প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-১১

0
256

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#১১তম_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
ছোট মা ভিতরে আসলো- কবে যাচ্ছো!
– এখনও ঠিক করা হয়নি।
– কেন! তোমায় যে বললাম আজ চলে যেতে।
– যে কাজটা শুরু করেছি সেটা শেষ না করে কিভাবে চলে যাই বলুন!
– কি কাজ শুরু করেছো তুমি!
– আরশ হয়তো আবার নতুন করে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার স্বপ্ন দেখছে। ওর স্বপ্নটা আর নষ্ট হতে দিবো না।
– আমি তোমায় বলেছি না, ওকে বের করতে হবে না। ও যেখানে আছে সেখানেই অনেক ভালো আছে ।
– তার আগে আপনি আমায় বলুন , একজন মা হয়ে কিভাবে ছেলের মুক্তির পথে বাঁধা হচ্ছেন!
– সেটা অবশ্যই আমি তোমায় বলবো না। আমার ছেলেকে আমি বের করবো কি না সেটা আমার ব্যাপার।
– তাহলে আপনার ও এটা জানা উচিত আমার ছোট ভাইকে আমি বের করবোই। সেটা যেভাবেই হোক।
– তোমার আম্মুর মতো জিদ তোমার। কিন্তু আমার ছেলের কোনো ক্ষতি হলে তবে তোমার ভালো হবে না।

ছোট মা চলে গেলো। দেখতে দেখতে শুনানির তারিখ ও চলে আসলো। এর মাঝে আরশের কথায় কয়েকজনের সাথে দেখা করলাম। কিছু মানুষ শহরের বাইরে থাকায় তাদের সাথে দেখা হলো না।

আজ শুনানি।
প্রথমেই পাবলিক প্রসিকিউটর বলতে শুরু করলো – মাননীয় বিচারক, একটা মামলা যেটার রায় অনেক দিন আগেই হয়ে গিয়েছে। সেটা আবার পুনরায় আপিল করে তদন্ত করার কি আছে! আসামি তো সেই সময়েই নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিলো।
ক্রিমিনাল লইয়র- সেই সময় কি আসামির পক্ষের কোনো উকিল ছিলো? ছিলো না। যখন তার হয়ে কথা বলার মতো কোনো উকিল ছিলো না তখন সেখানে মিথ্যা অপবাদ স্বীকার করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না।
– তার পরিবার কেন কোনো লইয়ার ঠিক করে নি! কারণ তারা জানতো তাদের ছেলে অপরাধী।
– মাননীয় বিচারক এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
বিচারক: আপনারা নিজেদের মাঝে বাকবিতন্ডায় সময় নষ্ট না করে নিজ নিজ সাক্ষ্য প্রমাণ প্রদান করুন।

পাবলিক প্রসিকিউটর আরশের কাছে গিয়ে সেই সময় তার অবস্থার কথা জানতে চাইলো – আপনি সেই সময় রোজ নেশা করতেন তাই তো!
– হ্যাঁ।
– অতিরিক্ত নেশা করার জন্য আপনাকে একবার রিহ্যাবে পাঠানো হয়েছিল, এটা কি ঠিক!
– হ্যাঁ।
– মাননীয় বিচারক, উনি মাত্রাতিরিক্ত নেশা করার কারণে তার পরিবার তাকে রিহ্যাবে পাঠায়, সেখানে থেকে এসে সে কিছু দিন স্বাভাবিক হয়ে চললেও এরপর থেকে আবার সেই নেশার জগতে পা বাড়ায়। আমরা সকলেই জানি নেশার ঘোরে থাকা মানুষের ব্রেইন ঠিক মতো কাজ করে না। তাই সে নেশার ঘোরে মেয়েটাকে তুলে নিয়ে আসে শ্লীলতাহানি করার জন্য এবং হত্যা করে। পরে যখন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে তখন তার নেশা কেটে যায় এবং নেশা অবস্থায় করা তার অপকর্মের কথা ভুলে যায়।
আরশ: এমন কিছুই হয়নি।
ক্রিমিনাল লইয়ার: আচ্ছা আপনার সব গুলো কথা মেনে নিলাম। এখন আপনি আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন দয়া করে, ১ম প্রশ্ন ” যে জায়গায় খুন হয় তার আশেপাশে প্রায় তিন কিলোমিটারের মাঝে কোনো বাসা নেই। না মানুষ চলাচল করার মতো কোনো রাস্তা আছে। একটা নদীর কিনারা যেখানে সন্ধ্যার পর নেশাখোর মানুষ ছাড়া কেউ যায় না। তবে ও মেয়েটাকে ওখানে আসলো কিভাবে!
– সে মেয়েকে তুলে নিয়ে এসেছে।
– ২য় প্রশ্ন ” আপনি বললেন নেশা অবস্থায় তার সেন্স কাজ করে নি তাই সে মেয়েকে তুলে এনে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করে অতঃপর হত্যা করে। আপনি কি জানেন এই মেয়ের বাসা সেখানে থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে।
– হ্যাঁ তো!
– মাননীয় বিচারক, খুব সাধারণ ভাবে একটা বিষয় খেয়াল করুন, আমি জানিনা আমার প্রতিপক্ষ বন্ধুর মাথা ঠিক মতো কাজ করছে কি না। উনার বক্তব্য , আরশ সাহেব নেশায় মাতাল হয়ে নিজের সেন্স হারিয়ে মেয়েটাকে হত্যা করেন। কিন্তু মাতাল হবার পরও তার এই সেন্স টা কাজ করছিলো জন্য নেশা করে দশ কিলোমিটার পথ গিয়ে মেয়েটাকে সেখানে হত্যা না করে আবার সেখানে থেকে তুলে তার জায়গায় নিয়ে এসে খুন করলেন। আচ্ছা ঠিক আছে সেটা মেনেও নিলাম। কিন্তু এই দীর্ঘ পথ পারি দিতে সময় মেয়েটা নিজেকে বাঁচানোর একটুও চেষ্টা করলো না?
– কেন চেষ্টা করেন নি! অবশ্যই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আপনার ক্লাইন্ট তাকে সফল হতে দেয় নি।
– আমরা সাধারণত নিজেকে কারো থেকে বাচাতে হলে প্রতিপক্ষকে আঘাত করার চেষ্টা করি যাতে সে ব্যাথা পায় এবং আমরা পালাতে পারি, সেইফ জোনে যেতে পারি। কিন্তু পুলিশ আইডেন্টিটিতে সেই সময় না আরশ সাহেবের শরীরে কোনো ক্ষত ছিলো আর না তার পোশাকে কোনো টানাহেঁচড়ার চিহ্ন ছিলো।
বিচারক – এটা কি আপনি প্রমাণ করতে পারবেন! কারণ আইডেন্টিটি তো শরীরের হয়, পোশাকের নয়।
– সেই সময় যে অফিসার দায়িত্বে ছিলেন এটা তার বক্তব্য। তার ট্রান্সফার হয় কিন্তু আমরা তাকে আজ এখানে নিয়ে এসেছি।
অফিসার এসে উকিলের বক্তব্য স্বত্তায়িত করে। মামলা প্রায় আমাদের দিকেই।
ক্রিমিনাল লইয়ার- আমার শেষ প্রশ্ন ” আপনি বললেন শ্লীলতাহানির জন্য নিয়ে আসা হয়, কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টা হয়তো আপনি দেখেন নি। মেয়ের প্রাইভেট পার্টস্ এ কোনো প্রকার সেরকম সিনর্ডম পাওয়া যায় নি।
– হতে পারে সে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে বিরক্ত হয়ে হত্যা করে দেয়।
– তার নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার উত্তর আমি আপনাকে একটু আগেই দিয়েছি।

পাবলিক প্রসিকিউটর আরশের দিকে যায় – আপনি সেদিন রাতে কি কি নেশাজাত দ্রব্য সেবন করেন! মনে আছে কি তেমন কিছু!
– বিয়ার সাথে ঘুমের ঔষধ ছিলো।
– মাননীয় বিচারক, ঐ মেয়েটার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে তার রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণ ঘুমের ঔষধ এবং এক ধরনের বিষাক্ত ড্রাগস পাওয়া যায়, যা ইনসুলিন দিয়ে পুস করতে হয়। ৫ mm এর বেশি যদি কোনো সাধারণ মানুষের শরীরে পুস করা হয় তবে সে কিছুক্ষণ পরেই মারা যাবে এবং রোজ সেবন করা মানুষ এই ড্রাগস সর্বোচ্চ ১৫ mm পর্যন্ত নিতে পারে। এটা এতটাই ভয়ানক আর ঘুমের ঔষধ আরশ সাহেবের পকেটেই ছিলো প্রায় ২৫ টার মতো। এখন আমার প্রতিপক্ষ মহোদয় কি বলবেন! এখনও কি বলবেন আপনার ক্লাইন্ট নিরপরাধ!

আমার কাছে এই ড্রাগসের ইনফরমেশন ছিলো না। যার ফলে এই বিষয় নিয়ে আমি কোনো রিসার্চ করি নি। আমার লইয়ার আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

সেদিন বিচারক এক দশ দিনের জন্য সময় দেন। কিন্তু আরশ বিয়ার এবং ঘুমের ঔষধ একসাথে খেয়েছে। মেয়েটাকে প্রথমে ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে তারপর সুযোগ বুঝে ড্রাগস পুস করছে।

কোর্ট থেকে বের হয়ে রাফির বন্ধুর সাথে দেখা করলাম।
– তুমি কি এই ড্রাগস সম্পর্কে কিছু জানো!
– আসলে স্যার এটা আমাদের দেশে Available না। যেকোনো কায়দা করে বাইরের দেশ থেকে নিয়ে এসেছে যে এই কাজটা করছে।
– এখন কি করা যায়! কে হতে পারে এই আসামি!
– ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। তবে আমার মনে হয় আপাতত হত্যা কারী না খুঁজে আপনার ভাইকে নিরপরাধ প্রমাণ করা বেশি জরুরি। আগে উনাকে ছাড়িয়ে নিন। তারপর হত্যাকারীকে খোঁজা যাবে।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে