প্রিয়দর্শিনী পর্ব-৫+৬

0
752

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_৫

‘ক‍্যাস্টেলিনোর’ রুফ টপে হৃদির সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছে প্রিয়দর্শিনী।

এখান থেকে পুরো শহরের সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। এটাই অল্পদিনে ‘ক‍্যাস্টেলিনোর’ জনপ্রিয়তার কারণ। প্রিয়দর্শিনী, হৃদি দশতলা থেকে পুরো শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। এরমধ‍্যে তাদের পরিচিত ফেন্ড’স্ আসে দিয়া,নাদিম আর আহানাফ। ক্লাস সেভেন থেকে এরা প্রিয়দর্শিনীর ক্লাসমেট। আপাতত সবাই ভিন্ন ভিন্ন সাবজেক্ট পেয়ে ঢাবিতে’ই আছে। আহানাফ প্রিয়দর্শিনীর মতোই এলএলবি ‘ল’ ডিপার্টমেন্টে। এরা আসবে প্রিয়দর্শিনী জানতো না। নিশ্চয় হৃদি সবাইকে ডেকেছে সারপ্রাইজ দিবে তাই। ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর কারো সঙ্গে দেখা, আড্ডা দেওয়া হয়নি প্রিয়দর্শিনীর। যখন ডিপার্টমেন্টে ক্লাস শুরু হবে তখন কারো সঙ্গে তমন যোগাযোগ থাকবে না। হয়তো মাঝে মধ‍্যে দেখা সাক্ষাৎ হবে। হৃদির সুবাদে সবার সঙ্গে দেখা হলো ভালো হয়েছে। দিয়া, নাদিম, আহানাফ আগ্রহের সঙ্গে বসে পরে তাদের টেবিলে। হৃদি সবাইকে কেমন আছে, কি খবর জিগ্যেস করতে উদগ্রীব। অন‍্যদিকে প্রিয়দর্শিনী মেনু কার্ড দেখতে ব‍্যাস্ত। আহানাফ প্রিয়দর্শিনীকে জিগ্যেস করে,

‘কেমন আছিস প্রিয়?’

মেনুকার্ড দেখতে দেখতে প্রিয়দর্শিনী জবাব দেয়,

‘আলহামদুল্লিলাহ্! তুই কেমন আছিস?’

আহানাফ একটু ক’ষ্ট পায় প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে কতোদিন পর দেখা হচ্ছে অথচ ঠিক মতো দেখল না তাকে। অপরদিকে প্রিয়দর্শিনী বুঝতেও পারেনা তার প্রতি একজন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। সঙ্গে লোকটি ক্রু’দ্ধ হয়ে আছে প্রিয়দর্শিনীর সামনে বসা ছেলেটির প্রতি।

এদিকে আহানাফ খুব চাইছে প্রিয়দর্শিনী একবার তার দিকে দেখুক। কাউকে অগোচরে পছন্দ করা অনেক ক’ষ্টের। কারণ পছন্দের ব‍্যাক্তি যখন অনুভূতি বুঝেনা তখন অনেক খা’রা’প লাগে যা ভাষায় প্রকাশ করা সহজ না। আহানাফ মন খা’রা’প করে বলে,

‘এইতো চলছে জীবনের নিয়মে।’

‘ওহহহ!’

প্রিয়দর্শিনী টুকটাক কথা বলে ওয়েটারকে ডাক দিতে বলে। নাদিম হাতে আরেকটি মেনু কার্ড তুলে নেয়,

‘ কি খাবি তোরা? কাচ্চি, বিরিয়ানি আইটেম কেমন হয়?’

হৃদি আর দিয়া আপত্তি করে বলে,

‘বাসা থেকে নাস্তা করে আসিস নাই?এতো হেভি খাবারের দরকার নাই সিম্পুল কিছু অর্ডার কর।’

নাদিম দমে যায়। মুখটা গম্ভীর করে আহানাফের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘দেখছিস ওদের দল ভারী বলে আমাদের দাম নাই।’

প্রিয়দর্শিনী হেসে ওঠে! মেনু কার্ড দেখতে দেখতে বলে,

‘চিলি চিকেন পাস্তা, ফিশ কাটলেট উইথ ভেজিস, কোরিয়ান স্পাইসি নুডেল’স, ফেঞ্চ ফ্রাই উইথ সস, বিফ কাবাব আর মেরিন্ডা লেমোনেইড ড্রিংক কেমন হবে?’

সবাই একসঙ্গে প্রিয়দর্শিনীকে মত দিলো। আহানাফ ভাবে এখনও কিছু বদলায়নি। কে কোনটা অর্ডার করবে এই নিয়ে আগেও ঝামেলা হতো। অন‍্যদিকে প্রিয়দর্শিনী সবার পছন্দ হবে এমন খাবার সিলেক্ট করে ওদের থামাত।

প্রিয়দর্শিনী ওয়েটারকে ডাক দেয়,

‘এক্সকিউজমি?’

লম্বা ছিপছিপে গড়নের একজন যুবক এগিয়ে আসে,

‘জ্বী ম‍্যাম বলুন।’

প্রিয়দর্শিনী আলাদা করে ওয়েটারকে সব অর্ডার বলে দেয়। অন‍্যদিকে ওয়েটার অর্ডার টুকে নেয়। ওয়েটার চলে গেলে প্রিয়দর্শিনী হঠাৎ সামনের টেবিলে তাকিয়ে বি’স্মি’ত হয়ে যায়। হকচকিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়াঁয়। প্রিয়দর্শিনীকে এমন ভাবে উঠতে দেখে হৃদি জিগ্যেস করে,

‘কিরে কি হলো তোর? এমন করছিস কেনো?’

প্রিয়দর্শিনী কি বলবে বুঝতে পারছেনা। তার সামনের টেবিলে স্বয়ং আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী। আবিদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার সঙ্গে দু’জন গার্ড রয়েছে যারা ফুল ব্লাক গেটআপে, ব্লাক সানগ্লাস পরিহিত, কানে মাইক্রোফোন। অন‍্যদিকে আবিদ অফ হোয়াইট সুট পরিহিত। আবিদের গমরঙা ত্বকে লাল আভা বোঝা যাচ্ছে। চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছে। প্রিয়দর্শিনী ভাবে আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী কি তার জন‍্য এসেছে? প্রত‍্যাখান ব‍্যাপারটা নিয়ে তার উপর রেগে আছে? প্রিয়দর্শিনী আবারো চেয়ারে বসে পরে। অন‍্যমনষ্ক হয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে,

‘তেমন কিছু না।’

প্রিয়দর্শিনীর প্রচন্ড অসস্থি হচ্ছে। অন‍্যদিকে আবিদ প্রচন্ড বিরক্ত। প্রিয়দর্শিনীর বন্ধুদের জন‍্য আবিদ এখানে আসতে পারছে না। অথচ তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে হবে কিন্তু কিভাবে? আবিদ ওয়েটারকে ডাক দিয়ে অর্ডার দেয়,

‘ওয়ান কল্ড কফি উইথআউট সুগার, ফ্রেশ স্ট্রবেরি মিল্কশেক উইথ আইস!’

ওয়েটার অর্ডার টুকে নেয়। আবিদ ওয়েটারকে পাশে ডেকে হাত নেড়ে কিছু বুঝিয়ে দেয়। ওয়েটার চলে যাওয়ার আগে পেনটা দিয়ে যায়। প্রিয়দর্শিনী দুর থেকে সবটা লক্ষ্য করে। এরমধ‍্যে তাদের টেবিলে আরেকটি ওয়েরটার এসে খাবার পরিবেশন করে দেয়। প্রিয়দর্শিনী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় আবিদের দিকে আড় চোখে তাকায়। অবাক করা বিষয় হচ্ছে প্রিয়দর্শিনী যতবারই তাকিয়েছে আবিদ তার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তার অসস্থি আরো বাড়ে।

আবিদ পাশে থেকে একটা টিস্যু পেপার তুলে নেয়। সেখানে কিছু লিখে স্ট্রবেরি মিল্কশেক সহ টিস্যু পেপারটা ভাজ করে ওয়েটারকে সামনের টেবিলে ইশারা করে। ওয়েটার প্রিয়দর্শিনীদের টেবিলে গিয়ে কৌশলে টিস্যুর চিরকুটটা রেখে বলে,

‘ম‍্যাম দিস ইজ ফর ইউ। প্লীজ ইনজয় ইট।’

প্রিয়দর্শিনী আবিদের দিকে তাকালে আবিদ ইশারা করে স্ট্রবেরি মিল্কশেক নিতে। আহানাফ আপত্তি করে বলে,

‘এক্সকিউজ মি এটা কিসের ড্রিংকস? আমরা তো এটা অর্ডার দেইনি। আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে।’

‘স‍্যার এটা স্ট্রবেরি মিল্কশেক! আমরা প্রতিবার একজন লাকি কাস্টোমারকে দিয়ে থাকি। কাস্টোমারদের খুশি করার জন‍্য আমাদের পক্ষ থেকে সামান্য চেষ্টা মাত্র।’

প্রিয়দর্শিনী বুঝতে পারছে ছেলেটি মিথ্যা বলছে। ছেলেটি এমন কনফিডেন্টের সঙ্গে মিথ্যা বলছে যে কেউ ধরতেও পারবে না। প্রিয়দর্শিনী জানে আবিদ এমনটা বলতে বলেছে। তাই সে সামান্য অভিনয় করে ওয়েটারের উদ্দেশ্যে বলে,

‘থ‍্যাঙ্কিউ সো মাচ। আম গ্লাড!’

‘আওয়ার প্লেজার ম‍্যাম!’

ওয়েটার চলে গেলে প্রিয়দর্শিনী কৌশল করে টিস্যুটা হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। প্রিয়দর্শিনী আবিদের দিকে তাকালে আবিদ দুর থেকে মিল্কশেক খেতে ইশারা করে। প্রিয়দর্শিনী আবিদের কথা রাখতে ইশারা মতো একটু খেয়ে দেখে। হৃদি বিস্মিত হয়ে প্রিয়দর্শিনীকে বলে,

‘তোর না স্ট্রবেরিতে এলার্জি? তুই তো কখনো স্ট্রবেরি চোখে দেখতে পারতি না প্রিয়?’

প্রিয়দর্শিনী কি বলবে বুঝতে পারছেনা। মিল্কশেকটা সরিয়ে বলল,

‘যেহেতু দিয়েছে নষ্ট করা উচিত নয়। তবে খারাপ নয় পরিবেশনটা সুন্দর লাগছে ।’

হৃদি আগ্রহ নিয়ে বলে,

‘দেখি দেখি একটু খায়। ‘

‘এটা আমার এটোঁ হয়ে গেছে হৃদি। সিরিয়াসলি তুই খাবি?’

‘তো কি হয়েছে আমি খেতে পারিনা? তোর জিনিস মানে হালকা পাতলা আমার অধিকার আছে হিহি।’

প্রিয়দর্শিনী হৃদিকে কিছু বলেনা। সবাই যখন কথা বলতে বলতে খেতে ব‍্যাস্ত প্রিয়দর্শিনী লুকিয়ে টিস্যুর চিরকুটটা বের করে। আবিদের লেখা দেখে সে হতভম্ব!

‘স্ট্রবেরি মিল্কশেকটা আমার পক্ষ থেকে। আপনার সঙ্গে কথা আছে প্রিয়দর্শিনী। একটু বা দিকটাই আসুন।’

প্রিয়দর্শিনী আবিদের মুখোমুখি তাকিয়ে দেখল আবিদ গার্ডদের কিছু ইশারা দিয়ে রুফ টপের বা দিকটাই চলে গেলো। প্রিয়দর্শিনীর ভিতরে প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছে। বুকের ভেতরে সজোরে ঢিপঢিপ করছে। নিজেকে শান্ত করতে কিছু সময় নিলো। তার এই মুহুর্তে কি যাওয়া উচিত? প্রিয়দর্শিনী টিস‍্যুর চিরকুটটি হাত দিয়ে মুড়িয়ে ফেলে দিলো। সবাই যখন খেতে ব‍্যাস্ত। প্রিয়দর্শিনী ওয়াশরূমের যাবার কথা বলে উঠে আসল। আবিদ রুফ টপের রেলিং এ হাত দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়দর্শিনী আসলে তার দিকে একবারো তাকায় নি আবিদ। এটা দেখে হালকা ইতস্তত বোধ করলো প্রিয়দর্শিনী। আবিদ অন‍্যদিকে তাকিয়ে শান্ত স্বাভাবিক স্বরে বলল,

‘সামনের ছেলেটি কে ছিল?’

প্রিয়দর্শিনী হকচকিয়ে উঠল। তার সামনে তো আহানাফ বসেছিল।আবিদ আহানাফের কথা বলছে প্রিয়দর্শিনীর বুঝতে বাকি নেই। আবিদ সরাসরি এমন প্রশ্ন করবে একদম’ই ভাবেনি প্রিয়দর্শিনী।সে মৃদু স্বরে উত্তর দেয়,

‘ও আহানাফ। ফেন্ড হয় আমার।’

আবিদ প্রিয়দর্শিনীর দিকে বাকাঁ হেসে তাকায়। আবিদ প্রিয়দর্শিনীকে ভালো করে পরক্ষ করে দেখতে ভুলল না। প্রিয়দর্শিনী গাঢ় মেরুন,কালো সংমিশ্রণে শিফনে ফুল হাতা লঙ থ্রি-পীচ পরে আছে। এ রঙটা প্রিয়দর্শিনীর ফর্সা শরীরে প্রচন্ড মানিয়েছে। অর্ধমাথায় মেরুন কালো সংমিশ্রণে ওড়না দেওয়া। কানে এ‍্যাশ কালারের ছোট্ট কানের দুল। সামনে ব্রাউন মোলায়েম রেশমি চুল গুলো বাতাসের কারনে কপালে চলে আসছে। প্রিয়দর্শিনী সেগুলো সন্তর্পণে কানে গুজে নেয়। প্রিয়দর্শিনী যেন জান্নাতের কোন হুরপরী। ভেতরে ভেতরে আবিদের হার্টবিট বেড়ে গেছে কিন্তু নিজেকে গম্ভীর দেখিয়ে বলে উঠল,

‘ছেলেটি আপনার উপর ক্রাশড্ ‘দর্শিনী’।’

প্রিয়দর্শিনী বিস্ময় নিয়ে তাকাল আবিদের দিকে। আবিদ ভাবলেশহীন। আবিদের মুখে ‘দর্শিনী’ ডাক তার হৃদয়ে তোলপাড় শুরু করেছে। সে কোনদিন বুঝতে পারেনি আহানাফ তার উপর ক্রাশড্ অথচ আবিদ কয়েক মিনিটে’ই বুঝে গেলো? প্রচন্ড অবাক হয় প্রিয়দর্শিনী।

প্রিয়দর্শিনীকে চুপ দেখে আবিদ আবারো বলে উঠল,

‘আহানাফ মিনিটে মিনিটে আপনার দিকে তাকিয়েছে। এই তাকানো যে মুগ্ধতার এটা আমার চেয়ে ভালো কে বলতে পারে।’

প্রিয়দর্শিনী আবিদের কথা বুঝতে না পারলেও তার ভেতর অনুভূতিরা বি’দ্রো’হ শুরু করেছে। প্রচন্ড অস্থিরতা অনুভব করছে। প্রিয়দর্শিনী মনে মনে বলল আমি আপনি ব‍্যাতিত অন‍্য পুরুষ কে লক্ষ্য করেনি এজন্য’ই বুঝিনি। আবিদ অন‍্যদিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,

‘আমাকে প্রত‍্যাখান করেছেন কেনো দর্শিনী? আপনার কি অন‍্য কাউকে পছন্দ?’

প্রিয়দর্শিনীকে নির্বাক রেখে আবারো বলে উঠল,

‘আমার থার্টি প্লাস চলছে, অতো ফর্সা নই, অন‍্যান‍্য পুরুষের চেয়ে আলাদা ব‍্যাক্তিত্বের এজন্য কি আপনার যোগ্য নই?’

প্রিয়দর্শিনী কি বলবে বুঝতে পারছে না তার বুকে ব‍্যাথা হচ্ছে। প্রচন্ড খারাপ লাগছে আবিদের কথা শুনে। আবিদের কথায় অভিমান স্পষ্ট। হয়তো আবিদ নিজেকে ছোট করে ভাবছে। আবিদের স্পাতের ন‍্যায় ব‍্যাক্তিত্ব, গমরঙা ত্বক, সুদর্শন চেহারা সবকিছুতে প্রিয়দর্শিনী আকৃষ্ট। এই বত্রিশ বছর বয়সী যুবক তার হৃদয়ে একবছর আগেই পর্দাপণ করেছে এইটা কে বোঝাবে অভিমানি পুরুষটিকে। ‘লাভ এট ফার্স্ট সাইটে’ প্রিয়দর্শিনী বিশ্বাস করতো না। কিন্তু আবিদকে দেখার পর সে বিশ্বাস করে। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী তার ‘প্রথম প্রেম’, ‘স্বপ্ন পুরুষ’, ‘স্বপ্নের নায়ক’ সব। বুকে পাথর রেখে প্রিয়দর্শিনীকে ‘না’ করতে হয়েছিল। এইটা স্বপ্ন পুরুষটি কখনো জানতে পারবে?

প্রিয়দর্শিনী হঠাৎ প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট অনুভব করে। তার শরীরের কিছু জায়গা লাল হয়ে ফুলে উঠছে। গলায় এবং হাতে লাল ছোপ ছোপ র‍্যাসেস দেখা যাচ্ছে। আবিদ অন‍্যদিকে ঘুরে শহরের সৌন্দর্য দেখছে। মূলত সে উত্তরের অপেক্ষা করছে। প্রিয়দর্শিনী তার সামনে অসস্থি বোধ না করে এজন্যই অন‍্যদিকে ঘুরে রয়েছে। এদিকে প্রিয়দর্শিনী আবিদকে ডাকতে চায় কিন্তু শ্বাসকষ্টের জন‍্য ডাকতে পারছে না। সে বুকে হাত দিয়ে ক্রমাগত জোরে নিশ্বাস নিতে চেষ্টা করে। অনেকক্ষণ সারা শব্দ না পেয়ে আবিদ পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রিয়দর্শিনী অদ্ভুত আচরণ করছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে। তার শরীর ক্রমাগত কাপঁছে, চোখে পানি মুখ লাল হয়ে আছে। হাতে এবং গলায় লাল ফুলো ফুলো র‍্যাসেস। ফর্সা শরীরে ভালো মতো বোঝা যাছে। প্রিয়দর্শিনীকে এভাবে দেখে অস্থির হয়ে যায় আবিদ। তাকে টাচ করবে নাকি করবে না এই নিয়ে প্রচন্ড দ্বিধাদন্দে ভুগে। এদিকে প্রিয়দর্শিনী শরীরের ভর ছেড়ে দেয়। আবিদ চিৎকার করে উঠে,

‘শিটটটট!’

শরীরের ভর ছেড়ে দেওয়ার আগেই আবিদ প্রিয়দর্শিনীকে বুকে আগলে নেয়। মাথায় ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

‘প্রিয়দর্শিনী কি হয়েছে আপনার? আপনি ঠিক আছেন?’

প্রিয়দর্শিনী জ্ঞান হারাবে এমন অবস্থা। আবিদ উপায় না পেয়ে তাকে কোলে তুলে নেয়। আবিদ রুফ টপ থেকে লিফ্টের দিকে যেতে থাকে। এদিকে আহানাফ প্রিয়দর্শিনীকে অর্ধচেতন হয়ে কারো কোলে দেখে দৌড়ে আসে।

‘কে আপনি? প্রিয়দর্শিনীর কি হয়েছে? কি করেছেন আপনি ওর সঙ্গে?’

এমনিতেও আবিদের টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার ওপর আহানাফের উল্টাপাল্টা কথা শুনে ক্রু’দ্ধ হয়। গার্ডসদের কিছু ইশারা করে ঐভাবে লিফ্টে ঢুকে যায়। আহানাফ লিফ্টে প্রবেশ করতে চাইলে গার্ডসরা তার কাধ ধরে আটকে দেয়। আহানাফ ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। গার্ডসরা তাকে ছাড়ে না। শেষে আহানাফ চিৎকার শুরু করে। আহানাফের চিৎকার শুনে নাদিম, দিয়া, হৃদি চলে আসে। লিফ্ট নিচে নামার পরে আবিদের গার্ডসরা আহানাফকে ছেড়ে দেয়। আহানাফের মুখের অবস্থা করুন সে ভেঙে পরেছে। বন্ধুদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে,

‘প্রিয়দর্শিনীকে একটা লোক অর্ধচেতন অবস্থায় নিয়ে গেল। আমি কি করবো এখন? অপদার্থ আমি প্রিয়কে বাচাতে পারলাম না।’

হৃদি, দিয়া আহানাফের কথা শুনে আতঙ্কে কান্না করে দেয়। সবার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। হৃদির ভেতরের সত্তা বলে,

‘লোকটি কে? প্রিয়দর্শিনীর কোন ক্ষতি করে দিবে নাতো? কি হবে প্রিয়দর্শিনীর?

#চলবে

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_৬

”১৩ নাম্বার কেবিনে পেসেন্ট প্রিয়দর্শিনীর গার্ডিয়ান কি আপনি?”

মধ‍্যবয়স্ক একজন ডাক্তার উদগ্রীব হয়ে আবিদকে জিগ্যেস করল। আবিদের অস্থিরতা বেড়ে গেছে!টেনশনে জমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রিয়দর্শিনীর চিন্তা অর্ধেক কাবু করে ফেলেছে তাকে। মনে মনে ভয় পাচ্ছে তার ‘দর্শিনী’ ঠিক আছে তো। সুস্থ স্বাভাবিক মেয়েটার হুট করে কি থেকে কি হয়ে গেল। আবিদ উত্তেজিত হয়ে জিগ্যেস করল,

‘জ্বী আমি’ই! কি হয়েছে?প্রিয়দর্শিনী ঠিক আছে?’

‘এর্লাজিক রিয়েকশন খুবই সেন্সিটিভ ইস‍্যু’স! স্ট্রবেরিতে উনার এর্লাজি আছে আগে জানতেন না? ভাগ‍্যিস দ্রুত হসপিটালে নিয়ে এসেছেন নাহলে শ্বাস রোধ হয়ে হার্ট ব্লক হওয়ার চান্সেস ছিল। উনাকে প্রতিষেধক ইন্জেক্ট করা হয়েছে। এখন একটু বিশ‍্রাম নিচ্ছে। একটা বিদেশী ঔষধ লাগবে জেল টাইপ ফার্মেসী থেকে কাউকে আনতে পাঠান। উনার শরীরে যে অংশটুকু লাল র‍্যাসেসে ফুলে ছিল ওই ঔষধ দিলে ঠিক হয়ে যাবে। ত্বকের অসস্থিকর প্রভাব কমে যাবে। দ্রুত ব‍্যবস্থা করুন !’

আবিদ একটু দুশ্চিন্তা মুক্ত হলো। মধ‍্যবয়স্ক ডাক্তারকে ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানিয়ে হসপিটালের সাথে যে ফার্মেসী রয়েছে সেখানে গেলো। প্রিয়দর্শিনীর স্ট্রবেরিতে এর্লাজি অথচ কেনো খেয়ে নিলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পেলোনা। সবাই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ঔষধ নেওয়ার জন‍্য অপেক্ষা করছে। আবিদ এতবড় লাইন দেখে টাস্কি খেলো। আবিদের মনে হলো এতোবড় লাইনে অপেক্ষা করার প্রশ্নই আসেনা সময় স্বল্পতা রয়েছে। তবে এখানে তার পাওয়ার ইউজ করতে পারবে। এমনিতে বিপদে পরেছে। সে সাথে প্রিয়দর্শিনীকে নিয়ে প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় আছে। আবিদ ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে গেলো। ফার্মেসীর লোকটি তাকে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাড়াঁতে বলল। আবিদ ওয়ালেট থেকে আইডি কার্ড বের করে দেখালে লোকটি মৃদু ঢোক গিলে বলল,

‘আসসালামু আলাইকুম স‍্যার। জ্বী, কোন ঔষধ লাগবে প্রেসকিপশন দেখি?’

আবিদ প্রেসকিপশনে লেখা নামটা দেখিয়ে বলে,

‘এইটা।’

আবিদ বিল প‍েমেন্ট করে ঔষধ নিয়ে চলে আসে। আশেপাশের মানুষ হা করে তাকিয়ে দেখে। আবিদ কারো পরোয়া না করে চলে আসল। সবাই দেখল,চুপচাপ মেনে নিলো,কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পেলনা।

প্রিয়দর্শিনীর ঘুম ভেঙ্গে গেছে অনেকক্ষণ, এখন মোটামুটি সুস্থ। কেবিনে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছেনা তার। না জানি সবাই কতো টেনশন করছে। প্রিয়দর্শিনীর শরীরের লাল, লাল দাগ গুলো বিবর্ণ হতে শুরু করেছে। র‍্যাসেসের জন‍্য জ্বালাপোড়া, চুলকানি ভাব নেই। আবিদ কেবিনে আসতে’ই ইতস্তত হয়ে প্রিয়দর্শিনী চোখ টিপে বন্ধ করে নেয়। আবিদকে দেখা মাত্র’ই হঠাৎ বুকে ঢিপঢিপ শব্দ শুরু করেছে। সে এই মানুষটির দিকে কিভাবে তাকাবে? ভিষণ লজ্জা করছে তার। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যাবে প্রিয়দর্শিনী কল্পনা করতে পারেনি। আবিদ বুঝতে পারে প্রিয়দর্শিনী জেগে আছে। কিন্তু সেই ঘটনার জন‍্য আবিদের সামনে পরতে চাইছে না। আবিদ নিজেও অসস্থিতে রয়েছে।

আবিদ যখন লিফ্ট থেকে অর্ধচেতন প্রিয়দর্শিনীকে নামাচ্ছিল তখন তার প্রচন্ড শ্বাসরোধ হয়ে আসছিলো। আবিদ তখন হন্তদন্ত হয়ে দ্রুত দাড়োয়ানকে গাড়ি পার্ক করতে বলে। প্রিয়দর্শিনীকে গাড়িতে বসানোর পর ড্রাইভ করতে শুরু করে আবিদ। এদিকে প্রিয়দর্শিনী শ্বাসকষ্টে প্রচন্ড ছটফট করতে থাকে। আবিদ প্রিয়দর্শিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে কি করবে বুঝতে পারেনা। হুট করে প্রিয়দর্শিনীর অসুস্থতায় সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। আবিদের কাছে একটা উপায় এসেছে কিন্তু প্রয়োগ করার সাহস পাচ্ছে না। ভয়ংকর রকম দুঃসাধ্য কাজটা করতে প্রিয়দর্শিনীর পারমিশন লাগবে। আবিদ অবচেতন মনকে শাসন করে।একপর্যায়ে প্রিয়দর্শিনী শ্বাস আটকে কাশতে থাকে। আবিদ চিন্তিত হয়ে গাড়ি থামিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে উপায় না পেয়ে আবিদ আ’ত’ঙ্ক গ্রস্ত হয়ে বলে,

‘লিসেন দর্শিনী আমি একটা দুঃসাহস দেখাব। আমি জানিনা আপনি বিষয়টি কেমন ভাবে নিবেন বাট আম হেল্পলেস। আমি শুধু তোমার আম সরি আপনার সুস্থতা চাই।’

কথাটা আবিদ এতো দ্রুত বলল যে আপনি তুমি সব গুলিয়ে ফেলেছে। প্রিয়দর্শিনী আবিদের গমরঙা মুখে তার প্রতি অস্থিরতা লক্ষ‍‍্য করছে। আবিদ আর একদন্ড সময় নষ্ট করেনা। অসস্থি কাটিয়ে প্রিয়দর্শিনীর দিকে ঝুকে গিয়ে নরম কোমল গোলাপী ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে কৃত্রিমশ্বাস দিতে থাকে। প্রিয়দর্শিনী আ’ক’স্মি’ক চমকে চোখ বন্ধ করে নেয়। আবিদের দুঃসাহস দেখানোর মানে সে প্রথমে বুঝতে পারেনি। যখন বুঝলো দেরী হয়ে গেছে। প্রিয়দর্শিনী প্রচন্ড কাপঁতে থাকে তার জীবনের প্রথম চুমু, প্রথম স্পর্শ সেটাও স্বপ্ন পুরুষটির থেকে। যদিও এটা চুমু বলা যায় না। ‘ইট ওয়াজ আ এক্সিডেন্ট’। প্রিয়দর্শিনী স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিতেই আবিদ তাকে ছেড়ে দেয়। পুরো ঘটনাটি এক্সিডেন্টলি হয়েছে তবুও আবিদ বড্ড অশান্ত। আবিদের ভিতরের সত্তা অসস্থি দূর করতে বলে উঠে,

‘তুই বিপদে পড়া একটা মেয়েকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়েছিস। ‘ইট ওয়াজ আ এক্সিডেন্ট নাথিং এলস্’। এতো পাপ বোধ করার মানে হয় না। মেয়েটি তোর উডবি বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নে।’

আবিদ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে প্রিয়দর্শিনীর দিকে তাকায়। মেয়েটি লজ্জায় মাথা নুইয়ে রেখেছে। বেশকিছুক্ষণ সময় পার হবার পরও প্রিয়দর্শিনী মাথা নিচু করে আছে। এতে আবিদের অপরাধ বোধ হয়। কিন্তু আবিদ তো এমনটা চায়নি বড্ড হেল্পলেস ছিল সে। আবিদ কন্ঠে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলে,

‘আপনি ঠিক আছেন দর্শিনী?’

প্রিয়দর্শিনী মৃদু কেপেঁ উঠে। যখনি আবিদ তাকে উষ্ণতার সঙ্গে ‘দর্শিনী’ বলে তার ভিতরে অনুভূতিরা জলচ্ছ্বাসের মত আছড়ে পড়ে। প্রিয়দর্শিনীর শ্বাস প্রশ্বাস এখনো স্বাভাবিক হয়নি কোনরকম মাথা নুইয়ে হ‍্যা বলে। হসপিটালে পৌঁছে প্রিয়দর্শিনীকে জুরুরি বিভাগে চর্ম বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাশিদা পারভীনের নিকট ট্রিটমেন্টের ব‍্যাবস্থা করা হয়। হসপিটালে অবস্থান রত প্রতিটা সময় আবিদ প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে ছিল। হসপিটালের বিল সহ, প্রতিটা প্রয়োজনে সুন্দর ভাবে দায়িত্ব পালন করেছে প্রিয়দর্শিনীর স্বপ্ন পুরুষটি।

আবিদ হসপিটালের করিডোরে মাইক্রোফোনে কথা বলছে। আশরাফ মুহতাসিমকে’ই সমস্ত ঘটনা খুলে বলছে।যেহেতু উনার পারমিশনে প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। কিন্তু মাঝখানে কতো বড় দূর্ঘটনা ঘটল। আশরাফ মুহতাসিম আবিদের মুখে ঘটনা শুনে চিন্তিত বি’স্মি’ত। আবিদ শুধু চিরকুটের বিষয়টি গোপন করল। এদিকে বাকি সব শুনে আশরাফ মুহতাসিম আবিদের দো’ষ খুঁজে পায়না। আবিদ তো জানত না প্রিয়দর্শিনীর এর্লাজির ব‍্যাপারে। ‘স্ট্রবেরি’ প্রিয়দর্শিনীর একদম চক্ষুশূল তবে কেনো খেতে গেলো? আশরাফ মুহতাসিম আবিদকে ধন্যবাদ জানায় প্রিয়দর্শিনীকে প্রটেক্ট করার জন‍্য। আবিদ সবাইকে হসপিটালে আসতে বলে ফোন কেটে দেয়। আবিদ হাতে থাকা ফোনটা পকেটে রেখে সামনে তাকিয়ে দেখল তার বিশস্ত দু’জন গার্ডস্ প্রিয়দর্শিনীর ফ‍েন্ড’সদের নিয়ে হাজির। আবিদ সু’ক্ষ্ম নজরে আহানাফ নামের ছেলেটিকে পরক্ষ করে নিলো। ছেলেটা লম্বায় তার কানের নিচ পযর্ন্ত হবে, উজ্জ্বল ফর্সা,গোলগাল সাস্থ‍্যবান ছেলে। আহানাফ তার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসঁছে। আবিদ হাসলো এই পুচকে ছেলে প্রিয়দর্শিনীকে নিয়ে জেলাস হয়ে এতো তেজ দেখাচ্ছে। ইশশ! টক্কর দেওয়ার মানুষ পায়নি শেষে কিনা আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে?আবিদের আজ প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়েছিল আহানাফের উপর। কি সব উল্টাপাল্টা বলতে শুরু করেছিল সেইসময়। ছেলেটাকে গার্ডস দিয়ে আটকে রাখা ভালো পদক্ষেপ ছিল। প্রিয়দর্শিনীর বন্ধুদের আত’ঙ্কগ্র’স্থ অবস্থা দেখে আবিদের মায়া হয়। সে নিজে ওদের কাছে গিয়ে বলে,

‘প্রিয়দর্শিনীর স্ট্রবেরিতে এর্লাজি ছিলো তোমরা জানতে না? নিষেধ করোনি কেনো?’

আ’ক’স্মি’ক ম‍্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ারকে দেখে আহানাফ বাদে হতভম্ব। আহানাফ ক্লাস সেভেন থেকে ক্লাসমেট হলেও এইচএসসি ক‍্যান্টোরমেন্ট কলেজ থেকে দিয়েছে। কারণ বাবা আর্মি হবার সুবাদে তাদের কলেজ চেন্জ করতে হয়। যদিও বোর্ড এক ছিল। এইজন্য’ই আহানাফের আবিদ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তবে হৃদি, দিয়া আর নাদিমের চোখে বি’স্ম’য় অবস্থা বিরাজমান। এইতো সেই আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী যাকে নিয়ে কতো মজা করেছ সবাই, প্রিয়দর্শিনীদের সঙ্গে। হৃদি আবিদের কথায় আমতা আমতা করে বলে উঠে,

‘স‍্যার আমি ওকে নিষেধ করেছিলাম। প্রিয় বেশি খায়নি কিন্তু তারপরও এর্লাজিক রিয়েকশন হয়ে গেলো। ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল স‍্যার।’

আবিদ নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে। তার চোখ এখনো আহানাফে সীমাবদ্ধ। আহানাফ অন‍্যভাবে আবিদের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে অনেক ক্রো’ধ ফুটে উঠেছে মনে হচ্ছে সুযোগ পেলে আবিদকে শিক্ষা দিতে পিছিয়ে যাবেনা। আবিদের একজন টিন-এজ ছেলের মনভাব বুঝতে সময় লাগল না। আবিদ ভ্রু’কুচকে ভাবলো ছেলেটি হয়তো তার সম্পর্কে জানেনা। নাকি ইচ্ছে করে এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছে? আবিদ, আহানাফের বিষয়টি কারো চোখে না পরলেও হৃদির চোখে পরেছে। হৃদি ভাবতে থাকে আহানাফ তাহলে আবিদ শাহরিয়ারকে ভুল বুঝে উল্টাপাল্টা বলেছে আর সবাই কতো চিন্তিত ছিল বিষয়টি নিয়ে।আহানাফ একনম্বরের গাধা ছেলে! হৃদি আবিদের দিকে তাকিয়ে সৌজন্যে হেসে বলল,

‘স‍্যার ও হচ্ছে আহানাফ আমাদের বন্ধু। ও একদম ইনোসেন্ট। আপনাকে চেনেনা। আপনাকে অপমান করর বিন্দুমাত্র ইনটেনশন ছিলনা ওর।এখানে একটু মিস -আন্ডাসটানিং হয়ে গেছে আপনি প্লীজ ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। প্রিয়কে ঐভাবে নিয়ে যেতে দেখে বেচারি ভয় পেয়ে গেছিল। আপনার গার্ডসরা আমাদের সত্যিটা বলেছে বলে দুশ্চিন্তা মুক্ত আছি। ধন্যবাদ আমার বান্ধুবীকে বাচাঁনোর জন‍্য।’

আবিদ নির্বিকার সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে চলে যায়। আহানাফ ছেলেটা তার রাগের পরিসীমা বাড়িয়ে দিচ্ছে। আহানাফের দুঃসাহস প্রচুর নাহলে ওর সম্পর্কে জেনেও কোন ভয়ডর নেই কেনো? এই পুচকে ছেলের সামনে থাকলে আবিদ নিজেকে কন্ট্রল করতে পারবেনা উল্টাো চ’ড় মে’রে দিবে এর চেয়ে ভালো এখান থেকে আপাতত যাওয়া যাক।

আবিদ গেটের কাছে যেতেই আশরাফ সাহেব স্ত্রী, কন‍্যা, জামাই সহ উপস্থিত। আবিদ তাদের পাশে গিয়ে সৌজন্য মূলক আচরণ করে। উজান আবিদের সঙ্গে হাত মেলায়। আশরাফ সাহেবকে কেবিনের নাম্বার বলে আবিদ গাড়িতে উঠতে নেয়। এমন সময় চোখে পরে
প্রজ্জ্বলিনীকে,

প্রজ্জ্বলিনী রাগে আ’ক্রো’শপূর্ণ ক্রু’দ্ধ দৃষ্টিতে আবিদের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ধারণা আবিদ প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে সবকিছু ইচ্ছাকৃত ভাবে করেছে। আবিদ মৃদু তাচ্ছিল্যের মতো হেসে গাড়িতে উঠে বসে। প্রজ্জ্বলিনীর দৃষ্টিতে আবিদের জন‍্য ছিল আ’ক্রো’শ। অন‍্যদিকে আবিদের প্রজ্জ্বলিনীকে নিয়ে ভাবার সময় নেই।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে