বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-০৪

0
2017

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৪

“না এ্যাবরশন কেনো করবো এটাতো আমারই সন্তান। আমি মা হয়ে এমনটা কি করে ভাবলাম?
গত দুদিন ধরে ভেবেছে বৃষ্টি। নিরবে বসে দু,হাত পেটে রেখে গুন গুন করে কথা বলেছে তার সন্তানের সাথে। অনুভব করছে তার রিপ্লে। সত্যিই খুবই মা মা ফিলিংস আসছে তার মাঝে। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার আগেই যেনো মা হয়ে গেছে সে।

ইদানিং রাতে তেমন ঘুম হয়না বৃষ্টির। আজ দু,দিন জেগে ছিলো কিন্তু সে আসেনি। তাহলে কি এটা মাত্রই তার কল্পনা?
রাত তখন ১২ টা,
চার পাশ টা কুয়াশা ঘিরে ধরছে বাইরে। কম্বল দিয়ে সারা শরির ঢেকে শুয়ে আছে বৃষ্টি। তখনই চোখ পড়ে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকা একটা লোকের উপর। এটাই কি তাহলে সেই লোক? কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে ধিরে ধিরে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি। রুম থেকে বারান্তা অব্দি যেতে পাঁচ মিনিট হাটতে হলো তাকে। এতো সময় লাগারও একটি কারণ আছে। তার মনে জেগে উঠছে নানান ভয়। এটা ভুত নয়তো আবার? এক পা আগাচ্ছে তো আবার দুই পা পিছিয়ে আসছে। কাপা হাতে গ্লাসটা তুলে পানিতে চুমুক দেওয়ার আগেই হাত থেকে পড়ে টুকরু টুকরু হয়ে যায় গ্লাস টা। পানিটা ছরিয়ে পরে মেঝেতে। পানিটা এতোটাই জায়গা দখল করলো যে, মনে গহচ্ছে এখানে এক গ্লাস নয় বরং এক বালতি ঢেলে দেওয়া হয়েছে পানি। কাচ ভাঙার শব্দেও কোনো সারা দিলোনা ছেলেটি। আগের ভঙ্গিতেই তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। অনেক হাটার পর বারান্দায় পা রাখতে সক্ষম হলো বৃষ্টি। এবার ছেলেটি ঘুরে দাড়ায় বৃষ্টির দিকে। মুহুর্তেই যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো বৃষ্টি। সাদা টি সার্টের উপর একটা কালো জেকেট পরে আছে লোকটা। মাথায় বাচ্চাদের মতো একটা কান টুপি। হাতদুটি বুকে গুজে তার দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
বৃষ্টি কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো,
– আ আ আ আ আপনি?
– কেনো অবাক হলে বুঝি?
– আ আপনি এখানে কিভাবে এসেছেন বা কি করে জানলেন আমি এখানে এসব জিঙ্গের করে সময় নষ্ট করবোনা আমি। কারন আমি জানি আপনার কাছে এসব ছোট খাটো বিষয় গুলো বের করা অসাধ্য কিছু নয়। আমি বলতে চাইবো, আপনি এখানে কেনো এসেছেন? আপুর সাথে তো সুখেই আছেন নিশ্চই।
– না এমনি দেখতে আসলাম আমার সালিটা কেমন আছে।
– আমি ভালোই আছি এখানে। এর চেয়ে ভালো থাকতে আমি চাইও না। চলে যান আপনি এখান থেকে।
ঠাস করে একটা চর পরে বৃষ্টির গালে। বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগে আরো একটা চর পরে অপর গালে। এবার ভয়ে বাকি যা বলার ছিলো তাও মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা বৃষ্টির। গালে হাত দিয়ে ছল ছল দৃষ্টিতে রাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে। দেখে মনে হচ্ছে এতোক্ষন অনেক কষ্টে কান্নাটা আটকে রেখেছিলো সে। এবং এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কতোক্ষন এই চেষ্টা সফল থাকবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
রাত রক্তিম চক্ষু জোড়া বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– প্রথম চর টা এই জন্য দিলাম যে। আমাকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার সাহস হলো কি করে তোমার? আর দ্বিতীয় চর টা এই জন্য দিলাম যে আমার মুখের উপর ধমক দিয়ে কথা বলার সাহস পেলে কোথায় তুমি। এতো সাহস আসলো কোথা থেকে তোমার?
বৃষ্টির মুখে কোনো কথা না শুনে রাত এবার জোর গলায় বলে উঠে,
– আমি কোনো মুর্তির সাথে কথা বলছি না, যা বলার তোমাকেই বলছি।
– সরি।
– আমার মাথায়ই আসছেনা যে এতো বোকার মতো বলদা বুদ্ধি আসলো কি করে তোমার মাথায়? কি করে ভাবলে যে এই রাতের হাত থেকে পালিয়ে তুমি অন্য জায়গায় থাকতে পারবে? আর তুমি ভেবোনা তোমার রেখে আসা ডিবোর্স পেপারে সাইন করেছি আমি। ওটা অনেক আগেই ছিরে ফেলে দিয়েছি। কেনো এমনটা করলে তুমি? আর যাই হোক তোমার প্রব্লেম গুলো আমাকে জানাতে পারতে।
এবার হুট করেই রাতকে জড়িয়ে ধরলো বৃষ্টি। বৃষ্টির চোখের জন মিশে যাচ্ছে রাতের গায়ে। রাতের বুকে মাথা রেখে অঝরে কেদে চলছে বৃষ্টি।
রাত নিজেকে না চাইতেও শক্ত করে বলে উঠে,
– এতো ঢং আমার মোটেও পছন্দ নয়। আরএতো রাতে কোনো ভদ্র লোকের বাড়িতে আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইছিনা যাও ঘুমাও এখন। যা বলার কাল বলা যাবে।
বলেই সোজা হেটে বেড়িয়ে যাচ্ছে রাত। পেছন থেকে নিচু স্বরে বৃষ্টি বলে উঠে,
– কোথায় যাচ্ছেন? ঘুমাবেন না।
থামকে দাড়ায় রাত। মনে মনে বলে উঠে, তোমার কাছে থাকলেই তোমার ইমোশনাল কার্যকালাপে দুর্বল করে ফেলবে আমায়। আর তোমার কাছে থাকলে হাজারো রাগ করে থাকলেও বার বার তোমাকে আদর করতে চাইবে এই অবুজ মন।
রাত একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলে উঠে,
– অনেক হিসেব নিকাশ বাকি আছে তোমার সাথে। বলেই হন হন করে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় রাত।
,
,
বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো রাত। কলিং ব্যাল বাজাতেই আরশি দরজা খুলে স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে থাকে ওখানে। কিছুক্ষন পর উত্তেজনা মুলক একটা চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টিকে। আরশির চিৎকারে বেড়িয়ে আসে রাত্রি চৌধুরি। বৃষ্টিকে দেখে স্তব্দ হয়ে যায় সে ও। এই সকাল সকাল যেনো বড় একটা সারফ্রাইজ হয় সবাই। ঘরে গিয়ে সোফায় বসে সবাই। রুদ্র চৌধুরি ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– এতোদিন কোথায় ছিলে তুমি?
রাত বলে উঠে,
– খালাম্মাদের বাসায়।
– চট্টগ্রাম।
– হুম।
রাতের মা বলে উঠে,
– কিহ্? রাহি তো আমায় এই ব্যপারে কিছুই বলেনি।
– আসলে আমিই বারণ করছিলাম কাওকে বলতে।
– তার মানে সব তুই জানতি?
– মা পরে সব বলবো। কাল সারা রাত ঘুমাই নি। ওখানে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় ১২ টা বেজে গিয়েছিলো। আর ভোর চার টা বাজে আবার বেড়িয়ে গেলাম সকাল সকাল তোমাদের সারফ্রাইজ দিবো বলে। রাস্তা ফাকা ছিলো তাও দেখো ছয় ঘন্টার মতো লেগে গেলো। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তোমাদের পরে সব বলি?
সকাল দশটা পার হয়ে গেলো। কিন্তু কুয়াশা এখনো পুরুপুরি কাটেনি। শীত কাল, তার উপর সত্য প্রবাহ। সূর্যি মামার দেখা পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার।

আজ দিনটা নানার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই কেটে গেলো তাদের।
রাত তখন নয়টা, শীতে কন কন অবস্থা।
বারান্দায় ইজি চেয়ারটায় বসে আছে রাত ও বৃষ্টি। একই চাদরে মোড়ানো দুজন। রাতের কোলের উপর বসে আছে বৃষ্টি।
– তুমি তোমার নিজ সুবিধা মতোই বসো। এই অবস্থায় কোনো প্রব্লেম যেনো না হয়।
– মানে? তার মানে আপনিও জানেন? কিন্তু কি করে? আমিতো আপনাকে বলিনি।
– তোমার মাঝে যে বড় হচ্ছে সে কে? তোমার আমার মানে আমাদেরই তো সন্তান তাই না? তো আমি জানবো না? আর প্র্যাগনেন্সি রিপোর্টগুলোও তো আমার কাছেই আছে। তুমি যে সেদিন ডাক্তাদের কাছে গিয়েছিলে। পরিক্ষা করে সুখবরের আভাস পেয়েই বেড়িয়ে গিয়েছিলে। তো তুমি কি জানো যে রিপোর্ট গুলো আনতে হয়?
– আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো জানেন না।
– তাই এ্যাবরশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে তাইতো?
রাতের কথায় চক্ষু জুগল বড় বড় হয়ে যায় বৃষ্টির।
– কে বললো আপনাকে? আমি এমন একটা জঘন্ন সিদ্ধান্ত কেনো নিতে যাবো? আমার নিজেরই তো সন্তান নাকি?
রাত মেসেন্জার অন করে বৃষ্টির সামনে ধরলো। এতে পুরাই হতোভাগ বৃষ্টি।

– আচ্ছা ভালো কথা আপনি জানলেন কি করে যে আমি পালিয়ে যাবো?
– সেদিন আমি আর বর্ষা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলে তুমি রাগে ফোসফোস করছিলে ওটা কি আমি দেখিনি? আর ওদিন আমি বর্ষাকে ডেকেছিলাম এই জন্য যে, ওর কিছু সৃতি আমার কাছে রয়ে গিয়েছিলো? তাই ওগুলো ফেরত দিতে।
আর জানলাম কি করে? তোমাকে আমি ফলো করতাম, কারন তোমার অঙ্গি ভঙ্গি কেমন সন্দেহ জনক ছিলো। ফলো করেতে করতেই সব জানলাম ও বুঝলাম। যখন রাতে আমায় ঘুমের মাঝে রেখে বেড়িয়ে গিয়েছিলে তখন কি আমি সত্যিই ঘুমিয়েছিলাম? নাকি করছিলাম ঘুমের অভিনয়। তুমি গাছের ঢালে হাটলে আমি হাটি পাতায় পাতায়।
– সবই যখন জানতেন তাহলে আটকালেন না কেনো?
– কারণ আমি তোমাকে বুঝেতে চাইছি শুন্যতা শব্দটার স্বাদ কেমন। মাহিতের অফিসে কাজ করিয়ে বুঝাতে চেয়েছি যে, অন্যের কাজ করে খাওয়ার স্বাধ কেমন। মাহিত তোমার সাথে ও অন্যান্ন রা তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার কারতো, কারণ আমি তোমায় বুঝাতে চেয়েছি যে, এই শহরে কাছের মানুষগুলো ছারা অন্যের কাছে তুমি কতোটা তুচ্ছ। আমি সব সময় তোমায় চার পাশ থেকেই তোমায় আগলে রেখেছি কিন্তু তোমায় বুঝতে দেইনি আমি। নাহলে ঠিকই বুঝতে বাস্তবতা কখনো কখনো কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। তাও আবার এক অচেনা শহরে।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
– হুম।
– এতো কিছুর পরও আপনি আমার সাথে স্বাভাবিক আচরণ করছেন কেনো? এমন সিচুয়েশনে কারোর ই স্বাভাবিক আচরণ করার কথা না। কিন্তু আপনি এমন ভাবে আচরন করছেন যেনো কিছুই হয়নি।
– হুম, ভালোবাসি তাই।
– আপনি এতো ভালো কেনো?
– কে বললো তোমায়? এখন তো তোমার সামনে আমার সব চেয়ে ভয়ঙ্কর রুপটা আনতে মন চাইছে।
– কেনো?
– কারণ তুমি কেনো আমাদের ভালোবাসার অংশ টুকু ছুড়ে ফেলে দিতে চেয়েছিলে?
– সরি।
কন কনে শীতে চাদরটা ঠিক করে শক্ত করে জড়িয়ে নেয় বৃষ্টিকে।
,
,
সকালে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আরশিকে বলে উঠে বৃষ্টি,
– আরশি শুনলে একটি কথা?
– না বললে শুনবো কোথায়?
– মামারা দেশে ফিরছে।
– কোন মামা?
– রিদ ভাইয়া সহ তার বাবা মা। কথা ছিলো আরো কয়েকমাস পর আসবে দেশে। কিন্তু দু, একদিন পরই আসছে তারা।
আরশির চোখে মুখে উত্তেজনা মুলক খুশির আভাস। খুশিতে যেনো চোখ মুখ ঝিলিক দিয়ে উঠলো তার। আরশি হকচকিয়ে বলে উঠে,
– রিদ ভাইয়াও আসছে?
– বাপরে, তোমার মনে দেখি আজ হুট করেই লাড্ডু ফুটেছে।

To be continue…………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে