বসন্তের আগমনে পর্ব-০৭

0
865

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৭

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান কথাগুলো বলে কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপরে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো।তারপরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি চালিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো।

আরহান বাড়িতে গিয়ে আয়েশা বেগম আর আরিশা’ আলভিকে নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে!আরহান তাদের সাথে সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”

আয়েশা বেগম বললেন,

“ঈশাদের বাড়িতে।”

“ঈশাদের বাড়ি কেনো যাচ্ছো?”

“এমনি বেড়াতে যেতে ইচ্ছে হলো।”

“ওহ্ আচ্ছা।ঠিক আছে যাও।কিন্তু আলভিকে রেখে যাও।”

“না বাবাই আমি যাবো।ঈশা আন্টির সাথে দেখা না হলে আমার ভালো লাগে না।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“পাপাই তুুমি গেলে তো বাবাই একা হয়ে যাবে!”

আরিশা বললো,

“ভাইয়া তুইও চল।”

“না আমার ভালো লাগছে নাহ্।এখন একটু ঘুমাবো।”

আরহান গালে একটা চুমু দিয়ে তার রুমে চলে গেলো।আয়েশা বেগম আরিশা আর আলভিকে নিয়ে ঈশাদের বাড়িতে চলে গেলো।

আয়েশা বেগম মৃদু হেসে বললেন,

“তা ঈশা কোথায়?তাকে তো দেখতে পারছি নাহ্।”

তৈয়ব সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,

“আপা আর কি বলবো!মেয়ে হয়েছে একদম আপনার ভাবির মতো।”

মাসুমা বেগম মুখটা মলিন করে করলো,

“বাহ্ বোনের কাছে বউয়ের বদনাম করতেছো।”

আয়েশা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,

“আরে ভাবি।আমি আপনার পক্ষেই আছি।ভাইয়ের কথা কে শুনে!”

ঈশা কফি বানিয়ে এনে সবার সামনে দিয়ে বললো,

“কেমন আছেন আন্টি?”

“এইতো মা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

ঈশা গিয়ে আরিশার পাশে বসে বললো,

“তোমার সাথে আমার সেদিন তেমন কথা হয়নি।তুমি আরিশা।ঠিক বললাম তো?”

“হ্যাঁ ভাবি।একদম ঠিক বলছো।”

আরিশার মুখে ভাবি ডাক শুনে ঈশা চুপসে গেলো।একটা ঢোক গিলে বললো,

“এখনি ভাবি ডেকো নাহ্।আমারও তো লজ্জা লাগে।”

কথাটা বলে ঈশা আলভিকে কোলে নিলো।আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“এখন না ডাকি।কয়দিন পর কিন্তু সারাদিনই ডাকবো।”

“তা তোমার অভদ্র ভাইয়া আসেনি?”

“অভদ্র ভাইয়া মানে? তুমি কি আরহান ভাইয়ার কথা বলছো?”

“উনি ছাড়া আর কে অভদ্র হতে পারে!”

আরিশা হাসি দিয়ে বললো,

“তুমি আসলে ঠিকই বলেছো। ভাইয়া আসলেই আস্ত একটা অভদ্র।”

আয়েশা বেগম বললেন,

“ঈশা মা তুমি যদি কিছু না মনে করো।তুমি আরিশা আর আলভিকে নিয়ে একটু অন্য রুমে যাবে!আমি তোমার বাবা-মা’র সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।”

ঈশা হাসি দিয়ে বললো,

“ওকে আন্টি।আমি ওদের নিয়ে আমার রুমে যাচ্ছি।”

ঈশা আলভিকে কোলে নিয়ে আর।আরিশা কে সঙ্গে নিয়ে তার রুমে গেলো।

আয়েশা বেগম তারপরে বললেন,

“তৈয়ব ভাইয়া আর মাসুমা ভাবি শুনেন আমার কথাগুলো।আসলে আরহান বিয়ে করতে চায় না।যার একমাত্র কারণ আলভি।আলভি হলো আফিনের ছেলে।তোমরা তো সবটাই জানো।কিন্তু ঈশা জানে নাহ্।তবে আমি চাই আরহান ঈশাকে সবটা বলবে।তাই আমি বিয়ের আগে ঈশা সবটা জানুক।আরহান ভাবে সে যদি বিয়ে করে আর তার বউ যদি আলভিকে মেনে না নেয়!আর আরহানের মাঝে মেয়েদের প্রতি একটা ঘৃণা চলে আসছে হিয়াকে দেখে।”

কথাগুলো বলে আয়েশা বেগম থামলেন।উনার চোখে পানি।চোখের পানি মুছে বললেন,

“মেয়েটাকে কত ভালোবাসতাম।আর ওই মেয়েটাই কিনা আমার স্বামী আর সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ী।খালি ওর বাবার ক্ষমতার জোরে ওর কোনো শাস্তিও হলো নাহ্!”

মাসুমা বেগম আয়েশা বেগমের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন,

“থাক আপা কষ্ট পেয়েন নাহ্।আমরা তো সবটাই জানি।কিন্তু কিছুই বলিনি।আপনারা কষ্ট পাবেন বলে!”

আয়েশা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

“থাক এইসব বাদ দেই।আমি এই কারণেই আরহানকে বিয়ের কথাটা জানাতে চাচ্ছি না। একদম বিয়ের দিনে ওকে বলবো না হলে ও বিয়েটা করতে রাজি হবে না।”

মাসুমা বেগম বললেন,

“কিন্তু বিয়ের পরে ও যদি ঈশাকে না মেনে নেয়।তাহলে কি হবে?”

“আমার মনে হয় বিয়ের পরে সবটা ঠিক হয়ে যাবে।আর আমি তো আরহানকে চিনি।ও কখনো নিজেী দায়িত্ব থেকে সরে আসবে নাহ্।একবার বিয়েটা হোক শুধু।”

তৈয়ব সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,

“আপা আপনার কথায় আমরা নিশ্চিত হলাম।”

আয়েশা বেগম মনে মনে বললেন,

“আল্লাহ সব জানি ভালোয় ভালোয় হয়।”

/🌼/

আরহান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো ওরা এখনো আসেনি।আরহান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো,

“আজব!এখনো আসছে না কেনো ওরা?এতোক্ষণ আলভিকে না দেখলে আমার ভালো লাগে নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে সোফায় গিয়ে বসলো।তারপরে টিভিটা ছেড়ে খেলা দেখতে শুরু করলো।রুবি খালা এসে কফি দিয়ে বললো,

“আরহান বাবা আয়েশা আফায় ফোন করছিলো।কইলো তাগো আসতে নাকি দেরি হইবো!”

“দেরি হবে কেনো খালা?”

“ওই তো কি কেনাকাটা জানি করোন লাগবো।”

“মেয়ে মানুষের এই এক সমস্যা।বাইরে গেলে শপিং না করলে চলে নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে কফিতে চুমুক দিলো।রুবি খালা হাসি দিয়ে চলে গেলো।আরহান কফি শেষ করতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।আরহান গিয়ে দরজা খুলে দেখলো আয়েশা বেগম,আরিশা আর আলভি দাঁড়িয়ে আছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা হাতে এক গাদা শপিং ব্যাগ।আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে ভিতরে আসতে আসতে বললো,

“পুরো শপিংমল তুলে আনলে নাকি!”

আরিশা বললো,

“তোর বিয়ে বলে কথা শপিংমল তো তুলে আনতেই হবে।”

আরিশার কথায় আরহান পিছনে ফিরে তাকালো।তারপরে ভ্রু কুচকে বললো,

“আমার বিয়ে মানে?”

আরিশা আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখলো তিনি চোখ লাল করে তাকিয়ে আছেন।আরিশা ভয়ে ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললো,

“আরে ভাইয়া তুমি তো জানো আমি সব বিষয়ে বেশি এক্সাইটেড হয়ে যাই।তাই মুখ ফোসকে তোর বিয়ের কথা বলে ফেলছি।আসলে বিয়ে তো ঈশা আপুর।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“ঈশার বিয়ে তা তোমাদের এতো শপিং করার কি আছে?”

আয়েশা বেগম বললেন,

“তোমার মেয়েদের বিষয়ে এতো জানা লাগবে নাহ্।নিজের কাজ করো।”

আরহান আর কিছু বললো নাহ্।আয়েশা বেগম আরিশার হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গেলেন।

“আরেকটু হলেই তো সব বলে দিচ্ছিলি।”

“আরে আম্মু মুখ ফোসকে বের হয়ে গেছে।”

“তোমার মুখটাকে একটু সামলে রাখো মা আমার।নাহলে পরে সব শেষ হবে।”

আরহান আলভিকে নিয়ে ক্যামার খেলছে।খেলার মধ্যে আলভি বললো,

“জানো বাবাই ঈশা আন্টি আজকে কাস্টার্ড বানিয়ে ছিলো।”

আরহান কাস্টার্ডের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো।

“ইশ্!আমার কাস্টার্ড খাওয়াটা মিস হলো।আমার ফেভারিট জিনিস আমিই খেতে পারলাম নাহ্।”

আরিশা রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার সময় আরহানের কথাটা শুনতে পেলো।আরিশা ফ্রিজ থেকে কাস্টার্ডের বাটিটা এনে আরহানের সামনে দিয়ে বললো,

“মাসুমা আন্টি তোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে।”

“আন্টি জানলো কিভাবে যে আমি কাস্টার্ড পছন্দ করি?”

“তুই যখন হোস্টেলে ছিলি তখন আন্টিরা আমাদের বাসায় মাঝে মাঝে আসতো।তখন আম্মুই একদিন বলছিলো।তোর বিষয়ে সবই জানতো।তবে তোকে আগে কখনো দেখেনি।”

“কেনো আমার ছবি দেখাইনি আম্মু আন্টিকে?”

“হ্যাঁ পিচ্চি বেলার।তখন তো তোর এমন দাড়ি-গোঁফ ছিলো নাহ্।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“তাও ঠিক।না চেনাটা স্বাভাবিক।আমিও তো উনাদের কখনো দেখিনি।ওইদিনই ফাস্ট দেখছি।”

“কিন্তু আমরা আগে থেকেই চিনতাম।আচ্ছা এখন কাস্টার্ড টেস্ট করে দেখ কেমন হয়েছে!”

আরহান এক চামচ কাস্টার্ড খেয়ে বললো,

“ওয়াও!কাস্টার্ডটা তো অনেক মজা হয়েছে।বাহ্ ওই বকবকানি তো ভালোই কাস্টার্ড বানাতে পারে।”

“হ্যাঁ বিয়ের পরেও বানিয়ে খাওয়াবে।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“হ্যাঁ উনার হাসব্যান্ডকে।”

আরিশা মনে মনে বললো,

“হ্যাঁ তার হাসব্যান্ড তুই-ই হবি।”

আরহান কাস্টার্ড খাওয়া শেষ করে বললো,

“আজকে রাতে আমি আর কিছু খাবো নাহ্।এখন ঘুমিয়ে পড়বো।তুই আলভিকে খাইয়ে আমার পাশে শুইয়ে দিয়ে যাস।”

“এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাবি কেনো ভাইয়া?”

“কালকে অনেক সকালে অফিসে যেতে হবে।”

“আচ্ছা যা ঘুমিয়ে পড়।”

—❤️—

সকালবেলা,

আরহান সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো আলভি এখনো ঘুমাচ্ছে।আরহান ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে গেলো।

“আরিশা তুই আলভিকে স্কুলে নিয়ে যাস।আমার একটা জরুরি মিটিং আছে।”

“ওকে ভাইয়া।”

আয়েশা বেগম বললেন,

“আরহান ব্রেকফাস্ট করে যা।”

“আম্মু আমি অফিসে গিয়ে করে নিবো।”

“এখানে বসে করে যেতে হবে।”

আরহান আর কিছু না বলে একটা পাউরুটির টোস্ট খেয়ে চলে গেলো।আরহান অফিসে যাওয়ার পথে দেখলো ঈশা কয়টা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতেছে।আরহান গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে গেলো।

“কি হয়েছে মিস.ঈশা?”

ঈশা পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরহান দাঁড়িয়ে আছে।

“ওহ্ মি.অভদ্র।দেখেন না এই ছেলে গুলো আমাকে ডিস্টার্ব করছে।”

ছেলেগুলো থেকে একটা ছেলে বললো,

“মাফ চাই বোন।তোকে ডিস্টার্ব করতে এসে অনেক বড় ভুল করে ফেলছি।আধাঘন্টা ধরে বকবক করে মাথা শেষ করে ফেললি।”

ছেলেটার কথা শুনে আরহান জোরে হেসে দিলো।ঈশা আরহানের দিকে তাকাতেই ছেলেগুলো দৌড়ে পালিয়ে গেলো।ঈশা তাদের পিছনে দৌড়াতে গেলে আরহান ঈশার হাত টেনে ধরলো।ঈশা আরহানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।আরহান ঈশার হাত ছেড়ে বললো,

“হাত ধরার জন্য সরি।আপনার পায়ে এখনো ব্যান্ডেজ আছে।এতো দৌড়াদৌড়ি করা ঠিক নাহ্।আর ওই ছেলেগুলো ওতোটাও খারাপ নাহ্।তাহলে আধাঘন্টা ধরে আপনার বকবক শুনতো নাহ্।বরং আপনার মুখে কাপড় বেঁধে ধরে নিয়ে চলে যেতো।”

“আমার পা একদম ঠিক হয়ে গেছে।আপনার জন্য ওই ছেলেগুলো মারতে পারলাম নাহ্।”

“মারলে আরো আগেই মারতেন।চলে যাওয়ার পরে মারার জন্য আপসোস করছেন কেনো?”

“দুই-তিনটা থাপ্পড় তো দিছি।”

“তাহলে তো হয়েই গেলো।বাই দ্যা ওয়ে এতো সকালে আপনি কই যাচ্ছেন?বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার কারণে কি পালিয়ে যাচ্ছেন নাকি?”

“জ্বি নাহ্।আমার কোনো প্রেমিকা নাই যে যার জন্য আমি পালিয়ে যাবো!আমার আজকে একটা এক্সাম আছে।তাই কলেজে যাচ্ছিলাম।”

“আপনার কলেজ কোথায়?”

“ওই যে সামনে।”

“ওহ্ আচ্ছা।তাহলে কলেজে যান।আর আমি অফিসে যাই।”

আরহান কথাটা বলে চলে গেলো।

#চলবে…………………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে