প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
309

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#শেষ_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
আমি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতেই ছোট মা যখন চা’য়ের ট্রে হাতে নিয়ে তাদের জন্য চা নিয়ে গেলো সেটা দেখে আরও অনেক বেশি অবাক হয়ে গেলাম। একটা মানুষ রাতের আঁধারে চুপিচুপি বাসায় আসলো তাকে আবার আপ্যায়ন করা হচ্ছে। কে উনি!

অবন্তীর রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে নক করলাম।
– দরজা খোলাই আছে।
আমায় ভিতরে যেতে দেখে অবন্তী কাঁথা পুরো শরীরে ঢেকে শুয়ে পড়লো।
– খুব বেশি রাগ করছো!
– আমি কেন রাগ করবো! আমি তো তোমার পরিবারের কেউ নই। তোমার পরিবার তো ঐ মায়া আপু আর চন্দ্রিমা।
– আমার ভুল হয়েছে তো। রাগের মাথায় কি থেকে কি বলে ফেলেছি। তুমি তো জানোই আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি, তাই না!
– কচু বাসো।
– আচ্ছা বাবা ক্ষমা করার জন্য কি ঘুষ দিতে হবে!
– আইসক্রিম।
জানতাম এই ঔষধে কাজ হবে।
– কিন্তু এতো রাতে কি দোকান খোলা পাওয়া যাবে!
– পাড়ার মোড়ের দোকানটায় অনেক রাত অব্দি খোলা পাওয়া যায়।

অবন্তী এবং আমি রাস্তায় হাঁটছি। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় হাঁটতে অদ্ভুত এক ভালো লাগা মিশে থাকে।
– অবন্তী একটা কথা বলি!
– কি কথা!
– তখন আমার কথাটা খুব খারাপ লেগেছে তোমায় তাই না!
অবন্তী চুপচাপ, শুধু একবার আমার দিকে তাকালো।
– তুমি যখন জানতে পারো তোমার বাবা জীবিত আছে কিন্তু তিনি কখনো তোমাদের খোঁজ করে নি তখন তুমিও আমার মতোই কথা বলতে। এখানে একটা কথা তুমি বলতে পারো পরিস্থিতি! দিনে ছোট মা সব সময় উনার সাথে ছিলো না। একটা কল করে দু-চার মিনিট কথা বললে পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতো না। আমিও নিজেকে বোঝাই যে উনি পরিস্থিতির শিকার কিন্তু পরক্ষণেই এসব মনে আসে। প্রকৃত পক্ষে উনার কখনো ইচ্ছেই কাজ করেনি আমার সাথে কথা বলার। নয়তো আম্মুর সাথে দেখা করতো কখনো আমার সাথে দেখা করেনি।
– তুমি কান্না করছো!
– কান্না করছি না। জমানো কথাগুলোর মাঝে যেগুলো মুখে প্রকাশ করতে পারছি না সেগুলো চোখ বেয়ে পড়ছে।
হঠাৎই অবন্তী বললো- ভাইয়া ঐ লোক দুজন আমাদের বাসার দালানের সামনে কি করে!
– কথা বলবে না, আমি চুপি চুপি গিয়ে দেখছি।

খুব সাবধানে এগিয়ে গিয়ে দু’হাতে দুজনের হাত ধরে ফেললাম। কিন্তু সেখানে থেকে একজন আমার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে পালালো। কিন্তু অন্য জন পালাতে পারে নি। যিনি পালিয়ে যায় উনি পুরুষ ছিলো কিন্তু আটকে পড়েন যিনি তিনি একজন মহিলা।
অবন্তী দৌড়ে এসে তাকে শক্ত করে ধরে ফেললো। মুখটা ঢাকা আছে অবন্তী মুখ খুলেই থ হয়ে গেলো – ভাইয়া ইনিই সেই মেয়ে যিনি মায়া আপু হয়ে বাসায় এসেছিলো।
মেয়েটা কি একটা স্প্রে আমাদের দু’জনের চোখেই দেওয়ার চেষ্টা করে।

পরদিন সকালে,
খাওয়া শেষ করে ছোট মা’কে জিজ্ঞেস করলাম গতকাল লোকটা কে ছিলো!
উনি খুব সাধারণ ভাবেই উত্তর দিলো – উনি উকিল, তোমার দাদুর সম্পত্তির ভাগ করার জন্য উনাকে ডাকেন।
– উনি তো সেটা দিনেও করতে পারেন তবে রাতের অন্ধকারে কেন!
– সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন।
ছোট মা আজ বিন্দু মাত্র কিছু লুকানোর চেষ্টা করেননি। কারণ তার কথায় আজ কোনো জড়তা নেই।

তখন বেলা বারোটা নাগাদ হবে, অবন্তী রুমে আসলো – চন্দ্রিমা, মায়া আপু রুমে একা আছে উনার কাছে যাও একটু।
চন্দ্রিমা বাকা চোখে অবন্তীর দিকে তাকালো।
– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, ভাবী প্লিজ মায়া আপুর কাছে যাবপন একটু।
– বার বার মনে করিয়ে দিতে হবে কেন শুনি।
– আর হবে না। এখন যাও।
– তোমাদের ভাই বোনের মাঝে এতো কি গোপন কথা শুনি!
– ভাইয়াকে আর একটা বিয়ে দিয়ে দিবো।
– আমি কোথাও যাবো না।
আমি তাদের দুজনের কর্মকান্ড দেখে মুচকি হাসছি।
– ভাইয়া তুমি কিছু বলছো না কেন!
– চন্দ্রিমা তুমি যাও।
চন্দ্রিমা আর কিছু না বলে উঠে হনহন করে চলে গেলো।
– ভাইয়া মেয়েটাকে কি করবো!
– সকালে খাবার দিয়েছিলে!
– হ্যাঁ।
– ঐ রুমে কেউ যায় না তো শিউর!
– আমি কখনো কাউকে যেতে দেখিনি।
– আচ্ছা চলো। মেয়েটার সাথে কথা বলি।
– এখন যদি চিল্লায় তবে সবাই জেনে যাবে।
– চলো আগে যাই।

অবন্তীর সাথে বাসার বাইরে একটা পরিত্যক্ত রুম আছে অনেক আগের সেটাতে চলে আসলাম। গতরাতে মেয়েটি অনেক পালানোর চেষ্টা করেও পালাতে পারেনি। তাকে আমরা এই রুমে বেঁধে রেখেছিলাম।
– দেখুন আপনি যদি ভদ্র ভাবে আমাদের সাথে কথা বলতে রাজি হন তবেই আমি আপনার মুখ খুলে দিবো।
মেয়েটি শান্ত হয়ে বসে আমার কথা শুনলো। অবন্তী কে উনার মুখ খুলে দিতে বললাম।
– এতো রাতে আপনি এখানে কি করছিলেন এবং সাথের উনি আপনার কে!
মেয়েটি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো- উনি আমার বাবা।
– আপনারা চোরের মতো চুপি চুপি এই বাড়িতে ঢুকতে চেষ্টা করছিলেন কেন! এর আগেও তো ঢুকেছিলেন মনে হয়।
– আমি কখনো ঢুকি নি। তবে বাবা মনে হয় ঢুকেছিলো এর আগেও।
মেয়েটি অবন্তীর গলার চেইনটা দেখে অবন্তীকে জিজ্ঞেস করে – এটা তোমার বাবার চেইন তাই না!
– হ্যাঁ ।
– আমার বাবার ও এমন একটা চেইন আছে ।
মেয়েটির কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম – ঠিক এমনই চেইন আছে!
– হ্যাঁ।
– উনি সেটা কোথায় পেয়েছেন!
– সেটা কখনো বলেনি।
– আপনি আমার বাসায় গিয়েছিলেন কেন!
– বাবা পাঠিয়েছিলো আপনার আম্মুর রুমে ভালো করে খুঁজতে।
– কি খুঁজতে গিয়েছিলেন!
– সেটা বলবো না। তবে আমি আপনাদের সকলকেই চিনি। বাবা সব সময় বলতেন আপনারা আমাদের আত্মীয় কিন্তু আপনাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি সেটা এখনো বলেনি।
– আপনার বাবাকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে! তারপর উনার থেকেই শুনবো আপনি আমাদের কেমন আত্মীয়।
– আমি জানি না।
– গতকাল আপনারা কেন এসেছিলেন!
– এই বাসায় কারো সাথে দেখা করতে। কিন্তু কার সাথে দেখা করতে সেটাও আমার অজানা।
– অবন্তী উনার মুখ বেঁধে দাও। উনি যখন কিছুই জানে না তবে উনার মুখ খোলা রেখে কি কাজ!

অবন্তীকে সাথে নিয়ে বাসার পাশের একটা টং দোকানে চা খাচ্ছি।
– ভাইয়া মেয়েটাকে কি ওখানেই রেখে দিবো!
– হ্যাঁ। বাসার বাইরের রুমে থাক তবে কাল সকালে উনাকে এমন জায়গায় শিফট করবো যেটা কেউ জানতে পারবে না।
চা’য়ের বিল দিয়ে হাঁটতে লাগলাম।
অবন্তী জিজ্ঞেস করলো- আমি তোমায় এতো ধীরে বললাম কিন্তু তুমি এতো লাউডলি বললে কেন!
– আমাদের পিছনে সব সময় স্পাই থাকবে এখন। তাই জন্য সেটার একটা সুযোগ নিতে চাচ্ছি আজ।
– কেমন সুযোগ!
– সময় আসলে ঠিক বুঝতে পারবে। শুধু একটু অপেক্ষা করো। তবে অবন্তী তোমার কি মনে হয় তোমার বড় মামা এখনো বেঁচে আছেন! তোমার আম্মু আমাদের মিথ্যা বলছেন বার বার।
– কিভাবে!
– তোমার গলার চেইন। যেটা পাঁচ জনের কাছে ছিলো কিন্তু চারজন আছে একজন নেই সেটাই তোমার বড় মামা। আবার এই মেয়ে বলছে উনার বাবার কাছে এমন চেইন আছে। যেটা শুধু মাত্র তোমার মামার কাছে থাকার কথা।
– এতো ডিপলী তো চিন্তা করিনি।
– তোমায় আর একটা কথা বলবো!
– কি কথা!
– তোমার গলার চেইনটা খোলো।
অবন্তী চেইনটা খুলে আমার হাতে দিলো – এই যে পাঁচটা পাথর আছে না! কিন্তু পঞ্চম যে চেইনটা, যেটা এখন আমার কাছে আছে তার একটা পাথর নেই। যে পাথরটা সুনয়নার নখের মাঝে থেকে উদ্ধার করা হয়। এর থেকে কি কিছু বুঝতে পারলে!
– মানে এই মেয়ের বাবা অর্থাৎ আমার বড় মামা আপুকে হত্যা করছে!
– আমার ধারণা আপাতত সেটাই।

রাতে খুব সাবধানে ছাঁদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ঘরটার দিকে নজর রাখছি। রাফির বন্ধুকে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলাম।
রাত তখন প্রায় বারোটা হবে।
সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সেই সময় একটা শব্দ কানে আসলো। কেউ একজন ধুম করে মাটিতে পড়ে গেলো। আমি দৌড়ে নিচে চলে আসলাম। আমার ধারণাই ঠিক। লোকটা আমার পাতানো জালে ধরা দিয়েছে।
ঘরের মাঝে আসা যাবে এমন সবগুলো পয়েন্টেই খুব নিখুঁত ভাবে অজ্ঞান করার স্প্রে সেটআপ করে রেখেছিলাম। কারণ আমার ধারণা ছিলো মেয়েকে বাঁচাতে বাবা অবশ্যই আসবে । চা’য়ের দোকানে এতগুলো মানুষের ভীড়ে কেউ না কেউ আমাদের কথা শুনছিলো।
রাফির বন্ধু চলে আসলো, দু’জন মিলে উনাকে শক্ত করে বেঁধে ফেললাম।
– স্যার, কতক্ষণ লাগবে জ্ঞান ফিরতে!
– প্রায় এক ঘন্টা। তুমি চাইলে বাসা যেতে পারো।
– না স্যার। আমি এক অদ্ভুত মামলার সাক্ষী হতে চাই। আপনি শিউর তো উনিই খুনি!
– সেটা উনার থেকেই শুনে নিবো।

বেশ কিছু সময় অপেক্ষার পর জ্ঞান ফিরতে শুরু করলো। কিছুক্ষণের মাঝেই শরীরের শক্তি ফিরে আসলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য প্রচন্ড শক্তি অপচয় করছে।
– এতটাও সহজ হবে না। খুব শক্ত করে বাঁধা আছে।
– সুমন ভালোই ভালোই আমায় ছেড়ে দাও।
– স্যার, উনি আপনার নাম ও জানে।
– উনি আমাদের আত্মীয়। নাম জানবে এটাই স্বাভাবিক।
লোকটা রেগে গিয়ে বললো- আমার মেয়ে কোথায়! ও ঠিক আছে তো!
– সেটা ডিপেন্ড করবে আপনার উত্তরের উপর। সুনয়নাকে হত্যা করেছেন কেন!
– আমি কাউকে হত্যা করিনি। তাছাড়া আমি কেন ওকে হত্যা করবো!
– আপনার টার্গেট পূর্ণ করতে।
– কিসের টার্গেট স্যার!
– সেটাও উনি বলবে। এই চেইনটা আপনার! যেটা গতদিন এই বাসায় ঢুকে হারিয়ে ফেলেছিলেন।
– এমন চেইন আরও পাঁচটা আছে। এটা দিয়ে কিভাবে প্রমাণ হয় আমি খুনি!
– আরও পাঁচটা! কিভাবে!
– তোমার দাদী এটা আমায় বানিয়ে দিয়েছিলো। তোমার দাদুর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলো আমার মা। কিন্তু উনি সেটা অস্বীকার করেন। কখনো আমাদের খোঁজ নিতেন না। তবে বড় মা খুব ভালো ছিলো। উনি তোমার বাবার কাছে এই চেইন দেখে একই চেইন আমাকে দিয়েছিলো। এরপর উনিই আমাকে বিদেশে যাওয়া টাকা দেয়।
– তাহলে এই চেইন আপনার! তবে তো আপনি হত্যা করেছেন।
– এ থেকে কিভাবে প্রমাণ হয় আমি খুনি!
– সুনয়নার শরীরে যে ড্রাগস পাওয়া যায় সেই ড্রাগস এই পুরো এলাকায় শুধু মাত্র আপনার কাছেই আছে।
– উনি ড্রাগসের বিজনেস করেন স্যার!
– না। উনি ঐ ড্রাগসে আসক্ত। উনি বিদেশে ছিলেন অনেক দিন সেখানে থাকা সময়ে থেকে উনি এই ড্রাগস পুস করেন নিজের শরীরে। দেখুন আপনার মেয়ে সবটাই বলে দিয়েছে। আপনি শুধু শুধু সময় অপচয় করলে আপনারই কষ্ট হবে ।
– আমি কিছুই বলবো না। আমি খুন করি নি।

লোকটার মুখ বেঁধে বাইরে চলে আসলাম।
– স্যার আপনি জানতেন উনি সম্পর্কে আপনার চাচা হয়!
– হ্যাঁ । এটা আমি আম্মু এবং ছোট মা জানতাম। এখন দাদু জানে। কারণ দাদু সেখানে বেশি দিন ছিলেন না। কিন্তু দাদী সবটা খেয়াল রাখতো।
-আপনি এতো কিছু কিভাবে জানলেন
– ভুলে যেও না আমি একজন ডিটেকটিভ।
– কিন্তু স্যার উনি তো কিছুই শিকার করছেন না। উনার মেয়েকে উনার সামনে এনে টর্চার করি?
– সব কিছুরই একটা লিমিট থাকে। কিন্তু নেশার লিমিট পেরিয়ে গেলে অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়।
– বুঝতে পারি নি।
– উনার সামনে উনার মেয়েকে নিয়ে যতোই টর্চার করো মুখ খুলবে না। কিন্তু উনার ড্রাগস নেওয়ার সময় হলে যদি ড্রাগস না পায় তবে মৃত্যু যন্ত্রণা উনাকে কুঁড়ে কুঁড়ে ব্যাথা দিবে। সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করো। হয়তো আর মাত্র দুই এক ঘন্টা। তোমাকে যেটা নিয়ে আসতে বলেছিলাম সেটা এনেছো!
– হ্যাঁ স্যার।

কিছুক্ষণ পরেই ঘরের ভিতরে ছটফট করতে শুরু করলো।
– হয়তো সময় ঘনিয়ে এসেছে।
আমরা দুজন আবার ঘরের মাঝে ঢুকলাম। লোকটা প্রচন্ড ছটফট করতে শুরু করলো।
– আপনি যদি সত্যিটা বলেন তবেই আপনার ঔষধ আপনি পেয়ে যাবেন। যেটা এখন আমার হাতে আছে। নয়তো আপনার কি অবস্থা হবে সেটা আপনি ভালো করেই জানেন।

বেশ কয়েকবার বলার পর বলতে রাজি হলো।
ড্রাগস পুস করার কিছুক্ষণ পর লোকটা স্বাভাবিক হলো।

– এখন বলুন, নয়তো পরবর্তী সময় আর এটা পাবেন না। কারণ আপনার রিজার্ভে যতটুকু ছিলো সবটাই আমার কাছে। আমি যতদূর জানি নতুন করে নিয়ে আসার জন্য যে টাকার দরকার সেটা আপনার কাছে নেই। যেটার জন্য আপনি দাদুকে প্রেসার দিচ্ছেন।
– তোমার দাদুকে আমার মা বলেছিলো আমায় কিছু সম্পত্তি দিয়ে দিতে। কিন্তু উনি আমায় সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দেন নি। বিদেশ থেকে বাসায় আসার পর বিজনেস শুরু করি। হঠাৎ জুয়ার জগতে চলে গিয়ে সবটাই হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাই। কিন্তু তোমার দাদু তো আমায় সম্পত্তি দিবে না। তাই রাগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই পরিবারের সবাইকে এক এক করে শেষ করবো পরে আইনত সব কিছু আমার হবে । কেউ জানতেই পারবে না সবাই কিভাবে মারা গিয়েছে। সবাই জানবে স্বাভাবিক মৃত্যু।
– কাকে কাকে এখন পর্যন্ত খুন করছেন!
– সুনয়নাকে দেখার জন্য গিয়ে ওদের খাবার পানিতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেই। এরপর ওকে তুলে নিয়ে আরশের কাছে যাই। গিয়ে সেখানে ড্রাগস পুস করি। ভেবেছিলাম এক ঢিলে দুই পাখি মারবো। কিন্তু এতোবছর পর তুমি আবার সেই পুরাতন জিনিস বের করবে কখনোই কল্পনা করিনি।
– শুধুই সুনয়না কে মেরেছিলেন!
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার সাথে অন্য কোথাও দেখা হবে।

আমরা দুজন বাইরে চলে আসলাম।
– এই ভিডিও টা তোমায় সেন্ড করছি। শুনানির দিন দেখাবে।
– স্যার, আপনার ছোট মা কি তবে উনার দলে!
– না। তাহলে উনি যে আরশকে ছাড়াতে না করলো।
– এই ভদ্রলোক দাদুকে হুমকি দিয়েছিলো যদি আরশ বাইরে আসে তবে উনি ওর ক্ষতি করবে। কিন্তু মায়েরা কি আর সন্তানের ক্ষতি হতে দিতে চায়।
– মায়ার উপরেও কি উনি হামলা করেছিলেন!
– না। মায়ার উপর হামলাটা ছোট মা’র সাজানো নাটক ছিলো যাতে আমরা ভয় পেয়ে যাই।
– শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্য কত কিছু।
– লোকটা যদি আমার বোন কে না মারতো তবে উনাকে না ধরিয়ে দিয়েই আমি আরশকে ছাড়াতাম। কিন্তু উনি আমার বোনকে মেরেছেন।

পরের শুনানিতে উনার বক্তব্যে আরশ মুক্তি পায়।

সময় গড়িয়ে গেলো। আমার ঘর আলো করে একটা রাজকন্যা জন্ম নিলো।
– চন্দ্রিমা, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আজ একজন কে দেখতে যাবো।
– আচ্ছা।
– মায়া ও আসছে।

সেন্ট্রাল জেলে আসলাম। আমার বোনের খুনিকে দেখতে।
– তুমি কাকে দেখতে আসছো!
– সুনয়নার খুনি কে।
– তুমিই দেখা করো আমরা করবো না।
– আচ্ছা। তোমরা আমার থেকে কিছুটা দূরে থেকো।
ওদের সাথে নিয়ে আসলাম। ওরা রুমের বাইরে। কিন্তু রুম থেকে ওদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
– তুমি এখানে কেন!
– আপনাকে দেখতে আসলাম দেখাতে আসলাম।
– কি!
– আপনি আমার পরিবার কে শেষ করতে চেয়েছিলেন না! ঐ দেখুন আমার পরিবার কোলে হাসছে। সব থেকে মজার বিষয় কি জানেন! ঐ কোলটা আপনার মেয়ের।
– মানে!
– আপনার স্ত্রী তিনজন কন্যা জন্ম দেন জন্য আপনি তাকে ডিভোর্স দিয়ে বড় মেয়ে কে নিয়ে উনাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন। ঐ দেখুন মেজো মেয়ে মায়া এবং ছোট মেয়ে চন্দ্রিমা। তারা জানে না আপনি তার বাবা। জানলে হয়তো ঘৃণায় সুইসাইড এ করতে পারে।

লোকটার চোখে পানি চলে আসছে।
আমি লোকটার কানে কানে বললাম – আপনি যে মহিলা কে খুন করেছিলেন সেই মহিলাই আপনার রক্তকে খুব যত্নে মেয়ের আদরে বড় করেছে। খুব কি দরকার ছিলো আমার নিষ্পাপ মা টাকে মেরে ফেলার! যাই হোক আপনার মেয়ের কোলেই আমার নতুন মা এসেছে। আপনার মেয়ের কোলেই আমার পরিবার বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আপনি কখনো কোনো দিন বাবার পরিচয়ে সামনে যেতে পারবেন না। ভালো করে দেখুন ঐটা আমার চন্দ্রিমা। আমার মেয়ের আম্মু। আপনার মেয়ে।

(#সমাপ্ত)

প্রিয় চন্দ্রিমা সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে