বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন 2) পর্ব-১৩

0
1703

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন 2)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__১৩

– সেদিন রাত ৯ টার সময় আমার ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলো। রিসিভ করতেই কে জেনো বললো, আমার স্বামি এক্সিডেন্ট করেছে। সে ঠিকানা বললেই আমি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দৌড়ে সেখানে চলে যাই।
কথাটা খুব শান্ত ভাবেই বললো বৃষ্টি। তার ডিফেন্স ল-ইয়ার ফারহান রেজবি বলে উঠে,
– ওখানে গিয়ে কি দেখলেন?
– কিছুনা। সব ঠিকঠাক। রাতকে ফোন দিয়ে জিগ্গেস করলাম জানতে পারি তারা বন্ধুরা মিলে ডিনারে গেছে।
– কি বললেন, সেদিন আপনার স্বামী বললো সে ডিনারে গেছে বন্ধুদের নিয়ে? আচ্ছা সে কি আগেও এমন বন্ধুদের সাথে ডিনারে যেতো?
– হুম মাঝে মাঝে যেতো।
– ওহ্, তো এসব আমাকে আগে বলেন নি কেনো? আসলে আমি খুব ভয়ে ছিলাম কোর্টেও কিছু বলতে পারিনি।
– আচ্ছা বর্ষাকে কে মারতে পারে? আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?
– আমি জানিনা। আমি শুধু জানি, আমি আপুকে মারিনি।

বর্ষার বাবা মায়ের সামনে বসে আছে ফারহান রেজবি।
– আচ্ছা খুনের দিন রাতে বর্ষা কোথায় ছিলো। বা কোথায় গিয়েছিলো?
– সেদিন সে রাত আটটার সময় ঔষধ আনতে গিয়েছিলো এই পাশের মেডিসিন শপ থেকে। তার পর আর ফেরেনি। ফোনটাও বন্ধ পেলাম। সব আত্বিয়দের বাসায় ফোন দিলেও শুনি বর্ষা কারো বাড়ি যায়নি।
– পেশের মেডিসিন শপ?
– হ্যা।
ফারহান রেজবি তার পি,এ অধিরকে বললো, চলো আপাততো এটা জানতে পেরেছি যে বর্ষা তখন কোথায় গিয়েছিলো? ওখান থেকে কিছু পাওয়া যাবে নিশ্চই।
,
,
– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আমরা ৩ মার্চ রাত আটটার পর থেকে, আপনার দোকারে সামনের সিসি টিভি ফুটেসটা দেখতে চাই।
– কারনটা জানতে পারি নিশ্চই।
– দেখুন এটা একটা খুনের কেস।
– স্যার ওই দিন সন্ধা সাত টার সময় আমরা শপ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। আমার ওয়াইফ অসুস্থ ছিলো তাই।
– ফুটেস তো আর আপনাদের সাথে বাড়ি যায়নি তাই না। আমরা সেই সময়ের ফুটেস দেখতে চাইছি।
– ওকে স্যার।

ইন্সপেক্টর কামরুল হাসান ও ফারহান রেজবি বসে আছে একসাথে। ফুটেসে দেখা যাচ্ছে একটা ছেলে বৃষ্টিকে জোড় করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেলো।
– ছেলেটার সম্পর্কে খোজ নিয়েছি আমি। ছেলেটার নাম প্রিকি, বাবা নেই, মা আর তার এক ছোট ভাই নিয়েই তার পরিবার। শুনলাম তার মায়ের দু,টু কিডনিই ডেমেজ হয়ে গেছে। আর্থিক অবস্থাও খারাপ। মিরপুরেই ছেলেটার বাড়ি।
– ছেলেটার সাথে বর্ষার কি শত্রুতা থাকতে পারে? নাকি টাকার জন্য এসব করেছে?
– সেটা তো ছেলেটাকে ধরলেই জানা যাবে।

রাত ২ টার সময় প্রিকিকে গ্রেপতার করে পুলিশ। জিগ্গাসাবাদে অবশেষে প্রিকি স্বীকার করে নিলো যে, খুনটা সেই করেছে তবে কারো কথায়। তার মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো তাই এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে সে। কিন্তু কে সে যার কথায় বর্ষাকে মেরেছে প্রিকি তা এখনো বলেনি সে। ই. কামরুল হাসান হাত থেকে লাঠিটা ফেলে হতাশার নিশ্বাস ছেরে ক্লান্তিতে ফ্যানের নিচে গিয়ে বসে।
,
,
প্রিকির সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আছে ফারহান রেজবি।
– দেখো প্রিকি, তুমি কিন্তু এখন খুব ভালো ভাবেই ফেসে গেছো। এটাও প্রমানিত হয়ে গেছে যে খুনটাও তুমিই করেছো। দেখো তোমার ফ্যামিলিতে তোমার মা ও তোমার ছোট ভাই আছে। তুমি চলে গেলে ওদের কি হবে? তার চেয়ে ভালো তুমি কার কথায় খুনটা করেছো তার নামটা বলে দিলে তোমার সাজা কিছুটা কম হতে পারে তোমার অবস্থাটা চিন্তা করে।
– আমি তার নাম বলবো না, কিন্তু আপনাে আমি একটা ধাঁধাঁ দিতে পারি। আপনাকে এই ধাঁধাঁর উত্তর খুজে তাকে বের করতে পারলেই আমি আদালতে সব সত্যি বলে দিবো।
– কেমন ধাঁধাঁ।
– ধাঁধাঁ টা হলো, আমায় হত্যার পর আমার লাশটা নিজের জায়গাতে পুতে দিস না ওরে হত্যা কারি। কৌতহলি লোকদের নিজের বাড়িতে ডেকে আনিস না। নাহলে পৃথিবীর মানুষ আমার লাশ খুজতে খুজতে তোকে ও তোর অপরাধ গুলো টিকই খুজে বের করে ফেলবে।
– এটা কেমন ধাঁধাঁ?
– এটা আপনাকেই খুজে বের করতে হবে। আমি তার বেপারে আপনাকে বলেই দিয়েছি।
– ওকে থ্যাংক্স।

রাত ও রিদ বসে আছে ফারহাত রেজবির সামনে। রাত গম্ভির ভাবে বললো,
– ছেলেটা কিছু বললো?
– হুম সে বললো, আমায় হত্যার পর আমার লাশটা নিজের জমিতে পুতে দিস না ওরে হত্যাকারি। কৌতুহলি লোকদের নিজের বাড়িতে ডেকে আনিস না। তাহলে পৃথিবির মানুষ আমার লাশ খুজতে খুজতে তোকে ও তোর অপরাধ দুটুই খুজে বের করে ফেলবো।
– এটার মানে?
– মি. রাত সাহেব প্রিকি এটা আমাদের একটা ধাঁধাঁর মতো দিয়েছে। এটার মাধ্যমেই আমাদের আসল খুনিকে বের করতে হবে। তাহলেই ও সব সত্যি টা বলে দিবে।
– তো বের করতে পারলেন?
– আমি একটা উত্তর খুজে বের করেছি। সে বললো, হত্যার পর লাশটা নিজের জমিতে পুতে দিস না, তাহলে লাশটা যদি বর্ষারই হয় তাহলে বর্ষার লাসটা কোথায় ফেলে আসা হয়েছে? রাস্তার পাশে একটা বড় লিচু বাগানে। আর ওই বাগানটা হলো বর্ষার বয়ফ্রেন্ড মি. তিহান সাহেবের। যিনি আপনাদের সাথে মামলায় লড়ছে। কিন্তু আমার আইডিয়াটা যদি সত্যি হয় তাহলেও একটা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্ষা তিহানের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার সত্বেও কেনো তাকে মেরেছে আার সেই খুনের দায় মিসেস বৃষ্টির উপরই বা কেনো চাপাতে চাইছে?
রাতের কাছে এখন সব জলের মতো পরিস্কার। কারণ তিহানের সাথে বর্ষা পালিয়ে যাওয়ার পরও তিহানের ব্যাপারে কি যেনো জানতে পেরে তাকে পেলে চলে এসেছে বর্ষা। আর তিহান বিয়ে করতে চাইছিলো, আমার বোন আরশিকে আর তাও ভেঙে দিয়েছে বৃষ্টি। তিহানের ব্যাপারে সব বলে দিয়েছে সবাইকে। হতে পারে এটাই বৃষ্টির প্রতি তিহানের ক্ষোপ।

তিহানের বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। তখন রাত ৩ টা। কয়েকজন পুলিশ দিয়ে ঘুমের মাঝে এরেস্ট করে তিহান কে।
এবার সবার সামনে বেড়িয়ে আসে আসল সত্যটা। যে খুনটা তিহানই করিয়েছে। বর্ষাকে মেরে বৃষ্টিকে ফাসিয়ে দিয়েছিলো কারণ বৃষ্টির কারনে তার একটা বড় প্লেন নষ্ট হয়ে গেলো। আর তা হলো আরশিকে নিয়েই। তিহান চেয়েছিলো আরশিকে বিয়ে বরে ব্লকমেই ও কেশলে সব নিজের করে নিতে। কারণ রাতের বাবার ও তিহানের বাবা দুজনই কারো থেকে কেও কম নয়। কিন্তু তার প্লেনটা সাক্সেস হলে আরো শির্ষে পৌছে যেতো তাদের বিজনেস। কিন্তু সব নষ্ট করে দিলো বৃষ্টি।
অবশেষে সত্য প্রকাশ হওয়ার পর ছারা পেলো বৃষ্টি।

অবশেষে অনেক দিন পর নিজের বাড়িতে ফিরছে বৃষ্টি। সারা রাস্তায় বৃষ্টির সাথে কোনো কথা বলেনি রাত। পেছনে বৃষ্টির সাথে বসে আছে রাত। সামনে ড্রাইবিং করছে রিদ, পাশে আরশি। রাতের বাবা রিদের বাবা ও বৃষ্টির বাবা তারা আসছে পেছনের গাড়িতে। গাড়িতে চুপ চাপ শ্রাবনকে কোলে নিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। আর বিষন্ন মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
বাসায় ফিরতেই বৃষ্টিকে নিয়ে ঘরে ঢুকে রাত্রি চৌধুরি ও রিদের মা রুবিনা ও বৃষ্টির মা সাহেলা বেগম। বাসায় ফিরতেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন সাহেলা বেগম। যেনো বড় মেয়েকে হারিয়েও এতো দুঃখ পায়নি যতটা খুশি এখন হয়েছে সে।

বৃষ্টিকে একটা গোলাপি রংয়ের শাড়ি দিলো রাত্রি চৌধুরি।
– ফ্রেশ হয়ে এই শাড়ি পরে আমার সামনে আসবে। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
আধা ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো বৃষ্টি। গায়ে টাওয়াল পেচিয়ে আয়নায় সামনে বসে সে। এই কয়েক দিনে কতো পরিবর্তন হয়ে গেছে সে। তখনি কেয়াল করলো বারান্দায় দাড়িয়ে আছে রাত। বৃষ্টি ধিরে পাশে তার পাশে গিয়ে দাড়ায়। বাইরে অন্ধকার। চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে রাত। বৃষ্টির সাথে কোনো কথা বলছেনা সে।
বৃষ্টি রাতের পাশে দাড়িয়ে বলে উঠে,
– আমার উপর কি রাগ করে আছেন আপনি? আমার সাথে কোনো কথাই বলছেন না?
হুট করেই বৃষ্টিকে জড়িয়ে ঘরে রাত। যেনো গভির এক শুন্যতার নদি শুকিয়ে ছিলো রাতের মন জুড়ে। আর তা এই মুহুর্তে বৃষ্টি তার সর্বোচ্চ বর্ষনে ভরিয়ে তুলবে নিমেষেই। ৩০ মিনিটেরও অধিক সময় জড়িয়ে ধরে আছে একে অপরকে।

রিদ সোফায় বসে আছে আর সময় দেখছে। ১০ মিনিটের কথা বলে রাত রুমে গেলো সেই ১ ঘন্টা পার হয়ে গেলো এখনো বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই। ইশ বড্ড মায়া হচ্ছে তার জন্য। কিভাবে যে এতো দিন পার করেছে কে জানে? আহারে বেচারা।
পাশ থেকে আরশি এসে বসে তার পাশে। একটু নরম শুরে রিদকে বলে উঠে,
– ওগো কি ভাবছো এভাবে বসে বসে।
– ইশ আজ দিনটা জদি তোর আর আমার মানে আমাদের হতো।
আরশি একটু অবাক হয়ে তাকায় রিদের দিকে। হুট করে রিদ লাফ দিয়ে উঠে বলে,
– কিরে আরশি তুই আমায় ওগো বললি কেনো? কোন দিক দিয়ে আমি তোর ওগো লাগি?
– তুমি কি ভাবছিলা আবার বলো তো।
– মাথাটা প্রচুর ধরে আছে রে আরশি।
– টিপে দিবো?
– তোকে বলছি আমি? সব সময় শুধু গায়ে হাত দেওয়ার অজুহাত খুজিস। যা আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আয় তো।
আরশি একটু অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে,
– পারবো না তোমার পানি তুমি এনে খাও।
রিদ এবার বরাবর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরশির দিকে। জ্বিভে একটা ছোট্ট কামড় দেয় আরশি।
– ইয়া মানে আমি যাচ্ছি তো।

To be continue…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে