বুকভরা ভালোবাসা পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
942

#বুকভরা ভালোবাসা
#পর্বঃ১৩ ও শেষ পর্ব।
#লেখিকাঃদিশা মনি

ইতি মোহনাকে আটকে বলে,
‘কোথায় যাচ্ছিস ডা’ইনি? সবাইকে কষ্ট দিয়ে তুই সুখে থাকবি সেটা হবে না। তোকেও এবার শাস্তি পেতে হবে।’

মোহনা ইতিকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। মোহনার মা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মোহনার মা মোহনার হাত ছাড়িয়ে বলে,
‘আমি যাবো না কোথাও। তুই নিশ্চয়ই কোন অন্যায় করেছিস তাইনা?’

মোহনা দাতে দাত চেপে বলে,
‘হ্যা করেছি। আমিই তো সব অন্যায় করি। সব দোষ তোমার। তোমার জন্য আমাকে কাজের লোকের মেয়ে হয়ে বড় হতে হয়েছে। অথচ আমি এই বাড়ির মেয়ে ছিলাম।’

মোহনার কথাটা শুনে তার মা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মোহনা বাকা হেসে বলে,
‘অবাক হচ্ছো নিশ্চয়ই? তোমার এত যত্নে লুকিয়ে রাখা মিথ্যা কথাটা কিভাবে আমি জেনে গেলাম ভাবছ। তাহলে শোন আমি অনেক আগেই জানতাম মেহুল এই বাড়ির মেয়ে নয় আমি এই বাড়ির আসল মেয়ে। যেদিন হাসপাতালে আমার আর মেহুলের জন্ম হয় সেদিন তুমি নিজের মেয়ের সাথে আমাকে অদল বদল করে দিয়েছিলে। কারণ তুমি চেয়েছিলে তোমার মেয়ে ভালোভাবে মানুষ হোক আর আমি গরীবের মতো বাঁচি। তাইতো? আজ মেহুলের যায়গায় আমার থাকার কথা ছিল কিন্তু তোমার জন্য,,,,,’

মোহনার সব কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহেজাবিন এসে চিৎকার করে বলে,
‘এসব তুমি কি বলছ মোহনা?’

২৫.
মেহুল স্মিগ্ধকে কল করছে। কিন্তু স্নিগ্ধ ফোন রিসিভ করছে না। মেহুলের খুব ভয় হয় যে স্নিগ্ধ হয়তো মেহুলকে ভুল বুঝেছে।

মেহুলের ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে স্নিগ্ধ মেহুলকে ফোন দেয়। মেহুল ফোন রিসিভ করেই কাদতে শুরু করে। স্নিগ্ধ মেহুলকে শান্তনা দিয়ে বলে,
‘তুমি কেদোনা মেহুল। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখ।’

মেহুল কোনরকমে কান্না থামিয়ে বলে,
‘আর কিছু ঠিক হবে না স্নিগ্ধ। আমি হয়তো আর কোনদিনও তোমায় দেখতে পারব না।’

স্নিগ্ধ মেহুলকে ধমক দিয়ে বলে,
‘এসব তুমি কি বলছ মেহুল? কেন বলছ?’

মেহুলঃআমি চলে যাব। সব ছেড়ে চলে যাবো অনেক দূরে। আমি যে আর কিছু সহ্য করতে পারছি না। অনুশোচনা আমায় শে’ষ করে দিচ্ছে। আমি যে অন্য একজনের অধিকার কেড়ে নিয়েছি। অন্য একজনের হক নিয়ে বেচেছি। আমি যে একটা পাপী।

স্নিগ্ধঃতুমি কি বলছ মেহুল? আমায় প্লিজ বুঝিয়ে বলো।

মেহুলঃআমি আমার মা-বাবার আসল মেয়ে নই। আর এটা আমি অনেক আগেই জেনে গেছিলাম।

স্নিগ্ধঃতাহলে তুমি কার মেয়ে?

মেহুলঃআমার মামনীর মেয়ে। জানো আমার আসল মা চেয়েছিল আমায় বড়লোকের মতো করে রাখতে। আমার জন্মও হয়েছিল ধনী পরিবারে। কিন্তু আমার বাবা একজন দুশ্চ’রিত্র মানুষ ছিলেন। আমার মাকে গর্ভবতী অবস্থায় তিনি ছেড়ে দেন। তখন আমার মাকে আশ্রয় দেন আমার মম আর ড্যাডি। মমও(মেহেজাবিন) তখন প্রেগন্যান্ট ছিল। একই দিনে আমাদের জন্ম হয়। আমার মা আমাকে আর মোহনাকে অদল বদল করান। তাকে এই কাজে একজন নার্স সাহায্য করেছিল যে আমার মায়ের বান্ধবী ছিল। মনির চৌধুরী আর মেহেজাবিন চৌধুরীর আসল মেয়ে আমি নই মোহনা। এটা এক বছর আগে আমি আর মোহনা দুজনেই জেনে যাই। সেই নার্স মৃত্যুর আগে নিজে আমাদের ডেকে সবকিছু বলেন। কিন্তু আমি এসব স্বীকার করিনি। আমার যে ভয় ছিল মোহনা হয়তো আমার থেকে সব কেড়ে নেবে তাই আমি মোহনাকে বলি সে কাউকে কিছু যেন বলে। যদি বলে তাহলে আমি ওর সাথে অনেক খারাপ কিছু করব।
মোহনা ভয় পেয়ে সব কথা মেনে নেয়। আমি যখন যা বলি ও তাই করে। সেদিন স্টেজেও আমি ওকে ইচ্ছা করে ধাক্কা মে’রে ফেলে দেই, পরীক্ষার হলে আমার ডেস্কের নিচে কাগজ রাখতেও আমি বলি আর বুদ্ধি করে ওকে ঠিক সেই সময়েই কাজটা করতে বলি যেন কেউ দেখে। আর মুগ্ধই দেখে ফেলে । এর কারণ আমি চেয়েছিলাম সবাই আমাকে ভালো ভাবুক। আর সেদিন ফার্ম হাউজেও আমি মোহনার গলা টি’পে ওকে মে’রে ফেলার চেষ্টা করি। মোহনা নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমায় ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। আর তারপর কি হয় সব তো তুমি জানো। আমাকে বাঁচানোর জন্য,,,,,

মেহুলের সব কথা শুনে স্নিগ্ধ নির্বাক হয়ে যায়। নিজের কানকেই যেন তার বিশ্বাস হচ্ছিল না। কিন্তু এতকিছুর পরেই তার রাগ হচ্ছিল না মেহুলের উপর। কারণ সে যে খুব ভালোবাসে মেহুলকে। আর এই ভালোবাসা যে বুকভরা ভালোবাসা।

মেহুলঃআমি জানি তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো। কিন্তু আমি তোমার ভালোবাসার যোগ্য নই। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি চলে যাচ্ছি অনেক দূরে।

স্নিগ্ধঃতুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা। তোমায় ছাড়া আমি বাচব না মেহুল। জানি তুমি অনেক ভুল করেছ কিন্তু এতকিছুর পরেও যে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

ওপাশ থেকে মেহুলের কোন উত্তর আসেনা। স্নিগ্ধ মেহুলের ফোনে কল করেও কোন উত্তর পায়না।

মেহুল আজ অনুশোচনার আ’গুনে দগ্ধ হচ্ছে। মুগ্ধর মৃত্যু তাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মেহুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সব ছেড়ে চলে যাবে।

২৫.
মেহেজাবিন মোহনাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকেন। মেহুলের মা তাকে সব সত্য বলে দিয়েছে। মনির চৌধুরী নিজেও সব শুনেছেন। মেহুলের মা তাদের সবার কাছে ক্ষমা চায়। তারপর কাদতে কাদতে বেরিয়ে যান।

মেহুল হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে থাকে সে। কোথায় যাবে কোথায় থাকবে সে জানে না। সে শুধু জানে তাকে দূরে কোথাও যেতে হবে। মোহনার সাথে অনেক অন্যায় করেছে মেহুল। যার কোন ক্ষমা হয়না। মুগ্ধর মৃত্যুটাও তার জন্য অনেক বড় একটা শাস্তি। এসব কিছুতে মেহুল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।

রাস্তায় বেখেয়ালি ভাবে চলছিল মেহুল। আচমকা এক বিকট শব্দে কেপে ওঠে মেহুল। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি বিশাল ট্রাক এসে মেহুলকে ধাক্কা দেয়। মেহুল দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। যন্ত্রণায় মেহুলের পুরো শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছিল। মেহুল বুঝতে পারছিল তার হাতে আর বেশি সময় নেই। নিজের মৃত্যুর ক্ষণেও সে ভাবতে থাকে স্নিগ্ধর কথা।

একটা মানুষ যতই অন্যায় করুক তার ভালোবাসায় কোন খাদ থাকেনা। স্নিগ্ধর প্রতি মেহুলের ভালোবাসাও ছিল অপরিসীম। এই ভালোবাসার নাম বুকভরা ভালোবাসা। মৃত্যুর আগে মেহুলের খুব ইচ্ছা করছিল শেষবারের মতো মুগ্ধকে একবার যেন দেখতে পায়।

মেহুলের শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ হয়না। এটাই হয়তো তার পাপের শাস্তি। নিজের ইচ্ছা অপূর্ণ রেখেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে মেহুল।

এক মুহুর্তেই তার জীবনের আলো নিভে যায়।

স্নিগ্ধ দ্রুত গাড়ি চালিয়ে মেহুলের সাথে দেখা করার জন্য হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিল। মেহুলের বলা শেষ কথাগুলো যে তাকে খুব ভাবাচ্ছিল। মেহুল কি সত্যিই তাকে ছেড়ে চলে যাবে? এটা স্নিগ্ধ কিভাবে মানবে? মেহুলকে তো স্নিগ্ধ খুবই ভালোবাসে।

হাসপাতালে পৌছে স্নিগ্ধ জানতে পারে মেহুল হাসপাতাল থেকে চলে গেছে। স্নিগ্ধর মনের ভয় আরো বেড়ে যায়। মেহুলকে খোঁজার জন্য দ্রুতবেগে গাড়ি চালিয়ে দিক বেদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকে স্নিগ্ধ। অসাবধানতাবশত একটি বাসের সাথে ধাক্কা খায় স্নিগ্ধ। মুহুর্তেই তার চোখে আধার নেমে আসে। স্নিগ্ধর মুখ নিঃসৃত শেষ বাক্যটি ছিল,
‘মেহুল আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি ভালোবাসি তোমায়। তোমার জন্য আমার ভালোবাসা যে বুকভরা ভালোবাসা।’

স্নিগ্ধর জীবনও থমকে যায়। মেহুল মৃত্যুর আগে যেমন স্নিগ্ধকে দেখতে চেয়েছিল একইভাবে স্নিগ্ধও চেয়েছিল মেহুলকে দেখতে। কিন্তু ভাগ্য যে বড়ই নিষ্ঠুর। তাদের শেষবারের মতো দেখাটুকুও করতে দিলনা। স্নিগ্ধ আর মেহুলের মৃত্যু হলো বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে। সাথে রয়ে গেল অপূর্ণতা। আর এই অপূর্ণতার মাধ্যমেই শেষ হয়ে গেল এক অকৃত্রিম বুকভরা ভালোবাসা।

#বুকভরা_ভালোবাসা
#Extra Part
#লেখিকাঃদিশা মনি

মুগ্ধ আর স্নিগ্ধ একসাথে বাইকে করে যাচ্ছিল। মুগ্ধ বাইক চালাচ্ছিল আর স্নিগ্ধ তার পেছনে বসেছিল। স্নিগ্ধ মুগ্ধকে বলতে থাকে,
‘আমরা কি এটা ঠিক করছি? মেহুল রাগ করবে না তো?’

মুগ্ধঃদেখি আমি কিভাবে রাগ করে। আমার শান্তশিষ্ট ভাই পেয়েছে জন্য যখন তখন রাগ করবে। আমি সেটা হতে দেবো না। আমি তোমাকে নিয়ে দুইদিনের জন্য চট্টগ্রামে চলে যাব ভাইয়া। দেখবে তোমাকে না দেখে সব রাগ ভুলে যাবে।

স্নিগ্ধঃতা হলে তো ভালোই হবে।

স্নিগ্ধর ফোন বেজে ওঠে। মুগ্ধ জিজ্ঞেস করে,
‘কে ফোন দিয়েছে রে ভাইয়া?’

স্নিগ্ধঃমেহুল।

মুগ্ধঃফোনটা একদম রিসিভ করবি না। ওকে বুঝতে দে তুইও রাগ করতে পারিস।

স্নিগ্ধঃওকে।

স্নিগ্ধ ফোনটা রিসিভ করছে না দেখে মেহুল ম্যাসেজ দেয়। স্নিগ্ধ ম্যাসেজ সিন করে দেখে সেখানে লেখা,
‘তুমি কোথায় স্নিগ্ধ? আমার তোমার কথা অনেক মনে পড়ছে। প্লিজ আমার কাছে ফিরে আসো।’

ম্যাসেজটা দেখে স্নিগ্ধ মুগ্ধকে বলে,
‘গাড়ি ঘুরিয়ে নে জলদি। মেহুল আমায় মিস করছে আমাকে ওর কাছে যেতে হবে।’

মুগ্ধঃভাইয়া এত সহজে গলে গেলে কিন্তু চলবে না। তাহলে মেহুল আরো মাথায় উঠে যাবে। তখন মাথা থেকে নামাতে পারবেই না।

স্নিগ্ধঃতাতে তোর কি? তুই তোর কাজ কর। আমাকে মেহুলের কাছে যেতেই হবে।

মুগ্ধঃতুমি চলো আমার সাথে চট্টগ্রাম। আমি তোমার কোন কথা শুনব না।

মুগ্ধ জোর করে স্নিগ্ধকে নিয়ে চট্টগ্রামে চলে যায়।

এদিকে,
মেহুল ইতিকে বলছে,
‘স্নিগ্ধ তো কখনো আমার সাথে এমন করে না। আমার মনে হয় ঐ বেটা মুগ্ধ এসব করছে। ওর তো আবার গা’টে গা’টে শয়তানী।’

ইতিঃতাহলে তুই এখন কি করবি?

মেহুলঃপ্রথমে আমায় জানতে হবে মুগ্ধ আছে কোথায়। তারপর আমি দেখ কি করি।

ইতিঃকিভাবে জানবি।

মেহুলঃকেন আশা আছেনা?

ইতিঃকি আশা?

মেহুলঃআরে আশা। মুগ্ধর একতরফা প্রেমিকা।

ইতিঃআশা কি করবে?

মেহুলঃআমি কয়দিন থেকে খেয়াল করছি মুগ্ধ আর আগের মতো আশার উপর বিরক্ত হয়না। আমার মনে হয় মুগ্ধ একটু একটু করে আশাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।

ইতিঃতো?

মেহুলঃআশার মাধ্যমেই আমাকে জানতে হবে মুগ্ধ আমার স্নিগ্ধকে নিয়ে কোথায় গেছে।

ইতিঃঐতো আশা এইদিকেই আসছে। চল ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি।

মেহুল আশাকে গিয়ে কিছু কথা বলে। সব শুনে আশা মৃদু হেসে বলে,
‘আচ্ছা এই ব্যাপার। দাড়াও আমি সব ঠিক করছি।’

আশা মুগ্ধকে ফোন দেয়।

মুগ্ধ সবেমাত্র চট্টগ্রামে পৌঁছে বুকিং করে রাখা হোটেলের রুমে ঢুকল তখনই আশার কল চলে এলো।

আগের মতো বিরক্ত হলো না মুগ্ধ। আশার কল দেখে তার মুখে একবিন্দু হাসি ধরা দিল।

ফোনটা রিসিভ করতেই আশা অভিনয় করে বলল,
‘কোথায় আপনি মুগ্ধ ভাইয়া আমার আপনার কথা খুব মনে পড়ছে।’

মুগ্ধ ভাব দেখিয়ে বলে,
‘আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। আর চাইলেও তুমি আমার কাছে আসতে পারবে না।’

আশা কান্নার অভিনয় করে বলে,
‘আমার আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছা করছে। বলুন না আপনি কোথায়।’

মুগ্ধঃবলবোনা পারলে আমাকে খুঁজে দেখাও।

আশাঃআমার আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করেছে। জানেন?

মুগ্ধঃকি? কার সাথে?

আশাঃতার বন্ধুর নে’শাখোর ছেএর সাথে। আমার জীবন পুরো নষ্ট হয়ে যাবে মুগ্ধ ভাইয়া।

মুগ্ধঃতুমি কোন চিন্তা করোনা। আমি এখন কিছু কাজে চট্টগ্রামে আছি। এখান থেকে ফিরেই তোমার বিয়ে ভাঙার ব্যবস্থা করবো। তুমি কোনো চিন্তা কোরো না।

আশা বাকা হেসে, “আচ্ছা” বলে ফোনটা কে’টে দেয়।

তার সামনে দাড়িয়ে থাকা ইতি আর মেহুলও খুব খুশি হয়। মেহুল বলে,
‘এবার দেখো মুগ্ধ আর স্নিগ্ধ আমি কি করি।’

মুগ্ধ আর স্নিগ্ধ মিলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে এসেছিল। মুগ্ধ খুব ভালোভাবে এনজয় করলেও স্নিগ্ধর মন পড়েছিল মেহুলের কাছে। স্নিগ্ধ অবচেতন মনে শুধু মেহুলের কথাই ভাবতে থাকে।

স্নিগ্ধকে অন্যমনস্ক দেখে মুগ্ধ বলে,
‘কি হয়েছে ভাইয়া? তোমাকে এত অন্যমনস্ক লাগছে কেন?’

স্নিগ্ধঃমেহুলের কথা খুব মনে পড়ছে। না জানি মেয়েটা আমাকে না পেয়ে এখন কি করছে।

মুগ্ধঃতুমি এখানে এসেও মেহুলের কথা ভাববে? লাইক সিরিয়াসলি প্রেমে এত পাগল হয়েছ তুমি?

স্নিগ্ধঃরোমিওর মতো পাগল হতে পারিনি।

মুগ্ধঃএই রোমিওটা কে?

স্নিগ্ধঃএক পাগল প্রেমিক। যাইহোক ওর কথা বাদ দে। তুই এখন আমায় বল যে আমার কি মেহুলের কাছে যাওয়া উচিৎ?

মুগ্ধঃআমার তো রোমিওর ব্যাপারে খুব জানতে ইচ্ছা করছে। তুমি আমায় বলোনা।

স্নিগ্ধর চোখ হঠাৎ সামনের দিকে যায়। সেদিকে চোখ যেতেই স্নিগ্ধ ভ্রু কুচকে বলে,
‘মেহুল!’

মুগ্ধঃএখানে মেহুল আসবে কোথা থেকে?

স্নিগ্ধঃতোর পেছনে দেখ।

মুগ্ধ পিছনে ঘুরে তাকাতেই মেহুলকে দেখতে পায়। ভুল ভেবে নিজের হাতে চিমটি কে’টেও সে মেহুলকে দেখতে পায়। মেহুল একা আসেনি সাথে আশা আর ইতিও এসেছে।

মেহুল এগিয়ে এসে মুগ্ধকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
‘হ্যালো মিস্টার দেয়াল। আপনাকে এত কষ্ট করে ভাঙলাম আর এখন আপনি আবার গড়ে উঠতে চাইছেন।’

মুগ্ধ আমতা আমতা করে বলে,
‘তুমি আমার নিরিহ ভাইয়াটার উপর অত্যা’চার করবে আর আমি ভাই হয়ে সব মেনে নেব। কিভাবে ভাবলে তুমি?’

মেহুল মুগ্ধর কান টেনে বলে,
‘আমি কিন্তু তোমার ভাবি হতে চলেছি। তাই আমার সাথে বাড়াবাড়ি করতে এসোনা।’

মুগ্ধ নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
‘এখনো কিন্তু ভাবি হওনি।’

মেহুলঃহইনি হয়ে যাব। তাইনা স্নিগ্ধ?

স্নিগ্ধ মাথা নাড়ায়। মেহুল একটা বাকা হাসি দিয়ে বলে,
‘চলো আমরা এনজয় করি। আশা তুমি এখানে থাকো। আর ইতি ধ্রুব ভাইয়া চলে এসেছে। তুই গিয়ে ওনার সাথে একান্তে সময়টা উপভোগ কর।’

মেহুল আর কোন কথা না বলে স্নিগ্ধর হাত ধরে দেয় একটা দৌড়। মুগ্ধ তাদের পেছনে যেতে যাবে তখন আশা তার হাত ধরে বলে,
‘সবসময় অন্যের প্রেমে নাক না গলালেই নয়? নিজে তো প্রেম করবেনই না। অন্যকেও করতে দেবে না।’

মুগ্ধকে আশাকে ধমকের সুরে বলে,
‘তুমি আমায় মিথ্যা বলেছ তাইনা? তোমায় কিন্তু আমি,,,’

মুগ্ধর কথা শেষ হওয়ার আগে আশা কাদতে থাকে। আশাকে কাদতে দেখে মুগ্ধ তাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে তারপর বলে,
‘আমার সাথে আর কখনো এভাবে কাদবে না। আমি তোমার কান্না সহ্য করতে পারব না।’

আশাঃকেন? আমি কাদলে আপনার কি?

মুগ্ধঃআমার বুক যে ফে’টে যায় তোমাকে কাদতে দেখলে। আমি যে তোমায় ভালোবাসতে শুরু করেছি আশা। তোমার প্রতি আমার যে রয়েছে বুকভরা ভালোবাসা।

আশা কান্না থামিয়ে হেসে ফেলে। এতদিনের কাঙ্ক্ষিত সুখ যে সে পেয়ে গেছে।

স্নিগ্ধর হাত ধরে পতেঙ্গা সৈকত ঘুরে ঘুরে দেখছে মেহুল। আচমকা মেহুল স্নিগ্ধকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘আর কখনো আমায় ছেড়ে এভাবে কোথাও যাবে না তো?’

স্নিগ্ধ মৃদু হেসে বলে,
‘না।’

মেহুলঃআচ্ছা তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো?

স্নিগ্ধঃঅনেকটা। যাকে বলে বুকভরা ভালোবাসা 💖
৷৷৷৷৷ সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে