পূর্ব-রোদ পর্ব-২৭+২৮

0
2178

Part 27+28
@পূর্ব-রোদ?
#পর্ব_২৭
#লেখিকা_আমিশা_নূর

সবার সাথে তিহান পরিচয় করিয়ে দিলো।তখন রাফিয়া’র ছোট ফুফি আর তিহানের মা রান্না ঘরে ছিলো।ওরা সবাই মিলে বারান্দা’র আড্ডায় মগ্ন হয়ে পরলো।

দুপুরে সবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে রাফিয়া’র ফুফি রোদকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“রোদ তুমি সিলেট কোথায় আছো?”
“পূর্বের সাথে বাড়িতে।”

রোদের সহজ-সরল উত্তরটা সবার মধ্যে অস্থিরতা বারিয়ে দিলো।তারা কেউ জানে মা পূর্ব-রোদ স্বামর স্ত্রী।তাই সবাই চোখ গোল গোল করে তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো।তিহান ফিসফিস করে রাফিয়াকে বললো,”ইন্না-লিল্লাহ!বাড়ির কেউ জানে না পূর্বের বিয়ের কথা।এখন কী হবে?”

তিহানের প্রশ্নের উত্তরে রাফিয়া ভয়ার্ত স্বরে বললো,”আল্লাহ মালুম!”

সবার দৃষ্টি,চেহেরা দেখে নাবিলা হেসে ফেললো।হঠাৎ হেসে উঠাই সবাই ওর দিকে তাকালো।তিহানকর বড় বোন তানঞ্জু বললো,”নাবিলা হাসসো কেনো?”
“হাহাহাহা!আপু তোমরা কেউ পূর্ব-রোদের ব্যাপারে কিছু জানো না?”
“কী জানবো?”

নাবিলা পূর্ব-রোদের তাকালো।নাবিলা পূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,”কি রে?তোরা বলবি নাকি আমি বলবো?”

নাবিলা’র কথায় পূর্ব সবার উদ্দেশ্য বললো,”রোদ আমার স্ত্রী।পালিয়ে বিয়ে করিনি আবার।বাড়ি থেকে দিয়েছে।”পূর্বের কথা শুনে রোদের মধ্যে ভালো লাগার হওয়া উড়াল দিলো।আজ প্রথম বার সবার সামনে পূর্ব তাকে নিজের স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে।এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?

পূর্বের কথায় সবাই বড়সড় শকট খেলো।কিন্তু পরক্ষণে তারা পরিবেশটা সামলে নিলো।তিহানের বাড়িতে তারা সবাই অনেক আনন্দে কাটিয়েছে।


তিহানের বাড়ি থেকে ফিরার পর নাবিলা,রাফিয়া,পূর্ব-রোদ রাতে বাসে করে ঢাকার পথে রওনা দিলো।তিহান দুদিন পর যাবে ঢাকা।বাসে পেছন দিকে পূর্ব-রোদ বসেছে সামনে রাফিয়া’র সাথে নাবিলা।নাবিলা চোখ বন্ধ করে হেলান দিছিলো।তখন তার মোবাইল বেজে উঠাই ঘুম ভেঙ্গে গেলো।মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নাম্বার।নাবিলা কল রিসিভ করে সালাম দিলো।কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসলো।নাবিলা অনেকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করলো কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো শব্দ আসলো না।বিরক্ত হয়ে নাবিলা কল কেটে দিলো।


মেঘ আর নিলয় ছাঁদে বসে গল্প করছিলো।একটু আগে নিলয় নাবিলা’র নাম্বারে কল করেছিলো।নিলয় ইচ্ছে করে কোনো কথা বলেনি।হঠাৎ করে নিলয়ের ইচ্ছে জাগলো নাবিলা’র কন্ঠস্বর শুনার।তাই কল করে।নিলয় এতো মেয়ের সাথে মেলামেশা করেছে কিন্তু কোনোদিন কোনো মেয়ের প্রতি অন্যরকম ফিলিংস আসেনি।নাবিলাকে দেখে মনে হয়েছিলো সে অন্য জগতে আছে।আর নাবিলা’র এটিটিউড দেখে আরো গলে যায়।নাবিলা’র সাথে আগে যখন কথা হয়েছিলো তখন নিলয়ের কোনো ফিলিংস আসেনি।তবে নাবিলা’র সাথে কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মিস করতো ভিষন।কিন্তু সময়ের সাথে সব পাল্টে যায়।নিলয় ইন্ডিয়া গিয়ে তার মায়ের চিকিৎসা করায়।তখন আরো একটি মেয়ের সাথে তার দেখা হয়েছিলো।যার ফলে নিলয় নাবিলাকে একে বারের জন্য ভূলে যায়।তারপর গতদিন হুট করে নাবিলাকে চিনতে পারে।এরপর থেকে নিলয় ঠিক করে রাখে নাবিলাকে সে মানিয়ে নিবে।

“ঐ নিলয়?কী ভাবিস?”মেঘের কন্ঠ শুনে নিলয় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“রোদের তো বিয়ে হয়ে গেলো।কী করবি এখন?”
“রোদ আমার সাথে অন্যায় করেছে।তার ফল তো ভোগ করবে।”
“মেঘ তুই পাগল হয়ে গেছিস?একটা মেয়ের ক্ষতি করবি?”

নিলয়ের কথা শুনে মেঘ অবাক হলো।শুধু অবাক না যথেষ্ট অবাক হলো।যে মেয়েদের খেলার পুতুল বানাই সে কি’না মেঘকে জ্ঞান দে?নিলয়ের উদ্দেশ্য মেঘ বললো,

“ভূতের মুখে রাম রাম।নিলয় তোর জ্বর হয়েছে?”
“যেটা সত্যি সেটা বললাম।”
“আর রোদ যে আমাকে ঠকালো?”
“কাম অন ইয়ার।এইটা তোর ভূল ধারণা।মেঘ তোর কিন্তু মেয়ের কম পরবে না।শুধু শুধু রোদের সংসার নষ্ট করিস না।”
“সংসার নষ্ট করবো না।শুধু একটু মাশলা দিবো।”
“মানে?”
“জাস্ট চিল ব্রো।”


ঢাকায় আসার পনেরো দিন হয়ে গেছে।পূর্ব-রোদের সম্পর্ক আগের মতো।খুনসুটি প্রেমের তাদের সংসার বেশ চলছে।এর মধ্যে নাবিলা দু’দিন থেকে সিলেট চলে যায়।পূর্ব-রোদের স্বাভাবিক ব্যাবহার দেখে বাড়ির সবাই যথেষ্ট খুশি হয়।চাঁদনি মোহাম্মদ পূর্বের সাথে ঠিক মতো কথা বলতে পারেননি।তাই আজ পূর্বকে নিজের রুমে ডেকেছে।চাঁদনি মোহাম্মদ পূর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।তখনি দরজায় টুকা পড়ায় তিনি চোখ তুলে তাকালেন।পূর্বকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি কাছে ডাকলেন।
তারপর শান্ত স্বরে বললেন,

“কি সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?রোদের সাথে সব তো ঠিক দেখলাম।”
“আমি কানাডা যাচ্ছি।”
“তাহলে ডিভোর্স?”
“ডিভোর্স হবে না আমাদের।”
“তুই কানাডা চলে গেলে রোদের কী হবে?”
“আমি তো একেবারের জন্য যাচ্ছি না।আর তোমার শর্ত ছিলো শুধুমাত্র রোদের সাথে ভালো ব্যাবহার করা।ডিভোর্স কথাটা ওখানে উল্লেখ ছিলো না।”
“তারমানে রোদকে সবকিছু বলেছিস?”
“নাহ।বলে দিবো।তুমি পাসপোর্ট র‍্যাডি করে রেখো আর সাথে টাকাও।”

কথা এটুকু শেষ করে পূর্ব রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।তখন চাঁদনি মোহাম্মদ পেছন থেকে বললো,
“তুই কানাডা যেতে চাইছিলি বিএসসি করার জন্য সাথে বিশ লাখ টাকা।আর তোকে কানাডা পাঠানোর জন্য আমার শর্ত ছিলো রোদের সাথে ভালো ব্যাবহার করবি।তোর স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম ছিলো রোদ।আর এখন নিজে মন থেকে কানাডা যেতে চাইছিস না।কারণটা কী রোদ?”

তার মায়ের কথায় পূর্ব থমকে গেলো।ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিলো সে কানাডা যাবে।ওখান-কার পরিস্থিতি’র সাথে চলাফেরা করবে।আর এখন যখন সময় এলো যাওয়ার তখন তার মন সায় দিচ্ছে না।পূর্ব বিড়বিড় করে বললো,”কারণটা রোদের পাগলামো ভালোবাসা!”

পূর্বের কথা চাঁদনি মোহাম্মদের কর্ণ অবধি আসলো না।তবে তিনি সন্তুষ্ট কারণ তার দুই সন্তান এখন ভালো আছে।


নাবিলা অনেকক্ষণ ধরে একটা কলের অপেক্ষা করছে।সে জানে না ওপাশ থেকে প্রতিদিন কে কল করে?কিন্তু এটুকু বুঝে মানুষটা নাবিলা’র কন্ঠস্বর শুনার জন্য কল করে।গতদিনগুলার প্রতি সকাল-রাত দু’বার কল করে।বলতে গেলে নাবিলা’র একরকম অভ্যাস হয়ে গেছে সেই কলের প্রতি।তাই আজ সকালে যখন কল এলো না নাবিলা’র অস্থির লাগছে।রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।নিচ থেকে নিনা হাসান সকালের নাস্তা করার জন্য ডেকেই যাচ্ছে।নাবিলা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে যতক্ষণ না পর্যন্ত ঐ কল আসবে ততক্ষণ সে খাবে না।এমন পাগলামো করার কোনো কারণ খোজে পেলো না নাবিলা।তবুও পাগলামো করতে মন চাইলো।প্রায় আধঘন্টা পর নাবিলা’র ফোন বেজে উঠলো।নাবিলা খুব দ্রুত তার মোবাইলের উপর ঝাঁপিয়ে পরলো।রিসিভ করা মাত্র নাবিলা বলে উঠলো,

“কতক্ষণ ধরে আমি কলের অপেক্ষা করছি।এতক্ষণ লাগে কল করতে?প্রতিদিন তো ঠিকই সকালে কল করো।আজ কি হলো?কিছু বলছো না কেনো?”

নাবিলা নিজের ইচ্ছে মতো বলে যাচ্ছে।তখন তার মোবাইলে মেসেজ আসলো।নাবিলা মেসেজ বক্স চেক করে দেখলো ঐ নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে,”আরে কুল কুল!কী ম্যাম আমাকে মিস করছিলেন নাকি?”

মেসেজটা দেখে নাবিলা’র কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো।সত্যিই তো!নাবিলা কী তাকে মিস করছিলো?মেসেজটার আন্সার না দিয়ে নাবিলা ফোন অফ করে রাখলো।এমনটা কেনো করেছে সে জানে না।


পাখির কিচিরমিচির শব্দে রোদের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।পিটপিট করে চোখের পাতা খুলে দেখলো পূর্ব এখনো ঘুমিয়ে আছে।রোদ কিছুক্ষণ তার স্বামীর দিকে পকল না ফেলে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ রোদের মাথায় আসলো অনেক দিন পূর্বের সাথে ঝগড়া হয় না।রোদ বিছানা থেকে আস্তে আস্তে নেমে নিজের মেকাপবক্স নিয়ে আসলো।পূর্বের মুখটা খুব সুন্দর করে মেকাপ করলো।নাকের ঢগায় লিপস্টিক দিয়ে লাল করে ফেললো।চোখের পাশে কালো দাগ দিলো।পূর্ব মূলত ভূতের মতো করে সাজিয়েছে।মেকাপ করা শেষ হলে রোদ ফিক করে হেসে দিলো।রোদ এতোটা উচ্চস্বরে হাসলো যে পূর্বের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।হাই তুলে হাত পা নেড়ে বিছানায় বসলো।পূর্বের ঘুম ভাঙ্গছে দেখে রোদ তাড়াতাড়ি মেকাপবক্স ছাদর দিয়ে ঢেকে দিলো।রোদকে দেখে পূর্ব জিজ্ঞেস করলো,

“হাসছিলে কেনো?”
“এমনি।”
“এমনি এমনি কেউ হাসে?”
“আমি হাসি।”
“হু, তুমি তো পাবনা’র মেন্টাল হসপিটাল থেকে পালিয়ে আসা পেশেন্ট।”
“কী বললে তুমি?আমাকে পাগল বললে?আমি পাগল?”
“পাগল বলিনি মেন্টাল বললাম।”
“হরিচন্দওওওন।”

রোদ রেগে গিয়ে পাশ থেকে বালিশ নিয়ে মারতে লাগলো।হুট করে পূর্ব তার হাত নিজের কাছে নিয়ে আসলো।এভাবে কাছে আনায় রোদ কেঁপে উঠলো।মুহুর্তে নিজেকে সামাল দিয়ে দূরে আসতে চাইলে পূর্ব তার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।রোদ ভয়ে ভয়ে আছে না জানে কী করে?পূর্ব তার কপালে চুমু দিতে চাইলে রোদ পূর্বের ঠোঁটে হাত দিলো।পূর্ব ভ্রু-কুচকে রোদের দিকে তাকালো।রোদ হাবলার মতো হেসে বললো,

“চুপচাপ নিচে আসো।তোমার মুখ থেকে গন্ধ।ওয়াক!”রোদের মুখের রিয়েকশন দেখে পূর্ব হেসে দিলো।রোদ বিড়বিড় করে বললো,” উফ!চুমু দিলে এখনি কপালে লিপস্টিক লেগে যেতো!তখন সব বুঝে যেতো হরিচন্দন!”

রোদ বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে বললো,”একটু নিচে আসো।ফ্রেশ হতে হবে না।”

পূর্বের উত্তর শুনার আগে রোদ চলে গেলো।কোনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মনে করে একটু পর পূর্ব নিচে গেলো।পূর্ব নিচে গিয়ে প্রথমে তার মাকে দেখলো।তার মা তার দিকে ফিরে তাকাতেই তিনি হেসে দিলেন।হাসির শব্দ শুনে পূর্বের বাবা পেছন ফিরে তিনিও হাসতে লাগলেন।তারা কেনো হাসছে পূর্ব কিছুই বুঝছে না।কিঞ্চিৎ রেগে পূর্ব বললো,”আমাকে দেখে তোমাদের জোকার মনে হয়?”

পূর্বের কথা শুনে তাদের হাসির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।হাসতে হাসতে পূর্বের মা বললেন,”তোকে জোকারের চেয়েও বাজে লাগছে।কাঁদা ভূত..হাহাহাহা।”

তার মায়ের কথা শুনে পূর্ব সত্যি সত্যি বোকা হয়ে গেলো।তখন পূর্বের সামনে কেউ একজন আয়না ধরলো।আয়নায় নিজের চেহেরা দেখে পূর্ব নিজেই ভ্যাচকা খেলো।খুব বাজে লাগছে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি’টা।তার সামনে থেকে আয়না সরে যেতে দেখলো রোদের চেহারা।পূর্বের বুঝতে বাকি রইলো না আর এইটা কার কাজ।অমনি রোদের পেছনে তাড়া করলো।দু’জনে পুরা বাড়িতে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো।


“কেমন আছো?”
“নিলয়,তোমার কী নূন্যতম লজ্জাটাও নেই?”
“কেনো?লজ্জা থাকতে হবে কেনো?”
“তোমাকে আমি কতোটা ইগনোর করছি তুমি বুঝতে পারছো না?”
“তুমি আমার উপর রেগে আছো তাই এমনটা করছো।আর গার্লফ্রেন্ড রাগ করলে বয় ফ্রেন্ড রাগ ভাঙ্গাবে এটাই স্বাভাবিক।”
“স্টপ সে ননসেন্স।তোমার সাথে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে এন্ড ব্রেকআপ না হলেও কী?আমার পেছনে কেনো পরে আছো?তোমার মেয়ের কম পরেছে?”
“সব মেয়ে তো আর তুমি হলে না জানেমন।ইউ আর ডেঞ্জারাস!”
“কী চাও তুমি?তোমার সাথে রাত কাটাবো আমি?”
“এবার মেইন টপিকে আসলা।”
“হুয়াট ডু ইউ মিন?”
“আমার সাথে একরাত কাটাতে হবে তোমাকে।”

মেসেজটা পড়ে নাবিলা’র মুখটা কিছুক্ষণ হা করে রইলো।এতোদিন নাবিলা ভাবতো হয়তো নিলয় তাকে একটু হলেও ভালোবাসে।কিন্তু নিলয় তার সাথে ওয়ান নাইট স্পেন্ড করার জন্য এতোদিন মেসেঞ্জারে ডিসটার্ব করতো?নাবিলা নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,”নিলয়ের মতো ছেলের কাছে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা মুশকিল।”নাবিলা নিজেকে যথেষ্ট কঠিন রেখে রিপ্লে দিলো,”ক’টা থেকে ক’টা থাকতে হবে?”
“ও এম জি!তুমি আসবে?”
“হুম।টাইম বলো?”
“সন্ধ্যা ছ’টা থেকে ভোর পাঁচটা।”
“কয় তারিখ যেতে হবে?”
“পরশু!”
“ওকে।”

নাবিলা এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে অফলাইন হয়ে এলো।এখন তার ভিষণ কান্না পাচ্ছে।নিলয়ের কাছে দ্বিতীয় বারের মতো ঠকলো!কষ্ট’টা যেনো বুকের ভিতর নিজের স্থায়ী বাসা তৈরি করছে।দিন দিন কষ্ট বেড়েই যাচ্ছে।


নিলয়ের বুকের ভিতরটা খা খা করছে।তার মনে হচ্ছে নাবিলা কান্না করছে।আর অদ্ভুত ভাবে নাবিলা’র কান্নার কারণ সে নিজে।কিন্তু তার নিজের হাতেও যে কিছুই নেই।কেউ একজন যেনো তার হাত-পা শিকলে আবদ্ধ করে রেখেছে।হঠাৎ নিলয়ের মনে পড়লো সে তো নাবিলা’র কান্না শুনতে পারে অজানা নাম্বার হয়ে।নিলয় তাড়াতাড়ি নাবিলা’র নাম্বারে কল করলো।ওপাশে রিসিভ হলো ঠিকই কিন্তু কান্নার আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনা গেলো না।নিলয়ের চোখজোড়া লাল হয়ে এলো।কান্নাটা যেনো গলা বরাবর এসে ধাক্কাধাক্কি করছে।এতো কষ্ট কেনো হয় মানব-জাতির?

#পর্ব_২৮
#লেখিকা_আমিশা_নূর

হঠাৎ নিলয়ের মনে পড়লো সে তো নাবিলা’র কান্না শুনতে পারে অজানা নাম্বার হয়ে।নিলয় তাড়াতাড়ি নাবিলা’র নাম্বারে কল করলো।ওপাশে রিসিভ হলো ঠিকই কিন্তু কান্নার আওয়াজ ছাড়া কিছুই শুনা গেলো না।নিলয়ের চোখজোড়া লাল হয়ে এলো।কান্নাটা যেনো গলা বরাবর এসে ধাক্কাধাক্কি করছে।এতো কষ্ট কেনো হয় মানব-জাতির?


রোদের চোখ লেগে আসবে তখনি ফোনটা বেজে উঠলো।চোখ পিটপিট করে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো মেঘের কল।এতো রাতে মেঘের কল দেখে রোদ হতবাক হলো।কেনো কল করেছে তা ভেবে রোদ রিসিভ করলো।

“হ্যালো,রোদ কেমন আছো?”
“ভালো।তুমি এতো রাতে?”
“কেনো জানি না আজ হঠাৎ তোমাকে বেশি মনে পড়ছিলো।তাই কল করলাম।সরি!”

মেঘের কথা রোদ বিরক্ত হলো।ভদ্রতার খাতিরে উত্তর দিলো,”না না ইট’স ওকে।”
“পূর্ব কোথায়?”

মেঘের কথায় রোদ পাশে তাকিয়ে দেখলো পূর্ব চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে।হাসিমুখে রোদ উত্তর দিলো,”ঘুমাচ্ছে।”
“ওহ।”
“গুড নাইট মেঘ।”
“রোদ শুনো..”

বিদায় জানিয়ে রোদ কান থেকে মোবাইল নামিয়ে রাখছিলো।মেঘের কথায় সে আবার কানে মোবাইল লাগালো।অসস্তি স্বরে বললো,

“বলো,”
“পূর্বের সাথে সব ঠিক আছে তো?”
“মানে?”

“মানে” শব্দটা একটু জোরে উচ্চারণ করায় পূর্ব নড়ে উঠলো।পূর্বের ঘুম ভাঙবে ভেবে রোদ সাবধানে পা ফেলে বারান্দায় গেলো।ওপাশ থেকে মেঘের কন্ঠস্বর শুনা গেলো,

“মানে পূর্ব তোমার সাথে ভালো ব্যাবহার করছে তো?”
“মেঘ,তোমাকে শুরু থেকে আমি বন্ধু ভাবতাম শুধু।আর কিছুই না।পূর্বের সাথে আ’ম টোটালি হ্যাপি।আমি আরো হ্যাপি থাকবো যদি তুমি আমার সংসারে নাক না ঢোকাও।”

রোদের শেষ কথাটা শুনে মেঘের অনুভূতি সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো।মেঘের মনটা যে বড্ড অবুঝ হয়ে গেছে।মেঘ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,

“রোদ,আমি জানি আমি তোমাকে ডিসটার্ব করছি।জানো তো সবচেয়ে কষ্ট কখন হয়?নিজের ভালোবাসা’র মানুষকে না পেলেও অতোটা কষ্ট হয় না যতটা নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য’জনকে দেখলে হয়।”
“আমি হ্যাপি আছি কি’না তা কেনো জিজ্ঞেস করো?”
“জানিনা।শুধু মনে হয় তোমার জন্য আমি পারফেক্ট!তুমি শুধু আমার কাছেই খুশি থাকবে।”
“মেঘ,এইটা তোমার ভূল ধারণা।আমি পূর্বের সাথে যথেষ্ট হ্যাপি আছি।”

রোদের কথা শুনে ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ এলো না।রোদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আবারো বললো,”তোমার যদি ডাউট হয় আমি ভালো নেই তাহলে তুমি নিজে এসে দেখে নিতে পারো।”
“মানে?”
“মানে সামনে যে কোনো একদিন আমি তোমাকে ইনফর্ম করলে তুমি ঢাকা এসে দেখে নিবে আমি কতোটা হ্যাপি।তখন হয়তো নিজেকে শুধরে নিতে পারবে।মরীচিকা’র মতো আর আমার পেছনে ছুটবে না।”

রোদের কথায় মেঘ কিছু বললো না।রোদ আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।রোদ আবারো ঘুমাতে যাবে তখন পূর্বের কন্ঠস্বর কানে আসলো,”কার সাথে কথা বললে এতো রাতে?”

পূর্বের কথায় রোদ ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।এখন যদি মেঘের সাথে কথা বলছি বলে তাহলে মাঝরাতে কোলাহল করবে।তার চেয়ে বরং না বলায় ভালো ভেবে রোদ বললো,

“আলো’র নাকি পেট ব্যাথা করছিলো তাই কল করে কান্নাকাটি করছিলো।আমি ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে বললাম।”
“ওহহ।ঘুমাও এখন।”

পূর্বের শেষ কথায় রোদ হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।আল্লাহ’র নাম নিতে নিতে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।


“আম্মি,ও আম্মি বলো না ৬ তারিখ কী?”
“তোর মনে নেই রোদ?”
“মনে থাকলে তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম?”
“৬ তারিখ তোদের বিয়ের ডেইট।”
“কীহ?”

চাঁদনি মোহাম্মদের কথা শুনে রোদ মুখটা হা হয়ে গেলো।নিজের বিয়ের তারিখ নিজেরেই মনে নেই।চাঁদনি মোহাম্মদ যখন তার স্বামীর সাথে ৬তারিখ নিয়ে কথা বলছিলো রোদ সবটা শুনে নে।কিন্তু ৬তারিখ যে তার বিয়ে হয়েছিলো মনেই নেই।এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতি’তে রোদ কোনোদিন পরেনি।পরক্ষণে মনে এলো সেই ছোট বেলায় বিয়ে হয়েছিলো এখন কীভাবে মনে থাকবে?রোদ ভাব নিয়ে বললো,

“পিচ্চিকালে বিয়ে দিছিলে তোমরা।মনে থাকবে কেনো?”
“হয়েছে।”

রোদের মনে হঠাৎ প্রশ্ন জাগলো পূর্বের কী মনে আছে?আবার ভাবলো পূর্বেরও ছোট বেলায় বিয়ে হয়েছে নিশ্চয় তার ও মনে নেই।রোদ আবুল-তাবোল ভাবতে ভাবতে রুমে প্রবেশ করে।পূর্ব এখন বাড়িতে নেই।কোথাও বেরিয়েছে হয়তো।রোদ বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো ৬তারিখ হলো পরশু।তাহলে সেদিন কী স্পেশাল কিছু করা যায় না?রোদ অনেকক্ষণ ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো আগামী কাল সে কিছু একটা করবে।তাড়াতাড়ি সে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে চাঁদনি মোহাম্মদ’কে বললো,

“আম্মি,পরশু কী কিছু করছো?”
“হ্যা।ছায়া,আলো,রাফিয়া তিহান আর নাবিলা ওরা সবাই আসবে।”
“মানে আমরা কয়েকজন থাকবো?পার্টি হবে নাকি?”
“পার্টি টাটি না।এমনি সবাই আসবে।”
“ওহহ।আচ্ছা আম্মি তাহলে আমি আমার একফ্রেন্ড’কে ইনভাইট করি?”
“তোর আবার বন্ধু কখন হলো?”
“আরে আছে।”
“ঠিক আছে।আসতে বল।”

রোদ এলোমেলো হেটে নিজের রুমে চলে এখন।রোদের এখন অনেক কাজ।


পূর্ব পা নাড়িয়ে সামনে হাটছে।আজ বাইরে বের হয় কোনো কারণ ছাড়া।হঠাৎ তার রোদের মায়ের কথা মনে পড়ায় তার কাছে যায়।ওবাড়িতে গিয়ে পূর্ব যখন আলো’র থেকে শরীরের অবস্থা জিজ্ঞেস করে তখন আলো বলে সে একদম ঠিক আছে।এমনকি রাতে কোনো কল করেনি।

তাহলে রোদ কী তাকে মিথ্যা বললো?কিন্তু রোদের মিথ্যা বলার কারণ কী?কার সাথেই বা ও কথা বলছিলো?হাঁটতে হাঁটতে পূর্ব নিজের বাড়িতে প্রবেশ করে।তখন বাড়ি’র পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিলো।কিন্তু অস্বাভাবিক ছিলো পূর্ব।পূর্ব মনে মনে ঠিক করলো সে সোজা রোদ থেকে জিজ্ঞেস করবে কাল রাতে কার সাথে কথা বলছিলো।সেই ভাবা সেই অনুযায়ী পূর্ব রোদকে খুজতে লাগলো।তখনি তার সামনে এসে রোদ হাসিমুখে হাজির হলো।রোদের এমন চেহেরা দেখে পূর্ব সবকিছু ভূলে গেলো।রোদ’কে আর কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

সময় এখন চার’টা।আসরের আজান দেওয়া হয়ে গেছে।আছরের পরের সময় সবটা রোদের কাছে যথেষ্ট মূল্যবান।খুব ভালো-ভাবে অনুভব করে সময়টা।তখন পরিবেশটা থাকে থমথমে,নিরব!রোদ নামাজ আদায় করে ফোনটা হাতে নিলো।মেঘ’কে কল করে জানাতে হবে পরশু এখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য।

ঐদিন আসলে ভালোমতো দেখবে পূর্ব-রোদের সংসার।রোদ মোবাইল থেকে মেঘের নাম্বারে ডায়াল করলো।দু’বার রিং হতে ওপাশে রিসিভ হলো।রোদ মোবাইলটা কানে লাগিয়ে বললো,

“হ্যালো,মেঘ?”
“হুম।কী অবস্থা?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোমাকে একটা কথা জানাতে কল করলাম।”
“কী কথা?”
“তুমি যদি ফ্রি থাকো তাহলে পরশু ঢাকায় আসতে পারো।”
“পরশু?”
“হুম।তুমি এসে দেখে নিও আমি হ্যাপি কি’না।”
“ওকে।ট্রাই করবো।”
“হুম।”

রোদ কল কেটে দিয়ে ফোনটা বিছানায় রাখলো তখনি পেছন থেকে পূর্ব বলে উঠলো,”কার সাথে কথা বলছিলে?”

পূর্বের থমথমে কন্ঠ শুনে রোদ গত রাতের মতো চমকে গেলো।পূর্বের কথা শুনে রোদ ভাবতে লাগলো কী বলবে এখন?মেঘ যদি আসে তাহলে তো ঠিকই দেখবে আর এখন যদি বলে দে তাহলেও রাগারাগি করবে।রোদের নিজের সাথে যুদ্ধ শুরু করলো।এক মন বলছে সবটা বলে দিই অন্য মন বলছে না থাক,মেঘ আসলে বলবো।রোদের নক কামড়াতে লাগলো।পূর্ব রোদের কোনো সাড়া না পেয়ে নিজে বললো,”কল কী মেঘ করেছিলো?”

এবার রোদ আগের তুলনায় বেশি চমকালো।পূর্ব কী করে জানলো সে মেঘের সাথে কথা বলছিলো?তাহলে কী সব শুনে ফেলেছে?রোদ আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাবে তখন পূর্ব বললো,”তুমি কাল রাতেও মেঘের সাথে কথা বলেছো।অথচ আমাকে বললে আলোর সাথে কথা বললে।এখন আবার মেঘের সাথে কথা বলছো।কী এতো কথা জমে আছে ওর সাথে?আর লুকিয়ে লুকিয়ে কেনো কথা বলছো?সমস্যা কী তোমার?”

পূর্ব কথায় রোদের আশ্চর্য আকাশ ছোঁয়ালো।পূর্ব সবটা কে বললো?আর পূর্ব কী মিন করছে?রোদ কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,

“পূর্ব তুমি ভূল ভাবছো।মেঘ কল ক…”
“এখন আমি সবকিছু জানার পর কেনো সত্যি’টা বলছো?আগে বলতে পারোনি?আর মেঘের কিসের এতো ফষ্টিনষ্টি?”
“পূর্ব তুমি সিম্পল একটা…..”
“হুয়াট সিম্পল?আমার স্ত্রী মাঝরাত পর পুরুষের সাথে কথা বলছে তাও চুপিচুপি।এইটা তোমার কাছে সিম্পল?”
“পূর্ব….”
“শাট আপ।একটা কথাও বলবে না তুমি।যা বুঝার আমি বুঝে গেছি।”

নিজের মতে করে বকবক করে পূর্ব রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রোদ শুধু ছলছল দৃষ্টিতে পূর্বের যাওয়ার পনে তাকিয়ে রইলো।পূর্ব তাকে সন্দেহ করছে।নূন্যতম বিশ্বাস টুকুও কী পূর্বের নেই?এ কেমন জন’কে ভালোবেসে ফেলেছে রোদ?


সন্ধ্যা ছয়’টা তেত্রিশ মিনিট।নাবিলা নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলো নিলয়ের সাথে এক রাত কাটানে উদ্দেশ্য।তার গন্তব্য স্থান নিলয়ের বাড়ি।পরণে তার সোনালি কালারের টপস সাথে এ্যাস কালারের জিন্স পেন্ট।নাবিলা একদম নরমাল ভাবে যাচ্ছে।মুখে একদম সাজেঁর চিহ্ন পর্যন্ত নেই।বাড়িতে মা’কে বলে এসেছে বান্ধবী’র বাসায় যাচ্ছে।আর রাতে ওখানেই থাকবে।প্রথমে তিনি না মানলেও পরে নাবিলা’র জোরাজোরি’তে রাজি হয়ে যায়।

টানা আধ ঘন্টা বাইক চালানোর পর নাবিলা আহমেদ মঞ্জিলে পৌছালো।বাড়িটা বেশি বড় না হলেও অতো ছোটও না।নাবিলা চাপা স্বরে নিজে পা সে বাড়ির মাটিতে রাখলো।সামনে যত এগোচ্ছে নিজের মধ্যে অস্থিরতা ততটাই বাড়ছে।নাবিলা যতটা সম্ভব নিজেকে কঠিন রাখছে।নাবিলা অনেকটা ডাবের মতো।বাইর থেকে যেমন শক্ত ভিতরে ঠিক তেমনি সরল।

নাবিলা সেই একতলা বাড়ি’টার সদর দরজার সামনে দাঁড়ালো।দরজার বাম পাশে কলিং বেল দেখা যাচ্ছে।নাবিলা কলিং বেল চাপতে গিয়ে থেমে গেলো।কারণ সদর দরজা খুলা দেখা যাচ্ছে।নাবিলা আলতো করে ঠেলে ভিতরটা দেখলো।নাবিলা’র প্রথমে চোখ পরলো সামনে থাকা নিলয়ের ছবিটার উপর।তারমানে সে ঠিক জায়গায় এসেছে।এভাবে বিড়ালের মতে লুকিয়ে লুকিয়ে না দেখে নাবিলা খুব জোরে দরজা ধাক্কা দিলো।দরজা আগে থেকে হালকা খুলা ছিলো বিধায় এখন পুরাটা খুলে গেলো।

নাবিলা দেখলো বাড়িটা বাইর থেকে দেখতে মাঝারি হলেও ভিতরে বেশ বড়সড়।নাবিলা বা’পাশে তাকিয়ে দেখলো ওয়াইনের বোতল রাখার জন্য তিন-চারটা তাক।কিন্তু নাবিলা’র জানা মতে তো নিলয় ড্রিংক করে না।তাহলে এগুলা?নাবিলা ভিতরে থাকা সরল মনের মানুষটি তার মস্তিষ্কে জানান দিলো নাবিলা জানে না এমন আরো অনেক কাজ নিলয় করে।আর নিলয়ের মতো ছেলে ওয়াইন খাবে এইটা স্বাভাবিক।নাবিলা হঠাৎ জোর বলে উঠলো,”মি.নিলয়,তোমার ওয়ান নাইট পার্টনার এসে…”
“ওহ।এতোক্ষণ তোমার অপেক্ষা’তে ছিলাম।”

নিলয়ের কন্ঠ অনুসরণ করে নাবিলা পেছনে তাকালো।ওদিকে থাকা একটি রুম থেকে নিলয় বের হচ্ছে।নাবিলা ভ্রু-কুচকে দু’হাত ভাজ করে নিলো।তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বললো,
“এতো অপেক্ষা করার কী ছিলো?অন্য কোনো মেয়েকে ডেকে নিলেই পারতে।”
“উফ!তোমার এই ট্যারা কথায় না আমি ফেঁসে গেছি পাখি।চারপাশে শুধু এখন নাবিলাকেই দেখি।”
“জোক্স!”

নিলয় নাবিলা’র কাছাকাছি এসে তার চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বললো,”এখন সময় সাত’টা বারো মিনিট।তুমি পাক্কা এক ঘন্টা লেইট করেছো।তাই যেতে দিবো ওদিকে প্লাস করে।”
“আই ডোন্ট কেয়ার!নাবিলা কারো কথায় নিজেকে চালায় না।”
“তাহলে তুমি এখানে নিজের ইচ্ছায় এসেছো?”
“ইয়েস।এক রাত কাটালে তোমার থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি তো পেয়ে যাবো।”

কথাটা নিলয়ের বুকে নির্ধারিত তীরের মতো ভেদ করলো।নাবিলা’র কাছে সত্যিই সে অতোটা বিরক্ত যে মুক্ত হওয়ার জন্য কতোকিছু করছে।হ্যা!নিলয় তাকে সত্যি চিরদিনের মতো মুক্ত করে দিবে।নিলয় বাঁকা হাসলো।সে হাসিতে লুকিয়ে পরলো জমে থাকা কষ্টের পাহাড়’টা।

[চলবে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে