“ফাঁদে পড়ে” পর্ব-(৫)

0
1080

“ফাঁদে পড়ে” পর্ব-(৫)

আমি বুঝি না, দুই হিরো একসাথে চলে আসে কি করে? দাদু বাইরে থাকলে তিতাসকে আশেপাশেও পাওয়া যায় না। কিন্তু দাদু বাড়ি এলেই তিতাস কোথা থেকে যেন ছুঁ মেরে সামনে চলে আসে। দাদুর পাশে বসতেই তিতাস সামনে এসে হাজির হলো। বলল-
“ভীষণ পিপাসা পেয়েছে, কুসুম এক গ্লাস শরবত আনো তো!”
আমি উঠে দাঁড়াতেই দাদু আমার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললেন-
“তুমি উঠবে না সুইটি।”
আমার তখন ঐ গানটা মনে পড়ে গেল, “বিধি তুমি বলে দাও আমি কার?
দুটি মানুষ একটি মনের দাবীদার….”

দাদু মর্জিনাকে ডেকে শরবত দিতে বললেন। তারপর তিতাসকে বললেন-
“কতবার বলেছি যে, দাদীর নাম ধরে ডাকবে না। এটা একটা অসভ্যতা। কিন্তু তুমি তো শুনছোই না দেখছি!”
তিতাস জবাব না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল-
“কথা কি কানে ঢুকে না তোমার?”
দাদু রেগে উঠে বললেন-
“এত বড় সাহস তুমি পাও কোথা থেকে যে, আমার স্ত্রীর সাথে তুমি ধমকে কথা বলছো?”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

আমি বললাম-
“আচ্ছা আমি শরবত আনছি।”
দাদু বললেন-
“একদম উঠবে না। নাতি সেবা করার দায় তোমার নেই। তুমি আমার স্ত্রী, চাইলে আমার সেবা করতে পারো। যদিও আমি এসবে জোর করবো না কখনও।”
তিতাস রেগে উঠে বলল-
“বুড়ো বয়সে তোমার এই ভিমরতী দেখে আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে দাদু। আমি আর এবাড়িতেই থাকবো না।”
“কোথায় যাবে? ঠিক আছে যাও।”
“আমি গেলে তো তোমার সুবিধা হয় তাই না?”
“হ্যাঁ একটু সুবিধা তো হবেই। তুমি তো কয়েকদিন ধরে আমার বেডরুম দখল করে আছো।”
“দখল করেই থাকবো আমি।”
“দেখি কত দিন দখল করে থাকতে পারো।”
মর্জিনা শরবত আনলো কিন্তু তিতাস না খেয়েই উঠে চলে গেল।

সন্ধ্যার নাস্তার পরে টিভি দেখছিলাম। তখন টিভিতে জবা হচ্ছিল। হঠাৎ ছোট বউমার কথা মনে পড়ে মন কেমন করতে শুরু করলো। আমি তাদের শাশুড়ি, হোক নকল তাও তো শাশুড়িই। ওদের প্রতি আমার দায়িত্ব কর্তব্যগুলো এড়িয়ে গেলে হবে? একদম হবে না। তাই তো ছোট বউমার রুমে উঁকি দিতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। আমাকে অভদ্র ভাবতে হবে না পাঠক পাঠিকারা। মূলত আমি ভীষণ ভদ্র নায়িকা মৌসুমী। ছোট পুত্র বাড়িতে নেই, ছোট বউমা রুমে একাই আছে তাই নির্দ্বিধায় ওরুমে যেতেই পারি। সে নিশ্চয়ই সাজুগুজু নিয়ে ব্যস্ত আছে। আমি বুঝি না, তার এই পেত্নী মার্কা সাজ দেখে কে? দুই পুত্রই তাদের বাবার ব্যবসা নিয়ে রাতদিন ব্যস্ত থাকেন। তারা দেশ বিদেশ করেই কাটান। স্বামী বাড়িতে থাকে না, আর সে হুদাই সেজেগুজে বসে থাকে। এই টাইপের মেয়েরা সিনেমাতে লাইনে এলেও বাস্তবে কোনো কালেও লাইনে আসে না। আমি লাইনে আনার চেষ্টা নয় তার সাথে একটু মজা করতে চাই। আর সাজনে ওয়ালিকে একটু ঝাঁকাঝাকি করতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। আসলে কাজ না থাকলে মাথায় শয়তান ভর করে আর কি। যাই ঝাঁকিয়ে আসি।
দরজায় দাঁড়িয়ে নক করলাম। ভেতর থেকে আওয়াজ এলো-
“কে?”
দরজা ঠেলে মুচকি হেসে বললাম-
“তোমার শাশুমা।”
সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল-
“কি চাই এখানে?”
আমি ইনোসেন্ট মুখ করে বললাম-“একটা দরকারি কথা ছিল গো ছোট বউমা।”
“আমি যার তার সাথে কথা বলি না, তুমি এখন যাও।”
আহ্ মরণ! মনে হচ্ছে তার সাথে কথা বলার জন্য আমার পরাণ পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে, হুহ। কিন্তু কথা তো বলতেই হবে, তুমি কথা না বললে তো ঝাঁকাঝাকি হবে না ছোট বউমা। ঝাঁকাঝাকি না হলে তো আমার ভাল্লাগবে না। তাই এসো দু’জন কথাকথি করি।
বললাম-
“আসলে তুমি আমায় ভুল বুঝেছো। আমি প্রথমদিন থেকেই তোমাকে খুব পছন্দ করি। তুমি দেখতে কি সুন্দরী! কি সুন্দর করে সেজে থাকো। ভারী সুন্দর লাগে। তাই আমি তোমার ভালোই চাই।”
সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। লে ঠ্যালা! অবাক হবার মতো কি বললাম? পাম দেয়া বেশি হয়ে গেল নাকি? ধুর আমি কাউকে পটাতেই পারি না। আজও তিতাসকে একটুও পটাতে পারিনি। দিনরাত তার ধমক হজম করে চলেছি। ছোট বউমা যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে পটলো নাকি অবাক হলো সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আমি আবার কথা শুরু করলাম-
“অথচ দেখো তোমার বুইড়া শ্বশুর কি শুরু করেছে! এমনিতেই তো সে আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে। তার উপর এখন কি সব প্ল্যান করেছে।”
“কি প্ল্যান করেছে? এই বয়সে সে আবার বাবা হতে চায় নাকি?”
ওহ নো! তার ভাবনা চিন্তা তো দেখছি মেল্লা উর্ধে। কি সব বেশরম কথাবার্তা ভাবছে! বললাম-
“এখনও সে ওসব ভাবেনি। আসলে তিনি নিজের সম্পত্তি বন্টন নিয়ে ভাবছেন।
তিনি বলছেন, যে তার এই রাঙা বউয়ের সংসারের বেশি দায়িত্ব নেবে সে সম্পত্তির অংশ বেশি পাবে। তাই তিনি তোমাদের দেবেন তার সম্পদের চার ভাগের একভাগ। বাকী তিন ভাগ বড় বউমার। কারণ সব দায়িত্ব নাকি বড় বউমাই পালন করে।”
“কিহ?”
“আস্তে, গোপন কথা কাউকে বলা যাবে না।”
সে গলার স্বর নামিয়ে বলল-
“আমি কি করবো তাহলে?”
এই তো লাইনে এসেছো ছোট বউমা। আমি তার কাছে এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম-
“বড় বউমার থেকে দায়িত্বগুলো টেনে কাঁধে নেবে। আর মনে করবে সম্পত্তি টেনে কাঁধে নিচ্ছি। দাদু খুশি মানেই তো তোমার তিন আর বড় বউয়ের এক।”
এই রে দাদুকে দাদু বলে ফেললে তো সন্দেহ করবে। বললাম-
“দাদু বলতে তোমার ছেলে মেয়েদের দাদু বুঝিয়েছি। তুমি যেন আবার আমার দাদু ভেবো না।”
সে মুখটা মলিন করে বলল-
“আমি কাজ করতে পারি না যে।”
“শিখে নেবে। দরকার হলে বড় বউমার থেকে শিখে নেবে। আর কাজের লোক তো আছেই। তোমার কাজ হলো, বড় বউমার কাজগুলো কেড়ে নেয়া। তোমার শ্বশুর যখন দেখবেন যে, তুমি কাজ করছো আর বড় বউমা বসে বসে দিন কাটাচ্ছে তখন পুরাই কেল্লাফতে হয়ে যাবে।”
“কেল্লাফতে মানে?”
“কেল্লাফতে মানে হলো, তোমার তিন আর বড় বউমার এক।”
“আমি সাজবো কখন তাহলে?”
মরণ! সাজলে তো দেখতে পেত্নীর মতো লাগে আর সে পড়ে আছে পেত্নী সাজা নিয়ে। বললাম-
“রাতে সাজবা। স্বামী সাজ দেখলে তোমার পুণ্য হবে। তুমি এহকালের সম্পত্তি আর পরকালের সম্পত্তি দুটোই অর্জন করবে।”

কথাগুলো বলে বের হয়ে এলাম। সে হাবার মতো তাকিয়ে থাকলো।

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ছোট বউমা বাসন মাজছে। গতকাল মজা করে ওসব বলেছি। এ মহিলা তো দেখছি সব সত্যি ভেবে বসে আছে। কিন্তু কি করতে বলেছিলাম আর করছেটা কি? বলেছিলাম সবার খেয়াল টেয়াল রাখতে। এসব কাজের জন্য তো কাজের লোক আছে। কিন্তু ওভার ডোজের ঠ্যালায় দেখছি ছোট বউের মাথা গেছে। সে বাসন মাজা শেষ করে ড্রয়িংরুমে গিয়ে এটা ওটা মুছতে শুরু করলো। আমি হা করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বড় বউমাও ছোট বউমার এসব দেখে ভয় পেয়ে গেছেন। হয়তো ভাবছেন তার ছোট জা পাগল টাগল হয়ে গেছে। কাজের মেয়েটা ছোট বউমার পেছন পেছন ঘুরছে। আর বলছে-
“আপ্নের কি হইচে ছুডু ভাবী? এই সব কাম আপ্নে করতাছেন ক্যা? আমারে দেন আমি করুম।”
সে মর্জিনার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের মনে এটা ওটা করে চলেছে।
বললাম-
“ছোট বউমা এসব কাজ তুমি করছো কেন? তুমি এবাড়ির বউ, তোমার কাজ এসব নয়।”
সে আমার দিকে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো-
“কাজ করছি সেটা তো বাবার চোখে পড়তে হবে তাই না? তিনি যদি দেখতেই না পান তাহলে সাজগোজ ফেলে কাজ করার কি দরকার?”
আমি তো জানিই যে তুমি তিন নেবার জন্য এসব করছো। তিন না ছাই পাবে তুমি। কবে তোমার শ্বশুর আব্বা এসব বলেছেন? তুমি কাজ করো বাপু, আমার তো মজাই লাগছে। বললাম-
“শুধু বাসন মাজলে আর এটা ওটা মুছলে হবে? এতে না হয় আধা হবে। আরো আড়াই বাকী আছে তো। বড় বউমার সব কাজগুলো ছিনতাই করতে পারলেই পাবে পুরাই তিন।”
“চিন্তা করো না, সব ছিনতাই করে নেবো।”

ওমাগো! এই মেয়ে না জানি কি কি ছিনতাই করবে! এতো দেখছি কাজের বেটি রহিমার আই মীন মর্জিনার ভাত মারবে।
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি দাদু দাঁড়িয়ে। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে, এইসব আমার কীর্তি। আমিও তার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলাম। হঠাৎ দেখি তিতাস আমার দিকে এ্যানাগন্ডার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মরজ্বালা! আমি আবার কি করলাম!

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আসছে……
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে