“ফাঁদে পড়ে” পর্ব- (৪)

0
1107

“ফাঁদে পড়ে” পর্ব- (৪)

রাঙা বউয়ের কথা বলতে বলতে দাদুর চোখ ঘোলা হয়ে গেল। তিনি মুখটা ঘুরিয়ে নিজেকে সামলে নিলেন। আমি অবাক হয়ে তার দিকে চেয়ে রইলাম। মানুষটার দুই চোখে তার মৃত স্ত্রীর জন্য গভীর ভালোবাসা দেখলাম। আমি মরে গেলে কী তিতাসও আমাকে এমন করে ভালোবাসবে? নাকি আরেকটা বিয়ে করে আমাকে ভুলে যাবে? ভুলেই হয়তো যাবে। কিছুতেই আমি মরবো না। সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে এটা আমি মরার পরেও সইতে পারবো না। আর আমি মরে গেলে ওর বেঁচে থাকারই বা কী দরকার? দরকার হলে আমি তিতাসকে নিয়েই মরবো। তাও সতীন চাই না আমি। যদিও নায়িকারা এমন ধরনের কথা বলে না। তারা বলে, ‘সব আয়ু তোমাকে দিয়ে যাব।’ কিন্তু আমি একটু অন্য টাইপের নায়িকা মৌসুমী। বলতে পারেন অনেকটাই স্পেশাল।

আমি দাদুকে আর কিছু না বলে পাশের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হলাম। মাত্র শুতে যাব আর ওমনি একটা টিকটিকি এসে আমার কাঁধে পড়লো। আমি তো চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে শুরু করলাম, “বাঁচাও বাঁচাও।” আমার চিৎকারে টিকটিকি লাফ দিয়ে নেমে গেল আর দাদু এরুমে ছুটে এলেন। চোখ খুলে দেখি হুড়মুড় করে তিতাসও রুমে ঢুকেছে। আমি হা করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তিতাসকে রুমে দেখে দাদু ভুলেই গেলেন যে, আমি কেন চিৎকার করলাম সেটা জিজ্ঞেস করতে। হতবাক দৃষ্টিতে তিতাসের দিকে তাকিয়ে উনি বললেন-
“তুমি এই রুমে কি করছো?”

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


তিতাস দাদুর কথার জবাব না দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল-
“তুমি ঠিক আছো তো কুসুম?”
আমার গলার স্বর আটকে গেছে, কোনো শব্দই বের হচ্ছে না। ‘হ্যাঁ’ সুচক মাথা ঝাঁকালাম। কিন্তু এতে সে সন্তুষ্ট হলো না। সে আমার দুই বাহুতে হাত রেখে বলল-
“কথা কেন বলছো না? আমায় বলো কী হয়েছে তোমার? কে কী করেছে তোমায় বলো? দাদু কিছু করেছে? বলো প্লিজ!”
খুব চেষ্টায় স্বর আনলাম। বললাম-
“আমি ঠিক আছি।”
দাদু এগিয়ে এসে তিতাসকে বললেন-
“সে ঠিক আছে কি না তা আমি দেখছি। আর দাদীকে কেউ নাম ধরে ডাকে না। সব সভ্যতা তো ভুলে গেছো দেখছি। যাই হোক, তুমি এখন যাও।”
তিতাস রেগে উঠে বলল-
“লজ্জা করে না তোমার নাতনির বয়সী একটা মেয়েকে হ্যারেজ করতে?”
দাদু হতভম্ব হয়ে বললেন-
“এসব কী বলছো তুমি? স্বামী হয়ে স্ত্রীকে হ্যারেজ কেন করবো? আর আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তুমি ঢুকছো কেন?”
“আমি জাস্ট অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি।”
“এখন নিজের রুমে যাও।”
“আমি যাব না। আজ রাতে আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।”
“মানে? আমি এখন একা নই এটা তো জানোই।”
“আমি এখানেই থাকবো ব্যাস।”
” তুমি কি পাগল হলে?”
“পাগল তো তুমি হয়েছো তাই বিবাহ যোগ্য নাতিকে বিয়ে না দিয়ে নিজে বিয়ে করেছো নাতনি বয়সী একটা মেয়েকে। ছিঃ!”
“তুমি এখনও ছোট, তোমার বিয়ের বয়স এখনও হয়নি।”
“সব বিয়ের বয়স দেখছি একা তোমারই হয়েছে। তাই তো কথায় কথায় বিয়ে করতে শুরু করেছো।”
“তুমি এখন নিজের রুমে যাও তিতাস।”
তিতাস কোনো কথা না বলে সোজা গিয়ে দাদুর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। দাদু বেশ কয়েকবার উঠতে বললেও সে উঠলো না আর কথার জবাবও দিলো না। হঠাৎ দাদু আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন-
“ঠিক আছে সুইটি আমরা দুইজন ছোট রুমের ছোট বেডেই থাকবো। চলো।”
দাদুর কথা শুনে আমার চোখমুখ শুকিয়ে গেল। হঠাৎ তিতাস বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে এসে বলল-
“দাদু তুমি যে বেডে ঘুমাবে আমিও সেই বেডেই ঘুমাবো। তুমি যদি কুসুমের সাথে ঘুমাও তাহলে আমিও কুসুমের সাথেই ঘুমাবো। এখন তুমি ডিসাইড করো যে, তুমি কোথায় ঘুমাবে!”
দাদু বাধ্য হয়ে তার নিজের বিছানায় শুয়ে পড়লেন। আমি পাশের ছোট রুমটায় গিয়ে ঘুমালাম। কি একটা অবস্থা!

কয়েকদিন ধরে তিতাস রাতে দাদুর রুমে ঘুমায়। দাদু বাড়ি ফেরার আগেই তিতাস দাদুর বেড দখল করে বসে থাকে। দাদু চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে তুলে তার পাশে ঘুমান। সেদিন রাতে দাদু বাড়ি ফিরে রুমে ঢুকে দেখলেন তিতাস তার বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে। দাদু বললেন-
“নিজের রুমে গিয়ে বই পড়ো। আমাকে রেস্ট নিতে দাও।”
তিতাস দাদুর দিকে না তাকিয়ে বইয়ের দিকে চোখ রেখেই বলল-
“আমার পাশে শুয়ে রেস্ট নাও। আমি তো আর তোমায় কাতুকুতু দিই না যে, রেস্ট হবে না।”
দাদু বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন-
“তুমি কি বোঝো না যে আমি নতুন বিয়ে করেছি?”
“আমি এসব কেন বুঝবো? আমি কী দু’ চারটা বিয়ে করেছি নাকি যে এসব জানবো, বুঝবো?”
“তাহলে তো তোমার বিয়ের ব্যবস্থাটা করতেই হচ্ছে। তাতে যদি এসব একটু বুঝো।”
“আমাকে একসাথে দশটা বিয়ে দিলেও আমি বউ রেখে এই রুমে এসে থাকবো।”
“বাট হোয়াই?”
“আমি তোমার এই অসামঞ্জস্য বিয়েটা মানি না।”
“তোমার প্রবলেম কোথায়? আমার বা কুসুমের তো কোনো প্রবলেম নেই।”
“আমার প্রবলেম আছে তবে তা তোমায় বলবো না।”
দাদু আর কিছু বললেন না। হয়তো বুঝে গেছেন যে, এ গোয়াড় ছেলের সাথে তিনি পেরে উঠবেন না। এই দুই তিন দিনে আমিও বুঝে গেছি যে, এবাড়িতে দাদুর মুখের উপর কথা বলার সাহস তিতাসের ছাড়া আর কারোর নেই। এদিকে আমার জ্বালা হয়েছে নাতি নাতনিদের নিয়ে। নকল দাদী হয়ে আমি পড়েছি বিপদে। ওরা শুধু গল্প শুনতে চায়। আমি তো গল্প টল্প পারি না। সেই ভয়ে আমি ওদের ঘরে যাই না কিন্তু ওরা তিনজন ঠিকই আসে এরুমে হানা দিতে। রুমে আমাকে একা পেয়ে আমার চুল ধরে টানে, শাড়ির আঁচল ধরে টানে। তবে তিতাস বা দাদু রুমে থাকলে ওরা কেউ আসে না। তিতাসও আজকাল বাড়ির বাইরে খুব কম যায়। যেন দাদু নয়, সে বিয়ে করেছে। অথচ আজ পর্যন্ত সে কাউকে বলেই উঠতে পারেনি যে, তার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। এটা নিয়ে মনে মনে আমার রাগ হয়। আজ যদি সবাই আমাদের রিলেশনের কথা জানতো তাহলে দাদু আমাকে জোর করে আটকে রাখতে পারতেন না। তিতাসের জন্য বেশ হয়েছে। এখন সে ঠ্যালা সামলাক। পারে তো শুধু আমাকে ধমকাতে, অপদার্থ একটা!

বউমাগুলো আমাকে দেখে রাগী চোখে তাকায়। আমি অবশ্য ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলি আর মাঝে মাঝে শাশুড়ি গিরি দেখাই। এত কাল ধরে শাশুড়ি নেই তাদের, তারা একরকম স্বাধীন জীবন যাপন করেছে। হুট করে যদি মেয়ের বয়সী একটা মেয়ে শাশুড়ি গিরি দেখায় তাহলে সেটা বদহজম হবারই কথা। আমার আবশ্য শাশুড়ি গিরি দেখাতে হেব্বি লাগছে। বুড়ো বয়সে যেটা করতাম সেটা এই বয়সেই করছি। আলাদা একটা অনুভূতি হচ্ছে। এবাড়ির বড় বউ অর্থাৎ তিতাসের মা, উনি একটু সাদামাটা ধরনের। সারাদিন সংসার নিয়েই পড়ে থাকেন। আর ছোট বউটা পুরাই অকর্মা। সে পায়ের উপর পা তুলে খাবে আর সাজগোজ করবে। একজন খেটে মরে আরেকজন সুখে মরে। গা জ্বলে যায় এসব দেখে। একদিন ছোট বউমাকে বললাম-
“প্রতিদিন বড় বউমা রান্না করে, তুমি দেখি শুধু নেইল পলিশ লাগাও। তা রান্না বান্না বুঝি পারো না?”
সে চোখ পাকিয়ে বলল-
“আমি বাইরের কাউকে জবাব দিতে বাধ্য নই।”
মনে মনে বললাম, সব কাজ তো তিতাসের মাকে দিয়ে করাও আর নিজে বিবি সাহেবা হয়ে বসে থাকো। তোমাকে বিবি সাহেবা হয়ে থাকাচ্ছি দাঁড়াও। তোমাকে লাইনে এনেই ছাড়বো সাজনে ওয়ালি। মুচকি হেসে বললাম-
“তোমার শশুরের একমাত্র বউকেও তোমার বাইরের মানুষ লাগছে? তাহলে তুমি মনে হয় এবাড়িতেই জন্ম নিয়েছো, তাই না ছোট বউমা?”
সে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চোখ রাঙিয়ে বলল-
__”কিহ বললে তুমি? আমাকে অপমান করার সাহস তোমাকে কে দিয়েছে?”
আমি বেশ নম্র স্বরে বললাম-
“একদম আওয়াজ নিচে। আমাকে ধমকানোর সাহস তোমাকেই বা কে দিয়েছে? কী খারাপ কথা বলেছি তোমায়? অধিকার সমান পরিমাণ নিতে চাইলে যে, দায়িত্বও সমান পরিমাণ নিতে হয় সেটা কি তোমার জানা নেই?”
“আমি তোমাকে এ বাড়ি থেকে তাড়িয়েই ছাড়বো। এখনি ভাইয়াকে ফোন করছি।”
“তোমার ভাইয়া গুন্ডা নাকি? আর সে কী তোমার শ্বশুরের চেয়েও বড় গুন্ডা?”
সে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো। চোখ দুটো যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। আমি তার দিকে দুষ্টুমির হাসির দৃষ্টিতে তাকালাম। এতে সে আরও রেগে গেল। সে চলে যেতেই পেছনে ফিরে দেখি দাদু দাঁড়িয়ে আছেন। আমি একটু ভড়কেই গেলাম। আমি তার নকল বউ কিন্তু তার বউমাগুলো তো নকল নয়। তাই তাদের পেছনে লাগার জন্য দাদু আমাকে উল্টা ঝাড়ি দিতেই পারেন। দাদু আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন-
” ওয়াও! তুমিই পারবে ছোট বউমাকে লাইনে আনতে।”
আমি হা করে দাদুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তারমানে ছোট বউমার এমন চলনভঙ্গি উনারও পছন্দ না। কাউকে টাইট দিয়ে লাইনে আনতে আমার দারুণ লাগে। অনেক সিনেমাতেই এমন কাহিনী আছে। আমার তো এসব সিনেমা সিনেমা লাগছে। কিন্তু হিরো তিতাস কোথায়? নায়িকা মৌসুমী আছে অথচ তার নায়ক নেই। যখনই তিতাসকে খুঁজছি তখনই হিরো দাদু এসে সামনে দাঁড়াচ্ছেন। কি এক জ্বালায় পড়েছি আমি! দাদু রোমান্টিক চোখে তাকিয়ে বললেন-
“সুইটি বেবি দাঁড়িয়ে কেন? আমার পাশে এসে বসো।”
তার মুখে “সুইটি” “বেবি” এসব শুনলে আমার মাথা ঘুরান্টি দেয়। তিতাসের সাথে এত দীর্ঘদিনের রিলেশনে সে কখনও আমাকে এসব বলেনি। অথচ বুড়ো দাদু সারাদিন এসব বলেন। আমার বদ হজম না হয়ে যায়।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আসছে…….
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে