প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ৫

0
1958

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রাতের কথা মনে পরলো ছাদে চলে গেলাম দোলনায় গিয়ে বসলাম তখনি সাইয়ান এসে হাজির, আমার দিকে থাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল যে হাসির প্রেমে আমি কাল রাতেই পরে গেছি এখন আবারো পরলাম
–Good Morning ভূত
–ভূত না আত্মা আর এসব না বলে আমার নাম ধরে ডাকলেই খুশি হব
–ওমা রাগ করছ কেন
–আমি তো ইচ্ছে করে মারা যাই নি ইচ্ছে করে আত্মা হইনি তাই ভূত বা আত্মা বললে খুব কষ্ট হয়
–আচ্ছা তুমি কিভাবে মারা গিয়েছিলে
–অন্যদিন বলবো তোমার জ্বর কমেছে
–হ্যা কিছু কমেছে, আচ্ছা তোমাকে কি আম্মুরা দেখতে পারবে
–না তুমি ছাড়া অন্য কেউ দেখতে পারবে না
–না দেখতে পারলে অনেক ভালো
–কেন
–দেখতে পারলে আর আম্মু যদি বুঝতে পারে তুমি মানুষ না তাহলে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবে
–তুমি চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে
–কেন
–কারন আমি তোমাকে….
–কি
–না কিছু না
–বল বলছি
–সব কথা বলতে নেই
–হুম

অনেক সময় দুজন দোলনায় বসে গল্প করলাম তারপর আমি রোমে চলে আসলাম, তখন আম্মু ফোন দিলেন
–হ্যা আম্মু
–কিরে তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো
–না তোমরা কখন আসবা
–আমরা আগামীকাল চলে আসবো
–ঠিক আছে
–সাবধানে থাকিস রাখি
–ওকে

ফোন রেখে ভাবছি আম্মুরা কাল চলে আসবে সাইয়ান এর সাথে বেশি সময় কথা বলা সম্ভব হবে না তাই আজকেই আমাকে জানতে হবে সাইয়ান কিভাবে মারা গেছে আর আত্মা হয়ে ফিরে এসেছে সব কিছু আজকেই জানতে হবে, আচ্ছা ও তখন কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গেলো কি বলতে চাইছিল, যতোটুকু বুঝতে পেরেছি ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু মানুষ আর আত্মার মধ্যে কি সম্পর্ক হয়, আমার মন বলছে আমিও সাইয়ান কে ভালোবেসে ফেলছি নাহলে ওকে না দেখে থাকতে পারি না কেন ওর গান না শুনলে ভালো লাগে না কেন, কিন্তু আমাদের দুজনের সম্পর্ক কি কখনো সম্ভব

রাতে বারান্দায় বসে সাইয়ান কে ডাকলাম কিন্তু অনেক বার ডাকার পরও আসলো না, আবার কি হলো ছেলেটার, আবার ডাকলাম তখন কানে ফিসফিস করে বললো
–তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না
–আমার সামনে তো আগে আস
–না
–ঠিক আছে আর কখনো কথা বলবো না তোমার সাথে
–এসেছি
–হুম বস
–প্রশ্ন গুলো না করলে ভালো হত
–আমি যে প্রশ্ন করবো তুমি জানো কিভাবে
–মৃদু হাসল
–তারমানে তুমি আমার মনের কথা বুঝতে পার
–বাদ দাও আমি জানি তুমি সব না জেনে ছাড়বা না যে জেদি মেয়ে তুমি বল কি কি জানতে চাও
–কিভাবে তোমার মৃত্যু হয়েছে আর এখানে কিভাবে আছ সব
–এসব অনেক লম্বা কাহিনী
–বল

বলছি…..
আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন আমার আম্মু মারা যান আব্বু আবার বিয়ে করেন, আমি ছিলাম একা আর কোনো ভাই বোন ছিল না, নতুন আম্মু প্রথম আমাকে অনেক ভালোবাসত কিন্তু এক বছর যেতেই আম্মু পাল্টে গেলো আমার উপর অত্যাচার শুরু হলো, নীরবে সব সহ্য করতাম, দুই বছর যেতেই আম্মু জানতে পারলো আম্মু কখনো মা হতে পারবে না কাজেই আমার আর কোনো ভাই বোন হবার সম্ভাবনা ছিল না, আব্বুর সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ছিলাম একমাত্র আমি কিন্তু আম্মু এইটা মানতে পারতো না, তাই সবসময় আব্বুর সাথে ঝগড়া করতো সম্পত্তি আম্মুর নামে লিখে দেওয়ার জন্য কিন্তু আব্বু বুঝতে পারছিলেন আম্মুর নামে সম্পত্তি লিখে দিলে উনি আমাকে কিছুই দিবেন না তাই আব্বু দেন নি

এভাবে কেটে যায় তিনটা বছর, আমি যখন ইন্টার পড়ি তখন একদিন আব্বু আম্মুর মধ্যে অনেক ঝগড়া হয় আমি নীরবে রোমে বসে সব কিছু শুনি
আম্মু: সব সম্পত্তি আমার নামে দিতে হবে
আব্বু: সম্পত্তির উত্তরাধিকারী সাইয়ান তোমাকে দিব কেন আর তোমার যতোটুকু পাওনা সেটুকু তো পাবেই
–আমি সব সম্পত্তি আমার নামে চাই
–ঠিক আছে আমি কালই সাইয়ান এর নামে সব কিছু লিখে দিব
–আমি ওকে মেরে সব সম্পত্তি আমার নামে করে নিব
–ছিঃ সম্পত্তির জন্য তুমি নিজের ছেলেকে মারার কথা ভাবছ
–ও আমার সতিনের ছেলে আমার না
–তাই বলে মেরে ফেলতে পারবে
–হ্যা পারবো ভালো চাইলে সম্পত্তি আমার নামে লিখে দাও
–ঠিক আছে দেখছি

আম্মুর আগের বয়ফ্রেন্ড ছিলো আম্মুর শক্তি তাই উনি এসব হুমকি দিয়েছিলেন কিন্তু সেটাই যে আম্মু সত্যি করবেন ভাবতে পারিনি

এর এক সপ্তাহ পরেই আম্মু আমাকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে মেরে ফেললেন তারপর আমার দেহবডি স্টোররুমে লুকিয়ে ফেলেন আর আব্বুকে গিয়ে বলেন বাসায় যে ক্যাশ দশ লক্ষ টাকা ছিল তা নিয়ে আমি পালিয়েছি, এই কথা শুনে আব্বু স্টোক করেন আব্বুকে হাসপাতাল ভর্তি করে আম্মু এই সুযোগে সব কাগজ পত্রে আব্বুর সাইন করিয়ে সব সম্পত্তি আম্মুর নামে করে নেন, একদিন পর আব্বুকেও হাসপাতালেই আম্মু মেরে ফেলেন……

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে