প্রেমানন্দোল পর্ব-০৪

0
789

#প্রেমানন্দোল-৪
#তাসনিম_তামান্না

চারিদিকে আঁধার রুমের মধ্যে সোনালী রঙের আলোয় আলোকিত। সাদা রংয়ের মা’দ’ক’দ্র’ব্য সেবন করছে অন্য হাতে নি’কো’টি’নের ধোঁয়া। রুমটায় অদ্ভুত গন্ধে বুদবুদ করছে। একজন হ্যাঙ্গলা পাতলা হাসি হাসি মুখে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো
” বস মা-ল গুলো কেমন? একের না? ”
আরো বার কয়েক শ্বাস নিয়ে ড্রা’গ’স গুলো শুষে নিয়ে। স্বচ্ছ ঘূর্ণিয় মান নেশায় আসক্ত হয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল ” হুম ”
” তাহলে কাল থেকে মা-ল গুলো সাপ্লাই করা শুরু করি? ”
” হু বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি গুলোতে বেশি করে ছড়িয়ে দিস আর হ্যাঁ ছন্দবেশে আগের বারের মতো যেনো ভুল না হয় ”
” ওকে বস। কিন্তু বস একটা খবর আছে ”
” কি? ”
” থানার ইসপেক্টর বদলি হয়ে গেছে নতুন একজন আসছে ”
” নাম কি? ”
” জাহিদ হোসেন ”
” ব্যাপারটা আমি দেখে নিচ্ছি তুই যা ”
” ওকে বস ”
ছেলেটা চলে গেলো। স্বচ্ছ আরো বার কয়েক শ্বাস টেনে নিলো। নেশাটা মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো একজন মেয়ে নৃত্য দৃশ্য খুব আনন্দের সহিত ছোট বাচ্চা গুলোকে শিখাচ্ছে।
~ মম চিত্রে নিতে নিততে ~
মাথায় বাঝতে লাগলো ঘোলাটে চোখে ফোন বের করে একটা নম্বরে ডায়ল করলো রিসিভ হতেই বলল ” মেয়ে রেডি কর ”
ওপাশ থেকে ” ওকে বস বলে রেখে দিলো ”

________________________________________

সকালে পিটপিট করে চোখ খুলতেই স্বাধীনকে দ্বিধার পাশে বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় পেলো। দ্বিধা মাথা তুলতে গিয়ে আবিষ্কার করলো তার মাথা ব্যাথায় ভার হয়ে আছে ততক্ষণাৎ মনে পড়লো রাতে জ্বর এসেছিল। দ্বিধা তার শরীরটা বিছানা থেকে টেনেটুনে তুললো। মাথা ঘুরাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠে স্বাধীনের দিকে ঝুঁকে বলল
“এই যে শুনছেন?”
স্বাধীনের ঘুম পাতলা হওয়ায় এক ডাকে চোখ ডলে সোজা হয়ে বসলো। উঠে বসতেই ঘাড়ের ব্যাথা টের পেলো ঘার মালিশ করতে করতে বলল
” কি ব্যাপার? উঠে দাড়িয়ে পড়ছেন যে? শরীর কেমন আপনার? ”
” আছে ভালো। আপনি এভাবে শুয়েছিলেন কেনো? এখন ঘাড় ব্যথা করছে না? ”
” তা তো একটু সমস্যা নাই সেরে যাবে ”
” চা খান, বাম দিয়ে মালিশ করলে ঠিক হয়ে যাবে ”
” হ্যাঁ আপনি কি খাবেন বলুন? কাল রাতে তো কিছু খেলেন না ”
দ্বিধা আমতা আমতা করে বলল ” রাতে জ্বরের ঘোরে আপনাকে খুব জ্বালিয়েছি না ”
স্বাধীন হাসলো। দ্বিধা এই প্রথম স্বাধীনকে হাসতে দেখলো হাসলে স্বাধীনের সামনের বাঁকা দাঁত দেখা যায় তখন স্বাধীন অন্য স্বাধীন হয়ে যায়। স্বাধীন দ্বিধাকে বারে বারে মুগ্ধ করছে। কখনো কথার প্রেক্ষাপটে কখনো বা কাজের মধ্যে দিয়ে। দ্বিধা বুঝতে পারছে বেশিদিন তার ভালোবাসা কাঙ্গাল মনটাকে আর বেঁধে রাখতে পারবে না শিকল ছিঁড়ে বাঁধন হারা হয়ে ভালোবাসায় ডুব দিবে।
” আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করছি ”
” ক্ষুদা নাই। ব্যস্ত হবেন না ”

দ্বিধা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো সাদিয়া বেগম আর স্বাধীন কথা বলছে। পাশে খাবার রাখা।
” রিসিভশন নিয়ে কিছু ভেবেছিস? ”
” না আম্মু ভেবে তোমাকে বলবো ”
” কবে ভাববি আর কবে বলবি বলত। আত্মীয় স্বজনরা ফোন দিয়ে খোঁজ নিচ্ছে স্বাধীন বিয়ে করেছে শুনলাম কি ভাবে কি হলো? মেয়ে কেমন? এতো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি ”
” ফোন ধরার দরকারটা কি বল তো ফোন ওফ করে রাখো ”
” দুম করে একটা কথা বলে দিলেই শেষ তোর কোনো দরকারী ফোন হলে ”
দ্বিধা এগিয়ে আসলো। সাদিয়া দ্বিধাকে দেখে এগিয়ে এসে দ্বিধার গলায় কপালে হাত দিয়ে বলল
” এখন ও তো গা গরম। বিকালে তো ঠিকই ছিলে কি হলো বলো তো? আচ্ছা খেয়ে না-ও কাল রাত থেকে কিছু খাও নি শুনলাম বমি করে দিয়েছ এখন এই টুকু খাবার খেয়ে নাও ”

সাদিয়া আর দ্বিধার কথার মাঝে স্বাধীন ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সাদিয়ার কথা শুনে দ্বিধা অবাক হয়ে বলল ” বমি করেছিলাম? ”
” হ্যাঁ স্বাধীন তো বলল ”
দ্বিধা চুপ হয়ে গেলো। মনে মনে অসস্তিতে পড়ে গেলো। সাদিয়া বেগম তারা দিয়ে বলল
” খেয়ে নাও সব টুকু খাবে কিন্তু আমি যেন প্লেটে খাবার না দেখি আমি গেলাম মেলা কাজ পড়ে আছে ”
দ্বিধা বিছানায় বসে। প্লেট নিয়ে স্যান্ডুইউচে একটা বাইট দিলো খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তবুও খেলো। খেতে খেতে মা বাবা ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। কি করছে তারা? একটা বারও ফোন দিলো না? দ্বিধার আকাশ ছোঁয়া অভিমান হলো। খাবার রেখে বালিশের পাশ থেকে ফোন খুঁজে বের করলো পাওয়ার বাটনে চাপ দিলো কিন্তু ফোন অন হচ্ছে না দেখে নিজে ওপরেই রাগ হলো। দ্বিধা বিরবির করে বলল ” নিশ্চয়ই বাসা থেকে ফোন দিয়ে ছিলো খোঁজ না পেয়ে টেনশন করছে। আমি ও যে কি করি না আম্মু ঠিকি বলে আমি বড্ড উদাসীন কোনো কিছুতে খেয়াল থাকে না ”
স্বাধীন ফ্রেশ হয়ে এসে দ্বিধাকে ফোন হাতে হতাশ হয়ে বসে থাকতে দেখে বলল ” কি হয়েছে? বসে আছেন কেনো খেয়ে নিন ”
দ্বিধা ঠোঁট উল্টে বলল ” ফোনে চার্জ নাই ”
স্বাধীন দ্বিধার গোলাপি পাতলা ঠোঁট জোড়ায় চোখ গেলো। মনে অদ্ভুত চিন্তা আসলো। ততক্ষণাৎ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বলল
” হ্যাঁ কাল আপনার বাসা থেকে ফোন আসছিল আপনাকে না পেয়ে আমাকে ফোন দিয়েছিলো আমি বলছি আপনি ঘুমাচ্ছে অসুস্থতার কথা আর বলেনি অযথা টেনশন করতে তাই ”
” হুম এটা চার্জে দিন না ”
দ্বিধা ফোন হাতে নিলো হাতে হাত ছোঁয়া লাগলো শীতল ভেজা হাতের স্পর্শ পেয়ে দ্বিধার উষ্ণ হাত কেঁপে উঠল। স্বাধীন বুঝতে পেরে দ্বিধার দিকে তাকালো বলল
” খেয়ে নিন ”
দ্বিধা প্লেটটা হতে নিয়ে আবার খেতে লাগলো। ফোন চার্জে দিয়ে স্বাধীন তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে বলল ” সুস্থ হলে কলেজে যাওয়ার শুরু করবেন আমি চাই না আমার জন্য আপনার পড়া শোনায় ক্ষতি হোক ”

দ্বিধার কলেজের কথা মনে পড়তেই খেয়াল হলো ” আজ কলেজে ফাংশন ফেন্ডরা মিলে কত প্লান করেছিলাম সবাই একই রকমের শাড়ি পড়বো। এতক্ষণে ওরাও হয়ত জেনে গেছে আমার বিয়ে হয়ে গেছে ”
দ্বিধার বড্ড মন খারাপ হলো।

মাইকে এনাউসমেন্টা করা হচ্ছে —
” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের আর্নাস চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মৃধা। নৃত্য পরিবেশনের জন্য মঞ্চে আসার জন্য ডাকা হলো ”

মৃধা এস্ট্রেজে উঠে গানের তালে তালে নাচতে লাগলো।

~ পাগলা হওয়ায়র বাদল দিনে
পাগল আমার মন জেগে উঠে ~

নাচ শেষে মৃধা মেকাপরুমে গিয়ে শাড়ি খুলে থ্রি পিচ পড়ে নিলো। পিছনে পিছনে অন্য ফেন্ড গুলোও আসলো। হালিমা বলল
” শাড়ি খুললি কেনো? ”
” শাড়ি পড়ে থাকার মুড নাই। নাচের প্রোগ্রাম না থাকলে আজ আমি এমুখো হতাম না। কত বড় মিরজাফর বিয়ে করলো একটা বার জানালোও না আবার ফোন ওফ করে রাখছে ”
আঁখি বলল
” রাগ করছিস কেনো কিছু তো একটা হয়েছে যার জন্য এতো তারাতাড়ি বিয়ে হলো ”
” হুম কিন্তু কি সেটা খুঁজে বের করতে হবে ”

চলবে ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে