পূর্ণিমা_সন্ধ্যায় পর্ব_২৩

0
849

পূর্ণিমা_সন্ধ্যায়
পর্ব_২৩
Tasneem Tushar

তিয়াশা চিৎকার করে বলছে,

“হ্যালো…! ইস এনি বডি হেয়ার…? সাম ওয়ান হেল্প মি প্লিজ…।”

*

কিছুক্ষন আগের ঘটনা…

সূর্য ডুবি ডুবি করছে। হিম বাতাসে গায়ে যেন কাঁটা দিচ্ছে। তিয়াশা চোখ কচলাতে কচলাতে নিজেকে আবিষ্কার করে নির্জন বেলাভূমিতে। মাথাটা ভীষণ ঝিম ঝিম করছে তার। স্বপ্ন দেখছে নাতো সে। ভালোভাবে চোখ কচলে তাকিয়ে দেখে, যতদূর চোখ যায় সামনে শুধু অথৈ নীল সমুদ্র, সেই সাথে সমুদ্রের গগন বিদারি গর্জন।

হকচকিয়ে উঠে বসে তিয়াশা। চারপাশে তাকিয়ে দেখে কোনো মানুষ নেই। মাথার উপরে সি বীচের ছাতা দেখে খেয়াল হয় সে বসে আছে বিচবেডে। তিয়াশা এবার লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়, দেখে পরণে তার নীল জর্জেটের শাড়ি। আরও বেশি অবাক হয় সে। নাহ সে হয়তো আসলেই স্বপ্ন দেখছে। তিয়াশা দ্রুত বিচবেডে যেয়ে চোখ বন্ধ করে চুপটি করে শুয়ে পড়ে। প্রত্যাশা এটাই যা দেখছে তা শুধু স্বপ্ন। ঘুমোলে সব ঠিক হয়ে যাবে এবং সকালে চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করবে তার চিরচেনা ছিমছাম ঘরে।

বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখার পর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় তিয়াশা। নাহ এবার সত্যি ভয় লাগছে তার। সূর্যটা ডুবে গেছে। চারপাশে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার এবং সেই সাথে সমুদ্রের জোড়ালো গর্জন। কান্না পাচ্ছে তার। এখানে কিভাবে এলো সে? কোথাও কেউ নেই কেন? তার পরণেই বা শাড়ি কেমন করে এলো?
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



হঠাৎ মনে পড়ে সে আজ সকালে কাজে গিয়েছিল সে। সাথে সাথেই মনে পরে তার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করা উচিত বাসায়। কাঁপা হাতে সে বিচবেডে হাতিয়ে নিজের ফোন খোঁজার চেষ্টা করে। হায় আল্লাহ নিজের পার্স ব্যাগ, ফোন কিছুই তো নেই এখানে।

এলোপাতাড়ি হাটতে শুরু করে তিয়াশা। জোরে চিৎকার করে বলে,

“হ্যালো! ইস এনিবডি হেয়ার? সাম ওয়ান হেল্প মি প্লিজ।”

নিজের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়ে নিজের কানেই বাজছে। চোখ ছলছল করছে তার আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে সাহায্য চেয়ে।

হঠাৎ চোখে পরে সমুদ্রের পার ঘেঁষে একটু পর পর নিয়ন বাতিতে জ্বলছে তিরচিহ্নে আঁকা দিক নির্দেশনা। তিয়াশা আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে সেই তিরচিহ্ন দেখে হাঁটা শুরু করে। মনে তার আশার আলো দেখা দিয়েছে। এই পথ ধরে গেলেই হয়তো সে আশেপাশের লোকালয়ে পৌঁছতে পারবে এবং সেখান থেকেই সাহায্য নিতে পারবে।

হাটতে হাটতে মনে পড়লো তিয়াশার আদিলের সাথে দেখা হয়েছিল কাজ শেষে এবং আদিল তাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় গাড়িতে করে।

*

কয়েক ঘন্টা আগের স্মৃতি রোমন্থন করছে তিয়াশা।

ম্যাকডোনাল্ডের পাশে পার্ক থেকে তিয়াশার হাত শক্ত করে ধরে টেনে এনে আদিলের গাড়িতে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসায় তিয়াশাকে। তিয়াশা লক্ষী মেয়ের মতো গাড়িতে বসলে, আদিল তিয়াশার সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে নিজের সিটে বসতে বসতে গুনগুন করে গান ধরে,

“তোরে পুতুলের মত করে সাজিয়ে
হৃদয়ের কোঠরে রাখবো।

আর হৃদয়ের চোখ মেলে তাঁকিয়ে
সারাটি জীবন ভরে দেখবো।

আমি নেই নেই নেই রে
আমি নেই নেই নেই রে
যেন তোরই মাঝে হারিয়ে গেছি।”

তিয়াশা বলে উঠে,

“আপনার কণ্ঠ মধুময়। খুব সুন্দর গান করেন আপনি।”

আদিল ও মুচকি হেসে বলে,

“হুম পুতুলরানী আমার কন্ঠে মধু ঢেলে দিয়েছে।”

“জ্বি, বুঝলাম না।”

“এত বুঝতে হবেনা। শুধু আমার সাথে চলো।”

“আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায়?”

আদিলের ঠোঁটে রহস্যের হাসি। আদিলের ঠোঁটের এই মারাত্মক হাসি ইদানিং কেমন যেন অনুভূতির সৃষ্টি করে তিয়াশার মনে। কিছুক্ষন আদিলের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকলে, আদিল তিয়াশার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কোথায় হারিয়ে গেলেন?”

“আপনা…তে। মা… মানে… ভাবনাতে।”

“তাই?”

“হুম”

আদিল মুচকি হাসে। তিয়াশা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে একবার আড় চোখে দেখে নেয় আদিলকে। আদিল ড্রাইভিং সিটের পাশে গ্লাস হোল্ডার থেকে পানির বোতল তিয়াশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“অনেক রোদ আজ। পানি পান করবেন?”

“হুম।”

“আপনি পারবেন? না আমি খাইয়ে দিব?”

তিয়াশা স্মিত হাসি দিয়ে বলে,

“হুম পারবো।”

আদিলের গাড়ি ৮০ মাইল বেগে হাইওয়েতে ছুটছে। গাড়িতে বাজছে সুন্দর মেলডির গান। কোথায় যাচ্ছে ঠিকানা জানেনা তিয়াশা তবু মনে ভয় কাজ করছেনা তিয়াশার। বেশ খানিকটা পথ আদিল তিয়াশার সাথে গল্প করে। ঠিক কতক্ষন গল্প করেছে মনে নেই। একটু পরেই তার দু’চোখ জুড়ে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। এরপর আর কিছুই মনে নেই তিয়াশার।

*

তিয়াশার মনে পড়ে পানি খাওয়ার পর থেকেই তার মাথা কেমন ঝিমঝিম করছিল। যাকে এত ভরসা করলো সে তাকে এভাবে ফেলে গেল তিয়াশাকে? নাহ কিছু একটা রহস্য রয়েছে। তবে তার আগে তিয়াশার লোকালয়ে পৌঁছতে হবে আরও কোনো বিপদ ঘটবার আগে।

জুতো পরে বালিতে হাটতে খুব সমস্যা হচ্ছে তার।পা থেকে জুতো খুলে হাতে নিয়ে অন্ধকারে এই নিয়ন আলোকে ভরসা করেই হেঁটে যাচ্ছে তিয়াশা।

তিয়াশা লোকালয়ে পৌঁছতে পারবে তো? নাকি আরো বড় কোনো বিপদ ওঁৎ পেতে আছে নির্জন রাতের অন্ধকারে?

চলবে…

আগের পর্বের লিংক:

পর্ব ২২: https://www.facebook.com/107665540875368/posts/137791711196084/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে