরশিও বলে উঠে,
– বাবা, আমিও যাবো তোমার সাথে।
– না তোমার যাওয়ার দরকার নেই এই রাতের বেলায়। দিনে তোমার মায়ের সাথে যেও।
কে শুনে কার কথা, আরশি কেদে কেটে অস্থির। অবশেষে রুদ্র চৌধুরি তার সাথে নিয়ে গেলো আরশিকে।

রিদেম মাথায় চোট লেগেছে হাতটাও বেন্ডেজ করা। ঘুমিয়ে আছে সে। ভেতরে চুপচাপ বসে আছে আরশি। আরশির কান্না কাটিতে রিদের পাশে থাকতে দিয়েছে তাকে। বাকিরা বাইরে বসে আছে।
রিদ ঘুম থেকে উঠতেই দেখে আরশি পাশে বসে আছে। ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১০ টা বেজে গেছে।
– এতো রাতে এখানে কেনো এলি তুই? তাও আবার এই শীতের রাতে।
আরশি কাদু কাদু ভাবে বলে উঠে,
– তোমার কিছু হয়নি তো রিদ ভাইয়া?
– না তেমন কিছুনা, এমনি মাথায় একটু চোট লেগেছে আর হাতটা একটু কেটে গেছে তাই ব্যান্ডেজ করা। তাছারা কিছু হয়নি।
– তোমার এমন হওয়ার জন্য আমিই দায়ি রিদ ভাইয়া। আমার জন্যই তোমার এমন হয়েছে।
– আরে ধুর পাগলি, এটা যাস্ট একটা ছোট খাটো এক্সিডেন্ট। এতে তোর কি দোষ?
– আরশি গত কাল রাতের কথা রিদকে বলতে চেয়েও থেমে গেলো।

এই শীতের রাত্রি তাই হসপিটালে থাকা অসম্ভব। আর রিদেরও তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। তাই বাড়ি চলে গেছে সবাই। যদিও একজন থাকতে হবে আর তা হলো আরশি। রিদের মায়ের অবস্থা কান্না কাটি করতে করতে কাহিল। তাই তাকে বাড়ি নিয়ে চলে গেছে। আর আরশিও জেদ ধরেছে সে এখানে থাকবে। এখান থেকে এক পা ও নরবে না সে। তাই রুদ্র চৌধুরিও বললো সমস্যা নেই আরশি যেহেতু থাকতে চাইছে থাকুক। তাছারা একটু পর রাত ও আসছে। সমস্যা হবে না।

রিদ আরশির দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– এই হসপিটালে থাকতে পারবি সারা রাত? তাও আবার এই শীতের রাতে।
আরশি কিছু না ভেবেই বলে উঠে,
– পারবো আমি।
রিদ একটু হেসে আরশিকে ডাক দেয়।
– এদিকে আয়।
আরশি গিয়ে আসলো রিদের পাশে। রিদ একটু সরে বলে উঠে,
– আয় আমার পাশে সুয়ে পর।
– না সমস্যা নেই থাকার জায়গা আছে তো। আর তাছারা তোমারই তো প্রব্লেম হবে।
– না হবেনা। তোকে যা বলেছি তাই কর আরশি। চর খেতে না চাইলে এখানে চুপ চাপ সুয়ে থাক আমার পাশে।
– আরশিও চুপ চাপ লক্ষি মেয়ের মতো সুয়ে পরে রিদের বুকে মুখ লুকিয়ে কেদে উঠলো।

To be continue…………..

~~ আমি রি-চেক করিনা, তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে