বৃষ্টি ভেজা রাত(সিজন ২) পর্ব-০২

0
2461

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ২)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__২

বাড়ির বৌ পালিয়েছে। আজ দুদিন ধরে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা তাকে। এই নিয়ে বাড়ি ঘর এক করে ফেলছে রাত্রি চৌধুরি। তার দৃঢ় বিশ্বাস বৃষ্টি পালানোর মতো মেয়ে না। হয়তো তাদের না জানিয়ে কারো বাড়িতে দিয়ে মজা করছে। আর নয় তো কেও কিডনাপ করে নিয়ে গেছে। এই জাতিয় ভাবনা গুলো মাথার মাঝে ইদুর দৌর করছে।
রাত তখন সকালের নাস্তা নিয়ে টেবিলে। রাত্রি চৌধুরি বক বক করেই চলছে তার মাঝে কঠিন একটা উত্তেজিত ভাব।
সেদিকে মন না দিয়ে খেয়ে চলছে রাত।
বিরক্তি নিয়ে রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– আজব আমি কথা বলছি তোর সাথে, আর তোর কোনো গুরুত্বই নেই আমার কথায়?
রাত খেতে খেতে বলে উঠে,
– বলো আমি শুনছি।
– তুই এক কাজ কর। পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দে। আর পুলিশ স্টেশানে যা।
– অযথা কেনো এতো ঝামেলা বলো তো?
– মানে কি? অযথা ঝামেলা মানে? আমি তোর সাথে মজা করছি না, সিরিয়াস হয়ে কথা বলছি।
– তো আমিও কি মজা করছি নাকি? যে চলে যাওয়ার, ভালো লাগছেনা সে চলে গেছে, এতে এতো লাফানোর কি আছে? তার এখানে ভালো লাগছেনা, সে এখানে হ্যাপি নেই তাই চলে গেছে হয়তো। আর তোমার জদি এতোই পুত্র বধুর প্রয়োজন হয় তাহলে দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছে নাকি?
– দেখ রাত মাথা খারাপ করবিনা আমার, ঠাস করে একটা চর খাবি আর সব দাত পরে থাকবে এখানে। আমার তো মনে হচ্ছে সব তুই ই করেছিস। ওই বেয়াদপ মেয়েটা ফিরে এসেছে শুনে বৃষ্টিকে সাইড করে দিয়েছিস তুই। একটা কথা পরিস্কার ভাবে শুন রাত। আরশি যেমন আমার মেয়ে বৃষ্টিকেও আমি এর চেয়ে কোনো অংশে কম ভাবিনা। প্রয়োজনে বৃষ্টিকে আমার কাছে এনে দিয়ে ওই বর্ষা মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা তুই। তবুও যেভাবেই হোক খুজে নিয়ে আয় আমার কাছে।
নাস্তা শেষ করে উঠে চলে যাচ্ছে রাত। রাত্রি চৌধুরি ঠাই দাড়িয়ে আছে ওখানে। রুদ্র চৌধুরি কপালের চামরা ভাজ করে সোফায় বসে আছে চিন্তিত ভাব নিয়ে।

বৃষ্টির পালিয়ে যাওয়ার কথা পৌছে গেলো তার বারার বাড়িতেও। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে বৃষ্টির মা। কেও কারণটা না জানলেও বৃষ্টির মা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে এটা। কারণ সে বৃষ্টিকে এসব নিয়ে ব্লেকমেইল করতে দেখেছে। সে পুরুপুরি সিউর বর্ষার কারনেই বাড়ি ছেরে চলে গেছে বৃষ্টি।
বর্ষার গালে ঠাস ঠাস করে দুটু চর দেয় তার মা।
রাগি চোখে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– দেশে এতো মানুষ মরে তুই মরিস না কেনো? বেয়াদপ মেয়ে নিজেতো আমাদের মান সম্মান ডুবিয়ে ছেরেছেই এখন আবার এসেছে আমার ছোট মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে। কেনো ফিরে এসেছিস তুই? ধোকাই যখন খেয়েছিস তাহলে মরে যেতে পারলিনা তুই। আমার মেয়েটা, তোর কারনে এভাবে বিয়ে হয়ে গেলো তার। ওই বাড়ি থেকে বিশেষ করে রাতের থেকে হাজারো অবহেলা পেয়ে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েও সব সহ্য করে নিয়েছে চুপ চাপ। হাজারো কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে ধিরে ধিরে মানিয়ে নিয়েছে সব। এই দু, হাত তুলে কতো দোয়া করেছি মেয়েটার কপালে যাতে একটু সুখ জুটে। হয়তো আমার সে দোয়া কবুল ও হয়েছিলো। সব শেষ করে দিলি তুই। কিভাবে পারলি নিজের আপন ছোট বোনের সাথে এমনটা করতে? তোর কাছে তো মানসম্মান, আমাদের ইমোশন, এগুলো কিচ্ছু আসে যায় না। কিন্তু নিজের বোনের ঘুচানো সংসার ভাংতে একটুও বিবেকে বাধলোনা তোর? তোকে আমি পেটে ধরছি এটা আমার কোন পাপের শাস্তি ছিলো কে জানে।

বর্ষা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। হয়তো তার মনেও একটু অনুসুচনা জেগে উঠেছে। আবেগের বসে একটু বেশিই বলেছিলো বৃষ্টিকে।
ওদিকে আচলে মুখ চেপে কান্না করছে তার মা।
দিনটা কেটে গেলো কিন্তু বৃষ্টির কোনো খোজ পাওয়া গেলোনা।
,
,
পর দিন সকালে, সোফায় বসে আছে বৃষ্টি। আর পাশে বসে নিউজ পেপারটা খুলে সামনে ধরে পরছে ওই বাড়ির মহিলা মানে তার আন্টি নামক মহিলাটা। সে আঙুল দিয়ে চশমাটা ঠিক করতে করতে বলে উঠে,
– তোমার নামে নিখোজ সংবাদ এসেছে পত্রিকায়। পত্রিকার এক কোনে ছোট্ট করে তোমার একটি ছবিও দেওয়া আছে দেখছি। হয়তো তোমার শশুর বাড়ির লোকই দিয়েছে এই সংবাদ।
মহিলাটার হাত থেকে পত্রিকাটা নেয় বৃষ্টি। দেখে তার নাম ও ছবি পত্রিকার পাতায়। এই মুহুর্তে নিজেকে অনেক বড় সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে তার। পত্রিকাটা রেখে হুট করেই মহিলাটার হাত ধরে ফেলে বৃষ্টি।
– প্লিজ আপনারা কাওকে বলবেন না যে আমি এখানে আছি। আমি আর ফিরে যেতে চাইনা কারো কাছে। প্লিজ আমার এই অনুরুধ টুকু রাখেন। কাওকে বলবেন না প্লিজ।
মহিলাটা একটু ভরসা দেয় বৃষ্টিকে,
– আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থাটা। নিশ্চিত থাকো কেও জানবে না।
– আপনার ছেলে মানে ওই ভাইয়াটাকেও বলে দিন যেনো এই ব্যাপারে কারো সাথে শেয়ার না করে।
– আচ্ছা বলে দিবো। তুমি টেনশন করো না। কেও জানবেনা।

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, তারপর পুলিশকে ইনফ্রম করেও কোনো খোজ পাওয়া গেলো না বৃষ্টির। এতে একেবারে হতাশ হয়ে পরেছে তার বাবা মা, শশুর শাশুরি এরা সবাই। শুধু দুঃশ্চিন্তার ছাপটুকুও দেখা গেলো না রাতের মুখে। যেনো এই কয়দিনে কিছুই ঘটেনি এই বাড়িতে।

বর্ষার সামনে দাড়িয়ে আছে রাত। নির্জন জায়গা একটা নদীর পাড়।
– তোমার মনে আছে রাত এক সময় আমরা এখনে প্রায়ই আসতাম। কতো মজা করতাম দুজন মিলে। সবুজ ঘাসের উপর পাশাপাশি সুয়ে থাকতাম দুজন। তোমার কাধে মাথা রেখে নদীর জলে ঢিল ছুরে ছুরে স্বপ্ন বুনতাম আমরা। মনে আছে রাত?
– মনে না থাকেলেও ভুলে যাই নি। আর বাদ দাও ঐসব। তোমার এসব আজাইরা কেচাল শুনতে তোমায় ডাকিনি আমি। আমি কিছু প্রশ্ব করবো সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক ভাবেই দিবে।
– আচ্ছা বলো।
– বৃষ্টির সাথে তোমার কি হয়েছিলো। আই মিন কি করেছো তুমি তার সাথে?
– ক কই কিছু করিনি আমি।
– আমি তোমার তোতলামু শুনতে আসিনি এখানে। ক্লিয়ার ভাবে সত্যিটা বলো। আর তুমি ভালো করেই জানো আমি একবারের কথা দুই বার বলতে পছন্দ করিনা। কি বলেছিলে বৃষ্টিকে?
– রাত আমি আসলে,,,,,,,
রাত একটা হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠে,
– আমি আসলে কি? ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে তাকে আমার জীবন থেকে সরে যেতে বলেছো তাই তো? আমাকে ভালোবাসো সে আমাকে ছেরে না গেলে এটা করবে ওটা করবে আত্মহত্যা করবে। এখন তোমার এসব ভালোবাসা কোথা থেকে উতলে পরছে শুনি। এই ভালোবাসা তখন কোথায় ছিলো যখন আমাকে বিয়ের আসরে রেখে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে চলে গিয়েছিলে তুমি? এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো যখন নিজের বোনকে স্ত্রীর পরিচয়ে অন্য একটা ছেলের হাতে অত্যাচারের মাঝে রেখে অন্য একটা ছেলের সাথে ফুর্তি করছিলে? তখন কোথায় ছিলো তোমার এই ভালোবাসা? আর এখন ভালোবাসা দেখাতে আসছো নিজের বোনের ঘুচানো সংসার ভেঙে। তুমি কি ভেবেছো তোমার মতো এতো লোভি নষ্টা মেয়েকে রাত বৌ করে তুলবে আবার সব জেনে শুনেই। নো বর্ষা। বরং তোমাকে আমি আরো থ্যাংক্স দিতে চাই তোমার মতো লোভি ও বাজে মেয়ে আমার লাইফ থেকে সরে বৃষ্টির মতো কাউকে আমার কাছে তুলে দেওয়ার জন্য।
এবার একটু করুন হয়ে যায় রাতের গলা,
আই এম সরি বর্ষা আমি কখনোই তোমাকে এভাবে বাজে ভাবে কথা গুলো বলতে চাইনি। বাট তুমিই আমাকে বাধ্য করেছো বলতে। তুমি আমাকে যতটা চাও তার চেয়ে বেশি আমি চাই বৃষ্টিকে। তোমার শুন্যতা মানিয়ে নিয়েছি বৃষ্টির মতো কাওকে পেয়ে। তাই বলে বৃষ্টির শুন্যতা মানিয়ে নিতে পারবোনা আমি। আমি এখন বৃষ্টিকে খুব বেশিই ভালোবাসি। প্লিজ বর্ষা তোমার কাছে হাতজোর করে বলছি, তুমি আমাদের মাঝখান থেকে সরে যাও।
– কিন্তু রাত……
রাত আবারও হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠে,
– তুমি না সরলে আমি নিজেই আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিবো তোমাকে। আমাদের ভালোবাসার মাঝখানে তোমাকে দেখতে চাইনা, এখন না, কোনো দিনও না।

রাত কোমরে দু হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ওখানে। মাথা নিচু করে ওখান থেকে চলে যাচ্ছে বর্ষা।
,
,
বাইরে চাঁদের আলো। হালকা বাতাসে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে। এতে চাদের আলো কিছুটা রুমেও প্রবেশ করছে তার। বিছানায় শুয়ে আছে বৃষ্টি। মৃশ্রন ঠোট দুটু লেগে আছে একটা আরেকটার সাথে। চোখ দুটু বন্ধ তার। কিছু চুল এসে পরেছে মুখে। এখন ঘুমের রাজ্যে রাজত্ব করছে সে। আশে পাশে মন্ত্রি নামক অনেক গুলো পড়ির বসাবাস। এই রাজ্যে রাজত্ব শুধু তার।
বৃষ্টি ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের ঘরে অনুভব করছে কেও মুখের উপর থেকে চুল গুলো আলতো করে সরিয়ে কপালে ঠোট ছুইয়ে দিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুখ ভর্তি চুমু খেলো কেও একজন। ঠোটে অন্য ঠোটের শীতল ছোয়া অনুভব করতেই জ্বমে পাথর হয়ে যায় সে। এই ছোয়াটা যে খুব পরিচিত তার।
কিছুক্ষন পর অনুভব করে পাশে কেও নেই। পিটপিট করে চোখ খোলে চার পাশটায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। পর্দা গুলো হালকা বাতাসে নরছে। হারিয়ে গেলো তার সেই পরিচিত ছোয়াটা। বৃষ্টি একটু কেদে বলে উঠে,
“” স্বপ্নে এসেও হারিয়ে গেলে কেনো? আরেকটু থাকলে কি হয়? এটা কি স্বপ্ন? নাকি তুমি সত্যিই এসেছো প্রিয়।

To be continue…..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖💖

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে