পিশাচ পুরুষ পর্ব-০৯

0
862

#পিশাচ_পুরুষ
৯ম পর্ব

পিশাচ পূজারী গোষ্ঠীর প্রধান আমনের মনে তখন জন্ম নিয়েছে আরো বড় কোনো ক্ষমতার লোভ। তার নতুন স্ত্রীর সাথে প্রায়ই আলোচনা করে তারা যেসব পিশাচদের পুজো করে ওগুলো কোনোটাই সর্ব শক্তিমান নয়। তার স্ত্রীও তাকে সমর্থন করে এবং বলে জঙ্গল অনুসন্ধান করলেই হয়তো এরচেয়ে শক্তিশালী কোনো শক্তির খোঁজ পাওয়া যাবে। যা তাদের পুরো অঞ্চলের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ করে দেবে। জঙ্গলে গোপনে অনুসন্ধান চালিয়ে যায় আমন এমন কোনো শক্তির তার বিশ্বস্ত অনুগত কিছু লোক নিয়ে। দীর্ঘদিন এভাবে কাটতে থাকে। কোনো নতুন অলৌকিক কিছুর সন্ধানই পায় না সে। প্রতি মাসেই অবশ্য তিনটি করে নরবলি দিতে হয় তাদের পিশাচ মূর্তিগুলোকে উৎসর্গ করে। তবে আশেপাশের সব গ্রামের মানুষেরাই এখন অনেক সতর্ক। তবুও পিশাচ হতে প্রাপ্ত অলৌকিক সম্মোহন শক্তির প্রভাবে শিকার জোগাড় করতে তেমন বেগ পেতে হয় না ওদের।

তাদের গ্রামের পাশে যে নদী রয়েছে তা ভয়ানক খরতর। তাই নদীর ওপারে তারা তেমন একটা যায় না, আর ওপার থেকে কারো আসার প্রশ্নই উঠে না। গোষ্ঠীর কয়েকজন নারী নদীর পাড়ের দিকে বসে কিছু কাজ করছিল। এমন সময় অবাক হয়ে দেখল একটা ছোট নৌকা এসে ভিড় করলো নদীর পাড়ে। এই খরস্রোতা নদীতে এত ছোট নৌকা দিয়ে কে এল! নৌকায় কোনো মাঝি নেই। অপরূপ রূপবতী একজন নারী নেমে এলো নৌকা থেকে। পরনে চমৎকার শাড়ি কাপড়, গা ভর্তি স্বর্ণালংকার। ধীরে ধীরে মহিলাগুলোর দিকে এগিয়ে এলো সে। এই অপরিচিত রমণী তাদের ভাষাও জানেন।

রূপবতী রমণী তাদের অনুরোধ করলেন এখানকার গোষ্ঠী প্রধান আমনের কাছে তাকে নিয়ে যেতে। তারা কোনো উত্তর দিতে পারলেন না মুখ দিয়ে। রমণীকে নিয়ে আমনের কুঠিরের সামনে হাজির হলেন। আমনের স্ত্রী সন্তান সম্ভবা, তাই সে বর্তমানে ভিন্ন কুঠিরে রয়েছে। মেয়েগুলোর ডাকে আমন বেশ বিরক্ত হয়েই বাইরে বেরিয়ে এল। ভেতরে কারো সঙ্গ উপভোগ করছিল সে তা তার ভূষা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে এক মুহূর্তের জন্য তার মুখায়ব বদলে গেল। সে যেন মুগ্ধতায় স্তব্ধ হয়ে এলো। রূপবতী মেয়েটার থেকে চোখ ফেরাতেই পারছে না। মেয়েটাই প্রথমে মুখ খুলল, ‘ আমার সম্মান জানবেন আমন। আমি ভেতরে আসতে পারি!’

আমন চোখ ইশারা করতেই গোষ্ঠীর মেয়েগুলো চলে গেল। একবার নিজের কুঠিরে উকি দিল, ওখান থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো আরো দুজন মেয়ে। গায়ের পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওরা কারা। একটু যেন লজ্জা পেল আমন। এরপর আমন্ত্রণ করলো সে, ‘আসো ভেতরে।’

মেয়েটা ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করলো। একটা আসন দেখতে পেয়ে উপবেশন করল। আমনের চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েটার পুরো শরীরে। এরপর কিছুটা কাছে ঘেঁষে প্রশ্ন করলো, ‘কে তুমি?’

মেয়েটা লাজুক কণ্ঠে উত্তর দিল, ‘আমি শুনেছি আপনি নাকি এক মহান শক্তির অনুসন্ধান করছেন! আমি তারই দূত।’

চমকে উঠল আমন। এক মুহূর্তেই মোহ আর ঘোর কেটে গেল। এতক্ষণ থেকে মনে জমা কামনাও উবে গেল। মেয়েটা এটা জানলো কী করে! তার কন্ঠ কিছুটা কঠোর শুনালো, ‘তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি!’

‘আমি এই জঙ্গলের মহান শক্তির আদেশে এখানে এসেছি। তিনি অন্তর্যামী। আপনার অনুসন্ধানের খবর তিনি রাখে। আপনার মত একজন স্বপ্নবাজ গোষ্ঠী প্রধানের প্রভু হওয়ার একমাত্র যোগ্য তিনি।’

আমন একটু বাইরে বেরিয়ে এদিক সেদিক খুঁজে দেখল কেউ আছে নাকি। সে যে তাদের এই পিশাচ দেবতাগুলোর পূজা আর করতে চায় না এই খবর কেউ জানলে বিপদ ঘটে যাবে। ঘরে আবার প্রবেশ করে সে মেয়েটাকে বলে, ‘তুমি আসলে কী চাও!’

‘আপনারা এক অশুভ শক্তির আরাধনা করছেন। যা কিনা জঙ্গলের প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে। যা কিনা আপনাদের হাতকে করে রক্তাক্ত। সামান্য শক্তি আর ক্ষমতার লোভে আপনারা নিজেরাও পিশাচে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ানক বিপদ। দীর্ঘদিন আগে এই জঙ্গলের প্রাচীন পবিত্র শক্তি হত্যা করেছিল আশেপাশের সমস্ত অশুভ শক্তিকে। বন্ধি করে রেখেছিল মূর্তির ভেতরে। আপনারা তা আবার পুনরায় জাগ্রত করেছেন। আপনাদেরই আবার তাই এই পিশাচ শক্তিকে ধ্বংস করতে হবে। পুনরায় প্রাচীন পবিত্র শক্তির রাজত্ব চলবে এখানে।’

আমন বেশ বিরক্ত হলো এসব আজগুবি তত্ত্ব কথা শুনে। ‘ আমার তো মনে হয় না তোমার মতলব এত সাদা-সিধে। আমাদের কী লাভ হবে তোমার পবিত্র শক্তিকে পুজো করে, এই পিশাচ শক্তিকে ধ্বংস করে! আর তোমার পবিত্র শক্তি কেমন ক্ষমতাবান যে এই অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে আমাদের সাহায্য লাগবে! সে আগে একবার পারলে এখন নিজেই কেন করছে না?’

‘শক্তির উৎস মানুষের ভক্তি। শক্তি আর শক্তির দ্বন্দ ভয়ানক বিপদ জনক। তাই মানুষ যেটা খুব সহজে করে তা পবিত্র শক্তির করতে বিশাল আয়োজন প্রয়োজন। যাই হোক এটা আপনার বিষয়। আমি শুধু তার দাসী, দূত। আমি এখন চলে যাব।’

‘তুমি কিভাবে এসেছ?’

‘নৌকায়।’

‘আশ্চর্য্য! এই নদীতে নৌকা! তুমি অপেক্ষা করো এখানে। তোমার যাওয়া হচ্ছে না কোথাও। তোমার পবিত্র শক্তির ক্ষমতা পরীক্ষা করবো আমি।’

এই বলেই আমন কুঠির থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরেই গোষ্ঠীর কয়েকজন লোক এসে মেয়েটিকে জানালো তার নৌকা নদীর ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেঙে গিয়েছে। আমন তাকে এখানেই রাতে থাকতে বলেছেন। মেয়েটার বুঝতে বাকি রইলো না লোকটা তার যাওয়ার পথ রোধ করার চেষ্টা করছে। আশ্চর্য্য বোকাতো!

সেরাতে অপরিচিত এই রমণীকে থাকতে হলো গোষ্ঠীপ্রধান আমনের কুটিরে। গোষ্ঠীর সকলে কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল মেয়েটিকে নিয়ে। আমন তাদের কোনো কৌতূহলতা দূর করলো না এবং মেয়েটির সঙ্গে কাউকে দেখাও করতে দিল না। আমনের স্ত্রী রেগে প্রতিবাদ করতে এলো মেয়েটাকে আটকে রাখাতে। আমন হুমকি দিল সে বাড়াবাড়ি করলে আগের স্ত্রীর মতো তাকেও বিসর্জন দিতে সময় লাগবে না তার। রাতে এসে হাজির হলো আমন তার কুটিরে। জানালো সে যদি আমনকে বিয়ে করে তবেই সে পিশাচ দেবতাদের পুজো করা বন্ধ করবে, আর তার প্রভুর বলা কথা মতো কাজ করবে।

মেয়েটার চেহারায় ভয় বা শঙ্কার কোনো চিহ্নও ছিল না। শুধু সে স্পষ্ট ভাবে জানালো, সে প্রভুর শিষ্য পারিবারিক বন্ধনে জড়ানোর অনুমতি তার নেই। আমন পৈশাচিক হাসি হাসল। বলল, তার জন্য দুটো রাস্তা খোলা রয়েছে। একটা রাস্তাও অবশ্য তাকে মুক্তি দেবে না। হয় আমনকে বিয়ে করবে সে, নয়তো আগামী বিসর্জনে তার রক্ত উৎসর্গ করা হবে পিশাচ গুলোকে। এই প্রথম আমন মেয়েটার চোখে ভয় দেখল। মেয়েটা জানালো, এমন কিছু ঘটলে ভয়ানক বিপদ নেমে আসবে এই গোষ্ঠীর ভেতর। পবিত্র শক্তি মুখ ফিরিয়ে নেবে তাদের উপর থেকে।

আমনের চোখে মুখে কোনো ভয় নেই। শুধুই মেয়েটাকে পাওয়ার কামনা। তবে কোনো এক অজানা কারণে জোর করে মেয়েটাকে ভোগ করতে চাইছে না সে। চাইছে মেয়েটাই যাতে তাকে স্বাগত জানায়। অতিরিক্ত ক্ষমতা আর শক্তির লোভ, পিশাচ পুজো বন্ধ এসবের চিন্তা মাথা থেকে অনেকটাই উবে গেছে। মেয়েটা দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এরপর এগিয়ে এলো ধীরে ধীরে আমনের দিকে। চেহারায় অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। হালকা হারিকেনের আলোতে ঘরের পরিবেশ রহস্যময় হয়ে আছে। মেয়েটার শরীর থেকে রূপ যেন ঠিকরে বের হচ্ছে। নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে আমন। মেয়েটা একদম কাছে চলে এলো তার, বলল, ‘আমাকে ভালোবাসো তুমি?’

আমনের এমন লাজুক রূপ দেখলে গোষ্ঠীর যে কেউ জ্ঞান হারাবে। সে ভয়ে ভয়েই যেন বলল, ‘হ্যা’।

‘তবে পরীক্ষা দাও! তোমরা যে পিশাচ কে পুজো করো ওখানে ৭টি মূর্তি রয়েছে। একটি বড় এবং ৬টি ছোটো। তুমি যেটা জানো না বড় পিশাচটা পিতা আর বাকি গুলো তার সন্তান। তোমরা তাদের জন্যই এই রক্ত উৎসর্গ করো। পারলে লুকিয়ে গিয়ে ওখান থেকে একটা মূর্তি তুলে নিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দাও!’

আমন আৎকে উঠে পিছিয়ে গেল, ‘অসম্ভব! ওটার শক্তি সম্পর্কে দেখি কোনো ধারণাই রাখো না তুমি। আমার ভয় হচ্ছে আমার মনের ভেতরকার কথাও বোধ হয় ওটা জেনে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে আমাকে মেরে ফেলবে ওই পিশাচ শক্তি!’

‘তোমারও আমার প্রভুর পবিত্র শক্তি সম্পর্কে ধারণা নেই। পরীক্ষা করে ফেল তাহলে আমার প্রভুর শক্তি।’ এই বলেই মেয়েটা তার শাড়ি খুলে ফেলল। বিস্মিত হয়ে মেয়েটার শরীরের দিকে তাকিয়ে রইলো আমন। মনের ভেতর জমে থাকা কাম ভাব এক মুহূর্তে চুপসে গেছে। যৌবনের ছিটেফোঁটাও নেই মেয়েটার শরীরে। সারা শরীর জুড়ে কিলবিল করে নড়ছে কালো কালো থোকা থোকা কোষ। ওগুলোর ভেতরে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র। এই মেয়ে কোনো নারী কিংবা মানুষ নয়! শরীর ফুঁড়ে অনেক গুলো গাছের ছোট শিকড় বেরিয়ে আছে পেট, স্তন আর গলার দিক দিয়ে।

টান দিয়ে সেখান থেকে কয়েকটা চিকন শিকড় ছিড়ে হাতে দিয়ে দলা পাকিয়ে দড়ির মতো করে একটা মালা বানালো। এরপর পরিয়ে দিল তা আমনকে। শরীরে কিলবিল করতে থাকা কোষগুলো হারিয়ে গেল শরীরের ভেতরে। সেখানে ফুটে উঠলো কামনাময়ী একটি শরীর। মেয়েটা নিজের শরীরে জড়িয়ে নিল আবার কাপড়। আমনকে বলল, ‘যাও যা বললাম করো। দেখবে আমার প্রভুর শক্তি। ‘

আমনের শরীর কাঁপছে ভয়ানক উত্তেজনায়। সে একটা হারিকেন নিয়ে বেরিয়ে পড়লো জঙ্গলের উদ্দেশ্যে যেখানে রাখা রয়েছে সাতটি পিশাচ মূর্তি। বার বার চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো কেউ তাকে দেখছে কিনা! না, কেউ নেই!

আমনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাগে ফুসছিল। তার জায়গা দখল করে নিচ্ছে আরেকটা মেয়ে।। সন্ধ্যার পর থেকেই তাই আমনের কুটিরের দিকে নজর ছিল তার। রাতে যখন আমন কুটিরে ঢুকলো তার পুরো শরীর পুড়ে যাচ্ছিল। ইচ্ছা করছিল কুটিরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে জীবন্ত অবস্থায় আমন আর ওই মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারে। নিজেকে কিছুটা শান্ত করতে লাগলো সে। মধ্যরাতে আমনকে কুটির থেকে বেরিয়ে চোরের মতো হারিকেন নিয়ে জঙ্গলে ঢুকতে দেখে অবাক হয় সে। সে ভেবেছিল মেয়েটার সাথে সারারাত ফুর্তি না করে বের হবে না আমন। সেও একটা হারিকেন হাতে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে অনুসরণ করতে থাকলো স্বামীকে।……………………………………
.
.
. . . . চলবে . . . .
.
.
লেখা: #Masud_Rana

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে