প্রেমকুঞ্জ পর্ব-১৭+১৮

0
679

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| সপ্তদশ পর্ব |

পড়ন্ত বিকেল, পুরো আকাশে আজ শুভ্রতার ছোঁয়া! নীল
আকাশের এই স্নিগ্ধতা ভালো লাগছে নিলুফারের। ছাদে এসে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সিঁড়ি বেয়ে নিচতলা নামলো নিলুফার। দাঁড়িয়ে আছে ফরহাদের ঘরের বাইরে। দরজায় কড়া নাড়ার সাধ জাগল। কখনো এমনটা মনে হয় নি। আজ ইচ্ছে করছে। তবে সংকোচ লাগছে। অনেক ভেবে নিলুফার মনস্থির করে দরজায় কড়া নাড়ল। খানিকক্ষণ পরেই দরজা খুলল ফরহাদ। নিলুফার কে প্রথমে বিস্মিত হলেও হালকা হেসে সরে দাঁড়াল দরজার সামনে থেকে। নিলুফার কে তার এমন আজ একজন নারী মনে হয় যে কি না অপ্র্যাতাশিত কাজগুলো করে থাকে। তাই এখন আর বিস্ময় করে না ফরহাদ। নিলুফার হেসে বলল,

“আসতে পারি!

ফরসাদ মৃদু হেসে মাথা নাড়ল। নিলুফার ফরহাদের ঘরে প্রবেশ করল। ঘরে প্রবেশ করতেই মিষ্টি এক ধরণের ঘ্রাণ এলো তার নাকি। খানিকটা অবাক হলো পুরো ঘর থেকে।‌ বেশ পরিপাটি তার ঘর। এই ঘরে একটা বেড রুম, একটা বসার ঘর, একটা বাথরুম আর একটা ছোট রান্নাঘর আছে। ঘরের প্রত্যেকটা জিনিস’ই বেশ সাজানো। ফরহাদ হেসে বলল, চা খাবেন!

“আপনি বানাবেন!

“বসুন, আমি নিয়ে আসছি।

অতঃপর ফরহাদ রান্না ঘরে চলে গেল। বসার ঘরে দুটো বেতের চেয়ার। মেঝেতে কার্পেট বিছানো। এছাড়া কিছু দারুন ছবি টাঙানো। সবকিছুরই মুগ্ধ করলো নিলুফার কে। মাথার উপর শো শো ফ্যানটার শব্দ শান্ত এই ঘরে বেশ তীব্র লাগছে। নিলুফার আগালো, যেতে যেতে ফরহাদের ঘরে অবদি গেল। একটা ছোট আলমারি, পড়ার টেবিল আর একটা বিছানা। জানালায় পর্দাও আছে, পর্দা ভেদ করে বাতাস ভেতরে আসছে। নিলুফার দেখলো টেবিলের উপর কিছু চিঠির ঘাম! কেউকি তবে চিঠি পাঠালো। মনে হচ্ছে ফরহাদ এগুলোই পড়তে বসেছিল!

নিলুফার এসে বসার ঘরে একটা বেতের চেয়ারে বসল। ফরহাদ দুটো চায়ের কাপ নিয়ে এলো এর সাথে কিছু বিস্কিট! ফরহাদের হাতে বানানো চা মুগ্ধ করলো নিলুফার কে। নিলুফার হেসে বলল,

“বাহ ফরহাদ সাহেব! দারুন চা বানান আপনি।

ফরহাদ মুচকি হাসল। নিলুফার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“তা একদিন তো দাওয়াত করতে পারতেন চা খেয়ে যাবার জন্য তা তো করলেন!

“ভয় হয় আপনি কি না কি মনে করে বসেন!

“পুরো ঘর তো দেখছি বেশ সাজানো গোছানো, তা কে করে এসব!

“আমি নিজেই!

“রান্নাবান্না!

“সেটাও আমিই করি!

“বাহ একদিন চেখে দেখতে হবে দেখছি, রান্নার হাত মনে হচ্ছে ভালোই।

“হুম ভালো রান্না করতে পারি, অনেক আগে থেকেই নিজের রান্না নিজে করি।

“মা’র কাছ থেকে শিখেছেন!

“না, রান্নার বই থেকে।

“ওহ আচ্ছা! তা ফরহাদ সাহেব আপনার বাড়িতে কে কে আছে।

“আমার বাবা আর দাদু!

“মা!

“মারা গেছেন?

“দুঃখিত, কিন্তু!

“যখন আমি খুব ছোট তখন, এই ধরুন ১০ বছর বয়স!

“কি করে?

“খু*ন হয়েছিলেন!

নিলুফার চায়ের কাপ নামিয়ে রাখল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“কেন খু*ন হয়েছিল?

“আমার বাবা খু*ন করেছিলেন!

নিলুফার মুখের শব্দ হারিয়ে ফেলল। ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনেকটা প্রস্তুত ভঙিতে বসে রইল। ফরহাদ নিজে হেসেই বলল, “বিচলিত হবেন না। এটা আমার কাছে নতুন না। সয়ে গেছে।

“আপনার বাবা’র শাস্তি হয় নি!

*না!

“কেন?

“পুলিশ ধরে নিয়ে গেছিল, কিন্তু আমার দাদা ছিলেন জমিদার। ধনীও বেশ ছিলেন। টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে ফেললেন।

“খু*ন কেন করল?

ফরহাদ হাসল। নিলুফারের মনে হলো কথাটা বলা উচিত হয় নি। সে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে কি তখন’ই ফরহাদ বলে উঠে, “আমার বাবার মদ খাবার নেশা ছিল। কিন্তু তিনি আমার মা কেও যথেষ্ট ভালোবাসতেন। কিন্তু তার এই মদ খাবার নেশা মা মেনে নিতে পারতেন না। একদিন নেশা একটু বেশিই হয়ে গেল। মা রেগে গেলেন। দুজনেই ঝগড়া শুরু করল। আমার ঘরটা মায়ের ঘরের কাছেই ছিল। দরজার আড়ালে ফাঁকে দাঁড়িয়ে তাদের দুজন দুজনের ঝগড়া দেখছিলাম আমি। ভয়ে আতকে ছিলাম। হঠাৎ করেই বাবা রেগে দা দিয়ে মায়ের গলা…

আর বলল না ফরহাদ। থেমে গেল! অতঃপর বলতে শুরু করল, আমি তৎক্ষণাৎ দরজা বন্ধ করে ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো আমার। গলার স্বর অবদি হারিয়ে ফেললাম। অতঃপর জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি দাদুর ঘরে!
আমার বাবা কে সেদিন’ই পুলিশে ধরে নিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ পর আমার দাদু তাকে ছাড়িয়ে আনেন।

নিলুফার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, আচ্ছা বাদ দিন এই প্রসঙ্গ! আপনার টেবিলে দেখলাম চিঠি রাখা আছে। কার চিঠি!

“আমার বাবা’র!.

ফরহাদ নিলুর চোখ দেখেই বুঝল সে বিস্মিত। অতঃপর হেসে বলল, “অবাক হবেন না। হয়তো ভাবছেন বাবা’র সাথে কি তাহলে আমি এখনো কথা বলি। হ্যাঁ বলি, কারণ উনি আমার বাবা। উনি যা করেছেন ইচ্ছে করে করেন নি। আমার মা কে যে বাবা ভীষণ ভালোবাসতেন এতে সন্দেহ ছিল না। আমাদের সুখী পরিবার ছিল। কিন্তু বাবার মদ খাবার নেশা সব ধ্বংস করে দেয়। জেল থেকে ফিরার পর ঘরের দরজা বন্ধ করে সাপ্তাহ খানিক একাই ছিলাম। কারো সাথে কথা বলতাম না। বাবা দিন রাত বসে থাকতেন দরজার বাইরে। আমি ছাড়া আর কোন সন্তান ছিল না। একদিন কি ভেবে জানি দরজা খুলে রাতে ঘুমোতে গেলাম। মাঝরাতে টের পেলাম বাবা আমার পায়ের কাছে বসে কাঁদছে। বাবা’র কষ্টটা বুঝতে পারলাম।

ঠিক হতে সময় লাগল, সব কিছু ঠিক হলো। বাবা আগের থেকে আরো যত্ন দিতেন আমার। মদ খাওয়ায় ছেড়ে দিলেন। দাদু বিয়ের জন্য সাধাসাধি করলেও করেনি আমার কথা ভেবে।‌‌ অতঃপর পড়াশোনার জন্য এখানে চলে গেলাম!

নিলুফার হেসে বিস্কিট চায়ের কাপে চুবিয়ে বলে, “মিথ্যে কথা খুব ভালো করে সাজাতে পারেন আপনি!

ফরহাদ অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। তার মন যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে। নিলুফার হেসে বলল, “আপনার বাবা কে কখনো ক্ষমা করতে পারেন নি আপনি। ঠিক তেমনি তার কষ্টও দেখতে পারে নি। তাই তার থেকে দূরে চলে এলেন নিজেকে শান্ত রাখতে কি ঠিক তো!

ফরহাদ হেসে বলল, আজ পর্যন্ত এই কথা অনেক জনকে বলেছি। সবাই বিশ্বাস করেছে, আপনি ছাড়া। কিন্তু কিভাবে?

“কারণ ফরহাদ সাহেব! আপনি কথা কম বলেন কিন্তু আজ আপনি একটু বেশিই বললেন। আর মানুষ মিথ্যে সাজানোর জন্য অধিক কথা বলে।

“আপনি রূপবতী’র সাথে বুদ্ধিমতীও নিলুফার!

নিলুফার হেসে বলল, “এখন এটা সত্যি করে বলুন, সেদিন রাতে দরজা খুলে ঘুমিয়েছিলেন কেন?

“বাবা’কে মা*রার জন্য। ভেবেছিলাম আমার ঘরে এলে তাকে দা দিয়ে কু”পিয়ে মারবো।

নিলুফার হাসলো। খুব জোরেই হাসলো। অতঃপর বলল,‌ “বলতে হবে,‌ছোটবেলায় খুব সাহসী ছিলেন।

“হ্যাঁ ছিলাম। দা নিয়ে বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু বাবা’র সে কান্নার শব্দ, তার কথা মিথ্যে মনে হলো না আমার কাছে। কিন্তু কোন রাতেই ঘুমাতো পারতাম না আমি। এই দেখতাম র*ক্তে ভিজে যাওয়া আমার মা”এসে বসে আছে আমার পাশে নয়তো দেখতাম দা হাতে বাবা এগিয়ে আসে।

“তারপর..

“তখন বুঝলাম বাবা কে আমি ক্ষমা করতে পারি নি। আমার ভেতরের আমি বাবা কে একটা রাক্ষস মানতে শুরু করেছি। কিন্তু আমার মনুষ্যত্ব আমায় বাঁধা দিচ্ছিল। তাই এসব ছেড়ে দূরে কোথায় চলে এলাম। দীর্ঘদিন পর শান্তিতে ঘুমাতে পারলাম।

“এখানে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত!

“না! আপনাকে দেখার আগ পর্যন্ত তবে..

“তবে আবরারের বিয়ের খবর শোনার পর থেকে এখন আবার শান্তিতে ঘুমাতে পারেন।

“আপনি আমার মনের কথা কিভাবে টের পান নিলুফার।

“আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু কি অদ্ভুত দেখুন, কেউ একজন রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না অন্যদিকে অন্যজন আরামে ঘুমায়। এটাই হয়তো ভাগ্য!

“আপনি কি নিজের কথা বলছেন!

“না, আমি পর্যাপ্ত ঘুমাই তা না হলে আমার এই সৌন্দর্য থাকবে না। অন্যের কারণে নিজের সৌন্দর্য নষ্ট করে কি লাভ বলুন তো।

“তা ঠিক!

“আপনার বাবা কে বলেছিলেন আমার কথা!

“হুম বলেছি!

“বাহ বেশ তো। মনে হচ্ছে আপনার বাবা আপনার জন্য মাসে মাসে টাকা পাঠায় যা দিয়ে আপনার এখানকার খরচ চলে যায়।

“হুম ঠিক ধরেছেন। আমাদের পূর্বপুরুষদের সবাই জমিদার আর ব্যবসা করেই কাটিয়েছে। এখন হয়তো জমিদারের জমিদারি নেই তবে ব্যবসা আছে। বাবা দাদুর ইচ্ছা আমি এটাই করবো।

“আপনার ইচ্ছা!

“দেশ বিদেশে ঘুরার!

নিলুফার শেষ বারের মতো চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“তাহলে আপনার ক্ষেত্রে এই ধরণের ভয় নেই বলুন। না পাবেন চাকরি আর না হারাবেন আমায়। আচ্ছা পরিবার থেকে কোন সমস্যা নেই তো!

ফরহাদ হাসল। নিলুফারও হাসতে লাগলো তার সাথে। অতঃপর নিলুফার উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আজ আসি তবে, একদিন আপনার হাতের রান্না খাবো।

“আমার হাতের খিচুড়ি নাকি দারুন হয়। কোন একদিন বৃষ্টি হলে আপনাকে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াবো!

“বৃষ্টির দিনে ডাকবেন আমায়, ফরহাদ সাহেব আপনার মতলব খারাপ!

ফরহাদ হেসে বলল, আপনার সাথে কথায় পারা সম্ভব না!

“আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো, আমার আগে ঠিক কয়েটা প্রেমে পড়েছিলেন?

“একজন অভিনেত্রী’র পড়েছিলাম। তার একটা সিনেমা দেখে দ্বিতীয় হচ্ছেন আপনি।

“ওহ আচ্ছা! আসছি আমি!

অতঃপর নিলুফার দরজার কাছে এলো। দরজা খুলে ফরহাদের দিকে ফিরে বলল, ফরহাদ সাহেব! আপনাকে তুমি করে ডাকার অনুমতি দিলাম! আর আরেকটা কথা!

“কি?

“আপনার ঘরে আয়না, এটা খুব ছোট! বড় আয়না না হলে আমার খুব অসুবিধা হবে। একটা ভালো দেখে বিশাল আয়না কিনবেন কিন্তু!

বলেই মুচকি হেসে বেরিয়ে এলো। ফরহাদের তখন কেমন লজ্জা লজ্জা পেতে লাগল।

#চলবে….

##প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| অষ্টাদশ পর্ব |

শ্রেয়ার হাতে ছাতা! ছাতা হাতে ঘুরছে আজ দুদিন হলো অথচ যাকে খুঁজছে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এই ছাতা নিয়ে বাড়িতে যাবার পর তো মা একেবারে ধরে বেঁধে বসল। জিজ্ঞেস করতে লাগলো,

“ছাতাটা কার রে?

“আমার বান্ধবীর!

“তুই কেন আনলি?

“বৃষ্টি হচ্ছিল বলে দিল!

“কেন? বাড়িতে ছাতা নেই। অন্যের ছাতা কেন ধরবি কিছু একটা হয়ে গেলে তখন!

“মা! তুমি এবার বেশি বেশি করছো। আমি কি এখন ছোট একটা বাচ্চা নাকি যে কোন কিছু যত্নে রাখতে পারবো না। আর বৃষ্টি তো বলে আসে না। হুট করেই এসেছিল তাই ওর ছাতায় করে বাড়ি ফিরেছে। এই ছোট একটা কথাটা কতো বড় ব্যাপার করে বলছো তুমি দেখেছো!

মা চুপ হয়ে গেলেন। কেমন ভাবে তাকিয়ে রইলেন শ্রেয়ার দিকে। সত্যি তার ছোট মেয়েটা এখন বড় হয়ে গেছে। তার চলাফেরা, চোখের ধরণ বদলে গেছে। আগে ছোট একটা ফ্রক পড়ে ঘুরতো আর এখন শাড়ি পড়ে। মা চট করেই জিজ্ঞেস করে বসল,

“সবসময় শাড়ি পড়িস কেন?

শ্রেয়া গ্লাসে পানি ঢেলে বলল, ইচ্ছে হয় বলে।

বাবা’র প্রবেশ ঘটল ঘরে। সোফায় বসে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে বললেন,

“কি হয়েছে, এতো সকাল সকাল ওকে বকাবকি কেন করছো। মা আমাকে একটু পানি খাওয়াবি!

শ্রেয়ার বাবা’র হাতে পানির গ্লাস দিয়ে হন হন করে ঘরের দিকে চলে গেল। মা তখন বাবাকে বলতে শুরু, “দেখলে মেয়ের কান্ড দেখলে!

বাবা খবরের কাগজে দৃষ্টি রেখে মাথা নাড়তে লাগলেন!

শব্দ করে শ্বাস ফেলে রাস্তার মোড়ের দিকে তাকাল শ্রেয়া। এই মামুন হঠাৎ হঠাৎ করেই কয়েকদিনের জন্য উধাও হয়ে যায়। এখন মনে হচ্ছে তেমনটা’ই হয়েছে। বেশ তো গুনে গুনে আর পাঁচ মিনিট দাঁড়াবে শ্রেয়া। এর মধ্যে না আসলে চলে যাবে এখান থেকে। হাতের ছোট ঘড়ির দিকে তাকাল শ্রেয়া। ঘড়িটা তিতির ভাইয়া তাকে কিনে দিয়েছিল। অনেক সুন্দর দেখতে ঘড়িটা। একবার ঘড়ি আরেকবার রাস্তার মোড়ের দৃষ্টি উঠানামা করছে। পাঁচ মিনিট শেষ! না আর অপেক্ষা নয়, বাড়ি ফেরার জন্য পা বাড়াতেই দেখল মোড় দিয়ে মামুন ঢুকছে। হাতের আঙুলে চাবির গোছা টা ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে আসছে। অন্য হাতে সিগারেট! সেটা মুখে দিচ্ছে আর তার ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে।

শ্রেয়ার কপাল কুঁচকে গেল। সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য টা তার পছন্দ হলো না। মামুন যেই না সামনে তাকাল ওমনি তার চোখ পড়ল শ্রেয়ার দিকে। তাকে দেখেই থতবত খেয়ে তাকিয়ে রইল। সামনে পা বাড়ানোর আগে ভাবতে হচ্ছে তাকে। আগে এমনটা হতো না। যেদিন থেকে দেখল শ্রেয়া শাড়ি পড়ে আসা যাওয়া করছে তখন থেকেই তার মনে কেমন একটা অস্থিরতা জাগে। এই অস্থিরতার কারণে কিছুই বলতে পারে না সে। এছাড়া আরেকটা কান্ড আছে, শ্রেয়া আগে তাকে দেখলে ভয়ে পালিয়ে যেত কিন্তু এখন সেটা করে না। আরো তার দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যার কারণে সময় এখন বদলে গেল। আগে শ্রেয়া পালিয়ে যেত আর এখন সেই’ই পালিয়ে যায়।

এই দুজন মানুষ ছাড়া আর কেউই নেই গলি তে। মামুন এবার আগাতে শুরু করল। না আজ আর পিছুবে না সে। শ্রেয়াও এগিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য করছে মামুনের গায়ের গেঞ্জি টা ধুলোয় মাখামাখি! হয়তো কোথাও খেলতে গিয়েছিল সে। এমন কয়েকবার মাঠে ছেলেদের সাথে খেলতে দেখছে সে মামুন কে। তাই ধারণাটা সহজেই করে ফেলল। অতঃপর দুজনেই তাদের গন্তব্যে থেমে গেল।

ছাতা বাড়িয়ে দিয়ে, “নিন আপনার ছাতা নিন!

শ্রেয়ার ঝাঁঝালো কষ্ঠ শিহরিত করলে মামুন। তবুও ছাতা টা নিল না সে। শ্রেয়া বলে উঠল, কি হলো নিচ্ছেন না কেন? জানেন এটা ফেরত দেবার জন্য দুদিন এসে ঘুড়ে গেছিলাম আমি। আসেন নি কেন?

মামুন চোখ তুলে তাকাল শ্রেয়ার দিকে। সত্যি কি তবে তার জন্য’ই দুদিন এসেছিল সে। কারণ কি একটাই ছিল এই ছাতা দেবার জন্য। ঢোক গিলে বলল, না লাগবে না!

“কেন লাগবে না?

“তুমি নিয়ে যাও!

“আমার জন্য কেনা এটা!

“হুম!

শ্রেয়া ছাতা গুটিয়ে নিল। অতঃপর হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, এটা খেতে কেমন?

মামুন সিগারেটের দিকে তাকাল। অতঃপর দ্রুত ফেলে দিল। শ্রেয়া বলে উঠল, “ফেলে দিলেন কেন?

“না এমনেই!

“তা আমাকে দেখে পালিয়ে যান কেন?

মামুন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। শ্রেয়া হেসে ফেলল। কিছু জিজ্ঞেস না করেই চলে যেতে নিল। পেছন থেকে মামুন বলে উঠল, “ফুলটা এখনো আছে!

“শুকিয়ে গেছে, তবে হ্যাঁ বইয়ের পাতায় বন্দি হয়ে আছে। আচ্ছা আরেকটা গোলাপ কি দিবেন আমায়!

মামুনের দমবন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা। শ্রেয়া ভ্রু কুঁচকে বলল, না থাক বাদ দিন! এতো সাহস হবে না আপনার!

মামুন ফিরে তাকাল। শ্রেয়া আবারো হাঁটা ধরল। মামুন পেছন থেকে বলল, “আগামীকাল ফুল হাতে এখানে থাকবো আমি!

শ্রেয়া হেসে ফেলল। অতঃপর হাসি থামিয়ে পেছন ফিরল সে। ভ্রু কুঁচকে বলল, “আমি আসবোনা!

অতঃপর হন হন করে চলে গেল। মামুন দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল, “তবে কি সত্যি শ্রেয়া আসবে না!

——

ঘন্টা খানিক অপেক্ষা করার পর তিতিরের দেখা মিলল। মুখটা ভার করে বলল, “এতোক্ষণ লাগলো আসতে!

তিতির হেসে জবাব দিল, “একটু কাজ ছিল!

“কি এতো কাজ তোমার শুনি, কই আমার বেলায় তো এতো সময় থাকে না!

“তুই আমাকে তুমি করে বলছিস!

ইরা লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জায় তার মুখ খানা লাল হয়ে গেল। শব্দ করে হাসলো তিতির। বলে উঠল, “ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে, চিঠি তেও তুমি বলে সম্বোধন করেছিস আমায়। দাঁড়া চিঠিটা আমার কাছেই আছে। তোকে পড়ে শোনাই!

“দোহাই লাগে এমন করো না!

তিতির হেসে চিঠি টা বের করল। অতঃপর পড়তে নিতেই ইরা তা কেড়ে নিল। বলে উঠল, “সবসময় সাথে রাখতে হয় এটা। এভাবেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি!

“সত্যি!

ইরা ভ্রু কুঁচকে নিল। অতঃপর তিতিরের সামনে এসে বলল, শোন কয়েকদিন বাদে আমার বর হবি তুই। তাই একটু‌ সম্মান দিয়েছি।

“কিন্তু এখন যে আবার তুই!

“এটা আমার মর্জি! যখন যা ইচ্ছে তাই ডাকবো। মন চাইলে আপনি, তুমি, তুই আর…

“আর.

“বর বাবু! ঠিক আছে এখন চল!

“কোথায়?

“নদীর ধারে, অনেক দিন হলো যাই না। বর বাবুর দেখা পাওয়াই তো মুশকিল!

বলেই হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগল। ইরা কে আজ অনেকটাই চঞ্চল লাগছে। দ্রুত পায়ে তিতিরের হাত ধরে হাঁটছে সে। অতঃপর হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল, “আচ্ছা ঝালমুড়ি নেই, দু’জনে মিলে নদীর ধারে খাবো কি বল!

বলেই সেখানে চলে গেল। তিতিরকে বলার সময় টুকু দিল না। বলল, “মামা ঝালমুড়ি বানান তো বেশ ঝাল করো!

——

নদীর ধারে তিতিরের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে ইরা। আজকে নদীর পানির স্থির! তিতির আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “সময়টা সুন্দর!

হঠাৎ ইরা বলে উঠল, “দেখি এদিকে তাকাও তো!

তিতির ফিরল। ইরা তাকিয়ে রইল। তিতির বলল, কি হয়েছে?

“আমি দেখতে কেমন?

“সুন্দর!

“কতো টুকু সুন্দর!

“অনেকটা সুন্দর!

“না সবচেয়ে সুন্দর! তোর জন্য সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে আমি বুঝলি!

“আচ্ছা!

“হুম, শুধু আমিই সুন্দরী! ওই তোর মেয়ে স্টুডেন্ট ওদের পাত্তা নেই।

“এখনো ওর কথা মনে রেখেছিস তুই।

“হুম!

তিতির হেসে আকাশের দিকে তাকাল। লাল আভা দেখা যাচ্ছে শেষ সীমানায়। তিতির বলল, “ইরা সন্ধ্যা নেমে আসছে।‌ উঠ এবার!

ইরা আশপাশ তাকাল। মানুষ জন তেমন একটা নেই। ইরা আবারো বলল, “দেখি মুখ খানা এদিক করো!

“এখন আবার কি?

বলেই এদিক ফিরল তিতির। চট করেই তার ঠোঁটে চুমু খেল ইরা। তিতির ভড়কে গিয়ে বলল, “কি হলো?

“অনেক দিনের সাধ আজ পূরণ হলো!

বলেই জোরে হাসল। লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হয়ে যাচ্ছিল। তিতির এখনো চমকে আছে!

#চলবে….

[ রি চেক করা হয়নি ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল! ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে