প্রিয় অনুভব পর্ব-১০+১১

0
366

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_১০

“নাহি!”

শাফিনের চিৎকারে লাফিয়ে উঠলো নাহিয়ান। ঘুম তার পুরো হয়নি এখনো।

“কি হয়েছে?”

“উঠিস না কেনো? যাবি না?”

“কোথায়?”

“রীতিদের বাড়ি!”

“আজব, তোমার শ্বশুরবাড়ি তুমি যাও!”

বলে আবার শুয়ে পড়তে বলেই শাফিন ওর হাত টেনে ধরে আটকে দিলো।

“ভাইয়া! ঘুমোতে দেও।”

“আমার সোনা ভাই না তুই? দেখ রীতির এত বোন যে ওদের মাঝে নিজেকে হাড্ডি লাগে। তার উপর ওর যেই দুই ভাই আছে, তাদের বাড়িতে পাওয়া যায় না। আমি একা কি করবো? প্লিজ চল ভাই!”

“আমি গিয়ে কি করবো?”

“দেখবি, ঘুরবি! তাছাড়া রীতির মা তো তোদেরকেও দুপুরের খাবারের দাওয়াত দিয়েছে। খেয়ে দেয়ে রাতে চলে আসিস। রাতে বউ কাছে থাকবে। তখন আর সমস্যা হবে না!”

নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো, “আচ্ছা সুবিধাবাদী লোক তো তুমি!”

“চল না ভাই। তাহলে দেখা গেলো আমার কোনো শালীকা পটে গেছে তোর উপর। তোর লাইনও ক্লিয়ার হবে। আমি সাহায্য করবো!”

“তোমার ঐ মেন্টাল শালীকাদের দিয়ে আমার কাজ নেই।”

“তাহলে ওদেরকেই তোর গলায় ঝুলিয়ে দিবো দেখিস!”

নাহিয়ান চোখ ছোট ছোট করে বললো, “মানে?”

“মানে হলো মা কে বুঝিয়ে সুজিয়ে ওদের কাউকে তোর গলায় ঝুলিয়ে দিবো। ওটা নীতিও হতে পারে।”

“ব্ল্যাকমেইল করছিস?”

“সোনা ভাই না আমার তুই? প্লিজ!”

নাহিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ”আসছি! রেডি হতে তো দে?”

শাফিন চট করে নাহিয়ানের গালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা বুঝতে সময় লাগলো নাহিয়ানের। বুঝতে পেরেই গাল ঘষতে ঘষতে বললো, “ছি!”

__________________________________

বাড়ি থেকে রওনা হয়েছে আরো একঘন্টা আগে। দেড় ঘন্টার রাস্তার মাঝে আধা ঘণ্টাই জ্যামে বসে আছে সবাই। সবাই বলতে নীতি, প্রীতি, বর্ষা, রীতি, শাফিন, নাহিয়ান আর সাজ্জাদ। মাইক্রো নিয়েছে যাওয়ার জন্য। নীতি এবার অনেক বিরক্ত। মাইক্রো থেকে নামার জন্য পদক্ষেপ নিতেই বর্ষা বলে উঠলো, “কই যাস?”

“হাঁটতে!”

“মানে?”

“মানে আমি আর বসে থাকতে পারবো না। হেঁটে যাবো!”

নাহিয়ান তাচ্ছিল্য করে বললো, “হ্যাঁ, যাও যাও। দশ মিনিটের রাস্তা তো। হেঁটেই যাওয়া যায়!”

নীতি কড়া চোখে ওর দিকে তাকালো।

“আপনার মত পঙ্গু না, পা আছে। বুড়ো হয়ে যাই নি যে হেঁটে যেতে পারবো না। থাকেন আপনারা।”

বলেই হাত ব্যাগ নিয়ে নেমে গেলো। ওর পিছু পিছু বর্ষাও নামলো। বান্ধবীকে একা ছাড়বে কি করে? প্রীতি নামলো না। এসি ছেড়ে রোদের মধ্যে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তার। রীতি বেশ কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু নীতি কোনো কথা না শুনে ওদের বিদায় দিয়ে ফুটফাট দিয়ে হাঁটতে লাগলো। রীতি চিন্তিত হয়ে বললো, “ওরা একা কি করে যাবে। এত রাস্তা হাঁটবে কি করে?”

“সেটাই তো!”

শাফিনের জবাবে রীতি ধমক দিয়ে বললো, “কেমন দুলাভাই তুমি? যাও ওদের পিছু পিছু। ওদের খেয়াল রাখা তোমার দায়িত্ব না?”

শাফিন অসহায় হয়ে নাহিয়ানের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে। নাহিয়ান ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে বলল, “আর কোনো হেল্প করতে পারবোনা আমি। তাকিয়ে লাভ নেই।”

“প্লিজ!”

“ভাইয়া, সব সময় এমন অসহায়ভাবে রিকোয়েস্ট করবে না তো। ওই রীতি তোর জামাই সামলে রাখ।”

সঙ্গে সঙ্গে শাফিন ওর মাথায় গাট্টা দিয়ে বললো, “ভাবী হয় তোর। সম্মান দে!”

“তোর বউ হওয়ার আগে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয় ও। আমার জন্যই ও তোর বউ ভুলিস না!”

“শাফিন, যাবা তুমি?”

শাফিন দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বললো, ”এখন আমার জন্য নীতি তোর বউ হবে।”

“আবার?”

“যা!”

নাহিয়ান উপায় না পেয়ে নেমে গেলো। বর্ষা আর নীতিকে খুঁজতে লাগলো।

“এই টুকু সময়ে গেলো কোথায়?”

__________________________________

ফুটপাতের উপর একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে বসে আছে বর্ষা। গালে হাত দিয়ে বাচ্চাটার চকলেট খাওয়া দেখছে। দূর থেকে নাহিয়ান ওকে দেখে এগিয়ে গেলো। যেতে যেতেই ভাবলো, “নামতে না নামতেই দুইজন হয়রান হয়ে গিয়েছে?”

ও পৌঁছানোর আগেই নীতি। হাতে খাবারের পার্সেল। সেও মেয়েটির আরেক পাশে বসলো। খাবারের প্যাকেট মেয়েটির দিকে এগিয়ে বললো,“এখানে তোমার মা, বাবা, ভাই সবার জন্য খাবার আছে। এবার খুশি তুমি?”

মেয়েটি মিষ্টি করে হেসে মাথা নাড়লো। হাত বাড়িয়ে সেগুলো নিতে গেলেই নীতি তা সরিয়ে নিলো।

“ফ্রি তে তো দিচ্ছি না আমি! একটা পাপ্পা দেও দেখি!”

বলেই গাল বাড়িয়ে দিলো। মেয়েটাও হামি দিলো। অতঃপর মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে দুইজন হাঁটতে লাগলো।

“তুই এটার জন্যই নেমেছিস, তাই না?”

নীতি হাসলো কেবল!

“তাই তো বলি, নীতি এসি ছেড়ে এই রোদে হাঁটতে চাচ্ছে? যার গরম দু দন্ডও সহ্য হয় না, সেই নীতি!”

“হুমম হুমম!”

“কষ্ট করার কি দরকার ছিল? টাকা দিলেই তো ও কিনে নিতে পারতো।”

“সে পারতো। তবে ও বাচ্চা মানুষ। বয়স হবে সাত কি আট! আর এই দুনিয়াটা বড্ড লোভী। তারা আমাদের মত প্রাপ্ত বয়স্কদেরকেই বোকা বানাতে চায়, সেখানে ওই বাচ্চা কি বুঝবে? দেখা যাবে প্রয়োজনের থেকেও বেশি দাম রেখেছে। আবার বাচ্চাটার মনে যদি টাকার বাজে প্রভাবে পড়ে, তাহলে? হতে পারে খাবার না কিনে অন্য কিছু কিনে ফেললো। বা হারিয়ে ফেললো, বা…”

বর্ষা ওর সামনে গিয়ে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে বললো, “থাম বইন, বুঝছি আমি! এর অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে।”

পরক্ষণেই পিছনে তাকিয়ে বলে উঠলো, “আরে ভাইয়া?”

নীতি বর্ষার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে পিছে তাকালো। নাহিয়ান ওদের কাছে এসে দাঁড়ালো। বর্ষা হেসে বললো, “আপনিও নেমে পড়েছেন?”

“তোমাদের জন্য নেমে পড়তে হয়েছে।”

নীতি ভ্রু কুঁচকে রেখেই জিজ্ঞেস করলো, “কেনো? আমরা কি আপনাকে নামতে অনুরোধ করেছি?”

“তোমার দুলাভাই করেছে!”

“বাহ, অনুরোধ করলো আর নেমে গেলেন? আপনি তো বেশ ভাই ভক্ত দেখছি।”

নাহিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “বক বক কম করো হাঁটতে শুরু করো!”

“ভালো কথা বললেও রেগে যায়। অদ্ভুত মানুষ!”

নাহিয়ান প্রতি উত্তর করলো না। তিনজন হাঁটতে লাগলো। বর্ষা নাহিয়ানকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে।

“আপনি আর রীতি আপু তো সেম এজ তাই না ভাইয়া?”

“হুমম!”

“চাকরি বাকরি করেন না?”

“পাওয়া তো লাগবে!”

“পেয়ে গেলে কি করবেন?”

“কাজ করবো, আবার কি করবো?”

“বিয়ে করবেন না?”

“করবো!”

“কাকে করবেন?”

নাহিয়ান হতাশ দৃষ্টিতে তাকালো। এবার বুঝতে পারছে তার ভাই কেনো এই শালীকা টিমদের ভয় পায়। বর্ষা ওর চাহনি দেখে বললো, “মানে গার্লফ্রেন্ড আছে কি?”

“হুমম আছে!”

“কে সে?”

নাহিয়ান কিছু বলার আগে নীতি বলে উঠলো, “তূর্ণা!”

নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “এটা তোমায় কে বললো?”

“সাজ্জাদ ভাইয়া!”

নাহিয়ান বির বির করে সাজ্জাদকে ভয়ঙ্কর একটা গালি দিলো। নীতি সেটা বুঝতে পেরে গলা ঝাড়লো। বর্ষা আবারও প্রশ্ন করলো,

“আপনার ফেসবুক আছে?”

“না থাকার কি কথা?”

“না তাও ঠিক! দেয়া যাবে?”

“কি করবে?”

“এমনি, মানে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য। যতই হোক, বেয়াইন হই আপনার।”

নাহিয়ান একটু ভাবলো। অতঃপর বললো, “দিতে পারি। এক শর্তে!”

“কি?”

“দশ মিনিটের জন্য একটু মুখটা বন্ধ রাখতে হবে।”

সঙ্গে সঙ্গে বর্ষা দাঁড়িয়ে গেলো। নীতি শব্দ করে হাসতে লাগলো। নাহিয়ান হেসে বললো, “আরে মজা করছি!”

“আপনিও না !”

নাহিয়ান নিজের ফোন বের করলো।

“নাম বলো!”

“সিদ্রাতুল বর্ষা!”

নাহিয়ান সার্চ দিলো। পেয়েও গেলো। অতঃপর রিকোয়েস্ট পাঠালো।

“ডান!”

বর্ষা আবার কথা বলতে শুরু করলো। নাহিয়ান এবার মনোযোগ দিলো না। এফবি স্ক্রোল করতে লাগলো। মূলত নীতির আইডি ঘুরে দেখেছিলো। হুট করেই ওর এক পোস্টে ট্যাগকৃত এক আইডি পেলো। নাম “প্রিয়োনা অনান নীতি”। সেখানে নীতি আর বর্ষার ছবি! মনে মনে আওড়ালো, “প্রিয়োনা!”

অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো, “প্রিয়!”

নীতি থেমে গেলো। ওরা দুইজন এগিয়ে যাচ্ছে। ওর মনে হলো কেউ ওকে ’প্রিয়’ সম্বোধনে ডেকেছে। আশেপাশে তাকালো ও। নাহ কেউ নেই! তাহলে কি সে ভুল শুনলো? দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশপানে তাকালো।

“আমাদের এই বিচ্ছেদ মৌসুমের সমাপ্তি কবে হবে অনুভব?”

কথাটা মনেই রইলো তার। আবার পথ চলতে শুরু করলো সে। ইশ, পথ যদি জানতো তার অনুভবের ঠিকানা।

“মিস দুর্নীতি, এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?”

নীতি ঠোঁট উল্টালো। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর এসেছে। এখনও ত্রিশ মিনিটের পথ বাকি।

“পা ব্যাথা করছে।”

বর্ষা টিটকারী দিয়ে বললো , “খুব তো হাঁটবি বলে নামলি। এখন ব্যাথা করছে কেনো জান?”

নাহিয়ান গলা খাঁকারি দিলো। ছি ছি, কিসব জান টান বলছে।

“তো এখন কি করবেন শুনি?”

“অটো নিবো। ওই তো যাচ্ছে। এই অটো!”

বলেই ছুটলো অটোর দিকে। নাহিয়ান হতাশ হয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো, “এসি মাইক্রো ফেলে উনি অটোতে চললেন। একদম আজব তোমার বান্ধবী!”

বর্ষা হেসে বললো, “ছোট থেকেই মাথায় একটু সমস্যা, কিন্তু মনটা ভালো।”

“অপমান করলি নাকি প্রশংসা?”

নীতির গম্ভীর কণ্ঠে বর্ষা চমকে তাকালো।

“তুই না ওদিকে গেলি?”

“তোদের না নিয়ে গেলে, অটো ঠিক করে দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে তো। তাই এখানে আবার আসলাম আর আপনার মূল্যবান বক্তব্য শুনলাম।”

”ভাইয়া, আমাদের যাওয়া উচিত। আপুরা মনে হয় পৌঁছে গেছে।”

বলেই হাঁটা শুরু করলো। নীতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে গেলো। নাহিয়ান বড় করে শ্বাস নিলো। এদের সাথে আর একটু থাকলে সেও পা’গল হয়ে যাবে। কিছুদূর গিয়েই ওরা অটো নিলো।

__________________________________
“রীতিরা কোথায়?”

বাড়িতে পা ফেলতে না ফেলতেই মায়ের প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে ফেলে নীতি।

“আসেনি তারা?”

“আসেনি বলতে? তোরা এক সাথে আসিস নি?”

“না। রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল তাই আমরা হেঁটে হেঁটে চলে এসেছি।”

বর্ষা নীতির দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বলে, “ওরে বাবা! হেঁটে হেঁটে এসেছো তুমি?”

“ওই মানে জ্যাম ছাড়িয়ে খালি রাস্তায় অটো নিয়েছি আরকি!”

নীতির মা আবার বললেন, “আচ্ছা সে না হয় বুঝলাম। কাল ও বাড়ি থেকে আসার সময় তোকে যে কিছু টাকা দিয়েছিলাম সেগুলো কোথায়?”

নীতি থমকালো। এবার কি বলবে?

“কিসের টাকা?”

নীতির মা দাঁত কটমট করে বললেন, ”তোকে যে বললাম যদি আগে আসিস তাহলে পারলে টাকা দিয়ে রীতির জামাই এর জন্য শার্ট প্যান্ট কিনে আনতে। আর না পারলে টাকা রেখে দিতে। মনে নাই?”

নীতি আমতা আমতা করে বলল, “ওহ আচ্ছা। দাঁড়াও দিচ্ছি।”

নীতি ব্যাগ হাতড়ে তেরো’শো টাকা বের করলো।

“বাকি টাকা কোথায়? পঁচিশশো দিয়েছিলাম তো!”

”খরচ হয়ে গেছে!”

নীতির মা বুকে হাত গুঁজে জিজ্ঞেস করলেন, “আজ আবার কার কি ভাঙলেন?”

নীতি হাসলো।

“জানো যখন জিজ্ঞেস কেনো করছো? বাবার তো আরো টাকা আছে। যাও সেখান থেকে নিয়ে নেও!”

“এমন ভাবে বলছিস যেনো ওগুলো তোর টাকা!”

“বাবার মানেই আমার!”

নীতির মা বির বির করতে করতে চলে গেলেন। পাশেই বর্ষা দাঁড়িয়ে ছিল।

“আন্টিকে সব সময় ভাঙচুরের কথা কেনো বলিস? সত্যিটা বললে কি হয়?”

”মায়ের এই রাগী চেহারায় মাকে ভীষণ মিষ্টি লাগে। আগে তো ভীষণ রাগ করতো। এখন আর তেমন করে না।”

“কারণ তার ধারণায় এটাই গেঁথে গেছে মেয়ে তার বদমেজাজী!”

বলেই বর্ষা নীতির রুমের দিকে যেতে লাগলো। নীতি হাসলো কেবল।

“সত্যি বললে বললে তার চোখে আনন্দ দেখতে পেতে।”

নাহিয়ানের কণ্ঠ শুনে চমকে ওর দিকে তাকালো । অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি…”

আর কিছু বলার আগেই নাহিয়ান বলে উঠলো, “দেখেছি। কারণ আপনাদের যাওয়ার কয়েকমিনিট পরেই আমি নেমেছি ম্যাম।”

নীতি নাহিয়ানের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল, “কাউকে বলবেন না প্লিজ!”

“কেনো?”

নীতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো, “আপনার যেমন টাকার গরম দেখানো পছন্দ না, আমারও তেমন মানুষের কাছে এসব বলে শো অফ করা পছন্দ না। যা আছে মনে মনে! শুধু বর্ষাই জানে! আর কেউ জানে না এসবের ব্যাপারে! তাই! বুঝলেন?”

“বুঝলাম!”

“গুড বয়! আপনার রুম ওইদিকে! ঐযে তিন নাম্বার রুমটা। ওটা গেস্ট রুম! যান। ফ্রেশ হয়ে নিন।”

বলে চলেই যাচ্ছিলো, কিন্তু কিছু একটা মনে পড়তেই আবার ওর কাছে আসলো।

“আব.. সেদিনের জন্য আমি দুঃখিত! আমার রাগ খুব একটা হয় না। কিন্তু হলে কি করি বলতে পারি না। তাই অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনার গিটার ভেঙ্গে ফেলেছি। আপনার মুখের প্রতিক্রিয়া দেখে ভেবেছিলাম হয়তো অনেক দামী গিটার, তাই এমন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। তাই টাকার অফার করে বসেছিলাম। যদি আপনি হ্যাঁও বলতেন তবুও আমার কাছে দেয়ার মত কোনো টাকাই পেতেন না। আর যখন জানলাম সেটা কারো স্মৃতি তখন খারাপ লেগেছে। আর বুঝেছিও। কিন্তু আপনার ঝগড়ার জন্য আপনাকে সরি বলতে আর ইচ্ছে করেনি। তাও আজ বললাম।”

“ঝগড়া আমি করি? নাকি তুমি করো?”

“এইযে এখন যে শুরু করছে সে করে। টাটা!”

বলেই নীতি এক দৌড়ে উপরে নিজের ঘরে যেতে লাগলো। নাহিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। তার ভাবনা আপাতত এক জায়গাতে ই। শুরুটা কে করেছে?

#চলবে

#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_১১

খাওয়া দাওয়া শেষ হতে হতে প্রায় বিকেল হয়ে যায় সবার। খাওয়া শেষ করেই যে যার রুমে চলে গিয়েছে। নীতি গিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ বাদে বর্ষাও আসলো।

”ইয়ার, প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”

“তো ঘুমা, না করেছে কে?”

বলেই উঠে ফোন নিয়ে আবার শুয়ে পড়লো। নীতি ফেসবুকে ঢুকলো। ‘প্রিয়’ আইডিতে দুইদিন ধরে যাচ্ছে না ও। ইচ্ছেও নেই আর। বার বার হতাশ হতে ভালো লাগে না ওর। নিজের নামের আইডিতে ঢুকতেই দেখতে পেলো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে কয়েকটা। নীতি সেগুলো চেক করতে লাগলো। হুট করেই ও থেমে গেলো একটা নামে। ‘ইহরাম আবসার নাহিয়ান’। নামটা দেখে মুখ দিয়ে একটাই কথা বেরিয়ে এলো তার।

“এত্ত বড় নাম!”

পরক্ষণেই নিজের নামের কথা মনে করে হেসে দিলো। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে ফোন পাশে রেখে চোখ বন্ধ করে রইলো। ঘুম পাচ্ছে তার ভীষণ। অতঃপর ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।

__________________________________

মধ্যরাত। ঘড়ির কাঁটায় আড়াইটা ছুঁই ছুঁই। ঘুম নেই নীতির চোখে। এ আর নতুন নয়। তার উপর দুপুরে বেশ করে ঘুমিয়েছে অনেকটা সময়। ওদিকে বর্ষা হাত পা ছড়িয়ে ঘুমের দেশে চলে গেছে। নীতি হেসে ওর গায়ে চাঁদর টেনে দিল। কিছুক্ষণ রুমের মাঝে পায়চারি করে বেরিয়ে গেলো। উদ্দেশ্য ছাদে যাওয়া। এটাও নতুন নয়। এমন কত রাত বিলাস করেছে সে। ভয়? তা তার মাঝে নেই। ধীর পায়ে ছাদের দরজায় যেতেই বুঝলো ভিতরে কেউ আছে। উকি দিয়ে দেখতেই দেখলো নাহিয়ান রেলিংয়ে দু হাতে ভর দিয়ে নিচের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আছে। পিছন থেকে দেখেও চিনতে অসুবিধা হয়নি নীতির। চলে যাবে ভেবে ঘুরে দাঁড়াতেই তৎক্ষণাৎ আবার নাহিয়ানের দিকে তাকালো। না দেখেও সিগারেটের ধোঁয়া দেখে বুঝতে পারলো নাহিয়ান সিগারেট খাচ্ছে। রাগ হলো তার। ভিতরে ঢুকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ”রাত বিরেতে এই ভদ্র বাড়িতে সিগারেট খেতে লজ্জা করছে না?”

নীতির কথায় নাহিয়ান চমকে উঠলো। তৎক্ষণাৎ সিগারেট ফেলে ওর দিকে তাকালো। নীতির হাসি পেলো নাহিয়ানের মুখ দেখে। যেনো ভয়ংকর কিছু করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।

“তুমি এখানে?”

“আপনি এখানে কেনো সেটা বলেন। বাড়িটা আমার, আমি যেখানে খুশি যেতে পারি।”

নাহিয়ান আবার আগের মতোই রেলিংয়ে দু হাতে ভর দিয়ে দাঁড়ালো। কেবল উত্তর দিলো, “আমার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ি। যেখানে খুশি থাকতে পারি।”

“আপনার ভাইয়ের, আপনার না।”

বলেই নাহিয়ানের পায়ের কাছে পড়ে থাকা জ্বলন্ত সিগারেট পা দিয়ে নিভিয়ে দিলো। পা উচু করে দেখে নিলো তার পরিহিত স্লিপার ঠিক আছে কিনা।

“আমারও হতে পারে!”

“এই বাড়ির কাকে পটানোর চেষ্টা করছেন? প্রীতি নাকি সিনথী?”

সিনথীর কথা শুনে হাসলো। ওটুকু মেয়েকে কি পটাবে? নাহিয়ানের হাসি দেখে নীতিও ওর মতো দাড়িয়ে বললো, “আজকালকার ছেলেরা কচি মেয়ে বেশি চায়। তাই বললাম!”

নাহিয়ান এবার শব্দ করে হাসলো।

“তো তুমিও কি কচি ছেলে চাও নাকি?”

নীতি ভরকে গেলো।

“আরে আমি ছেলেদের কথা বলছি!”

“সব ছেলেরা এক হয় না!”

“তা ঠিক। কিছু কিছু ছেলেরা অসাধারণ হয়!”

নীতির কথা শুনে ওর দিকে তাকালো নাহিয়ান। মেয়েটা কোনো ভাবনায় চলে গেছে। হয়তো তার কেউ সেই অসাধারন ছেলে। নাহিয়ান ঘাটলো না। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে সে, এসব থাকা অসম্ভব কিছু নয়।

“তো আপনি যে তুর্ণাকে ফেলে এখানে মেয়ে পটাচ্ছেন, তূর্ণা জানে?”

“তূর্ণাকে আমি বোনের চেয়ে বেশি কিছুই ভাবি না!”

“ওমা, তাহলে যে সাজ্জাদ ভাইয়া বললো?”

“ওরা এমনিতেই মজা করে।”

“ওহ, কিন্তু মেয়ে হিসেবে ভীষণ ভালো। মানাবে কিন্তু আপনার সাথে।”

নাহিয়ান প্রসঙ্গ পাল্টে বললো, “এত রাতে ছাদে যে? ঘুমাও নি কেনো?”

“সেম প্রশ্ন আমারও!”

“উত্তরটা আমি আগে চেয়েছি!”

“দুপুরে ঘুমিয়েছিলাম, সাথে বর্ষার ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস আমাকে ঘুমাতে দেয় না।”

“আর আমার জায়গা পরিবর্তন সেই সাথে সাজ্জাদের নাক ডাকা! তার উপর এত ঘুম কাতুরে, ডাকলেও শোনে না। জাস্ট বিরক্ত আমি।”

সাজ্জাদের নাক ডাকা শুনে নীতি কল্পনা করলো
সাজ্জাদ আর বর্ষার বিয়ে হয়েছে। ঘুমের সময় বর্ষা সাজ্জাদের গায়ে হাত পা তুলে দিচ্ছে। আর এদিকে সাজ্জাদ নাক ডাকছে। দুইজনই ঘুম! আহা, কি সুন্দর সুখের সংসার!

“সাজ্জাদ ভাইয়ের পার্টনার বর্ষা হলে দু’জনই সুখে থাকবে!”

“মানে?”

“এইযে দুইজন ঘুম কাতুরে। তাই বর্ষা ভাইয়ার শরীরে হাত পা তুলে দিলেও ভাইয়া টের পাবে না। আবার বর্ষাও ঘুম কাতুরে, তাই সাজ্জাদ ভাইয়া নাক ডাকলেও সমস্যা হবে।”

“বাহ! কি সুন্দর প্রেডিকশন তোমার!”

“প্রেডিকশন না, বললাম আরকি।”

“তো তোমার কোনো বাজে অভ্যাস নেই, মানে ঘুমের মাঝে?”

“নেই বলবো না। পাশ বালিশ ছাড়া আমার ঘুম আসে না। এটাই বাজে অভ্যেস।”

“আমার তো ঘুম আসে।”

নীতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো। নাহিয়ান ঠোঁট চেপে হাসছে।

“তো?”

“আমাদেরও তো তাহলে সংসার হতে পারে, সুন্দর সংসার! আহা। তুমি পাশ বালিশ নিয়ে নিজের কাছে রাখতে পারবে। টানাটানি করবে না কেউ!”

”হুঁহ, আপনার কাছে থাকার চেয়ে পাশ বালিশ ছাড়া থাকা ভালো!”

“মিস প্রিয়োনা!”

নীতি চমকে তাকালো। নাহিয়ান ওর দিকে একটু ঝুঁকে বললো, “এই মুহুর্তে আপনি আমার কাছেই আছেন। আপনি, আমি একা, এই ছাদে! বুঝছেন কিছু?”

নীতি ঢোক গিললো। এই নাহিয়ান এভাবে কথা বলছে কেনো? নাহিয়ান বেশ অনেকটা ওর কাছে মাথা এগিয়ে নিয়ে আসছে। আর নীতি মাথা পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হুট করে নাহিয়ান আবার নিজের মাথা সরিয়ে নিয়ে বললো, “তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট নাই আমার। তাই ভেবো না বেশি!”

আজব। লোকটা এভাবে বলছে কেনো? নীতির কি আছে নাকি ওর প্রতি ইন্টারেস্ট? কিছু বলবে তার আগেই নাহিয়ান বললো, “যেকোনো একজনের যাওয়া উচিত এখান থেকে। এত রাতে ছাদে আমাদের একা দাঁড়িয়ে থাকাকে কেউ ভালো চোখে দেখবে না।”

নীতি রেলিং ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো, “হুমম, জলদি যান!”

নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

“মানে?”

“মানে আমি থাকবো, আপনি যান!”

“আমি যাচ্ছি না কোথাও।”

“আমিও না!”

দুইজন দুইদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। নীতি আকাশের দিকে তাকালো।

“আজকের আকাশে চাঁদ নেই।”

“অন্ধকার ভয় লাগে?”

“ভুলে যাচ্ছেন, আমি একাই ছাদে এসেছিলাম, রাত্রি বিলাস করিতে মহাশয়!”

“বাহ, খুব সাহস দেখি তোমার!”

নীতি হাসলো।

“আমার প্রিয় রঙ সাদা আর কালো। সাদা হলো শুভ্রতার রঙ। আর কালো অন্ধকারের। কালোকে ভালোবাসতে পারলে অন্ধকারকে কেনো পারবো না?”

নাহিয়ান কিছু বললো না। নীতি আবার বললো, “আমার বাড়ির লোক অবুঝ নয়। তারা আমায় চিনে। বিশ্বাস করে। তাই উল্টো পাল্টা ভাবার কারণ নেই।”

নাহিয়ান এবারও চুপ। নীতিও আর কিছু বললো না। হুট করেই নাহিয়ান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। নীতির কিছুটা কাছে গিয়ে বলল, “কিন্তু আমায় তো করে না! আর তুমি, আমি এখানে সম্পূর্ণ একা! চিৎকার করলেও এখন সেটা কেউ শুনতে পারবে না। বুঝতে পারছো? কি বলছি?”

নীতি অদ্ভুতভাবে নাহিয়ানের চোখে চোখ রাখলো। কিছুটা থমকানো দৃষ্টি বিনিময় হলো একে অপরের সাথে। অতঃপর হেসে বললো, “কিন্তু আপনি এমন কিছুই করবেন না। কারণ আপনি খুব ভালো করেই জানেন কি করে নারীদের সম্মান করতে হয়। রীতি আপুর সময় দেখেছি।”

“রীতি আমার ফ্রেন্ড হয়! তাই…”

নীতি ওকে বলতে না দিয়েই বললো,

”মানুষের চোখ কখনো মিথ্যে বলে না। চোখ দেখলেই বলা যায় তার দৃষ্টি কেমন। আপাতত আপনার দৃষ্টি কেবল আমার চোখের মাঝেই বরাদ্দ। সেখানে কোনো প্রকার খারাপ কিছু আমি দেখতে পাচ্ছি না।”

নাহিয়ান দূরে সরে দাঁড়ালো। এই মেয়ের বড্ড সাহস। কোথায় ভাবলো ভয় দেখিয়ে পাঠিয়ে দিবে। তা না! বেশ কিছুক্ষণ পর নীতি নেমে গেলো। নাহিয়ান সেদিকে কয়েক পলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

__________________________________

সময় চলছে তার নিজ স্রোতে। কেঁটে গেছে কয়েকটা দিন। এই কয়েকদিনে সবাই সবার কাজ, পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছে।

ফুচকার দোকানে বসে আছে নীতি। সামনে থাকা মানুষটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে সে। হুট করে ওকে ফুচকা ট্রিট দেয়া লোকটির মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে সে।

দিন শুক্রবার। শীতের সময় এই বিকেলে ঠান্ডা যেনো বেশীই পড়ে। নীতি সোয়েটারের পকেটে হাত ঢুকালো। টিউশন শেষে বাড়ি ফিরছিলো সে। তখনই আনাফ ফোন করলো, তার সাথে দেখা করার জন্য। আপাতত সেখানেই আছে সে। ফুচকা এসে গেছে। নীতি একবার ফুচকা তো একবার আনাফের দিকে তাকাচ্ছে।

“কি দেখছিস? খা, আজকে যাই খেতে চাস সব খাওয়াবো। যত খুশি খা! ”

নীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
“হঠাৎ এত ভালো হলে কি করে? জীবনেও তো দশ টাকার চিপস এনে দিতে না। আর আজ ফুচকা? আবার বলছো যা খেতে চাই সব খাওয়াবো! যত খুশি?”

আনাফ মাথা চুলকে বললো, “আরে তুই আমার ছোট বোন। এইটুকু তো করতেই পারি!”

“তোমার মতিগতি আমার ভালো টিকছে না ভাইয়া।”

“আরে আমার চাকরি হয়েছে। সেই খুশিতে খাওয়াচ্ছি!”

“তো সবাইকে না খাইয়ে একা আমাকে কেনো?”

“তুই আমার আদরের বোন তাই!”

নীতি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এত ভালোবাসা? হঠাৎ?

“সত্যি বলছি, আর কিছু নেই এর মাঝে!”

নীতি বিশ্বাস করলো। আর আনাফের তো প্রীতি আছেই। সো চিল! সে আয়েশ করে ফুচকা মুখে নিলো। আহা! অমৃত যেনো এগুলো। পরপর দুই প্লেট খেয়ে বেরিয়ে এলো ওরা।

“বিরিয়ানি খাবি?”

“না!”

“কেনো? তোর তো পছন্দ!”

নীতি ভাবলো। এত্ত সুন্দর সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। কিন্তু ওর মনে হচ্ছে কিছু না কিছু ঘটবে। তবুও পাত্তা না দিয়ে হ্যাঁ বলে দিলো।

আপাতত সামনে থাকা বিরিয়ানি চামচ দিয়ে তুলে আয়েস করে মুখে দিচ্ছে নীতি। মনে মনে ভাবছে যাওয়ার সময় আরো কিছু কিনিয়ে নিবে। টিউশন করতো নিজের এসব খাওয়া দাওয়ার শখ মেটাতে। নয়তো ওর প্রয়োজন পড়ে না। সেই সাথে টুকটাক জিনিস নিজের টাকাতে কিনতেই ভালো লাগে।

“মজা না?”

“হুমম!”

বলেই আরেক চামচ মুখে দিলো।

“এবার আসি আসল কথায়।”

মুখ থেকে আর চামচ বের করলো না নীতি। একটু নড়ে চড়ে বসলো। আনাফের দিকে তাকাতেই সে বললো, “দেখ আপুর তো বিয়ে হয়ে গেছে। এবার আমার বিয়ের পালা। বয়সও হচ্ছে, বুঝিস তো!”

মুখ থেকে চামচ সরিয়ে প্লেটে রাখলো। আস্তে আস্তে মুখে থাকা খাবারটুকু চিবুতে লাগলো।

“তাই যদি মাকে একটু বলতি।”

ভালো মতো না চিবিয়েই খাবারটুকু গিলে নিলো নীতি। পাশে থাকা বোতল থেকে কিছুটা পানি খেলো। থমথমে মুখ করে বসে আছে সে।

“কিরে নীতি?”

“তাই তো ভাবি কিপটা ভাই হুট করে এত্ত উদার হলো কি করে? আবার আমি ই বা বিশ্বাস করলাম কি করে? যে ভাই এক টাকার চকলেট আনলেও সেটা আমায় না দিয়ে নিজে খেয়ে বলতো, ‘আমার টাকায় কেনা’, সে আমায় এত্ত কিছু নিজের ইচ্ছেতে খাওয়াচ্ছে; আগেই বোঝা উচিত ছিল।”

আনাফ হাসলো। নীতি প্লেট ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “রইলো তোমার বিরিয়ানি। আমি চললাম!”

“বিল দিয়ে যা।”

“কিসের বিল?”

“বিরিয়ানি। এই ওয়েটার, ম্যাম এর থেকে বিল রেখে দিবেন।”

বলে ও উঠে যেতে নিলেই নীতি তড়িঘড়ি করে আটকে দিয়ে বললো, “আরে আমার কাছে বাসায় ফেরার জন্য পঞ্চাশ টাকা আছে। সোয়েটারের পকেটে করে ফোন এনেছি। আর ফোনের কভারে পঞ্চাশ টাকা। আমি টাকা কই পাবো?”

“তাহলে থালা বাসন ধুয়ে দিস ওদের।”

নীতি অসহায়ভাবে তাকালো। আনাফ নিজের জায়গায় বসলো। নীতিও বসলো। প্লেট টেনে উদাস মনে খেতে শুরু করলো। বিরিয়ানির উপর রাগ দেখিয়ে লাভ আছে? ফেঁসে এমনেই গিয়েছে। দুঃখ বিলাস করুক এই বিরিয়ানি খেয়ে।

“দেখ নীতি, মাকে আমি ভীষণ ভয় পাই। মনে আছে ছোট বেলায় খেলতে গিয়ে রীতি আপু আমাকে ফেলে দিয়েছিল মজা করে? পড়ে যাওয়ায় পা ছিলে গিয়েছিল। তখন মাকে দেখাতেই মা ঠাস করে রীতি আপুর গালে…”

বলেই চুপ করে গেলো। নীতিও ঢোক গিললো। রীতির মা বরাবরই ছেলে মেয়েদের খুব রকমের শাসন করেন। তাই তো রীতি আপু সেদিনের পর আর মজার ছলেও আনাফ ভাইয়ার গায়ে টোকা দেয়নি। শুধু রীতি না, ইফেক্টটা নীতি, প্রীতি আর আনাফের উপরেও পড়েছে । ওরা ভাবেও নি রীতি এভাবে থা’প্পড় খাবে। সেই থেকে মনে ভয় ঢুকেছে একেক জনের। যদিও নীতি জানে বড় চাচী নিতান্তই এখন একজন শান্ত মানুষ। তবুও ভয় তো ভয়ই! বির বির করে বললো, “এখন সেই থা’প্পড় তুমি আমাকে খাওয়াতে চাও।

“আরে মা তোকে কিছু বলবে না।”

নীতি খাওয়ায় মন দিল।

“বলবি তো?”

“উপায় রেখেছো কি আর?”

“প্রমিস?”

নীতি ঠোঁট উল্টে তাকালো। ভেবেছিল একবার বিল দিয়ে দিলেই ও ছুটে চলে যাবে। কিন্তু এই প্রমিস! কেন? হতাশ হয়ে বললো, “প্রমিস!”

আনাফ বিশ্বজয়ের হাসি দিল। বিল পরিশোধ করে নীতিকে তাড়া দিয়ে বললো, “তাড়াতাড়ি শেষ কর। আমি উল্টো দিকে যাবো আবার। মিষ্টি আনতে। তোকে বাড়ি দিয়ে তারপর যাবো!”

“তুমি যাও, আমি যেতে পারবো!”

“সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তোকে একা ছাড়া সেফ না!”

“এখান থেকে বের হয়েই রিকশা নিবো!”

“সিউর?”

“হুমম!”

“ওকে পৌঁছে ফোন দিস। টাটা!”

বলেই বেরিয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গেই নীতি বলে উঠলো, “শা’লার বা’ন্দর। বড় না হলে ঠাস ঠুস দিতাম। প্রীতিকে বলবো তো আমি, তোকে উঠতে বসতে থা’পড়ায়! ফা’জিল পোলা, আমাকে এমনে ফাসায় দিলি!”

বলেই চোখ মোছার ভান ধরে বিরিয়ানি মুখে দিলো। খাওয়া দাওয়া শেষে বের হতেই দেখলো মাগরিবের আজান পড়েছে। আশেপাশে রিকশাও নেই। নীতির কিছুটা ভয় হলো। সন্ধ্যার পর একা বাড়ির বাহিরে থাকে না সে। আনাফের ডাবল জার্নি হবে দেখেই চলে যেতে বলেছিলো ও। এবার ও নিজে যাবে কি করে?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে