প্রিয়তার প্রণয় পর্ব-১৮+১৯

0
972

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৮

প্রিয়তা অফিসরুমে ফর্ম পূরণ করছে আর বারবার বাহিরের দিকে তাকিয়ে ইয়াশ আর তার চারপাশের মেয়েদের আড় চোখে দেখছে।

— কি হলো এখানে মনোযোগ দাও।(স্যার)

— স্যরি স্যার।

প্রিয়তা তাড়াতাড়ি করে নিজের কাজ শেষ করে বাহিরে আসছিলো, এমন সময় একটা মেয়ে ইয়াশের সামনে এসে দাঁড়ায়।

— আপনি ইয়াশ?

— জ্বী।

— আমি আপনার প্রথম কাজ দেখেই ফিদা হয়ে গিয়েছি, এত ভালো অভিনয় করতে পারেন আপনি!

— ধন্যবাদ।

— আপনি এখানে কেন?

— একটু কাজে এসেছিলাম।

— আচ্ছা আপনি হঠাৎ করে কমেন্ট কেন অফ রাখলেন?

— এটা একটু প্রয়োজন ছিল তাই রাখা হয়েছে।

— ওহ আচ্ছা, সামনে কি আমরা আবারও আপনাকে দেখতে পাব কোন কিছুতে?

— জ্বী পাবেন, শ্যুটিং চলছে।

— তাহলে তো খুব ভালো। আপনাকে তো বড় পর্দায় দেখতে চাই, আপনার কাজগুলো খুব সুন্দর।

— দেখা যাক ভবিষ্যতের কথা তো বলা যায় না।

— আপনাকে রিকুয়েষ্ট দিয়ে ঝুলে আছি এক্সেপ্ট করা যাবে কি?

— আসলে আমি তো অনলাইনে তেমন যাই না এসব আমার ছোটবোন দেখে।

— আচ্ছা বুঝেছি, একটা সেলফি তো ওঠাই যায় তাই না?

— জ্বী অবশ্যই।

দুজনকে এভাবে একসাথে দেখে যে প্রিয়তা কিছু না বলে বাহিরের দিকে একাই চলে আসে, ইয়াশ ও আর দেরি করে না সেখানে।
________________________________

গাড়িতে দুজন চুপচাপ বসে আছে, ইয়াশ বুঝতে পারছে না প্রিয়তার কি হলো হঠাৎ করে এত চুপচাপ কেন আছে সে! প্রিয়তা এক পলকে বাহিরে তাকিয়ে আছে আর ইয়াশ বারবার প্রিয়তাকে দেখছে।

— কিছু হয়েছে তোর?

— উহু।

— মন খারাপ কেন?

— মনে অসুখ করেছে।

— ট্রিটমেন্ট লাগবে? আমার কিন্তু পড়াশোনা প্রায় শেষ।

— মনের অসুখ সব ডাক্তার সারাতে পারে বুঝি?

— কিছু কিছু মানুষের মনের অসুখ সারাতে ডাক্তার হওয়া জরুরী না।

— হুম।

— কি হয়েছে এখন বল।

— বলতে বলেছি প্রিয়।

— সবকিছুতে কেন জোর করেন আপনি?

— অধিকার আছে তাই।

— কিসের অধিকার?

— ক’দিন পর বুঝতে পারবি।

— এখনই বুঝতে চাই।

— সবকিছুর জন্য একটা সময় দরকার।

— সময় করে নিলেই সময় হয়ে যায়।

— এত কথা কবে শিখেছিস তুই প্রিয়? আমি তোর কথাবার্তায় অবাক হয়ে যাচ্ছি।

— কথা বলা বন্ধ করে দেব?

— এমন সাহস দেখাবি না।

— কথা বললেও দোষ আবার না বললেও দোষ।

— বাদ দে এসব, রেস্টুরেন্টে যাবি?

— না, ভালো লাগছে না বাসায় যাব।

— কি হয়েছে তোর?

— কিছুই হয় নি।

— ভালোবাসি বল তাহলে।

— আমি ভালোবাসি বললে তো আর কেউ আমাকে ভালোবাসা শুরু করে দেবে না তাই না!

— শুরু করতেও পারে বলা তো যায় না মানুষের মন বলে কথা।

— অন্য কারও সাথে আপনাকে আমি একদম সহ্য করতে পারি না ইয়াশ ভাই।

ইয়াশ এবার প্রিয়তার মন খারাপের আসল কারণ বুঝতে পারে। হয়তো তখন ওই মেয়েটা ওভাবে কাছাকাছি এসে ছবি তুলেছে তা দেখে হয়তো প্রিয়তার মন খারাপ হয়েছে।

— সহ্য করে নিবি, কিছু সময় পাশে থাকলে সাথে থাকলেই সে সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে যায় না প্রিয়।

— তবুও সহ্য কর‍তে পারি না।

— আচ্ছা এসব ছাড়। আজকে বিকেলে বের হবি? আমি আর কাল থেকে সময় দিতে পারব না, কাজে ব্যস্ত হয়ে যাব। এই বাসায় ও ফিরব না হয়তো, ভোরবেলা চলে যেতে হবে।

— এখানে থাকলে কি সমস্যা?

— এখানে থাকলে মা রাত জেগে বসে থাকে, আমার বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হয়। এখান থেকে কাজের দূরত্ব ও অনেকটা।

— আমি যদি অপেক্ষা করি?

প্রিয়তার কথা শুনে ইয়াশ প্রিয়তার দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে

— ঘরের বৌ এর মতো?

— এরকম দায়িত্ব পেলে তো আমি পৃথিবীর সব মেয়ের থেকে সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবতী হব। সেটা যদি কখনও ভাগ্যে থাকে আমার!

— না এত কষ্ট করতে হবে না। আমার ওই বাসাতেই বেশি থাকা হয়। বিকেলে বের হবি কি না বল, আচ্ছা তোর তো বই কিনতে হবে লাইব্রেরী থেকেও ঘুরে আসা যাবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে বের হব।

— কালো শা…..

— আচ্ছা ঠিক আছে কালো শাড়ি পড়তে হবে? সেটাও পড়ব।

— আমার দরজায় তো প্রেম কড়া নাড়ছে।

— প্রেম হলো ঠিক ক্যান্সারের মতো,
না বলে চলে আসে, মে*রে চলে যায়।

— তোর প্রেমে আমি বারবার ম°*রতে চাই।

— একবার বলেন না ইয়াশ ভাই আপনি আমাকে ভালোবাসেন! আমার না গতকাল থেকে আপনার কথাবার্তা একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না।

— সময় আসুক বলে দেব।

— সেই সময় কবে আসবে ইয়াশ ভাই যেদিন আমার মস্তিষ্কপূর্ণ হবে আপনার ভালোবাসার আগমণের খবরে? কবে স্নায়ুকোষগুলো জানান দেবে আমার প্রেমের বার্তা চলে এসেছে!

— খুব তাড়াতাড়ি, শুধু একটু অপেক্ষা কর।

— সে তো অনেকদিন ধরেই অপেক্ষায় আছি আমি। জেনে গিয়েছি আমি যাকে ভালোবাসি সেও আমাকে ভালোবাসে। তবুও তার মুখে শুনতে খুব ইচ্ছে করে।

— আমার এরকম ধীরগতিতে কথা বলা প্রিয়কে চাই না।

— তাহলে কিভাবে চান?

— আমার প্রিয় মানুষের ভালোবাসার জ্বালায় আমার অঙ্গ যেন জ্ব°’লেপু°’ড়ে ছাড়খার হয়ে যায়। এত শক্ত কথায় প্রিয়কে চাই না, ম্যাচিউরিটি চাই না তোর।

— নিতে পারবেন তো?

— হয়েই দেখ না।

— আপনি দেখতে থাকুন।

প্রিয়তার কথায় ইয়াশ এবার মুখ চেপে হাসি বন্ধ করে রাখে, মেয়েটা কি তাকে ভয় দেখালো নাকি!
______________________________

প্রিয়তা বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে লম্বা একটা ঘুম দেয়।
ফোনের রিংটোনে তার ঘুম ভেঙে যায়, চোখ খুলে দেখে তার মা কল দিয়েছে।

— হ্যাঁ মা বলো….

— ঘুমাচ্ছিলি নাকি?

— হ্যাঁ দুপুরে একটু ঘুমিয়েছিলাম।

— শরীর কেমন তোর?

— হ্যাঁ মা ভালো। তোমরা সবাই কেমন আছো?

— হ্যাঁ আমরাও সবাই ভালো। ভর্তি হয়েছিস আজকে?

— হ্যাঁ ভর্তি হয়ে এসেছি। একটু পর ইয়াশ ভাইয়ার সাথে বের হব বই কিনতে যেতে হবে। উনি নাকি আগামীকাল থেকে আবার এই বাসায় থাকবেন না।

— আচ্ছা তাহলে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হ’। বাসায় সবাই ভালো আছে? তোর বড় বাবা কবে ফিরবে?

— কালকের পরের দিন হয়তো।

— আচ্ছা তাহলে বড়মার সাথে ভালোভাবে থাকিস। আর হোস্টেলে না গেলে হয় না?

— না মা আমার অনেকদিনের ইচ্ছে আমি হোস্টেলে থাকব, এবার ব্যাঘাত ঘটিয়ো না বলে দিলাম।

— আচ্ছা ঠিক আছে বাসা, হোস্টেল মিলিয়েই থাকিস।

— হুম।

— আচ্ছা এবার উঠে রেডি হয়ে নে।

— ঠিক আছে রাখছি।

— হুম।

প্রিয়তা উঠে ফ্রেস হয়ে আলমারি থেকে কালো শাড়ি নিয়ে বড়মার রুমে চলে যায়। তিনি বিছানায় বসে বসে বই পড়ছিলেন। প্রিয়তাকে দেখে বই পাশে রেখে চশমাটা বইয়ের ওপরে রেখে বললেন-

— কিছু বলবি প্রিয়?

— আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দাও।

— শাড়ি?

— হ্যাঁ আমার অনেক দিনের ইচ্ছে শাড়ি পড়ে শহর ঘুরবো, আর তাছাড়া বই ও কিনতে হবে।

— ইয়াশ বলেছে নিয়ে যাবে?

— হ্যাঁ বলেছে নিয়ে যাবে।

— আচ্ছা যা ঘুরে আয় দুজন।

— হ্যাঁ শাড়ি পড়িয়ে দাও।

— আচ্ছা ঠিক আছে আয়।

শাড়ি পড়ানো শেষ করে মিসেস আঞ্জুয়ারা প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছেন।

— কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

— তোকে সত্যিই কালো রঙে একটু বেশিই সুন্দর লাগে দেখতে।

— ইশ লজ্জা দিও না।

— তোর মত একটা যদি বৌমা পেতাম, প্রতিদিন আমি শাড়ি পড়িয়ে দিতাম।

— একটা কথা বলি এদিকে এসো, আরে এসো কানে কানে বলতে হবে কথাটা কাক পক্ষিও যেন বুঝতে বা জানতে না পারে।

— হুম বল।

— আমার না তোমার ছেলেকে খুব মনে ধরেছে, বিয়ে দিয়ে দাও আমার সাথে হিহিহি…..

— তোর হাসিতেও মুক্তো ঝরে। তুই যদি রাজি থাকিস তাহলে বিয়ে দিয়ে প্রতিদিন শাড়ি পড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা নেই কি বলিস।

— শাড়ি পড়ানোর দায়িত্ব তুমি নিলে তোমার ছেলে কি করবে। আর তোমার ছেলের বিয়ের বয়স হয় নি। চারপাশে এত এত সুন্দর মেয়ে থাকতে কি আর তোমার ছেলের নজর আমার দিকে পড়বে বলো!

— অবশ্যই পড়বে, আমার প্রিয়র মতো মেয়েই হয় না।

— হয়েছে হয়েছে, এবার বলো সত্যিই ভালো লাগছে দেখতে?

— অসম্ভব সুন্দর!

— আচ্ছা বুকলিস্ট নিয়ে তোমার ছেলেকে ডাকি কি বলো?

– হ্যাঁ বের হ, দেরি হয়ে যাবে আবার।

– ঠিক আছে, তুমি রেস্ট নাও আমরা যাই তাহলে।

– সাবধানে যাস।

মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় প্রিয়তা। মিসেস আঞ্জুয়ারা ভাবতে থাকেন কবে যে ছেলেটা বিয়ে করতে রাজি হবে!

চলবে……

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৯

“আপনি কি আমার রঙ মিশিয়ে নিজেকেও রঙিন করলেন?” কথাটি শুনেই দরজার দিকে তাকায় ইয়াশ। কালো শাড়ি পরিহিতা রমনীকে দেখে যে ইয়াশের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তাকে দেখার তৃষ্ণা যে এই জীবনে ফুরোবে না বলে মনে হচ্ছে। নাহ তাকে এরকম মোহময়ী না লাগলেও পারতো। ইয়াশ নিজেকে আয়ত্তে নিয়ে নেয়।

— কিছু বললি?

— এখন নিষেধ করব না কালো রঙ পড়তে।

— তুই বললেও আমি শুনব না।

— রাস্তায় যদি প্রশ্নবিদ্ধ হন যে সাথে কে তাহলে কি বলবেন?

— চাচাতো বোন।

— কি!

— কেন তুই আমার চাচাতো বোন না?

— আমার পরিচয় কি শুধু একটাই?

ইয়াশ প্রিয়তার দিকে এগিয়ে গিয়ে টেনে নিজের সবচেয়ে কাছে নিয়ে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,” তুই আমার হবু বউ, লোকে জানতে চাইলে তারাও এটাই জানবে।”

ইয়াশের এমন ব্যবহারে প্রিয়তা যেন থতমত খেয়ে যায়। সে তার জীবনে এমন একটা সময়ের সম্মুখীন হবে এটা কখনও কল্পনা করতে পারে নি।

ইয়াশ প্রিয়তাকে চুপচাপ থাকতে দেখে মুচকি হেসে ছেড়ে দেয়।

— অস্বস্তি লাগছিল?

— লা লাগবে না! এরকম কেউ করে নাকি?

— কিছুই তো করি নি, শুধু তোর আলাদা আরেকটা পরিচয় জানিয়ে দিলাম।

— সেটা তো এমনিই বলা যেত।

— যেত না। মাঝে মাঝে কাছে আসা প্রয়োজন, কাল থেকে তো দূরেই থাকব।

— চলুন বের হই।

— হুম তুই যা আমি আসছি।

— ঠিক আছে।

প্রিয়তা রুম থেকে বেড়িয়ে যায়, ইয়াশ শার্টের হাতার বোতাম লাগিয়ে, ঘড়িটা পড়ে নিজেও বের হয়।
______________________________

রুমে ফোন বাজছে শুনে দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে যায় তামান্না। ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নম্বর। অচেনা নম্বর দেখে রিসিভ করে না সে। আবার কল এলে কিছু একটা ভেবে কলটা রিসিভ করে।

— কে বলছেন?

— হুমায়ুন বলছিলাম।

— ওহ আচ্ছা আপনি! হ্যাঁ বলুন।

— কেমন আছেন?

— আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন?

— আলহামদুলিল্লাহ। আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।

— হ্যাঁ বলুন না, আমি শুনছি…

— এভাবে না, আমরা দেখা করি?

— দেখা করবেন!!

— হ্যাঁ আপনার বাসা থেকে অনুমতি দেবে না বের হওয়ার? বাসায় বলার প্রয়োজন নেই।

— কবে দেখা করতে চাইছেন?

— শনিবারে দেখা করি?

— অনেক দেরি, আচ্ছা ঠিক আছে।

— ঠিক আছে তাহলে রাখছি৷ ভালো থাকবেন।

— আপনিও।

ফোন কেটেই নিজের কাজে মন দেয় হুমায়ুন। মনে মনে ভাবে জীবন তো একটাই, এই একটা জীবনেই যদি প্রিয় মানুষটিকে কাছে না পাই তাহলে তো ভালো থাকা একটা স্বপ্ন মাত্র।
_______________________________

” ওই দেখুন ফুসকা, গাড়ি থামান না প্লিজ। আমি ফুসকা খাব অনেকদিন খাই না।”

কথাটি শুনে ইয়াশ গাড়ি থামিয়ে দেয়।

— এখানকার ফুসকা খেতে হবে তোর এখন?

— হ্যাঁ।

— এখানে একটা রেস্টুরেন্ট আছে ওখানেও ফুসকা পাওয়া যায়। ওখানে স্বাস্থ্যকর পাওয়া যাবে কিন্তু এখানে না।

— আমি এখানেই খাব। ফুসকা রাস্তায় না খেলে মজা পাওয়া যায় না।

— এখানের চেয়ে ওখানে বেশি মজা পাবি, আমার সাথে চল একবার।

— এখানে….

— প্রিয়…

— ঠিক আছে চলুন।

ইয়াশ আবার গাড়ি চালানো শুরু করে। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছেও যায়।
___________________________________

সন্ধ্যার আগমুহূর্তে বুশরা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে। তাকিয়ে দেখে হুমায়ুন নামে সেভ করা নম্বরটা থেকে কল এসেছে। কল আসা দেখে তার বুকের মধ্যে কেমন একটা করতে থাকে। যতই মন বোঝাতে চাইছে যে তার ফোনকল রিসিভ করা যাবে না তবুও তার মন কোন বাধা মানতে চাইছে না। কয়েকদিনের মধ্যে প্রিয় হয়ে ওঠা মানুষটির সাথে যে ভীষণ কথা বলতে ইচ্ছে করছে।

কারও সাথে প্রতিদিন দেখা হলে প্রেম হোক আর না হোক প্রতিদিন কথা বললে আগাম বার্তা ছাড়াই প্রেম হয়ে যায়।

নিজেকে আর নিজের আয়ত্ত্বে রাখতে না পেরে কল রিসিভ করে নিলো বুশরা।

— আসসালামু আলাইকুম। (হুমায়ুন)

— ওয়া আলাইকুমুস সালাম। (বুশরা)

— কেমন আছেন?

— এই তো আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?

— আমি ভালো নেই।

— কেন? আপনারই তো ভালো থাকার কথা নতুন জীবনে পা রাখতে চলেছেন!

— একটা সত্যি কথা বলি?

— আমাকে মিথ্যা কথাও বলেন নাকি?

— আমার যে নতুন জীবনে বুশরা নামের মেয়েটার অস্তিত্ব নেই সেই নতুন জীবন আমার চাই না।

— কি বলছেন হুমায়ুন ভাই, অস্তিত্ব কেন থাকবে না। অস্তিত্ব তো থাকতেই হবে বিয়াই আপনি আমার।

— আমি আপনাকে ভালোবাসি বুশরা।

বুশরা এতক্ষণ নিজেকে খুব কষ্টে ঠিক রেখেছিল। এবার হুমায়ুনের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনে হু হু করে কান্না করে দেয় বুশরা।

— বুশরা….

— *★**★**

— বুশরা প্লিজ কান্না করবেন না, আপনার কান্না আমি নিতে পারছি না।

— আমার সাথে এরকম কেন করলেন হুমায়ুন ভাই? আমি তো আপনার কাছে আগে যাই নি, আপনিই তো আমার কাছাকাছি হয়েছেন। কয়েকটা দিন কথা বলেই আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছেন। আপনি জানেন এই অভ্যাসটা আমাকে প্রতিটাক্ষণে মে°’রে ফেলছে গলা টিপে! আপনার কথা মনে হলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসা কান্না পায়।

— বুশরা, আমি সব ঠিক করে নেব। আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। আমারও খুব কষ্ট হচ্ছে বুশরা।

— আপনার পরিবার তামান্নাকে পছন্দ করে নিয়েছে হুমায়ুন ভাই আর কিছু করার নেই। আপনি আর কিছু করবেন ও না। কিছুদিন পর সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। আপনার জন্য আমার বা আমার জন্য আপনার এই সমস্ত অনুভূতি আর থাকবে না।

— আমি চাই এই অনুভূতি সারাজীবন রয়ে যাক।

— সেটা সম্ভব হচ্ছে না হুমায়ুন ভাই। আমি রাখছি আল্লাহ হাফেজ।

বুশরা ফোন কেটে দিলে হুমায়ুনের নম্বর থেকে আবার কল আসে। বুশরা এবার কল কেটে ফোন বন্ধ করে রাখে। চোখ মুখ বুছে সে নিজের রুমে চলে যায়।
_______________________________

ফুসকা সামনে চলে আসায় প্রিয়তা খুশিতে দুই হাতের তালু একসাথে ঘষাঘষি করছে। ইয়াশ সামনে বসে প্রিয়তার কান্ড দেখছে।
এবার প্রিয়তা প্লেট থেকে একটা ফুসকা তুলে নিয়ে টক মিশিয়ে পুরোটা মুখে নিয়ে নেয়। সাথে তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। প্রিয়তার এভাবে ফুসকা খাওয়া দেখে ইয়াশের এবার মনে হচ্ছে কতই না সুস্বাদু খাবার এটা, না খেলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে। ইয়াশ ও এবার একটা মুখে দিতেই টক আর ঝালের কারণে চোখ বন্ধ করে ফেলে। প্রিয়তা এবার ইয়াশের খাওয়া দেখে ফিক করে হেসে ফেলে। ইয়াশ কোনমতে খাওয়া শেষ করে।

— এটা এত সুন্দর করে খাওয়ার কি আছে?

— আপনি ভালো জিনিসের কদর করতে জানেন না।

— জিনিস ভালো হলে অবশ্যই বলতাম। তুই খেয়ে নে আমি এসব আর খাব না।

— আপনি অন্যকিছু খেতে চাইলে অর্ডার দেন।

— হ্যাঁ দেব, তুই কিছু খাবি?

— আপনার পছন্দমতো অর্ডার দেন, ভালো লাগলে খেয়ে নেব।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

ইয়াশ একজনকে ডেকে খাবারের অর্ডার দিয়ে দেয়। সে জানায় একটু দেরি হবে। খাবার এলে খাওয়া দাওয়া করে মায়ের জন্য খাবার নিয়ে নেয়।
এখানে ওখানে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়ায় তারা।

ইয়াশ আর প্রিয়তা প্রায় রাত নয়টার দিকে বাসায় আসে। বাসায় ঢুকে ইয়াশ প্রিয়তাকে বলে,” শাড়ি আগেই চেঞ্জ করিস না আমি না বলা পর্যন্ত” কথাটি বলে ইয়াশ নিজের রুমে চলে যায়।

প্রিয়তা মিসেস আঞ্জুয়ারার রুমে চলে যায় খাবার নিয়ে। রুমে গিয়ে দেখে তিনি সেই বিকেলের মতো বসে বসে বই পড়ছেন।

— বড়মা…!

— ওহ এসে গিয়েছিস? আমার খুব চোখ লেগে যাচ্ছে।

— আচ্ছা এই যে তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি, খেয়ে ঘুমিয়ে যাও। আমি কি থাকব তোমার সাথে?

— না না তুই খাবার রেখে নিজের রুমে যা, এখানেই প্লেট আর পানি আছে আমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাব। তোর তো আজকে থেকে পড়তে হবে, রুমে লাইট অন থাকলে আমি ঘুমোতে পারি না রে মা।

— আর আমি অফ থাকলে ঘুমাতে পারি না।

— অনেক ঘুরেছিস এবার একটু পড়ে নে।

— ঠিক আছে বড়মা আমি আসছি।

— আল্লাহ হাফেজ।

— আল্লাহ হাফেজ, দরজা লাগিয়ে দাও বড়মা।

— হ্যাঁ দিচ্ছি।

প্রিয়তা বড়মার রুম থেকে এবার নিজের রুমে চলে যায়। নিজের রুমে গিয়ে বই কয়েকটা টেবিলে রেখে দেয়।
ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে, এবার বাড়িতে কথা বলা দরকার বলে মাকে কল দেয়।

কথা বলা শেষ করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিউজফিড স্ক্রোল করছিল এমন সময় ইয়াশের মেসেজ, ” এই যে মহারানী আপনাকে দরজা আটকাতে বলেছে কে ?”

চলবে……………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে