বউ চুরি পর্ব : ১৬ ( শেষ পর্ব )

0
2104

বউ চুরি
পর্ব :  ১৬ ( শেষ পর্ব )
লেখিকা : জান্নাতুল নাঈমা

রাত আট টা বাজে বাড়ির সবাই খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। সবার মুখেই চিন্তার ছাপ। এমন আচরন ইমনের থেকে কেউ আশা করেনি। ইরাবতী কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে গেছেন ।

কলিং বেল এর আওয়াজ শুনতেই ইরাবতী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো। ইমনকে দেখেই কান্না করে বুকে জরিয়ে নিলো।
কোথায় ছিলি বাবা?  এইভাবে কিছু না বলে কোথায় চলে গেছিলি।
ইমন মায়ের কাধে ধরে ওঠিয়ে বললো- আরে মা কাঁদছো কেনো?  আমি এসে গেছিতো। খুব জরুরি একটা কাজে বের হয়েছিলাম। ফোনেও চার্জ ছিলো না। আর এতোটাই ব্যাস্ত ছিলাম যে ফোন করার সুযোগ ও পায়নি। ভিতরে চলো তো শুধু শুধু কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে পড়েছো।
সারাটাদিন পুরো বাড়ির মানুষ তোর জন্য চিন্তা করছে এমন কান্ড জ্ঞান হীন তুই। রেগে গিয়ে বললো মোজাম্মেল চৌধুরী।
মোতালেব চৌধুরী ও বেশ বকা ঝকা করলো ইমনকে।
ইমন তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আসো কি কাজ করেছো সেটা না হয় পরে শুনা যাবে। তোমার মা সারাদিন কিছু মুখে দেয় নি। আর আমার মেয়েও সারাদিন কিছু মুখে দেয় নি । সেই যে দরজা বন্ধ করেছে আর খুলেও নি। মইন চৌধুরী কথা গুলো বলে উপরে যেতে নিলো।
মূহুর্তেই ইমনের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। বুক টা ধক করে ওঠলো।
দরজা বন্ধ করেছে মানে?  আর তোমরা এখানে খোশ গল্প করছো সবাই মিলে। রেগে গিয়ে বললো ইমন।
মইন চৌধুরী থেমে গেলো।
ভাই রাগ করো না। আমি জানালা দিয়ে চেক করেছি মুসকান শুয়ে শুয়ে কেঁদেই চলেছে। অনেক ডাকাডাকি করেও কাজ হয়নি। (দিপক)

ইমন আর এক মূহুর্তও দেরী না করে ছুটে উপরে চলে গেলো। বাড়ির সবাই নিশ্চিতে যে যার কাজে মন দিলো। ইমন এসে গেছে মুসকান কে সেই সামলে নিবে এখন আর কারো চিন্তা নেই।
দরজায় দুবার নক করেও কাজ হলো না।
মুসকান দরজা খুলো আমি খুবই ক্লান্ত।
ইমনের গলার আওয়াজ শুনেই মুসকান বিছানা ছেড়ে ওঠে দৌড়ে দরজা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়লো তার বুকে। ইমন টাল সামলাতে না পেড়ে পড়ে যেতে নিয়েও পড়লো না  মুসকানকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। মুসকান ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে।
তুমি কোথায় চলে গেছিলে……. এইভাবে কেনো গেলে তুমি?  আমার খুব কষ্ট হয়েছে, খুব চিন্তা হয়েছে।বলেই অঝরে কাঁদতে লাগলো মুসকান।

ইমনের খুব ভালো লাগছে মুসকানের মনে তার এতোটা গুরুত্ব সৃষ্টি হয়েছে দেখে। বুকের ভিতর একটা প্রশান্তি কাজ করলো তার। সারাদিনের সব ক্লান্তি যেনো এক নিমিষেই দূর হয়ে গেলো।

আরে বোকা মেয়ে কেঁদো না তো খুব দরকারি কাজে গিয়েছিলাম। ফ্রেশ হয়ে ডিনার টা সেরে নিয়ে সব বলবো চলো।
মুসকান ইমনকে একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
আমার থেকে কাজের গুরুত্ব টাই বেশি হয়ে গেলো। সারাটাদিন কোন খোঁজ নেই। ঘুম থেকে ওঠেই কাজে চলে গেলে। একটা বার তো বলে যেতে পারতে। যা করেছো ভালোই এখন এসেছো কেনো?  সারাদিন যেখানে ছিলে সেখানে যাও। ধমকের স্বরে এক দমে কথা গুলো বলে দূরে সরে গেলো মুসকান। চোখ দিয়ে পানির পরিবর্তে এখন যেনো আগুন ঝরছে।

ইমনের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। একি রূপ তার বউয়ের। এততো রাগ, এততো অভীমান?
মুসকান আর কিছু না বলে রাগে গটগট করতে করতে বেরিয়ে গেলো।
ইমন তার যাওয়ার পানে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো।

বউ তো রেগে গেছে এখন কি হবে?  বউ এর রাগ কি করে ভাঙাবো?  একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো ইমন।
সবাই মিলে একসাথে ডিনার করলো। মুসকান নিচের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করলো। পুরোটা সময় কারো দিকে সে তাকায় নি।
ইমন বেশ বুঝলো রাগটা বেশ ভারী হয়েছে আজ।
কিন্তু আমি কেনো না বলে বেরিয়েছি কোথায় গিয়েছিলাম সব শুনলে আর রেগে থাকবে না জানি। এইতো আর একটু সময় সব রাগ ভাঙিয়ে দিবো। মনে মনে ভাবলো ইমন।
সবার খাওয়া শেষে মোজাম্মেল চৌধুরী ইমনকে জিগ্যাস করলেন কোথায় গিয়েছিলি?
ইমন বললো- খুব জরুরি কাজে কিন্তু কি কাজ এই মূহুর্তে বলতে পারছিনা বলেই উপরে চলে গেলো ইমন। ইমনের কথায় কেউ রাগ না করলেও মুসকান আরো দ্বিগুন রেগে গেলো।
আর ঠিক করলো সে আজ ইমনের সাথে থাকবেনা তার রুমেও যাবে না এটাই তার শাস্তি আজকের জন্য।

মুসকান ওর নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আসার সময় দীপান্বিতা বার বার বলেছে – বেশী রাগ করতে গিয়ে নিজের বিপদ নিজে ডাকিস না। পাগলকে ক্ষেপিয়ে তুলিস না। রাগ না করে ইমনকে ভালো করে জিগ্যাস কর কোথায় ছিলো।
মুসকান বললো- পারবোনা আমি। আর আমি ঐরুমেও যাবো না আমার রুমে আমি ঘুমাবো  তুমি যাও তো বলেই মুসকান গটগট করে এসে শুয়ে পড়েছে।

এগারোটা বেজে গেছে। এবার ইমন বিরক্ত হয়ে গেছে দু’ঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করছে মুসকানের জন্য।
কি করছে এতো যে এখনো রুমে আসছে না। এবার ইমনের রাগ ওঠে গেলো রেগে রুম থেকে বেরিয়ে ।
চিৎকার দিয়ে ডাকলো…… মুসকানননন………..

পুরো বাড়িটাই যেনো কেঁপে ওঠেছে ইমনের এক ডাকে। এমনিতেই সারাদিন বেশ ধকল গেছে তার। ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরেছে। ভেবেছিলো ফ্রি হয়ে মুসকান কে সব বলবে। কিন্তু তার তো কোন খবড় নেই। তাই আর রাগ টা কে কন্ট্রোল করতে পারলো না।
ইরাবতী দৌড়ে বেরিয়ে এলো সেই সাথে দীপান্বিতা ও।
দিপক ও বেরিয়ে এসেছে ।
দীপান্বিতা ভয়ে ভয়ে ইমনের সামনে গিয়ে বললো- আসলে মেয়েটা একটু রাগ করেছে তো তাই খেয়ে দেয়ে ওর নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
কথাটা শুনে ইমনের মেজাজটা পুরোই বিগরে গেলো।
ইরাবতী  কিছু না বলেই চলে গেলো । দিপক ও চলে গেলো।
দীপান্বিতা বললো- তুমিও তো ক্লান্ত ঘুমিও পড়ো যাও বলেই সেও চলে গেলো। সবাই যেনো তার সামনে থেকে চলে গেলেই রেহাই পায়।

ইমনের ডাক শুনে মুসকানের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো। রাগ করে কি লাভ হলো রাগ করে আরো বিপদ ডেকে আনলাম। এখন আমার জান যায় যায় অবস্থা। মনে মনে বলছে আর আল্লাহ আল্লাহ করছে মুসকান।
দরজায় টোকা পড়তেই মুসকান ধপ করে ওঠে বোসলো।
এখন কি হবে বলেই  মুসকান কাঁদতে লাগলো ভয়ে।
কয়েকবার টোকা পড়তেই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।  কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে দিলো।
ইমন রাগি চোখে তাকালো মুসকানের দিকে। কঠোর গলায় বললো- এটা করে কি লাভ হলো তোমার?  মাঝখান থেকে আমার মেজাজটা খারাপ করে দিলা। এখন যদি তোমাকে শাস্তি দেই কে বাঁচাবে তোমায়?
মুসকান কান্না জুরে দিলো। তুমি আমাকে না বলে চলে গেছিলে, তাই তো আমি তোমার সাথে আজকে না ঘুমিয়ে তোমাকে শাস্তি দিতে চেয়েছি।…..
ইমন মুসকানকে কোলে তুলে নিয়ে বললো- এখন দেখো শাস্তি কে পায় ইমন পায় নাকি মুসকান পায়। বলেই নিজের রুমে চলে গেলো ইমন।
মুসকান কে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো…সেও তার উপর শুয়ে পড়লো। মুসকান বাঁধা দিলেও কোন কাজ হলো না । সারারাত তার উপর রোমান্টিক অত্যাচার চালিয়ে গেলো। সারারাত কেউ চোখের পাতা এক করেনি । শেষরাতে ইমন মুসকান কে বুকে জরিয়ে নিলো আর বললো-
আমাকে ছেড়ে এক রাত অন্যকোথাও থাকার কথা ভুলেও চিন্তা করবে না  আর যদি করেছো আজ যা হলো এটার রিটার্ন হবে। কোন ছাড়াছাড়ি নেই যতোই কান্নাকাটি করো লাভ নেই যেমনটা আজ হলো না।
মুসকান কোন কথা বললো না শুধু গুটিশুটি মেরে ইমনের বুকে শুয়ে রইলো।
ইমন ও মুসকানকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো-

আমি ঐ লোকটার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম আর লোকটাকে ময়মনসিংহ পৌঁছে দিয়ে এসেছি। আর সব খোঁজ খবড় নিয়ে এসেছি।
মুসকান ইমনের দিকে তাকালো ড্রিম লাইটের আলোতে ঝাপসা দেখতে পেলো। ইমন আবারো বললো- হুম  ওনি তোমার বাবা নয় তবে ওনাকে তোমার বাবাই পাঠিয়েছে। তোমার নানী যার থেকে তোমাকে নিয়ে এসেছিলাম। ওনি মারা গেছেন তিনমাস হলো। মারা যাওয়ার আগে ওনি সত্যিটা ওনার মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে বলে গেছিলেন।
তোমার মা তোমাকে দেখতে চেয়েছে কিন্তু তোমার বাবা মানুষ টা খুব একটা সুবিধার না । এই কথাটা আমি আগেও শুনেছি আর এবারেও শুনেছি। ওনি মেয়েকে দেখার ইচ্ছা পোষন করেছে একটাই কারনে সেটা হচ্ছে লোভ । আর ওনার প্ল্যান ছিলো আমার ঠিকানা খুঁজে বের করে তোমাকে খুঁজে বের করে তোমাকে তার পরিচয় দিবে। আর তারপর তোমাকে ইমোশনালি ব্ল্যামেইল করবে। তুমি মা বাবার টানে তার সাথে চলে যাবে আর ওনি তোমাকে আটকিয়ে আমাকে চাপ দিয়ে টাকা পয়সা হাসিল করবে।
আর এসব আমি ঐ লোকটার মুখ থেকে বের করেছি। বয়স্ক মানুষের গায়ে হাত আমি তুলিনা তাই টাকার লোভ দেখিয়ে সব কথা বের করেছি।আর ওনাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ময়মনসিংহ রেখে এসেছি আর তোমার বাবার সাথেও দেখা করে এসেছি। আর বলেও এসেছি দ্বিতীয় বার যেনো এমন কথা চিন্তা ও না করে। তাহলে একদম জানে মেরে দিবো সবগুলো কে।

মুসকান কথাগুলো শুনে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ইমনকে।
ইমন ও তাকে জরিয়ে নিয়ে বললো- ইমন চৌধুরীর সাথে খেলতে এসেছিলো খেলা শুরুর আগেই শেষ করে দিয়েছি সব।
কিন্তু আমি একটা জিনিস ভেবেছি তোমার মা কে আমি ঢাকা নিয়ে আসবো। তুমি ভয় পেওনা আমাদের কাছে না। তোমার কাছেও না কিন্তু ওনি তো তোমার জন্মদাএী মা। ওনার জন্যই আমি তোমাকে পেয়েছি তাই ওনার একটা নিরাপদ জায়গা দেওয়া আমার কর্তব্য। তেমার বাবা ওনাকে খুব টর্চার করে সেই টর্চার থেকে আমি ওনাকে রেহাই দিতে চাই।
ইমন ওর প্ল্যান সম্পর্কে আরো অনেক কিছুই বললো। কিন্তু সেসব মুসকানের কানে পৌঁছাল না। কারন সে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইমন যখন টের পেলো মুসকান ঘুমাচ্ছে তখন ভাবলো- এই মেয়ে আজ গেছে………..  সারাটাদিন মাটি করে দিয়েছি। ( মুচকি হেসে)

সেদিন ইমন সারাদিন বাড়িতেই কাটালো। সারাদিন বউ এর সেবা করতে হলো রুম থেকে মুসকানকে বের হতে দিলো না। কারন তাহলে সবার সামনে লজ্জায় পড়তে হবে। মুসকানও সারাদিন ঘুমিয়ে কাটালো সকালে শুধু ইমন ভাত খাওয়িয়ে একটা নাপা এক্সট্রা খাওয়িয়ে দিয়েছে।  দুপুরে দুজনই রুমে খাওয়া দাওয়া করলো।দিন পেরিয়ে রাত হলো। রাত পেরিয়ে দিন। এভাবেই চলতে থাকলো তাদের ভালবাসাময় সময় গুলো। এর মধ্যে তাদের বিয়ের ডেট ও ঠিক করা হলো।
খুব ধুমধামের সাথে তাদের তৃতীয় বার বিবাহ সম্পন্ন হলো। তাদের বিয়ের একমাস বাদেই দিপক ও বিয়ে করলো। দুই বউ নিয়ে চৌধুরী পরিবার বেশ রমরমা হয়ে গেলো।
দিপকের বউ মুসকানের থেকে দুবছরের সিনিয়র থাকায় সেও মুসকান কে ছোট বোনের মতোই ভালবাসে। এক সম্পর্কে মুসকান দিপকের বউ এশার বড় আরেক সম্পর্কে ছোট ননদ। বয়সে ছোট হওয়াতে সে মুসকান কে নাম ধরেই ডাকে।

কেটে গেছে বেশ কয়েক মাস। মুসকানকেও ভার্সিটিতে ভর্তি করানো হয়েছে। ইমনও বিজনেসে মন দিয়েছে। তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ ভালোই কাটছে। বিজনেসের পাশাপাশি ইমন মুসকানকেও যথেষ্ট সময় দেয়  অফিস আর সংসারে সময় দিতে গিয়ে পলিটিকস জীবন থেকে অনেকটাই দূরে সরে এসেছে। কিন্তু তার চ্যালারা মাঝে মাঝেই তার সাথে দেখা করে যায়। যে কোন জরুরি মিটিং এ ইমনকে থাকতেই হয়। তবে খুব কম সময় দেয়। মুসকান এগুলো তেমন পছন্দ করেনা৷ এছাড়া মারামারি কাটাকাটি সে ভীষণ ভয় পায়।
তার কথাতেই ইমন সেদিকে তেমন ভীরে না। তবে বিপক্ষ দলরা এখনো বাঘ এর মতো ভয় পায় ইমন কে।

একদিন মুসকান ইমন কে জিগ্যাস করেছিলো- আচ্ছা পলিটিকস তো তোমার নেশা। তাহলে এটা ছাড়লে কেনো? 
ইমনের উওর ছিলো –
কই ছাড়লাম আর ছেড়েছি কিন্তু ভুলিনি তো। প্রয়োজনে আবারো সেই নেশায় মত্ত হতে পারবো।
তবে কি জানো? 
মুসকানের কানের কাছে এসে ভারী আওয়াজে –
তোমার চেয়ে ভয়াবহ আর কোন নেশা আমাকে আজও ছুঁতে পারেনি!?

একবছর পর –

ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই মাথা ঘুরে পড়ে যায় মুসকান।
ইমন গাড়িতে ওয়েট করছিলো মুসকানের জন্য দিপুর ডাকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। দিপক আর এশা হানিমুনে গিয়েছে। বাড়িতে তেমন কেউ নেই মোতালেব চৌধুরী ও গ্রামের বাড়িতে গেছেন। মোজাম্মেল চৌধুরী আর মইন চৌধুরী আগেই বেরিয়ে গেছেন।
ইরাবতী দীপান্বিতা ছুটে এলো। ইমন মুসকান কে সেন্সলেস অবস্থায় দেখে বেশ ঘাবরে যায়।
তাকে পাজাকোল করে নিয়ে উপরে চলে যায়।
দিপু ডক্টর কে ফোন করে উপরে যায়। ইরাবতী দীপান্বিতা মুসকানের চোখে মুখে পানি ছিটাতেই তার জ্ঞান ফিরে।
ইমনের কোলে মাথা মুসকানের চোখ খুলতেই ইমনের মুখ ভেসে আসে।
সবাই একসাথে বলে ওঠলো –
তোর খারাপ লাগছে বলবিতো নাকি?  ( দীপান্বিতা)
শরীর দূর্বল লাগছে একবার বলতে পারতে জোর করে ভার্সিটিতে কে যেতে বলেছে তোমায়?  ( ইমন )
আহ তোরা মেয়েটা কে এখন এসব বলা বাদ দিবি। ইরাবতী কথাটা বলেই মুসকানের পাশে এসে বোসলো।
মুসকান কেমন লাগছে?? 

মামনি মাথাটা বেশ ভারী লাগছে।
ইমন কপালে গলায় হাত দিলো।
কই জ্বর তো নেই তাহলে এমন হওয়ার মানে কি?
ইরাবতী মুচকি হেসে ওঠে পড়লো। দীপান্বিতা ও কিছু একটা আচ করলো।
ইমনের তার মাকে বেশ সন্দেহ হলো সেই সাথে মুসকান কেও।

কারন বেশ কিছুদিন যাবৎ ই মুসকানকে সে খেয়াল করছে৷ খাওয়া দাওয়া একদম ই করতে চায় না।
খাওয়ার মাঝে বমি হওয়াটা তো নিত্যদিনের স্বভাব হয়ে গেছে। ইমন বেশ চিন্তিত মুখে বসে রইলো।

ডক্টর এসে মুসকান কে চেক আপ করলো। আর বললো শরীর তো বেশ দূর্বল ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করোনা নাকি।
ইমন আজ থেকে ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করাবে । খেয়াল রাখবে ওর আর কিছু টেস্ট দিয়ে দিচ্ছি কালই গিয়ে এগুলো করিয়ে নিবে।

ডক্টর বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইমনের কাঁধে হাত রেখে বললো- বাবা হতে চলেছো সবাইকে মিষ্টি মুখ করিও।
মূহুর্তেই ইমনের শরীরে শীতল শিহরন বয়ে গেলো।
সে নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।
আলাদা এক ভাললাগা বয়ে গেলো তার শরীর মন জুরে।
কিন্তু এটা কেনো হলো?
আমি যে পই পই করে বললাম আরো এক-দুবছর পর কনসিভ করবে। আমার কথা না শুনেই এতোবড় সিদ্ধান্ত একাই নিয়ে নিলো নাকি এখানে আমার মায়ের ও হাত আছে  মায়ের দিকে তাকালো ইমন। ইরাবতীর হাসি মুখটা মিলিয়ে গেলো সে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো নিচে।
ইমন এবার সিওর হলো মুসকান তার মায়ের কথাতেই ইমনের অবাধ্য হয়েছে। সে কোন প্রকার সেফটি নেয়নি। মনে মনে খুশি এবং রাগ দুটোই অনুভব করলো ইমন কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলো না।

আচ্ছা আংকেল নিচে গিয়ে বসুন মা মিষ্টি পানির ব্যবস্থা করছে। ইমন জানে তার মা এটাই করছে এখন ।
দিপু তো প্রচুর খুশি সে একসাথে মামা, চাচা দুটোই হবে। দৌড়ে গিয়ে দিপককে ফোন করে জানালো সে।
দীপান্বিতা ও খুশি হয়ে তার স্বামী কে ফোন করতে গেলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
রুমে ইমন আর মুসকান শুধু আর কেউ নেই।
ইমন মুসকানের পাশে গিয়ে বোসলো। ধীরে ধীরে কান এগিয়ে নিলো মুসকানের পেটের দিকে।

এই এখানে কে আছিস??  এততো আগেই আসার জন্য পাগল হয়ে গেছিস?? মা কে একটু ভালবেসেছি বলে হিংসে হয়েছে নাকি খুব??  দিলিতো একবছর আমার আদরে জ্বল ঢেলে। এখন তো আদর করতে গেলেও হাজার বার ভেবে করতে হবে।
মুসকান লজ্জায় একদম লালে লাল হয়ে গেছে৷ ইমনের বলা কথাতে খুশিতে তার চোখ গড়িয়ে পানি বের হয়ে গেলো।
ইমন ধীরে ধীরে ওঠে মুসকানের দিকে তাকালো।
মুসকান চোখ সরিয়ে নিলো।

ইমন স্থির দৃষ্টিতে মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো- ইচ্ছা তো করছে ইচ্ছারকম শাস্তি দেই। আমার কথার অবাধ্য হওয়া……….  দাঁড়াও এই শাস্তি তোলা রইলো। তোমার মতলব আমার বেশ বোঝা হয়েছে। আমার কাজের উপর সবসময় তো তোমার হিংসে তাইনা। আর এইজন্যেই এটা করলে এখন কাজ বাদ দিয়ে মা আর বাবু সামলাতে হবে।
আমি ভেবে পাইনা তোমার এততো সাহস কই থেকে আসে। নিজেইতো বাচ্চা আরেকটা বাচ্চা কে কি করে সামলাবে। বার বার বললাম মা যা ইচ্ছা বলুক তুমি অনার্স টা শেষ করো তারপর বেবী নেওয়ার কথা ভাববো। পড়াশোনার মাঝে এমন কাজ মোটেই ঠিক হয়নি। আর বয়স কতো হুম বিশ ই তো হয়নি। বিশ পড়তেও দিলে না একটা কথাও শুনোনা।
এই আজ বললাম কথার অবাধ্য হবে তো একদম খেয়ে ফেলবো বলে দিলাম।
এখন আর একা নেই সাথে আরেকজন ও আছে। যা বলবো অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। নয় এমন অবস্থা করবো দেখে নিও বলেই মুসকানের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
মুসকান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো  আর ভাবলো-
কতোটা ভাগ্য নিয়ে যে এই মানুষ টাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি……………………….
কিন্তু এখন তো আমার উপর আরো ভালবাসার টর্চার হবে শুধু তো পুচকির বাবা না সবাই তো এখন আমাকে কেয়ার করে করে পাগল বানিয়ে দিবে ?।
শরীর দূর্বল থাকায় সুখময় কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেলো মুসকান।

ইমন চিন্তা করো না যা হয়েছে সব আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো।

সেটা তো আমি করবো কাকি। বাবা হওয়ার আনন্দ তো আমার মাঝে অবশ্যই এসেছে। আর মুসকানের থেকে বেশী খুশি আমি হয়েছি। কিন্তু তোমরা সবাই জানো মুসকান খুবই দূর্বল। মানসিক শারীরিক দুদিক থেকেই বেশ দূর্বল। ও আর সবার মতো তেমন স্ট্রং নয়। আমি চেয়েছিলাম একটা বয়সে আসুক বিশ পার হোক পঁচিশ বছর বয়সের মধ্যেই একটা বেবী নিতে চেয়েছিলাম। আর এটা আমি সব দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বয়সের সাথে সাথে শারীরিক ভাবেও মুসকান তৈরী হতো। বাচ্চা নেওয়ার ও একটা পারফেক্ট বয়স আছে। আর আমি মনে করি মুসকানের এই বয়স টা বিয়ের জন্য পারফেক্ট হলেও বাচ্চা নেওয়ার জন্য পারফেক্ট না।
আমি মুসকান কে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইছিলাম না কাকি।
চিন্তা করো না কিছু হবে না আল্লাহ ভরসা। কাল গিয়ে চেক আপ করে নিও আমরা সবাই মিলে ওর যত্ন নিবো।
বাড়ির সবাই ইমনকে বুঝালো। ইমনও আল্লাহ ভরসা বলে এসব চিন্তা বাদ দিলো।
পুরো বাড়িতে খুশির ঢেউ খেলে গেলো।
মোতালেব চৌধুরী ও শুনে বেশ খুশি হলো। সবাই বেশ খুশি। সেই সাথে মুসকানের আদর ও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।
পরেরদিন সব টেস্ট পজিটিভ এলো। ইমন মুসকানকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে গেলো।

ইমন মুসকান কে প্রচুর প্রচুর ভালবাসা দিচ্ছে সারাদিন ইমন অফিস সামলিয়ে মুসকানের ও খোঁজ নিচ্ছে। মাঝে মাঝে দুপুরে বাড়ি এসে মুসকানের সাথে একসাথে লাঞ্চ করছে। বাড়িটা যেনো একদম পরিপূর্ণ।

চৌধুরী বাড়ির সবাই দিনগুনে যাচ্ছে নতুন সদস্য আসার।
ইমন মুসকান ও দিন গুনে চলেছে। তিনমাসের প্র্যাগন্যান্ট মুসকান। ডক্টরের থেকে চেকআপ করে বাড়ি ফিরেছে ইমন আর মুসকান।
ইমন মুসকান কে ভাত মেখে খাওয়িয়ে দিচ্ছে আর নানারকম গল্প করছে।
গল্পের এক পর্যায়ে মুসকান বললো- আচ্ছা পুচকির নাম কি হবে???…………..

ইমন বললো-  পুচকোও তো হতে পারে……

না না পুচকো না আমাদের পুচকি হবে । তুমি নাম বলো???

ইমন বেশ কিছুক্ষন ভেবে খাবাড় প্লেট টা রেখে হাত ধুয়ে মুসকান কে বুকে জরিয়ে নিলো। আর বললো-

আমাদের পুচকির নাম হবে তোমার নামের প্রথম ওয়ার্ড আর আমার নামের শেষ ওয়ার্ড।

মুসকান বললো-
কিহ……………..

ইমন ঠোঁটের কোনে হাসির ঝলক নিয়ে বললো-

❤মুন❤

# সমাপ্ত #

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে