প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-১৩

0
258

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#১৩তম_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
আরশের বন্ধুকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যখন ডাকা হলো তখন তাকে প্রথমেই পাবলিক প্রসিকিউটর প্রশ্ন করলো- আপনি আরশ সাহেবের কেমন বন্ধু!
– খুবই কাছের।
– তাহলে তো এই মামলায় আপনিও জড়িত থাকতে পারেন।
– এই মামলায় আমি কেন! আরশ নিজেও জড়িত নেই।
– কিভাবে! আচ্ছা আপনি এতটুকু নিশ্চিত করুন একজন মানুষ মাতাল অবস্থায় যে কোনো অপরাধ করতে পারে তাি না!
– হ্যাঁ।
– তাহলে আপনি কি করে বলছেন আপনার বন্ধু নিরপরাধ!
ক্রিমিনাল লইয়ার- আমায় একটু প্রশ্ন করার সুযোগ দিলে হয়তো আমি প্রমাণ করতে পারতাম উনি কিভাবে দাবি করছে উনার বন্ধু নিরপরাধ।
– অবশ্যই। সেই অপেক্ষায় তো আছি।
ক্রিমিনাল লইয়ার আরশের বন্ধুকে প্রশ্ন করলো – আপনি এবং আরশ বেশির ভাগ সময় একসাথেই ঐ কুঁড়ে ঘরটায় নেশা করতেন তাই না!
– হ্যাঁ। তবে ঐ দিন আমার ছোট বোনের বিয়ে ছিলো তাই বিয়ে উপলক্ষে আমি ওকে বিয়ার ট্রিট দেই। আর ঘুমের ঔষধ গুলো ওর নিজের ছিলো।
– বিয়ারের সাথে ঘুমের ঔষধ সেবন করার পর কি শরীরের শক্তি বেড়ে যায়!
– না, তবে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। তবে এর রেশটা দীর্ঘ সময় থাকে।
– মাননীয় বিচারক, যদি শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে তবে ঐ মেয়েকে কাঁধে তুলে নিয়ে আসা অসম্ভব। আর মেয়ে নিশ্চয়ই হেঁটে আসে নি।
পাবলিক প্রসিকিউটর- কে বললো মেয়ে হেঁটে আসছে! উনাকে জোর করে জবরদস্তি তুলে নিয়ে এসেছে।
– আপনি সেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কি না জানি না তবে আমি গিয়েছিলাম। চারপাশে ছিপছিপে পানি প্রায় সব সময়ই থাকে। যদি কাউকে জোর করে নিয়ে আসা হয় তবে তার শরীরে একটু হলেও কাঁদা পানি লেগে থাকবে। কিন্তু সেই সময়ে পত্রিকা বা পুলিশের ফাইলে পাওয়া ছবি কোথায় মেয়েটির শরীরে বিন্দু মাত্র কাদা পাওয়া যায় নি।
– এ থেকে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন!
– একজন শক্তি সামর্থ লোক মেয়েটিকে অজ্ঞান করে কাঁধে করে ঘটনাস্থলে নিয়ে এসেছে এবং তার শরীরে ড্রাগস পুস করেছে।
ক্রিমিনাল লইয়ার আরশের বন্ধু কে আবার জিজ্ঞেস করলো- আরশ সাহেবের কাছে কি কোনো ড্রাগস ছিলো ঐ দিন! বা উনার কোনো বন্ধু কি বিদেশ থেকে ড্রাগস পাঠিয়েছিলো!
– না। তাছাড়া ওর খুব কাছের শুধু মাত্র আমি ছিলাম।
– আরশ সাহেবের কি ঐ মেয়ের সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক ছিলো!
– না। ও মেয়েদের থেকে নিজেকে দূরে রাখতো। সব সময় একটা কথা বলতো নেশার হাতে জীবন ধ্বংস করবো তবুও কোনো মেয়ের হাতে জীবন তুলে দিবো না।
– মাননীয় বিচারক, এখন তো পরিস্কার যে আরশ সাহেবে হত্যা করে নি৷। তাছাড়া একজন মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে বা মাতাল অবস্থায় শুধু তার উপরেই আক্রমণ করে যার প্রতি তার ক্ষোভ থাকে। কিন্তু এই মেয়ের সাথে তার কোনো প্রকার পারিবারিক বা প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না।

ক্রিমিনাল লইয়ার এর এমন প্রশ্নে পাবলিক প্রসিকিউটর যে উত্তর দিলো সেটা শোনার পর আমাদের পরিবারের সবাই থ হয়ে যায় -আপনি হয়তো মামলা নিয়ে তেমন একটা পড়াশোনা করেন নি। মেয়েটার সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিলো না এটা আপনাকে কে বলছে! আরশ সাহেবের বাবা জনাব কাশেম সাহেব এর প্রথম স্ত্রীর মেয়ে ছিলেন ঐ মেয়ে। যার নাম তো শুরুতে সুনয়না ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে তার নানি সেই নাম পরিবর্তন করে স্নেহা নাম রাখেন। সাধারণত কেউ নিজের সৎ বোনকে সহ্য করতে পারে না। তাই এমনটা করা খুব সাধারণ।

অদ্ভুত এক কথায় শিহরণ তুলে দিলেন আমাদের সকলের শরীরে। এই একটা কথায় আমাদের পরিবারের প্রায় সকলের চোখেই পানির উপস্থিতি লক্ষ্য করলাম।

সেদিনের মতো শুনানি শেষ। এর পরের শুনানিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শোনানো হবে।
সবাই বাসা চলে গিয়েছে। আমি এবং রাফির বন্ধু বসে চা হাতে চিন্তা করছি। কথা বলতে বলতেই একটা সিগারেট জ্বলালাম।
– আপনাকে আজ খুব বেশি চিন্তিত দেখাচ্ছে।
– উনি যে মেয়েটার কথা বললো সে আমার জমজ বোন। যাকে এতোদিন মৃত বলেই জানতাম। তবে একটা বিষয় তো পরিস্কার যে এইসব কাজ করছে সে ভালো করেই জানতো সুনয়না বেঁচে আছে এবং সে আমার বোন। ঐ রাতে মায়ার উপর হামলা করে।
– তাহলে কারণ টা কি দাড়াচ্ছে! এমন কেউ এসবের সাথে জড়িত যে আপনার পরিবারকে ঘৃণা করে। আপনার পরিবার কে শেষ করতে চায়।
– হুম।
– আমার মনে হয় স্যার, আপনার ছোট মা’র সেই ভাই এখনো জীবিত আছে। আমাদের একবার ভালো করে খোঁজা উচিত।
– সে কথাও এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পাচ্ছি না।
– কেন স্যার!
– উনি আমার পরিবার কে ঘৃণা করবেন কিন্তু আরশ তো আমাদের পরিবারের কেউ না। আরশ তো উনার ভাগ্নে। তাহলে উনি আরশ কে কেন ফাঁসাবেন!
– সব কিছুই কেমন যেন গড়মেলে। তবে ঐ চেইনটা কার!
– এদিকে তো মনে হয় উনি বেঁচে আছেন। নাহ্, এভাবে হচ্ছে না। আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে মস্তিষ্কে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তবে আমার বোনটাকে যদি একবার দেখতে পারতাম! আচ্ছা রাত হয়ে গেছে চলো বাসায় চলে যাই।
– আমার বাইকে করে আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি চলুন।

এখন আমরা দু’জনেই আমাদের বাসার সামনে।
– তো স্যার, আপনি গিয়ে রেষ্ট করুন। আগামী সপ্তাহে তো আবার শুনানি আছে।
– তুমি আমার একটা কাজ করতে পারবে!
– কি কাজ!
– মেয়েটা সত্যি আমার বোন কি না সেটার খোঁজ নিতে পারবে!
– আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করবো।

বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। সবার মুখেই গম্ভীর ভাব।
– আপনারা এখনো ঘুমিয়ে পড়েন নি?
আব্বু আমায় জিজ্ঞেস করলাে- তুমি কি জানতে মেয়েটা সুনয়না ছিলো!
– আমিও আজকেই শুনলাম।
– আমি যদি একটু দায়িত্বশীল হয়ে খোঁজ নিতাম তবে হয়তো আমার মেয়েটা বেঁচে থাকতো আর আমার ছেলেও বাসায় থাকতো।
আব্বু চোখ মুছতে লাগলো।
– আপনার উচিত ছিলো কিন্তু সেটা তো আপনি করেন নি। আপনার চারজন সন্তানের মাঝে শুধু অবন্তীর জন্য আপনি একজন আদর্শ পিতা হতে পারেন কিন্তু বাকি তিনজনের কাছে আপনি একজন ব্যার্থ পিতা। চন্দ্রিমা মায়া দু’জনেই রুমে আসো।

ওদের দুজন কে নিয়ে রুমে আসলাম।
আমি বেডে বসে আছি। চন্দ্রিমা এসে জিজ্ঞেস করলো- তুমি খাবে না!
– না। ইচ্ছে করছে না। তোমরা দুজনেই সাবধানে থেকো। হয়তো পরবর্তী কোনো আক্রমণ হলে সেটা তোমাদের উপর আসতে পারে। কারণ যে এই কাজ গুলো করছে তার টার্গেট আমার পরিবার।

“আমরা তো তোমার পরিবার নই” – দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে অবন্তী বললো।
– তুমি কখন আসলে!
– তুমি যে আব্বু কে এসব বললে, তুমি জানো আব্বু কে আমি কতদিন কান্না করতে দেখেছি তোমাদের জন্য! বড় মা’র জন্য! হয়তো উনি পরিস্থিতির জন্য তোমাদের পাশে থাকতে পারেনি এই জন্য তুমি উনাকে ব্যার্থ পিতা বলতে পারো না। আমি অন্তত তোমার থেকে এমন কিছু আশা করিনি ভাইয়া।
অবন্তী আমায় কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চোখ মুছে দৌড়ে চলে গেলো।
– ভাইয়া, অবন্তী তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসতে। সেটা তুমি জানো। কিন্তু তুমি আজ সত্যি ওকে অনেক আঘাত করছো। তুমি তো জানোই মেয়েরা তার বাবার সম্পর্কে কোনো কটু কথা সহ্য করতে পারে না। তাদের হৃদয় কেঁপে উঠে।
– তখন তো মাথায় অনেক প্রেসার ছিলো কি বলতে কি বলে দিয়েছি। কিন্তু এখন কি করবো!
– তোমার উচিত সময় থাকতেই ওর রাগ ভাঙ্গানো। সময়ের সাথে সাথে শুধু রাগ না, রাগ করার কারণে দূরত্ব ও বেড়ে যায়।

রুম থেকে বের হলাম। কিন্তু সেদিনের সেই অদ্ভুত মানুষটা কে আজ আবার দেখলাম। চারদিকে চোরের মতো করে তাকাচ্ছে। এখনই কি ধরে ফেলবো! না, আগে দেখা যাক কার রুমে যায়।
যেটা আমি কখনোই ভাবিনি সেটাই দেখতে হচ্ছে। লোকটা চুপিচুপি দাদুর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।

To be continue…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে