প্রণয় স্রোতে পর্ব-০৭

0
990

#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৭
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)

আরাবের দিকে তাকাতেই চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেল বহ্নি এর।কেমন এক অ’দ্ভু’ত দৃ’ষ্টি’তে দেখছে আরাব তাকে।এই দৃ’ষ্টি’র কি নাম দেবে বহ্নি ভেবে পেল না।এমন দৃ’ষ্টি’র অর্থ ও খুঁ’জে পেল না। এ যেন এক স’র্ব’না’শা দৃ’ষ্টি যা একজন স্ত্রী কে জ্বা’লি’য়ে দিতে স’ক্ষ’ম।কয়েক মুহূ’র্ত স্ত’ব্ধ থাকার পর বহ্নি আরাব ও কিছুটা সা’হ’স জোগালো তারপর বলে উঠল,

“আ’ম সরি আরব! কি’ন্তু এই বিয়ে টা আমি সংসার করার জন্য করিনি।আমার একমাত্র উ’দ্দে’শ্য ছিল ইয়ারাব এর ক্ষ’তি। কি’ন্তু সেটা ও এখন আমার প’ক্ষে স’ম্ভ’ব নয়।তাই আমি আর এই সংসার নামক মি’থ্যা বেড়াজালে জড়িয়ে থাকতে চায় না।এতে তুমি আমি কেউই সুখী হবো না।তাই আমার মনে হয় আমাদের ডি’ভো’র্স নেওয়ায় শ্রেয়।”

“বলা শেষ?”

আরাবের নি’র্লি’প্ত কন্ঠ। যেটা দেখে বহ্নি বেশ অবাক হলো।বেশ অবাক হয়েই বলে উঠল,

“আমার কথাগুলো তুমি বুঝতে পারছো?”

“অবশ্য’ই। বাংলা ভাষায় খুব স্প’ষ্ট ভাবে তুমি আমাকে বলেছো না বোঝার কি আছে! তবে তুমি একটা জিনিস ভালোভাবে বুঝে নাও, আমি তোমাকে ডি’ভো’র্স দেব না।আর না তোমাকে দিতে দেব!”

আরাবের এমন স্প’ষ্ট কথা শুনে হ’ত’ভ’ম্ব বহ্নি। কি বলে ছেলেটা।বেশ উ’দ’গ্রী’ব হয়ে বহ্নি বলে ওঠে,

“যে স’ম্প’র্কে ভালোবাসা নেই সে স’ম্প’র্ক টিকিয়ে রেখে কি লাভ?”

“আর ইউ সিওর?”

“হোয়াট?”

“আই মিন টু সে দেট,আর ইউ সিওর আমাদের স’ম্প’র্কে কোনো ভালোবাসা নেই?”

“কি.কি বলতে চাইছো তুমি?”

তুতলিয়ে বলে ওঠে বহ্নি।

আরাব এগিয়ে গেল বহ্নি এর দিকে। এ’ত’ক্ষ’ণ সামনাসামনি দাঁ’ড়ি’য়ে কথা বলাই আরাব এগোনোর সাথে সাথে বহ্নি কে ও পেছাতে হলো।এক পর্যায়ে দেওয়ালে আটকে গেল সে।আরাব বেশি দূ’র’ত্ব রাখলো না দুজনের মধ্যে তবে শরীরে শরীরে টাচ ও লাগলো না এমনভাবে দূ’র’ত্ব বজায় রাখলো।পকেটে দুই হাত গুজে নি’র্বা’ক ক’ন্ঠে বলে উঠল,

“আমাদের বিয়ের আজ তিনদিন। আর এ তিনদিনে তুমি আমাকে যতটা শা’ন্ত দেখেছো আমি তার থেকে ও বেশি অ’শা’ন্ত।আমাকে নিয়ে হয়তো তুমি এই তিন দিন বা তার ও অ’ল্প সময় নিয়ে ভেবেছো কি’ন্তু আমি তোমাকে ১০ দিনের বেশি সময় নিয়ে ভেবেছি। আর এই দশ দিনে তোমাকে নিয়ে ভেবে আমি একটাই সি’দ্ধা’ন্ত নিয়েছি আমি সারাজীবন তোমার সাথে থাকবো!”

কোনো মানুষের স্বা’ভা’বি’ক ক’ন্ঠে বলা কথাকি কখনো কারো শরীরে হিম ধরিয়ে দিতে পারে? হয়তো কিছু মু’হূ’র্ত আগে ও বহ্নি জবাবে বলত না! কি’ন্তু এই মূ’হু’র্তে সে বলবে স’ম্ভ’ব। সে নিজে আরাবের কথা শুনে বরফের ন্যা’য় জমে গেছে। এই ছেলেকে যেমনটা ভেবেছিল ঠিক তার বিপরীত সে।স্ব’চ্ছ পানির ন্যা’য় শান্ত ছেলেটি যে অনলের ন্যা’য় শা’ন্ত হু’ম’কি দিতে পারে সেটা যেন বি’শ্বা’স’ই হ’চ্ছে না বহ্নি এর।

হঠাৎই বলা নেই কওয়া নেই বহ্নি কে কোলে তুলে নিলো আরাব।বিছানাতে শুয়িয়ে নিজে ও শুয়ে পড়ল।বিষয়টা এখানে থেমে গেলে বহ্নি হয়তো সামলে নিতো নিজেকে।তবে আরাব যে তার থেকে ও ভ’য়’ঙ্ক’র কাজ করছে।বহ্নি কে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। আর বহ্নি কিছু বলে ওঠার আগেই কড়া কন্ঠে বলে উঠেছে,

“কারো ওপর জোর করে স্ত্রীর অধিকার আদায় করে নিজেকে পুরুষ প্র’মা’ণ করার মতো ঘৃ’ণ চি’ন্তা ভাবনা আমার নেই। তবে আমার বিয়ে করা বউকে কখন টাচ করবো সেটা ও কারো কাছ থেকে পারমিশন নেব না আমি!”

আরাবের কড়া ক’ন্ঠে’র বি’রু’দ্ধে প্রতিবাদ করে উঠতে চাইলো বহ্নি এর ম’স্তি’ষ্ক। কিঃন্তু মনের মধ্যে কিছু একটা বাধা দিলো যেন।সত্যি তো আরাবকে বিয়ে করার আগে একবার ভাবা উচিত ছিল বহ্নি এর।

এই ভাবনা আসার কারণ জানা নেই বহ্নি এর।আরাবের সেই ঘায়েল করা দৃষ্টি। নাকি মনের মধ্যে কোথাও লুকিয়ে থাকা স্ত্রী স্ব’ত্তা বলে উঠল কথাটি যা এই তিন দিন প্রতিশোধের অনলে চাপা পড়েছিল।সঠিক উত্তর টা দিতে পারল না বহ্নি এর মন।না পারল ম’স্তি’ষ্ক। অনেক দ্বি’ধা দ্ব’ন্দ্ব নিয়েই পাড়ি জমালো ঘুমের দেশে।

সকালের সোনালি রোদ চোখে পড়তেই পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো বহ্নি। পাশে আরাব ঘুমিয়ে আছে। তবে রাতের মতো জড়িয়ে রেখে নেই।
ঘুমন্ত আরাবের দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে বহ্নি।হয়তো এই প্রথম আরাবকে এতটা কাছ থেকে নিজে দেখছে সে।ছেলেটার গায়ের রং নিয়ে কথা উঠলে অবশ্যই তাকে ফরসাদের কাতারে ফেলতে হবে।মুখে রাখা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ছেলেটির মুখটিকে বেশ মায়াবি করে রেখেছে। উচ্চতায় বহ্নির থেকে কয়েক ই’ঞ্চি ল’ম্বা আরাব।বলতে গেলে বহ্নি আরাবের কাধ অবদি।যেটা নাকি পা’র্ফে’ক্ট কাপলদের সাইন।হঠাৎই মনের কোনে ভাবনা এসে হানা দিলো বহ্নির।সে কি চাইলে পারে না আরাবের সাথে সত্যি সত্যি একটা পা’র্ফে’ক্ট কাপল হতে।কি জানি? আর তা’ড়া’হু’ড়ো করে কোনো সি’দ্ধা’ন্ত নেবে না বহ্নি।

জীবনে একবার হিংসার অনলে পুড়ে অনেক বড় আর ভুল সি’দ্ধা’ন্ত একবার নিয়ে ফেলেছে সে।বিয়ের আগে একটাবার ও ভাবেনি যে মানুষটার সাথে স্বা’মী স্ত্রী’র পবিত্র ব’ন্ধ’নে আ’ব’দ্ধ হতে যা’চ্ছে তার যো’গ্য স্ত্রী হয়ে উঠত পারবে কিনা! তাকে মেনে নিতে পারবে কি না!

আরাব তো ওর জায়গায় ঠিক। সে তো ডি’ভো’র্স দেওয়ার জন্য বিয়ে করেনি।সে তো সংসার করার জন্যই বিয়েটা করেছে।তাহলে!

নানা রকম চি’ন্তা হচ্ছে বহ্নির।কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল ভেবেই পাচ্ছে না।সবটা বারবার এলোমেলো হয়ে যা’চ্ছে।অনেক এলোমেলো ভাবনা নিয়েই ওয়াশরুমে চলে গেল বহ্নি। বহ্নি চলে যেতেই চোখ মেলে তাকালো আরাব।এত’ক্ষঃণ যে তার বউ তাকে খুঁ’টি’য়ে খুঁ’টি’য়ে দেখছিল সেটা ভালো করেই টের পেল সে সেই সাথে মুখে ফুটিয়ে তুলল এক র’হ’স্য’ময় হাসি।

সকালের সব কাজ মোটামুটি গোছগাছ করে সকলেই হসপিটালে চলে এসেছে।ইয়ারাব এর সুস্থ হতে এখনো দিন পনেরো লাগবে! তবে পনেরো দিন পরে ও সে পরিপূর্ণ সু’স্থ হবে না।ইয়ারাব এর মাথায় একটা জায়গায় রক্ত জমাট বেঁ’ধে আছে যার জন্য বাইরে যেতে হবে ওকে।ইয়ারাব মোটামুটি সুস্থ হলে পনেরো দিন পরেই ওকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার সি’দ্ধা’ন্ত নিয়েছে সবাই।

হসপিটালে তানভি রাতে ছিল। আরাবেরা সকলে পৌছালো তানভি বাড়িতে এসে ফ্রে’শ হয়ে নেই। তারপর আবার ও ছোটে হসপিটালের উ’দ্দে’শ্যে।

সারাদিন বাড়ি হসপিটাল করেই কাটছে পরিবারের মানুষগুলোর।প্রত্যেকের এখন একটাই চাওয়া ইয়ারাব যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।

আরাবের সাথে সারাদিন কথা বলেনি বহ্নি। প্রয়োজন ছাড়া।কেমন একটা এড়িয়ে চলেছে সে।আরাব সেটা ঠিকই খেয়াল করেছে। তবে সারাদিনের ব্য’স্ত’তা’য় কিছু বলেনি।

মনিমা সহ সকলেই বিকাল থেকে হসপিটালে।তবে বহ্নি খেয়াল করছে তানভিকে।কি সুন্দর নিরোলস সেবা করে যাচ্ছে ইয়ারাব এর।মাত্র এই কয়দিনে কি কারো ওপর এতো টান অনুভব করা যায়।কই তার তো আরাবের প্রতি সে রকম টান নেই। নাকি আছে যা সে বুঝতে পারছে না।

হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে বহ্নি। বাকিরা ইয়ারাব এর কেবিন এর ভেতরে।হঠাৎই কাঁধে কারো হাতের স্প’র্শ পেল বহ্নি। পেছনে ফিরতেই দেখা পেল তানভি এর।দুদিনেই কেমন শুকিয়ে গেছে মুখটা।তারপর ও সে খুশি।

“কি ভাবছো আপুনি?”

জিজ্ঞেস করে উঠল তানভি।

“কিছু না। এমনি দাঁ’ড়িঃয়ে আছি!”

জবাবে বলল বহ্নি।

“তুমি এখনো ভাইয়াকে মেনে নিতে পারোনি তাই না!”

“তোকে এসব কে বলেছে?”

“কেউ না।তবে আমি জানি! জানো আপুনি বিয়ের আগের দিন অবধি ইয়ারাব এর ওপর আমার কোনো ফিলিংস কাজ করতো না।কিন্তু যখন থেকে আমি এটা উ’প’ল’ব্ধি করতে পেরেছি যে ওই মানুষটা আমার স্বা’মী।আমি তখন থেকেই যেন কেমন একটা মায়ায় জড়িয়ে গেছি।আমি নিজে ও জানি না এটা কিভাবে হয়েছে। শুধু এটুকু জানি এই মনুষটার সাথে আমি ভালো থাকবো।আ’চ্ছা আপুনি তোমার কখনো মনে হয়নি তুই ভাইয়ার সাথে ভালো থাকবে?কখনো মনে হয়নি এই মানুষটার ওপর চোখ বুজে ভরসা করা যায়?”

হঠাৎই বুকের মধ্যে ধক করে উঠল বহ্নি এর।সত্যি তো সে তো আরাবকে ভরসা করে।এটা জানে না সে মায়ায় পড়েছে কিনা! কি’ন্তু সে ভরসা করে।খুব ভরসা করে আরাবকে।তবে কেন করে সেটা জানে না বহ্নি।তখনই পেছন থেকে গলা খাকারির শব্দ পেল বহ্নি আর তানভি।পেছনে ফিরতেই দৃ’শ্য’মান হলো আারব।আরাব তানভি এর উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

“বেশ রাত হয়েছে ভাবি। মনিমা আগেই চলে গেছে।এবার আমাদের ও যেতে হবে।বোনের সাথে গ’ল্প’টা না হয় কালকে করো।আর ভাইয়া ও তোমাকে খুঁজছে!”

তানভি আর কথা বাড়ালো না। ওর পক্ষে একদিনে সবটা ঠিক করা সম্ভব না।তবে তানভি চে’ষ্টা করবে যাতে বহ্নি ও আরাবকে মেনে নিতে পারে।একটা স্বাভাবিক স’ম্প’র্কে আসতে পারে।

চেনা পরিচিত রা’স্তা’টার বিপরীতে গাড়ি যখনই টা’র্ণ নিলো আরাব।তখনই চমকে উঠল বহ্নি। এ পথ দিয়ে তো বাড়িতে যাওয়া যাবে না তাহলে আরাব এ পথে কেন গাড়ি ঘোরালো।বহ্নি আরাবের দিকে চেয়ে কিছু বলার আগেই ব্রে’ক করল আরাব।চারিদিকটা বেশ অ’ন্ধ’কা’র।লোকজন ও কম রা’স্তা’টা’তে।দূরে একটা ধাবা দেখা যা’চ্ছে।সেই আলোতে আশপাশ দেখে বোঝার চে’ষ্টা করছে বহ্নি। হঠাৎই আরাব ঝুঁ’কে এলো বহ্নি এর দিকে। সীট বেলটা খুলে দিল। তবে সিট বেল খুলে আর সরে আসেনি।বহ্নি এর দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল সে।বহ্নি ও তাকালো সেই দৃষ্টির দিকে। বহ্নি এখন একটা কথাই ভাবছে আরাব কেন এটতা স’ম্মো’হ’নী দৃ’ষ্টি’তে তাকায় বহ্নি এর দিকে।সে এই দৃ’ষ্টি দিয়েই ঘায়েল করে দেবে বহ্নিকে।নাকি শা’ন্ত করে দেবে বহ্নি এর উ’ত্ত’প্ত হৃদয়?

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে