প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব-০৬

0
1981

#প্রেমময় তৃষ্ণা ”
#writer-TaNiA [🖤]
#part-6

শুভ বসে বসে ড্রিংক করছে,এই অভ্যাসটা শুভর খুবই খারাপ। মন খারাপ থাকলে হয়তো ড্রিংক করবে,নয়তো সিগেরেটে ধোয়া উড়াবে।আজ শুভর মনটা খারাপ,তার কারন হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ।ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শুভর ফ্রেন্ডসরা পার্টির আয়োজন করেছে।আর এই পার্টিতে এসেই চারদিকে এতো জোড়ায় জোড়ায় কাপল দেখে,শুভরও কলির কথা খুব বেশি মনে পড়ছে।কলির সাথে এটাই শুভর প্রথম valentine’s day…তাই কলির সাথেই সময় কাটাতে চেয়েছিলো।কিন্তু আর্জেন্ট কাজ পড়ায় শুভ ও বাকি সবাই সেদিনই ঢাকায় ব্যাক করে।শুভ বসে বসে ভাবছে___ফাহিম এসে,কিরে কি ভাবছিস।_____আমার ভাবনার মানুষটি কে ছাড়া আর কারো কথা ভাবার সময় নেই।জানোসই তো।
|
ওওওও তাইতো।তোর জীবন তো আবার কলি…ময়।
|
হইছে তোর।আমি না হয় বাধ্য হয়ে একা বসে টাইম পাস করছি, কিন্তু তুই এখানে কেনো।আজতো তোর অর্পার সাথে থাকার কথা।
|
ফাহিম একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে,ওয়াইন এর গ্লাস হাতে নিয়ে____তোর বোনকে কাল রাত থেকে ফোন করছি,ফোন রিসিভ তো দূরে থাক,ম্যাসেজ এর রিপ্লাই ও দিচ্ছে না।বলতো এভাবে কতো দিন।ও শুধু আমার থেকে দূরে থাকার বাহানা খুঁজে।এখনতো আমারও মনে হচ্ছে ওকে এভাবে বিয়ে করা ঠিক হয়নি।
|
ওও রিলেক্স ফাহিম, তুই একটু বেশি চিন্তা করছিস আরে অর্পা তোর বিয়ে করা বউ,গার্লফ্রেন্ড না।যে ও ফোন রিসিভ না করলে ওর সাথে দেখা করতে পারবি না।তোর বউ ফোন না ধরলে বাসায় চলে যা।ওকে নিয়ে কোথাও ঘুড়ে আয়।ওকে বেশি বেশি করে সময় দে।দেখবি না ভালোবেসে যাবে কই।ভালোবাসায় একটু বেহায়া হতে হয়।
|
কিন্তু ও কি যেতে রাজি হবে।_____শুভ একটু বিরক্ত হয়ে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে,এমন বডি কার জন্য করেছিস,মারামারির জন্য।বউ যেতে না চাইলে কলে করে নিয়ে যাবি।কে তোকে বাধা দেবে।আরে লাইসেন্স করা জিনিস তোর,যখন মন চাইবে নিয়ে যাবি।
|
ফাহিম ভাইয়া…কিভাবে প্রেম করতে হয়,তা শুভ ভাইয়ার থেকে শিখে নেও।অনেক বছরের অভিগতা আছে।কি বুঝলা______মাহির।
|
এতোক্ষন ইনাম ও মাহির ফাহিম ও শুভর কথা গুলো শুনছিলো।বয়সে ছোট হলেও শুভর সাথে যথেষ্ট ফ্রি ওরা।শুভর সব ভালো খারাপ কাজে ইনাম,মাহির আর ফাহিম সাথে ছিলো,আছে।
|
ওকে,আমি চললাম তোর বোনের কাছে।কপালে আজ যা আছে,খেতে রাজি,শুধু ঝারু জুতা যাতে না পরে দোয়া করিস।আর তোরা তিনটা ব্যাচেলার ডেট পালন কর,একে অপরের সাথে।
____ফাহিম ভাইয়া আমাদেরও সময় আসবে মনে রেখো।
ওকে ওকে ইনাম……বায়।
|
সবাই সবার মতো এনজয় করছে।কিন্তু দুটো চোখ শুভকে বেশ কিছুক্ষন ধরে লক্ষ্য করছে।আর সে হলো আরুশী।শুধু আরুশী না পার্টিতে আসা অনেক মেয়েই শুভকে গিলে খাচ্ছে,কিন্তু কেউ সামনে আসার সাহস পায় না শুভর।কারন শুভ কোনও মেয়েকে নিজের ধারের কাছে বেশি ঘেষতে দেয়না।এমন ড্যাসিং,হ্যান্ডসাম মানুষটি যখন কর্কশ কন্ঠে গেট আউট,লিভ মি এলোন বলে চিল্লিয়ে উঠে,তখন যে কোনও মেয়েই সামনে আসতে ভয় পাবে।বেশির ভাগ মেয়েরাই শুভকে চিনে,তাই ওর ধারে কাছে যায় না।কিন্তু আরুশী কিছুদিন হলো বিদেশ থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে এসেছে।কোথাও তেমন যাওয়া হয়নি বলে,আজ কাজিন ব্রাদার এর সাথে এই পার্টিতে এসেছে।আর এখানে নিজেরও কিছু ফ্রেন্ডস পেয়ে গেলো।শুভকে দেখিয়ে ______ছেলেটা কে রে।
|
ও তো শুভ ভাই।পুরা নাম শুভ চৌধুরী, চৌধুরী বাড়ীর বড় ছেলে।হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং এর সাথে বিষন রাগী।চাচার সাথে রাজনৈতিক করে,বাবার বিশাল ব্যবসার প্রতি কোনও ইন্টারেস্ট নেই।এখনো ব্যাচেলার।আমাদের ভার্সিটিতে সিনিয়র ছিলো।
|
গার্লফ্রেন্ড নেই কোনও______আরুশী।
মনে হয় না রে,আজও কোনও মেয়ের সাথে দেখিনি।
|
কেনো প্রেমভালোবাসা পছন্দ করেনা____আরুশী। তেমন তো মনে হয় না,ভার্সিটিতে যখন ছিলো নিজের অনেক ফ্রেন্ডসদের পালিয়ে বিয়ে করতে সাহায্য করেছে।
আরুশী আর কিছু জিঙ্গেস করলো না,শুধু মুগ্ধ নয়নে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে।
|
শুভর এখন আর এখানে থাকতে মন চাইছে না,খুবই বিরক্ত লাগছে।তার উপর আজ ড্রিংকস্ এর নেশাও হয়ে যাচ্ছে।তাই ইনাম আর মাহিরকে নিয়ে বাসায় চলো গেলো।
|
রাত ১ বাজে________
হঠাৎ কলির ফোনটা ভাইব্রেট করতে লাগলো।ঘুম ঘুম চোখে কলি_____হ্যালো শুভ ভাইয়া আমি কাল কথা বলি,আমার না বিষন ঘুম পাচ্ছে।
থাপ্পর চিনিস,না চিনলে বল।আমি এখনি এসে দিয়ে যাবো।আর আমি তোর কোন কালের ভাই হে….
|
শুভর কথা শুনে কলির ঘুম জানালা খুলে দৌঁড় দিলো।
আ…স…লে।আ…মি।
|
দেখ কলি এমনেই মন টা ভালো না,আর তুইও এমন আবোলতাবোল কিছু বলে আমাকে রাগিয়ে তুলিছ না।

আপনার মন খারাপ… কেনো______!!

বারে আজ এমন একটা দিনে,সবাই সবার ভালোবাসার মানুষের সাথে আছে।আর আমি ……আমিতো তকে দেখতেও পারছি না।খুব মনে পরছে তোকে কলি।তোকে খুব দেখতে মন চাইছে।কেনো তুই আমার সাথে নেই।আমার কাছে এসে পর কলি,খুব যতনে রাখবো আমি তোকে।

আপনে কিছুই খেয়েছেন_____মানে উল্টাপাল্টা কিছু।

হুমমমম,ড্রিংক করেছি,আজ মনে হয় একটু বেশি করে ফেলেছি।

কেনো……………কলি।

মন খারাপ থাকলে একটু করি।আগে করতাম না,কিন্তু গত দুবছর তোর কথা যখনি মনে পরতো, তখন এটা ছাড়া কোনও উপায় ছিলোনা তোকে ভুলাবার জন্য।

তাহলে এখন ছেড়েদিন________।উমমম……তুই যেদিন আমার পুরোপুরি হবি,সেদিন প্রমেজ ছেড়ে দেবো।

কলি এ সম্পর্কে আর কিছু বলতে পারলো না।আচ্ছা তাহলে এখন ঘুমান অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু আমারতো তোর সাথে অনেক কথা বলতে মন চাইছে।তোর কলে মাথা রেখে ঘুমাতে মন চাইছে।
ও দিকে কলি নিশ্চুপ …………শুভ ড্রাংক হয়ে আবোলতাবোল বলেই যাচ্ছে আর কলি চুপচাপ শুনছে।কিছুক্ষন পর কোনও শব্দ আসছে না ও পাশ থেকে।কলি বুঝতে পারছে,শুভ ঘুমিয়ে গেছে।তাই কলিও ফোনটা কেটে ঘুমিয়ে পড়লো।
|
ফাহিমও পার্টি থেকে এসে,বারান্দা দিয়ে অর্পার রুমে প্রবেশ করলো।অর্পা ঘুমে আচ্ছন্ন, পাশের টেবিলে চকলেট বক্স রাখা।এটা বিকেলে ফাহিমই পাঠিয়েছিলো অর্পার জন্য,সাথে রেড রোজ।গোলাপ গুলো অর্পা খুব যতনে ফুলদানিতে রেখে দিয়েছে।আর চকলেট বক্স থেকে কিছু চকলেট শেষও করে ফেলেছে।বাকিগুলো পরে খাবে বলে পাশের টেবিলে রেখে দিলো।ফাহিম দেখে মুসকি হাসি দিলো।পাগলী একটা,আমাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু মুখ ফুটে বলবে না,শুধু জ্বালাবার জন্য।ফাহিম অর্পার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।তোর মায়াভরা মুখটার প্রেমে যে আমি বার বার পরি,এটা কি আমার দোষ।এর পর ফাহিম গিয়েও অর্পার পাশে শুয়ে পড়লো।আজ ও কোথায়ও যাবে না।সকালে হয়তো অর্পা রাগ করবে, করুক ………ওর রাগটাও ফাহিমের এখন ভালো লাগে।
|
কলি সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে শিলার সাথে স্কুলের দিকে পা বাড়ালো।মন খারাপ করে চারদিকে নযর দিচ্ছে,বসন্তের ছোয়া বইছে চারদিকে এখনো।শুভর কথা খুব মনে পরছে।আজ তিনদিন হলো শুভর সাথে কথা হচ্ছে না।তাইতো নিজের অজান্তেই বলে উঠলো____

আজিকার দিন না ফুরাতে
হবে মোর এ আশা পুরাতে–
শুধু এবারের মতো
বসন্তের ফুল যত
যাব মোরা দুজনে কুড়াতে।
————–…………………—————
শেষ বসন্ত (পূরবী)——-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
শুভকে সাথে করে নিয়ে কলির বসন্তের সব ফুলগুলো কুড়াতে চেয়েছিলো। কিন্তু_____

শুভর বাবা আজমাল চৌধুরী অসুস্থ। হেমোরেজিক স্ট্রোক ( Hemorrhagic Stroke) করেছে।এটা সাধারণত মস্তিষ্কের ভিতরে কোন রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে হেমোরেজিক স্ট্রোক হয় । এই ধরনের স্ট্রোকে তিন মাসের মধ্যে মৃত্যু ঝুকি অনেক অনেক বেশি বেড়ে যায়।
তাইতো শুভ আর শুভর পুরো পরিবার হাসপাতালে ব্যস্ত।শুভর বাবার এই অবস্থা দেখে শুভর মাও অসুস্থ হয়ে পরেছে।তাই মাকে বাসায় শুভর ছোট মা,আর অর্পা দেখাশুনা করছে।আর হাসপাতালে ওরা তিনভাই,চাচা,আর ফাহিম আছে।চাচাকে প্রতিদিন রাতে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।কারন উনিও অসুস্থ হলে আরো সমস্যায় পরতে হবে।কিন্তু শুভর দিনরাত হাসপাতালে বাবার কাছেই পার হচ্ছে।হয়তো এতোদিন বাবা ভালোছিলো বলে,শুভ কখনো বুঝেনি এই মানুষটি কে শুভ কতোটা সম্যান ও ভালোবাসে।এ কয়েকদিনে মধ্যে শুভ কলির সাথে কোনও কথাও বলতে পারেনি।শুধু একবার ফোনদিয়ে বলেছে,বাবা অসুস্থ,ফ্রি হলে আমিই কল করবো।
তাই কলিও আর শুভকে ফোন করে বিরক্ত করেনি।কলি জানে সব ঠিক হলে শুভ নিজেই ওকে ফোন দিবে।
এখন আল্লহর কাছে দোয়া আর অপেক্ষা করা ছাড়া কলির আর কিছুই করার নেই।

আজ ১৫ দিন হলো,শুভর বাবা কিছুটা সুস্থ।শুভ কিছুটা নিস্তার হলেও আবার আরেক ভেজালে পরে গেলো।চৌধুরী পরিবারের বিশাল ব্যবসার ভার কে নিবে।এতো বছর আজমাল চৌধুরী একহাতে দেখে আসছে।কিন্তু এখন,ডাক্তার আজমাল চৌধুরী কে সম্পূর্ণ বেড রেস্ট এ থাকতে বলেছে।শুভর চাচারও সম্ভব না,ইনাম ব্যবসার কিছুই বুঝে না,সে কলেজের প্রফেসর এর পদে কিছুূদিন হলো জয়েন করেছে।আর বাকি আছে মাহির।ওর পড়াশোনা শেষ হয়নি এখনো।অনেক ডিশকাশন এর পর শুভ সিদ্ধান্ত নিলো নিজের স্বপ্ন কে ভুলে যাবে পরিবারের জন্য।আর পারিবারিক ব্যবসা সামলাবে এখন থেকে।

রাতে ছাদে দাড়িয়ে আঙ্গুলের ফাঁকে সিগেরেট রেখে,বাতাসে ধূয়া ছাড়ছে শুভ।কলিকে অনেকে দিন পর ফোন করলো।কলিকে সব খুলে বললো।কলি শুভকে নিজের প্রতি ভরসা রাখতে বললো।

চলবে………।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে