প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-০৯

0
269

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৯ম_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
-তোমার আম্মু এবং ছোট মা গার্লস্ স্কুলে একসাথে পড়তো। তাদের বন্ধুত্ব স্কুল জীবন থেকে। এরপর ওরা যখন কলেজে ভর্তি হয় তখন ওদের সাথে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তোমার ছোট মা’র সাথে আগে থেকেই পরিচয় ছিলো। ও মাঝে মাঝে ওর আব্বুর সাথে আমাদের বাসায় আসতো। ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে তোমার আম্মুর সাথে আমার বন্ধুত্বের বাইরেও নতুন করে ভালোবাসার সম্পর্ক শুরু হয়। এটা আমাদের দুজনের মাঝেই থাকে। তোমার আম্মু বা আমি কেউ তোমার ছোট মা কে জানাই নি। পরীক্ষা শেষ রেজাল্ট হলো এরপর আমরা তিনজনই ঢাকার একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিলো।
– বাহ্ ভালো তো। তাহলে হঠাৎ কি হলো!
– অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে আমরা বিয়ে করি।
– ছোট মা আর আম্মু যেহেতু বান্ধবী তবে তারা একসাথেই ছিলো। ছোট মা তাহলে তো আপনাদের বিয়ের বিষয়ে সবটা জানতো!
– না, ও কিছু জানতো না। তোমার ছোট মা ওর এক আত্মীয় বাসায় ছিলো আর তোমার আম্মু ছিলো হোষ্টেলে। তাই এই বিষয় টা ওর অজানা থাকে।
– এতো দিন আপনারা উনার আসেপাশে থেকে নতুন একটা সম্পর্ক ক্যারি করলেন উনি কিছুই বুঝতে পারলো না!
– আমরদ তিনজন যখন একসাথে ছিলাম তখন তোমার ছোট মা’র সাথে বেশি কথা বলতাম। এটা তোমার আম্মুরই পরামর্শ ছিলো। আমাদের দুজনের মাঝে তখন শুধু চোখাচোখি হতো।
– ওহ আচ্ছা। এরপর!
– অনার্স ফাইনাল ইয়ারে তুমি এবং সুনয়না গর্ভে আসো। তুমি কি সুনয়নার ব্যাপারে জানো!
– খুব বেশি কিছু জানি না। তবে কিছুটা জানি।
– ওহ আচ্ছা। তখন তোমার ছোট মা বিষয়টা জানতে পারে। আমি জানতাম না ও আমায় ভালোবাসতো এবং এটাও জানতাম না তোমার দাদু আর ওর আব্বু নিজেদের সম্পর্ক মজবুত করতে আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো। কিন্তু তোমার ছোট মা সবটা জানতো।
– না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো?
– সেই সময়ে এমনটাই হতো মেক্সিমাম সময়। এরপর বাসায় অনেক ঝামেলা হয়। আমি বাসা ছেড়ে একবারে শহরে চলে যাই। তুমি আমার লাকি চ্যাম্প ছিলে অনার্স শেষ হতে না হতেই আমি মোটামুটি ভালো একটা জব পেয়ে যাই।
– তাহলে আপনি আবার এখানে ফিরে আসলেন কেন!
– তখন তোমাদের বয়স তিন – চার বছর হবে। তোমাদের আম্মু কে নিয়ে এই বাসায় এসেছিলাম তোমার মেজো চাচ্চুর বিয়েতে। সেই সময়টাই আমার গুছিয়ে নেওয়া জীবনটা এলোমেলো করে দেয়।
– কেন!
– যেদিন আমরা আসি তার পরের দিন তোমার ছোট মা’র পুরো পরিবার আমাদের বাসায় আসে। ওর একজন বড় ভাই ছিলো কিছুটা সাইকো টাইপ। উনি এসে তোমার দাদুর সাথে বিভিন্ন ভাবে ঝামেলা বাড়াতে থাকে। উনার দুর্বল পয়েন্ট ছিলো তোমার ছোট মা। ওকে উনি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন। আমায় না পেয়ে নাকি অনেকটা পাগল প্রায় হয়ে যায়। সেদিন তোমার দাদু আর উনার মাঝে একটু হাতাহাতি হয় যার ফলে উনার মাথায় বড় একটা আঘাত লাগে।
– আপনার জীবন তো ফিল্মী।
– জীবন নাটকের থেকেও অনেক বেশি নাটকীয় হয়।
– তারপর কি হলো!
– মেজোর বিয়ের পর যেদিন আমরা চলে আসবো তার আগের দিন রাতে ঐ সাইকো আবার বাসায় আসে। এসে তোমার দাদুকে পুলিশের ভয় দেখায়। সেই সময়ের মানুষ পুলিশ কে প্রচুর ভয় পেতো। জেলে যাওয়ার ভয়ে উনি তোমার গলায় ছুরি ধরে তোমার আম্মুকে অপশন দিয়েছিল স্বামী এবং সন্তানের মাঝে একজন কে বেছে নিতে।
– পুলিশ ভয় পায় অথচ আমায় খুন করতে প্রস্তুত ছিলো!
– যদি তোমার আম্মু আমায় বেঁচে নিতো তবে তো উনাকে জেলে যেতেই হতো তাই উনার বক্তব্য ছিলো জেলে যেতেই যদি হয় তবে
– থাক বুঝতে পারছি। কিন্তু সুনয়নার কি হয়েছিলো!
– সুনয়নার বিষয় ঠিক জানি না। ঐরাতেই তোমার আম্মু তোমায় আর সুনয়নাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। আমি এতটাই বাজপ ভাবে বন্দী ছিলাম যে তেমায় নিয়ে হাসপাতালেও যেতে পারিনি। নিজেকে সেই সময় পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্টতর পিতা মনে হচ্ছিল। তোমার ছোট চাচ্চু তোমাদের সাথে গিয়েছিলো হাসপাতালে। সেখানে নাকি তোমার নানু এসেছিলো এসে তোমার আম্মুকে বাসায় নিতে চেয়েছে। কিন্তু ও যেতে রাজি না হওয়ায় সুনয়নাকে নিয়ে চলে গেছে।
– তাহলে তো সুনয়না সুস্থ থাকার কথা।
– শুনেছিলাম ঐ রাতেই তাদের এক্সিডেন হয়। পরে তোমার আম্মুকে নাকি কল করে বলেছেন সুনয়না মারা গিয়েছে। পৃথিবীর এক অভাগা মা। ঐ রাতে তোমার আম্মু নিজের জীবনদশায় সব থেকে কষ্টদায়ক সময় কাটিয়েছে। কিন্তু তোমার আম্মু প্রচুর জেদি ছিলো। যার কিছু কিছু বিষয় তোমার মাঝে দেখতে পাই মাঝে মাঝে ।
– এতো সুন্দর করে ফিল্মী স্টাইলে আমাদের জীবন ধ্বংস করা হয়েছিল!
আব্বু চোখের পানি মুছেছে। আমি পকেটে থেকে চেইনটা বের করে দেখালাম – এটা কি আপনি চিনেন!
– হ্যাঁ। চিনবো না কেন! এটা তো ইন্টারে থাকতে বানিয়েছিলাম। আমার কাছেও আছে।
– পাঁচটা বানানো হয়েছিল। কে কে পাঁচজন!
– আমি তোমার ছোট্ট মা এবং ওর সাইকো ভাই, তোমার আম্মু এবং তোমার আম্মুর একজন বান্ধবী। আমার আর তোমার ছোট মা’র টা একসাথে রাখা আছে।
– ছোট মা কে জিজ্ঞেস করায় উনি উনার সাইকো ভাইয়ের কথা বলে না কেন! উনি তো বলে উনার শুধু মাত্র একজন ভাই।
– সেই সাইকো মতো ভাইটা মারা গিয়েছে আজ বেশ কিছু বছর হলো। তখন আরশ ছোট ছিলো।
– আপনাদের জীবনের গল্প নিয়ে উপন্যাস লেখা হলে নিঃসন্দেহে আপনাদের জীবনের উপন্যাস এওয়ার্ড পেতো।
– ঐ যে বললাম না জীবন কিছু কিছু সময় নাটকের থেকেও অনেক বেশি নাটকীয় হয়।

– রাত অনেক হলো ঘুমোতে যান।
– তুমি কি আরশকে ছাড়াতে পারবে!
– যদি আপনারা সাহায্য করেন হয়তো পারবো।
– কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে আমায় বলবে।
– আচ্ছা।

আব্বু রুমে যাচ্ছে। আব্বু এতক্ষণ যা বললো সেগুলো আমি আম্মুর ডায়েরি থেকেই জেনেছি। তবে কিছু বিষয় জানা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো যেগুলো হয়তো আব্বুকে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে।

রুমে আসলাম। মায়া চন্দ্রিমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
– মায়া কখন ঘুমালো!
– একটু আগেই।
– তুমি ঘুমাও নি!
– তেমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
– আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়।

আমি শুয়ে পড়লাম। চন্দ্রিমা মায়া কে ঠিক করে শুইয়া দিয়ে আমার বুকে মাথা রাখলো – মায়া আপু এতক্ষণ ঐ লোকটার ব্যাপারে কথা বলছিলো।
– কোন লোকটা!
– ঐ যে ভূত।
– কি বললো!
– উনি নাকি হাতে ছুরি নিয়ে মায়াকেই মারতে আসছিলো। লোকটা অবন্তীকে সরে যেতে বলেছিলো।
– কি বলছো এসব!
– আমার মনে হয় লোকটা মায়া আপুকে টার্গেট করে এসেছিলো।
– এই নতুন এলাকায় মায়াকে কেন কেউ টার্গেট করে আসবে! তাছাড়া ওকে তো কেউ চিনবেও না এখানের তাই না।
– আমি ঠিক জানি না। তবে এটা শোনার পর থেকে আমার খুব ভয় করছে। ঘুমানোর জন্য চোখ বুঝলেই মনে হচ্ছে কেউ আসছে রুমে।
– তুমি ঘুমিয়ে পড়।
চন্দ্রিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু ভাবনায় তো কিছুটা রেশ থেকেই যায়। সত্যি যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তবে লোকটা এমন কেউ যে অবন্তীর কাছের বা পরিচিত , তাহলে মায়াকে কেন আক্রমণ করবে!

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে