প্রতিশোধ পর্ব-১

0
1757

গল্পের নামঃ প্রতিশোধ (বাস্তব এবং রমান্টিক মিশ্রিত)
লেখায়ঃ রুম্মান
পর্বঃ এক

বস আপনি যে অপ্রাসঙ্গিক প্রস্তাব দিচ্ছেন সেটা মেনে নেওয়া কোন ভাবেই আমার পক্ষে সম্ভব না।

আমি রেহানা, একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সংসারের খরচ আর ছেলের পড়ালেখার খরচ আমাকেই বহন করতে হয়।

তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই চাকরিটা করতে হচ্ছে আমাকে।

বস আপনি একজন বিবাহিত পুরুষ আর আমি একজন বিবাহিতা নারী।

আর আমার একটা সন্তান আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি আপনার কুপ্রস্তাবে রাজি না। এত বুঝানোর পরেও জিসান সাহেব বোঝার চেষ্টা করছেন না।

তিনি আমাকে প্রয়োজন ছাড়াই মাঝে মাঝে তার কক্ষে যেতে বলতেন।

যেহেতু উনি আমার বস সেহেতু তার কথা শুনতে হত আমাকে। যখনি তার রুমে যেতাম তখনি উনি আমার দিকে কুনজরে তাকিয়ে থাকতো। যেটা আমার একদম ভালো লাগতো না।

আমাকে বসিয়ে নিজের চেয়ার ছেড়ে আমার পাশে এসে বসতেন। আমার হাত ধরতেন। কোমরে হাত দিতেন। পিঠে হাত বুলাতেন। তার এরকম স্পর্শ আমার একদম অসহ্য লাগতো।

নানান অজুহাতে প্রায় সময় নিজের রুমে ডেকে নিয়ে যেতেন। আর যাওয়ার পর এমন অসুভলন আচার-আচরণ করতেন। কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার বলে তাকে কিচ্ছু বলতে পারতাম না। নিরবে সহ্য করে যেতে হত আমাকে।

এরকম ভাবেই দিনগুলো অতিক্রম করতে থাকি । আমার স্বামী একটা রোড একসিডেন্টে মারা জান। তাই সংসারের পুরো দায়িত্ব আমার কাধের উপরেই নির্ভর করে আছে।

বেশ কিছু দিন আগের কথা,,,,,

রাফাত,
রাফাত হলো আমার ছেলে।
ওর বাবার সপ্ন ছিল রাফাতকে অনের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন।

কিন্তু রাফাতের বাবার সপ্ন আর পূর্ণ হলো না। ছেলের ভবিষ্যত না দেখেই পারি জমালেন পরকালে। আর তখন থেকেই নেমে আসলো আমাদের উপর দুর্ভিক্ষ।

কথায় আছে খারাপ সময় নাকি মানুষকে চেনা যায়।

আমিও চিনে নিলাম আত্মীয় স্বজন পারা প্রতিবেশী সবাইকে। রাফাতের বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে চলতে হয়েছে বেশ কিছুদিন। কখনো খেয়ে আবার কখনো বা না খেয়েই দিন পার করতে হয়েছে আমাদের মা ছেলেকে।

সেদিন কাউকে পাশে পাইনি। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে চোখের কোনা দিয়ে আপনা আপনি পানি বের হয়ে আসে।

আমি লেখাপড়া জানতাম,তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি চাকরি করবো। পুরোনো ফাইল ঘেটে সার্টিফিকেট গুলো বের করে বেশ কয়েকটা সিভি বানাই। সার্টিফিকেট গুলো দেখে মনে হচ্ছে ইদুর পোকামাকড় কিছুটা নষ্ট করে ফেলেছে।

কে জানতো এতদিন পর এই ফাইল গুলো প্রয়োজন হবে।

এবার আমার সপ্ন রাফাতের বাবার সপ্ন পূরোন করা। আমি চাকরি করবো শুনে রাফাত কিছুটা মন খারাপ করে। কিন্তু পরবর্তীতে বুঝানোর পরে রাফাত বিষয়টি মেনে নিতে না চাইলেও পরিস্থিতি বুঝে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেনে নেয়।

কারন রাফাত মনে করতো তারা মা বাইরে জব করলে সমাজের মানুষ একেকজন একেক রকম কথা বলবে। সেই ভয়ে রাফাত অনিচ্ছা প্রকাশ করে। তখন রাফাতকে আমি বুঝিয়ে বলি যেদিন আমাদের খারাপ সময় ছিল, যেদিন কোন একবেলা আমাদের পেটে খাবার জুটতো না,

সেদিন কিন্তু তোর ওই সমাজের মানুষ গুলো আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলেনি এই নাও খাবার। তাহলে সেই সমাজের মানুষদের কথায় কান দিবি কেন? রাফাতের সাথে কথা বলতে বলতেএকটা ফোন আসে। অপরিচিত নাম্বার।

ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওইপাশ থেকে বলছে আপনি কি রেহানা বেগম। আমাদের অফিসে সিভি জমা দিয়েছিলেন?হ্যাঁ আমি আপনাদের অফিসে সিভি জমা দিয়েছিলাম।

ঠিক আছে ম্যাম। কাল সকাল নয় টায় আপনার ইন্টারভিউ। সঠিক সময়ে চলে আসবেন।

ঠিক আছে,
আমি সঠিক সময়ে চলে আসবো।
ধন্যবাদ স্যার।

অনেক খুশি লাগছে। চাকরিটা পেয়ে গেলে অনেক ভালো হবে। আচ্ছা রাফাত তুই এখন ঘুমাতে যা। অনেক রাত হয়েছে। আর শোন সকাল বেলা আমি নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রেখে যাবনি। তুই ঘুম থেকে উঠে সময় করে খেয়ে নিস।

আমি অফিসে বসে আছি। আর কিছু সময় পর আমার ইন্টারভিউ শুরু হবে। এদিকে টেনশনে আমার ঘাম ঝড়ে যাচ্ছে। প্রায় বিশ মিনিট পর আমার ইন্টারভিউ শেষ হয়। এরপর আমি বাসায় চলে যাই। তারা বলেছেন ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হবে।

একসপ্তাহ পর ওই অফিস থেকে ফোন দিয়ে বললেন আমার জব হয়ে গেছে। আগামী মাসের এক তারিখ থেকে আমার জয়েন। খবরটা পেয়ে অনেক খুশি হয়ে যাই আমি। অবশেষে মনে হচ্ছে দুঃখের সাথে আর নয় বসবাস। এবার থেকে হাসিখুশি ভাবে জীবনযাপন করবো।

অবশেষে চাকরিটা পেয়ে গেলাম।প্রথম প্রথম আমার বস ভালো ব্যবহার শুরু করলেও পরবর্তীতে তার আসল চরিত্র প্রকাশ হতে থাকে আমার কাছে।

আমাকে দেখলেই তার মন মানুষিকতা পরিবর্তন হয়ে যেত। আমাকে দেখার পর নিজেকে যেন স্থির রাখতে পারতেন না।

তিনি যেখানে যাইতেন সঙ্গে করে আমাকেও নিয়ে যাইতেন।

এমনকি তার ব্যক্তিগত ইভেন্ট গুলোতেও আমাকে যাওয়ার জন্য জোর করত।

যদি কখনো মানা করার চেষ্টা করতাম তখনি চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার হুমকি দিত।

তাই রাফাতের বাবার সপ্ন আর ছেলের জন্য সবকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে নিতাম।

একদিন সকাল বেলা যখন অফিসে পৌছালাম। পৌঁছানোর সাথে সাথে বস নিজের রুমে ডেকে পাঠালেন।

কি আর করার, যেহেতু তার অফিসের চাকরানী আমি সেহেতু তার ডাকে সারা দিতেই হবে। কিছুক্ষণ পর তার রুমে গেলাম।

পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে