প্রথম প্রেম ২ পর্ব-০৮

0
1146

#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৮
লেখিকা-#খেয়া

এসব কী ভাইয়া!
তুই বিয়ে করে ফেললি। আমাকে একবার বললিও
না।তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিসনা।

—- আফরা,এমন করিসনা প্লিজ।এমনিতেই প্রচুর ঘেটে আছি।

—- তুই বিয়ে কেন করলি।

—- না হলে আজ জেলে চলে যেতাম।এই স্টুপিটটা আজ আবার মরতে বসে ছিল।

—- এভাবে বলিসনা ভাইয়া, অনন্যা আপু সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসে।
আচ্ছা তুই ঘরে যা আমি আপুকে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছি।

—- হুম।

” আমি অনন্যা আপুকে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম।’

—- থ্যাংক গড! আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ভয়ে সব গুলিয়ে ফেলবে।

—- সিরিয়াসলি, তোমার আইডিয়া যে এভাবে কাজ করবে বুঝতেই পারিনি।
কিন্তু এখন কী হবে।

—- তুমি একদম চিন্তা করো না।ভাইয়া যে তোমায় পছন্দ করে সেটা আমি জানি।কিন্তু ও জীবনেও এটা স্বীকার করত না।বিয়েটা তো হয়ে গেছে, বাকিটা আমি দেখে নিবো।

—- লাইক সিরিয়াসলি, আমি তো ভাবতেও পারিনি যে তুমি মাথায় এত দুস্টু বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরো।

—– আমি কিন্তু এমনই।

—- তাই নাকি!

—- হুম।

—- তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি ভাইয়াকে দেখে আসি।

—- আচ্ছা।

“আসলে অনন্যা আপুকে এসব করতে আমি বলেছিলাম। নাহলে ভাইয়া যা মানুষ কখনোই নিজের মনের কথা বলতোনা।”

—- আসব, ভাইয়া।

—- হুম আয়।

—- মুখটাকে এমন করে রেখেছিস কেন? নতুন নতুন বিয়ে করেছিস একটু চিল মুডে থাকতে পারিস না।

—- আফরা”

—- তুই তো অনন্যা আপুকে পছন্দ করতি তাহলে বিয়ে কেন করতে চাসনি।

—- তোর জন্য।বাবা-মা চলে যাওয়ার পর তোকে ভালোরাখার দায়িত্ব আমার।আমি চায়না অন্য কারোর জন্য তোর কোনো কষ্ট হোক।
অনন্যা তোকে কেমন ভাবে এক্সেপ্ট করবে সেটা আমি সত্যি বুঝতে পারছিনা।

” বাবা- মা চলে যাওয়াট পর ভাইয়া ই আমাকে আগলে রেখেছে।আমার সব ভুল গুলোকে দুনিয়ার থেকে লুকিয়ে রেখেছে।ছোটোবেলা থেকেই ভাইয়া সবসময় আমায় বেস্ট জিনিসটাই দিয়েছে।আজ আমিও তাকে তার পছন্দের জিনিসটা দিলাম।আমার কষ্ট হলে হবে তবুও সে তো খুশি হবে।আর আমি জানি অনন্যা আপু এমন মেয়ে না।”

—- তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া।অনন্যা আপু আমাকে একদম তার নিজের বোনের মতোই দেখবে।

” নিচে দরজায় বেল বাজার শব্দ হলো।আমি নিচে চলে গেলাম সাথে ভাইয়াও এলো।”

দরজা খুলে দেখি মামা – মামি আর প্রহরের বাবা,মা।

—- তোমরা সবাই এখানে।

—- আবিরের বউ দেখতে এলাম।

—- তোমাদের কে বলল এসব?

—- কেন প্রহর।

—- উনি কীভাবে জানলেন?

—-ও তো আবিরের বিয়েতে সাক্ষী ছিল।

” মামির কথা শুনে কটমট দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।”

—- এটা কী ঠিক হলো, ভাইয়া।তুই উনাকে বিয়ের সাক্ষী বানালি আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলিনা।

ভাইয়া আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

—————

দুপুরবেলা মাত্রই একটু ঘুমিয়েছিলাম তখনই ফোন বেজে উঠল।না দেখেই ফোনটা তুললাম।

—- কে?

—-কে কী হ্যা,তুই কী রে আফরা।বললি যে রাহার সাথে কথা বলাবি অথচ এখনও কিছু করলি না।

—- নিবির ভাইয়া, রাহা আপনার সাথে কথা বলতে চায়না তো আমি কী করতে পারি।

—- প্লিজ আফরা,কিছু একটা কর।আমি সত্যি সেদিনের বিহেবের জন্য দুঃখিত। একবার কথা বলানোর ব্যবস্থা করে দে।

—- আচ্ছা দেখছি।

ভর দুপুরবেলা যাচ্ছি রাহাদের বাড়ি।মহারানীকে কত ফোন করলাম ধরলোনা।আর এদিকে তো নিবির ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে।

রাহাকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে গেলাম নিবির ভাইয়ার সাথে দেখা করাতে।ওরা দুজন কথা বলছে।আমি খানিকটা দূটে দাঁড়িয়ে আছি।ইদানিং নিবির ভাইয়ার সাথে কাউকে দেখলে আর খারাপ লাগেনা।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোর হচ্ছিলাম তাই প্রহরকে ফোন করলাম।উনি মহারাজ ফোন তো ধরলেন না উল্টো কেটে দিলেন।প্রচন্ড রাগ হলো উনার এমন কাজে।
অসহ্য লোক একটা।এদিকে এরা দুজন এমনভাবে কথা বলছে যা আজ আর শেষ হবেনা।
ওদেরকে বলে আমি সামনের লেকটার দিকে গেলাম।
বিকেল হয়ে এসেছে, চারিদিকে সুন্দর বাতাস।বাতাসে কিছু একটার মিষ্টি গন্ধ ভাসছে।
একা একা হাঁটতে মাঝেমধ্যে ভালোও লাগে।কিন্তু এমন জনসমাগমের জায়গায় একা হাঁটা মানে লোকের বিনোদনের মাধ্যম।

হঠাতই কেউ পিছন থেকে আমার চুল টেনে ধরল।প্রচন্ড রাগ নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি ” রাদিফ”।

—- তুই? এখানে কীভাবে। আর এভাবে পাবলিক প্লেসে চুল টেনে ধরে,মাথাটা ধরে গেলো আমার।

—- আরে, চুপ কর, মা। এতকথা একবারে কেউ বলে। তুই তো বাচালই থেকে গেলি।

—- তুই হঠাৎ এখানে কেন?

—- আবির ভাইয়ার বউ দেখতে আসছি।বাই দ্যা ওয়ে,আমি কিন্তু সব জানি।

—- কী জানিস।

—- এটাই যে সবকিছু তোর প্ল্যান ছিল।প্রহর ভাইয়া আমাকে সব বলে দিয়েছে।

—- তুই প্রহরকে চিনিস?

—- হুম।আমার একটা মাত্র দুলাভাই বলে কথা।তাকে না চিনলে হয়।আর যাই বলিসনা কেন মানুষটা কিন্তু তোর জন্য একদম পারফেক্ট।

—- কী বলিস তুই এসব।

” আমি আর রাদিফ কথা বলছিলাম তখনই রাহা ফোন করে বলল নিবির ভাইয়া নাকি ওর প্রোপোজালটা নিয়ে ভেবে দেখবে বলেছেন।ওরা নাকি বাসায় চলে গেছে।আমি আর রাদিফও বাসায় চলে এলাম।”

——————

দিন চলেছে তার আপন গতিতে।আজ আমার ফাস্ট ইয়ারের রেজাল্ট দিবে।বসেবসে নখ কামড়াচ্ছি।সামনে অনন্যা আপু খাবার নিয়ে বসে আছে।আর ভাইয়া আমাকে টেনশন করতে মানা করছে।
খানিকক্ষন পরে রেজাল্ট জানতে পারলাম।প্রথম হয়নি কিন্তু বেশ ভালো পজিশনে আছি।

মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।ভাইয়া আর অনন্যা আপুর সম্পর্ক বেশ ভালো চলছে সাথে রাহা আর নিবির ভাইয়াও।প্রথমে অনন্যা আপুর বাড়ির লোক না মানলেও পড়ে তারা সব মেনে নেয়।
কিন্তু ইদানিং প্রহর আমাকে খুব কম টাইম দেয়।

চারদিন পর আজ দেখা করবে বলেছে।

কতক্ষন ধরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।অথচ উনার আসার নাম নেই।

—- সরি, একটু লেট হয়ে গেছে।

—- এতদিন কই ছিলেন?

—-চাকরি খুঁজছিলাম।বউকে মেনটেন করার জন্য তো একটা চাকরি দরকার।

—- তো চাকরি পেয়ে গেছেন।

—- হুম।একটা হসপিটালে জেনারেল সার্জন এর।

—- ও আপনি কী নিবির ভাইয়ার চেয়ে বড়।

—- হুম। দুই বছরের।

—- তাহলে তো আপনি বুড়ো। শেষ পর্যন্ত একটা বুড়ো বড় জুটল আমার কপালে।

—- আর আমার কপালে যে একটা পিচ্চি বউ জুটল তার কী।

—- আহারে।

—- চলো আজ তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।

—- কোথায়?

—- আমাদের বাড়ি, মা নিয়ে যেতে বলেছে তোমায়।

প্রহরদের বাসায় এসেছি।প্রহরের মা খুব ভালো মানুষ একদম নিজের মেয়ের মতো দেখে আমায়।
আমি ওদের পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখছিলা।প্রহরের রুমে ঢুকেই আমার চোখ আটকে গেলো সামনের দেয়ালের দিকে।পুরো দেয়াল জুড়ে আমার বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি।কিন্তু এত ছবি উনি কোথায় পেয়েছেন।
ছবিগুলো খুব সুন্দর আর যত্ন করে রাখা।সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।উনার রুমের সবকিছু খুব সুন্দর সাজানো গোছানো।নরমালি ছেলেদের ঘর এতটা পরিপাটি হয়না।আমি খুব মনোযোগ দিয়ে ঘরের সবকিছু দেখছিলাম।তখনই প্রহর রুমে এলো আর বলল

—- ভালো করে দেখো কিছু পছন্দ না হলে বদলে ফেলবো।তাছাড়া বিয়ের পর তো এখানে শুধু তোমার সাজগোজের জিনিসই থাকবে।

—- আমি মোটেও এত সাজিনাএত কী আমি তো একটুও সাজিনা।

” প্রহর বিছানায় বসে একটান দিয়ে আমাকে উনার কোলে বসিয়ে বললেন”

—- তোমার যা রূপ আছে তা কারো হৃদয় ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর কিসের দরকার বলো।

—- হু হয়েছে,আর তেল দিতে হবেনা।আমি জানি আমি কতটা সুন্দর।

—- হোয়াট! তুমি সুন্দর, লাইক সিরিয়াসলি। তোমার মতো পেত্মীকে সুন্দর কে বলেছে।

” উনার এই সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলানোর স্বভাবটা আমার মোটেও পছন্দ না।আমি রাগ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম।”

আন্টি রান্না ঘরে ছিল।আমি উনার কাছে গিয়ে উনাকে সাহায্য করতে চাইলও উনি না করে দেন।
উনি আমাকে উনার ঘরে নিয়ে গেলেন।খুব সুন্দর একটা চেন আমার গলায় পড়িয়ে দিলেন আর বললেন

—- এটা আমার মেয়ের ছিলো।কিন্তু এটা বেশিদিন পড়ার সৌভাগ্য ওর হয়নি।তাই তোমায় দিলাম।আমার ছেলের মতো এটাকেও আগলে রেখো,আফরা।

—- আপনার একটা মেয়েও আছে।প্রহর তো কখনো বলেনি আমায়।

—- আমার মেয়ে ছিলো।এখন নেই।আমার পরি আর নেই আমার কাছে।

—- মানে?

—- চারবছর আগে ও মারা গেছে।আমাদের একটা ভুল সিদ্ধান্ত ওকে শেষ করে দিয়েছে।
আমি চাইনা আমার পরির মতো প্রহরও আমাদের ছেড়ে চলে যাক।তাই ওর কোনো কাজে ওকে না করিনা।

—- আপনার মেয়ে কী মারা গেছে, আন্টি।

—- না ও মারা যায়নি।শুধু আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।

—- মানে?

—- মানে চারবছর আগে,,,,,

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে