প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ৭

0
1878

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

রাতে পড়তে বসলাম তখন সাইয়ান এসে পাশের চেয়ারে বসলো, এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে আমার দিকে
–কি দেখ
–আমার পরিটাকে
–এভাবে থাকিয়ে থাকলে আমি পড়ব কিভাবে যাও এখান থেকে
–যাবো না
–পরে এসো এখন যাও
হঠাৎ দরজায় টোকা পরলো
আম্মু: অর্পিতা দরজা খুল
–খুলছি
–কিরে তুই একা একা কথা বলছিলি কেন
–কই না তো
–একদম মিথ্যে বলবি না আমি শুনেছি তুই কার সাথে যেন কথা বলছিলি
–কার সাথে বলবো এখানে তো কেউ নেই
–তাইতো ভাবছি (বলতে বলতে আম্মু চেয়ারে বসতে গেলো ওই চেয়ারে তো সাইয়ান বসে আছে)
–আম্মু চেয়ারে বসো না খাটে বস
–কেন চেয়ারে বসলে কি সমস্যা
–না এমনি বস (ততোক্ষণে সাইয়ান চেয়ার ছেড়ে খাটে গিয়ে বসেছে)
–তোর কি হয়েছে বল তো একা একা কথা বলিস এখন আবার উল্টাপাল্টা কথা বলছিস
–আমার আবার কি হবে কিছু হয়নি তুমি যাও তো আমি পড়বো
–আচ্ছা

যাক বাঁচা গেলো আম্মু চলে গেছে কিন্তু আম্মু তো আমাকে সন্দেহ করছে এভাবে কতোদিন মিথ্যে বলবো
–অর্পি কি ভাবছ
–কিছু না
–আমাদের মিলন সম্ভব না তুমি বরং আমাকে ভুলে যাও
কথাটা শুনে রাগ উঠে গেলো সাইয়ান এর গলা চেপে ধরে জোরে বললাম
–ভালবাসা কি এতই সস্তা যে চাইলেই ভুলে যাবো
–অর্পি ছাড়ো লাগছে তো
–লাগার জন্যই তো ধরেছি ভবিষ্যৎ এ যেন ভুলে যাওয়ার কথা না বল
–আচ্ছা আর বলবো না ছাড়ো
–হুম
–পাগলী একটা এভাবে কেউ গলা চেপে ধরে
–ভুলে যাবার কথা বল কেন
–ভুলতে তো একদিন হবেই
–ভুলবো না প্রয়োজন হলেও আত্মহত্যা করে তোমার কাছে চলে আসবো
–ওই চুপ আর কখনো এসব বলবা না
–আমি আব্বু আম্মু কে তোমার কথা বলে দিব
–বললে ওরা তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে তখন দেখাও হবে না কথাও হবে না
–তাহলে কি করবো বলে দাও
–জানিনা যেভাবে চলছে চলতে দাও
–হুম

একটা সপ্তাহ কেটে গেলো সাইয়ান এর সাথে আমার দুষ্টু মিষ্টি প্রেম চলছে, আম্মুর ভয়ে খুব সাবধানে কথা বলতে হয় ওর সাথে তাও আম্মু সন্দেহ করে

জানিনা আমাদের এই দুই জগতের দুজনের মিল আদৌ হবে কিনা, যদি মিল না হয় আমি তো মরেই যাবো সাইয়ান কে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব না, এই কয়দিনে ওকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি, এখন সব কিছুতেই ওর অস্তিত্ব টের পাই, সাইয়ান কে ভুলে যাওয়া কখনো সম্ভব না, প্রয়োজন হলে মরে যাবো কিন্তু ওকে ভুলতে পারবো না

আজকে সারাদিন একবারও সাইয়ান আমার সাথে দেখা করেনি অনেক বার ডেকেছি আসেনি কোনো সাড়াও দেয়নি, জানিনা কি হয়েছে ওর, আচ্ছা ও আমার সাথে কথা না বলে থাকছে কিভাবে আমার তো অনেক কষ্ট হচ্ছে দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে

সারাদিন অপেক্ষা করে রাতে চিলকোঠোর ঘরে গেলাম, ওকে অনেক বার ডাকলাম কিন্তু কোনো সাড়া দিল না, অপেক্ষা করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়লাম

সকালে আমার মুখের উপর কারো গরম নিশ্বাসের ছোয়ায় ঘুম ভাঙ্গলো, চোখ খুলে থাকিয়ে দেখি সাইয়ান আমার খুব কাছে বসে আছে, ওর মুখটা একদম আমার মুখের কাছে আর ও এক পলকে আমার দিকে চেয়ে আছে
–কাল সারাদিন কোথায় ছিলে
–কোথায় আবার এই রোমেই
–তাহলে আমার সাথে দেখা করনি কেন এতো বার ডেকেছি সাড়া দাওনি কেন
–একদিন তোমার থেকে দূরে থেকে বুঝেছি আমায় তুমি কতটা ভালবাস
–ওহ তুমি আমার ভালোবাসার পরিক্ষা নিচ্ছ
–এমন ভাবছ কেন
–তো কি ভাবব জানো আমার কতটা কষ্ট হয়েছে
–আমার বুঝি হয়নি
–কচু হইছে কষ্ট হলে এভাবে কথা না বলে থাকতে পারতে না
–কষ্ট হয়েছে বলেই তো এখন তোমার কাছে চলে এসেছি (বলেই আমার কপালে আলতো করে ওর ঠোট ছুঁয়ে দিল আর কিছু বলতে পারলাম না সব রাগ অভিমান কমে গেলো ওর কোলে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে রইলাম)

হঠাৎ আম্মু এসে রোমে ঢুকলো
–তুই এখানে কেন আমি সারা বাসা খুঁজে বেড়াচ্ছি
–এমনি
–রাতে কি এখানে ঘুমিয়েছিলি
–না আমার রোমেই তো
–সত্যি
–হুম
আম্মু রোমের চারপাশে চোখ বুলাতে লাগলো হঠাৎ গিটারের দিকে চোখ পরতেই এগিয়ে গিয়ে গিটার হাতে নিলো
–এই গিটার কার
–(এখন কি বলি)
–চুপ হয়ে আছিস কেন
–জানিনা
–তাহলে এইটা এখানে কেন ভেঙ্গে বাইরে ফেলে দিলেই তো হয় (সাইয়ান এর দিকে থাকিয়ে দেখি কাদো কাদো হয়ে আম্মুর দিকে চেয়ে আছে)
–ওহ আম্মু মনে পড়েছে এইটা আমার এক ফ্রেন্ড এর আমিই এনেছিলাম
–ফেরত দিয়ে আসবি
–ঠিক আছে

আম্মু চলে গেলো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এতো সন্দেহের মাঝে কি শান্তিতে প্রেম করা যায়, আম্মু এতো সন্দেহ করে কেন উফফফফফ

সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে দেখি সাইয়ান ফুল গাছে পানি দিচ্ছে, আমাকে দেখে একটি সাদা গোলাপ এনে সামনে ধরলো আমি হাতে না নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম সাদা গোলাপ তোমার পছন্দের ফুল বুঝি তখনি কে যেন চিৎকার করে উঠলো, পিছনে থাকিয়ে দেখি আম্মু ভয়ে চিৎকার দিয়েছে, আম্মুর মুখটা ভয়ে একদম চুপসে গেছে তাড়াতাড়ি আম্মুর কাছে গেলাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে