বসের সাথে প্রেম পর্ব- ০৪

0
6602

বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ০৪
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
মেয়েটির ডায়েরী_
দিন যতই গড়িয়ে যেতে থাকে, ততই সিয়ামের প্রতি খুব খুউউব দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। শয়নে-স্বপনে, নিশিথে-জাগরনে, কাজে-কর্মে মানের আমার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ও যেন মিশে আছে। আমার প্রতিটা রাত ভোর হয় ওর কথা ভেবে, ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। আবার রাত্রে ঘুমুতেও যায় ওকে নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন চোখে নিয়ে। আজকাল সিয়াম স্যার’টা যেন কেমন হয়ে গেছে। ওনাকে দেখলে মনে হয় একটা অসহনীয় যন্ত্রনা ওনাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা, ওনি কি ঠিক আছেন? ওনার কিছু হয়নি তো? সেদিন রাত্রে হাজার চেষ্টা করেও যখন ঘুমুতে পারছিলাম না, তখন মনটাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য জানালা দিয়ে ওনার রুমের দিকে তাকালাম। কিন্তু একি?! একটা কিছু মনে হচ্ছে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের লাইট জ্বালানো নেই, তাই শুধু আবছায়া’টাই দেখা যাচ্ছে। আচ্ছা, এ আমার সিয়াম, স্যরি সিয়াম স্যার নন’তো?! সেদিন ছাদে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি পাশের ছাদে কেউ একজন অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। ছাদের কর্নারে গিয়ে খেয়াল করে দেখতে যাওয়ার সময় বুঝলাম- এ আমার স্যার’ই।শুধু আমার স্যার। সেদিন একদৃষ্টিতে ওনার দিকে আধঘন্টা তাকিয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছে ওনি এদিকেই তাকাচ্ছে। ওনার দৃষ্টির আড়াল হওয়ার জন্য বসে পরলাম নিচু হয়ে। ওনি চলে গেলেন। ইদানিং রাত জেগে থাকা’টা আমার নেশা হয়ে গেছে। প্রতি’টা রাত্রে কখনো ছাদে কখনো বা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। কখনো কখনো সেখানের চেয়ারেই ঘুমিয়ে পরি। সেদিনও ওনার রুমের জানালায় একটা আবছায়া নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল। বুঝতে পারলাম এ আমার স্যার’ই দাঁড়িয়ে আছে। বোধ হয় রাতের শহর দেখছে। ওনার মত আমিও ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত রাতের শহর’টাকে দেখার জন্য নিচে তাকালাম। কিন্তু বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। এর থেকে যে আমার রাজপুত্র’টা স্যরি শ্রদ্ধেয় স্যার’টা অনেক সুন্দর,সুদর্শন। ওনি রাতের শহর দেখছে, আর আমি ওনাকে দেখছি। দু’চোখ ভরে দেখছি…..
এ দেখার যেন কোনো শেষ নেই।
ছেলেটির ডায়েরী_
হে আল্লাহ! আমার কেন এমন লাগে? কেন?!!! আল্লাহ, তুমি আমায় মনের শান্তি ফিরিয়ে দাও প্লিজ। আর পারছিলাম না। এক বন্ধুর কথা মতো তাহাজ্জত নামাজ পড়া শুরু করলাম। নামাজ শেষে ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, ওনি যাতে আমার মনের শান্তি ফিরিয়ে দেয়। একটু রহম করে। ছোট বোন’কে দেখে পছন্দ হয়েছিল পাত্রপক্ষের। আসছে পহেলা বৈশাখ বিবাহের দিন ধার্য করা হয়েছে। দেখতে দেখতে ওর বিয়ের দিনটা গড়িয়ে এলো। আমার অফিসের সব কর্মচারী এবং আমার সব ব্যবসায়ী বন্ধু ও স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি লাইফের সব বন্ধু-বান্ধবদের বিয়েতে দাওয়াত করলাম। মায়াও এলো। কিন্তু সেটা আমার দাওয়াতে নয়, বোনের দাওয়াতে। ওকে দাওয়াত দেওয়ার আগেই মায়া’টা কার কাছ থেকে যেন দাওয়াত পেয়ে গেছে। ও বিয়ের তিনদিন আগেই চলে আসছে। আমি তো মনে মনে ভয় পাচ্ছি, ও তিনদিন আগে কেন চলে আসল। পরে জানতে পারি, এই মায়া’টাই আমার একমাত্র বোনের ভার্সিটির একমাত্র প্রিয় বান্ধবী। অবাক হলাম এই ভেবে, বাবা একজন দক্ষ ব্যবসায়ী হয়ে কি করে তাহলে এই পিচ্চি’টাকে কোম্পানিতে নিল। মায়া’টা শুধু নামেই মায়া না, ওর চেহেরায় অদ্ভুত এক মায়া ছিল। ওর নিষ্পাপ মুখপানে তাকালে বুকের ভেতরটা শীতল হয়ে যেত, সেই মুহূর্তের জন্য ভূলে যেতাম ও শ্যামবর্ণের একটা তরুণী। আমার তখন ওকে কেবলি এক মায়া পরি মনে হতো। কি দারুণ এক মায়ায় আবৃত ওর মুখ, আর মুখের মায়ায় যে কেউ পরে যেতে পারে। আমার বাবাও পরে গেল। আমার মা তো ওকে মা বলেই ডাকতো।
আর বাবা?!!!
বাবা ডাকতো ছোট মা বলে।
কেন জানি আমার ওকে মায়া পরি মনে হতো….
পিচ্চি মায়া পরি।
সেদিন ছিল বোন’টার হলুদ সন্ধ্যা।দুপুর থেকেই মেহমান’রা আসা শুরু করছে। আর বিকেল গড়িয়ে যাওয়ার একটু পরেই বরের বাড়ি থেকে ছেলে-মেয়ে চলে আসছে। হলুদ দিয়ে চলে যাওয়ার আগে বরপক্ষের বাড়ি থেকে আসা একটা ছেলে মায়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াই। মায়া কিছু বুঝে উঠার আগেই ওর গালে হলুদ ভরিয়ে দেয়। তারপর সবার কি হাসাহাসি। আমার ভিতর’টা হাহাকার করে উঠল। মায়া দৌঁড়ে চলে গেল রুমের ভিতরে। সেদিন রাত্রে সব আমন্ত্রণিত মেহমানে বাড়ি ভরে গিয়েছিল। থাকার জায়গা সংকুলান হবে না ভেবে কর্ণারের রুমের ফ্লোরে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। উপরে খাটে দুই মামি এবং তাদের দুইটা বাচ্চা, নিচে আমি, ১৬বছরের মামা’তো ভাই, পুচকি মামা’তো বোন, নানু শুইলাম। ছোট্ট বোন’টাকে ঠিক করে শুয়াতে গিয়ে দেখি ওর সাথেই মায়া শুয়ে আছে…..
মেয়েটির ডায়েরী_
অফিস থেকে এসে সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকলাম, তরকারি গরম করে খাব বলে। ঠিক তখনই মনে হলো পিঠে যেন ভাদ্র মাসের তাল পরছে। কিন্তু এখনো তো বৈশাখ মাস আসেনি, ভাদ্র মাসের তাল কোথা থেকে আসলো। পিছনে তাকালাম বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে। হায়রে!
একি?! এ যে সাইমা। পরাণের বান্ধবী সাইমা….?
এসেছো কলিজা?!!!!
-‘ রাখ তোর কলিজা। কত্তগুলো কল দিয়েছি, দেখছনি একটাও? :/
~সেকি কখন কল দিলি?? দাঁড়া দেইখা লই…. ?
-‘ ঐ কু্ত্তি হাসবি না। আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না, সেটাই বলতে পারিস। যাহ, আর বললাম না। শত্রু চিরকালের জন্য বিদায় হইলো। এই নে বিদায়ী মানপত্র। আসি। আল্লাহ হাফেজ।
????
সাইমা চলে গেল হাতে বিয়ের কার্ড দিয়ে। জানতাম, ওর বিয়ের কার্ড’ই হবে। না খুলেই বুঝে গিয়েছিলাম পাত্র আবিরের সাথে বিয়ে’টা হচ্ছে, দীর্ঘ ৭বছরের প্রেমের মিলন হতে যাচ্ছে; না চাইতেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।
ভালো থাকুক ওরা,
ভালো থাকুক পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা’রা…..
ওর আবদার বিয়ের একসপ্তাহ আগেই যাতে ওর বাসায় চলে যায়, কিন্তু তাতো আর সম্ভব না। তাই বিয়ের তিনদিন আগে ভালো আংকেলের আদেশে চলে এলাম ওনাদের বাসায়। ছোট বেলায় বাবা-মা মরে গিয়েছিল, তাই বাবা-মায়ের আদর কি বুঝিনি। সাইমার বাবা-মা মানে বসের বাবা-মায়ের আদর পেয়ে কেন জানি মনে হচ্ছিল বাবা-মা থাকলে মনে হয় এভাবেই আদর করত।
সাইমার হলুদ সন্ধ্যার দিনে বরের বাড়ি থেকে অনেক ছেলে-মেয়ে আসে। এর মধ্যে ৪টা ছেলে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। বুঝি না ওরা কালো মেয়ের মধ্যে কি এমনটা দেখেছে। সাইমাকে হলুদ দিয়ে চলে দেওয়ার সময় একটা ছেলে আমার গালে এনে হলুদ ভরিয়ে দেয়। আমি বিরক্ত হয়ে আশেপাশে তাকালাম। সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ওনি আমার দিকে চেয়ে আছে, মুখটা অমাবস্যার কালো অন্ধকারের মত হয়ে গেছে। দৌঁড়ে চলে গেলাম ওনার থেকে। রুমে গিয়ে বালিশ বুকে জাপটে ধরে ভাবতে লাগলাম, ওনি আমার দিকে এভাবে তাকালো কেন?
তবে কি ওনিও আমায় ভালোবাসে….?
সেদিন সিড়ি থেকে তাড়াহুড়ো দৌঁড়ে নামতে গিয়ে ওনার সাথে ধাক্কা খেলাম, ওনি তখন উপরে উঠছিল। আমি নিচের দিকে হেলে যায়। ওনি ধরে ফেলেন আমায়। কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে বড়দের মত ভাব নিয়ে বললেন,
দেখে চলতে পারো না?!!! যদি পরে যেতে?!!!
আমি বললাম, আপনি তো আছেন। আমার ভরসা, আমার বিশ্বাস। আমি পরে গেলে আপনি ধরবেন যে… তবে কথাটা প্রকাশ্যে নয়, মনে মনে বলছিলাম।
অধিক মেহমানের কারনে সে রাতে জায়গা হচ্ছিল না থাকার। ঠিক করলাম নানু মামিদের সাথে ফ্লোরে থাকব। ফ্লোরের একদম কর্ণারে শুইলাম। হঠাৎ করে চোখের মধ্যে একটা আলো এসে পরল। তাকিয়ে দেখি, আমার ঠিক পাশেই স্যার শুয়ে ফোন টিপছে, কাছেই, খুব কাছেই। মাঝখানে শুধু পিচ্চি বোন’টা দেয়াল হয়ে আছে….
ভিতর’টা কেমন যেন করে উঠল। চোখ’টা বন্ধ করে ফেললাম। মনে হলো আলো’টা নিভে গেছে। কিন্তু আমার হৃদকম্পন একটু একটু করে বাড়ছে। একটা সময় ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া শুরু করি। হঠাৎ’ই চোখের উপর একটা আলো এসে পরে……
ভীরু এবং কাঁপা চোখে তাকালাম। তারপর যা দেখলাম……..

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে