প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-০৮

0
275

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৮ম_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
আমার হোয়াটসঅ্যাপে একটা ছবি আসলো। যেখানে একটা মেয়ের পাশে আরশ শুয়ে আছে এবং আরশের হাত মেয়ের কোমড়ে। মেয়ে নিথর হয়ে পড়ে আছে। পাশেই বড় বড় অক্ষরে লেখা ” নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শারীরিক চাহিদা পূর্ণ করে বালিকার হত্যা এরপর সেই লাশের সাথেই রাত্রি যাপন ”
যে নাম্বার থেকে ছবিটা আসলো সে রাজের বন্ধু। আমি কিছু বলার আগেই সে আবার বললো- স্যার এটা সেই সময়ের নিউজপেপার।
– আচ্ছা ঠিক আছে এটা নিয়ে আমরা রোববারে কথা বলবো কেমন!
– জ্বি স্যার।
নিউজপেপার গুলো যাচ্ছেতাই ছাপিয়ে দেয়। যেখানে আরশ শুধু হত্যার জন্য কারাগারে আছে সেখানে নিউজপেপার সবাইকে নিকৃষ্টতর কারণ রটিয়ে দিয়েছে।
চন্দ্রিমা পাশে এসে বসলো- কি হলো ফোনের দিকে তাকিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলে!
– তেমন কিছু না। আজ কি আর কোথায় যাবে!
– আর কোথায় যাবো! প্রায় তো সন্ধ্যা হয়ে আসলো।
– এখুনি বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না।
আমার কথার উত্তর হিসাবে অধরা বললো- আমারও বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না। আপুরা বরং বাসায় চলে যাক। তুমি আমি মিলে কিছুটা হেটে আসি কেমন!
– তোমাদের কাউকে হাঁটতে হবে না। বাসায় গেলে সবাই একসাথেই বাসায় যাবো। হাটলেও সবাই একসাথেই হাটবো।
– তোমরা সবাই বাসায় ফিরে যাও রাদিয়া তুমি আমায় ঐ জায়গাটায় নিয়ে যাবে!
– কোন জায়গায় ভাইয়া?
– আরশকে যেখানে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো।
– শুনেছি সেটা এখানে থেকে বেশ দূরে। ঐখানে একটা নদী আছে সেই নদীর পাশেই।
– তুমি যাওনি কখনো!
– দাদুর ভয়ে শুধু কলেজ থেকে বাসা এবং বাসা থেকে কলেজ ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ হয়নি।
– আচ্ছা চলো বাসায় ফিরে যাই।

এখন প্রায় রাত এগারোটা বাজে।
হঠাৎই অবন্তী,মায়া জোরে চিৎকার করে ভুত ভুত বলে উঠলো। চন্দ্রিমা তখন আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। চন্দ্রিমা প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছে। অবন্তী এবং মায়ার চিৎকার শুনে ওর ঘুম ভেঙে গেলো। দুজনেই উঠে দৌড়ে তাদের রুমে আসলাম। তারা একজন অন্য জনকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে কাঁপছে।
– কি হয়েছে মায়া!
– ভাইয়া রুমে ভুত এসেছিলো।
– রুমে কিভাবে ভুত আসবে!
– জানি না। তবে কালো কাপড়ে পুরোটা মুড়িয়ে ছিলো।
হঠাৎ নজরে পড়লো মেঝেতে অধরা পড়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে অধরাকে আগে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
এর মাঝেই বাসার সবাই এসে জমা হলো অবন্তীর রুমে।
– অধরা অজ্ঞান হলো কিভাবে!
– ঐ ভুত করেছে। সাদা পাউডারের মতো কি সব ফু দিয়েছে। আমরা কাঁথা দিয়ে শরীর ঢেকে নিয়েছি কিন্তু ও বাইরে ছিলো ওর শরীরে সব পড়ে ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।
ছোট মা’র অবন্তীকে জড়িয়ে ধরে আছে। চোখে আবছা পানি দেখা যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর সবাই নিজেদের রুমে চলে গেলো। ছোট মা অবন্তী কে নিয়ে উনার রুমে গেলো। আমি চন্দ্রিমা কে বললাম মায়াকে আমাদের রুমে নিয়ে আসতে।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর দরজায় ঠকঠক শব্দ। মায়া শক্ত করে আমায় হাত জড়িয়ে ধরলো।
– কে!
– আমি, তোমার আব্বু।
মায়া আস্বস্ত হলো। হাতটা কিছাটা হালকা করলো। চন্দ্রিমা উঠে দরজা খুলে দিলো।
– কিছু বলবেন!
– খুব বেশি ভয় পেয়েছো!
– হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে তো তাই। অধরার কি অবস্থা এখন!
– ও রাদিয়ার সাথে আছে। পড়ে গিয়ে মাথায় একটু আঘাত পেয়েছে। তোমাকেই দেখতে আসলাম কি অবস্থা এখন তোমার। আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়।
– আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে, বাইরে একটু দাড়ান আমি আসছি।
মায়া শক্ত করে আমায় টেনে ধরলো – ভাইয়া যেও না প্লিজ।
– আমি তো রুমের সামনেই আছি পাগলী। তাছাড়া তোমার ভাবী তো আছেই।
– আমার নিজেরই তো ভয় করছে।
– তুমি ওর সাহস জোগাও। শুধু কিছুক্ষণের তো ব্যাপার। আমি আসছি।
ওদের রুমে রেখে আমি বেরিয়ে আসলাম। আব্বু রুমের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন।
– কি কথা আছে বলো।
– আপনাদের বাসা থেকে কি গত কিছু দিনের মাঝে কিছু জিনিস চুরি গেছে!
– কই না তো। কেন!
– আমি জানি আজ যে এসেছিলো সে ভুত না। কারণ গত দুই দিন আগেও আমি একজন কে রাতের আধারে পালিয়ে যেতে দেখেছি এই বাসা থেকে।
– তাকে ধরতে পারোনি!
– তার আগেই পালিয়ে যায়। বাসার সবাইকে একটু সাবধানে থাকতে বলবেন। বাসায় মেয়ে মানুষ আছে।
– আচ্ছা।
আব্বু চলে যাচ্ছে। তখন পিছনে থেকে বললাম – কাকে বেশি ভালোবাসতেন! আম্মু নাকি ছোট মা!
আব্বু স্থির হয়ে গেলো। পিছনে ফিরে জিজ্ঞেস করলো- হঠাৎ এই প্রশ্ন!
– জানতে ইচ্ছে হলো।
– তোমার আম্মু ছিলো আমার ভালোবাসা আর তোমার ছোট মা হচ্ছে আমার দ্বায়িত্ব।
– ঠিক বুঝলাম না।
– চা খাবে!
– এতো রাতে! কে বানাবে?
– আমি খুব সুন্দর চা বানাতে পারি। তোমার আম্মুর থেকে শিখেছি।
– রুমে ওরা একা আছে ভয় করবে।
– করবে না। আমরা তো ড্রয়িং রুমেই থাকবো।

রান্না ঘরে আব্বু চা বানাচ্ছে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি।
– তোমার আম্মু আমায় যা জ্বালাতন করতো। দুই এক দিন পর পর ওর মাথা ব্যাথা হতো তখন আমায় চা বানিয়ে ওকে দিতে হতো।
– আম্মুর মাইগ্রেন ছিলো জানতাম না তো!
– বোকা ছেলে এটা মাইগ্রেন না।
– তাহলে!
– সরাসরি যদি বলতো চা বানিয়ে দিতে তাহলে তো দিতাম না। তাই ছলনার আশ্রয় নেয়। তোমার আম্মু অনেক ছেলেমানুষী করতো।
লোকটা আম্মুকে সত্যি অনেক ভালো বাসতো। কথা গুলো বলতে সময় উনার মুখে হাসি যেন কেউ লেপে দিয়েছে।
এক কাপ চা আমার দিকে এগিয়ে দিলো – এই নাও চা। খেয়ে দেখো কেমন লাগছে!
চা’য়ে চুমক দিলাম। আম্মুর হাতের চা হঠাৎই মনে পড়ে গেলো। ছেলেরা পৃথিবীর সব কিছু ভুললেও মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ ভুলতে পারে না। সে চা হোক বা বিরিয়ানি।
– এখন মনে হচ্ছে আম্মু আপনাকে খুব যত্নে চা বানানো শিখিয়েছে।
– শুধু চা নয়! আমাকে রান্নাও শিখিয়েছিলো। বাসায় কখনো রান্না করিনি তাই হয়তো এতোদিনে ভুলে গিয়েছি। তবে তোমার মায়ের সাথে থাকলে সপ্তাহে একদিন রান্না করতেই হতো।
– তাহলে তো ভালোই হয়েছে আপনাকে তো আর রান্না করতে হচ্ছে না।
– সেই রান্না আবেগ অনুভূতি ভালোবাসা ছিলো যা এই চারদেয়ালে রাজার বেশে বসে থাকায় নেই।
– আমার নানু বাড়ি কোথায়!
– দুই গ্রাম পড়েই। আমি কখনো সেখানে যাইনি। তবে দুই তিন বছর আগে শুনেছি ঐ পরিবারের আর কেউ বেঁচে নেই। তাদের একমাত্র মেয়ে ছিলো তোমার আম্মু। তাদের আর সন্তান ছিলো না।
– ছোট মা’র বাবার বাসা কোথায়!
– তোমার ছোট মা তোমার দাদুর বন্ধুর মেয়ে।
– ওহ আচ্ছা। ছোট মা’র আর কোনো ভাই বোন নেই!
– ওরা তিন ভাইবোন। দুই জন ভাই এবং তোমার ছোট মা।

ছোট মা’র দুই জন ভাই! তবে ছোট মা আমায় মিথ্যা কেন বললো! অন্য জনের কথা কেন গোপন করলো!

– আচ্ছা আব্বু আমি তো এখন ছোট নেই। আপনি প্লিজ বলবেন ঠিক কি হয়েছিলো! আম্মু এবং ছোট মা’র দুজনের বিষয়ে আমি জানতে চাই।
আব্বু মাথা নিচু করে নিজের চা’য়ের কাপে তাকিয়ে রইলো।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে