পাষাণে বাঁধে যে হৃদয় পর্ব-০৬

0
259

#পাষাণে_বাঁধে_যে_হৃদয়
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam

সুপ্ত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সুপ্তর মা বুঝতে পারলো না মেয়ে টা কে। তিনি তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,,,কে তুমি? কাউকে খুঁজছো নাকি? দরকার হলে বসার রুমে বসো। তুমি হুট করে রুমে ঢুকে গেছো এটা তো ঠিক না মা।

সুপ্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, আহ্ মা কাকে তুমি কি বলছো? তোমার ছেলে যাকে এতো মরিয়া হয়ে খুঁজতে যাচ্ছিলো সে নিজেই চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তুমি কি করে আমার বাড়ি চিনলে আহিয়া?

সেসব কথা পরে আগে বলো তুমি আমার কল তুলছিলেনা কেনো? জানো আমি পা’গল হয়ে যাচ্ছিলাম। তোমার কোনো ধারণা আছে আমি কি ফিল করছিলাম?

ডু ইউ হেভ এনি আইডিয়া আহিয়া? সুপ্ত একটু জোরে চিল্লিয়ে বলে।

সুপ্তর মা গলা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে,,আ-আহিয়া?

নো আন্টি মিস্টেক। তারপর সুপ্তর দিকে তাকিয়ে বলে আমি আহিয়া না তাহিয়া। আহিয়া তো ও বলেই পিছনে হাত দিয়ে দেখায়। তখন এসে রিপ্তর বউ আহিয়া শুকনো মুখে ভিতরে প্রবেশ করে।

সুপ্ত কিছু বুঝতে পারছে না। কোথায় যেনো সে তলিয়ে যাচ্ছে। হাত পায়ের জোর হারিয়ে ফেলছে।চেয়েও চোখ খুলে রাখতে পারছে না। সামনের সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সুপ্তর এতোদিন ভেবে আসা আহিয়া আর এখন হুট করে সামনে আসা তার নিজের আহিয়া। কিছু ভাবতে পারছে না সে। ধীরে ধীরে সে অতলগহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।

সকলের কনফিউশনের মধ্যেই সুপ্ত হুট করে মেঝেতে শব্দ করে পরে যায়। ঝাপসা চোখে শুধু এটা দেখতে পায় তার আহিয়া আসছে তার কাছে। চোখে মুখে চিন্তা স্পষ্ট। আস্তে আস্তে সুপ্ত চোখ বন্ধ করে নেয়। আর তার শক্তি নেই চোখ খোলা রাখার জন্য।

সকলেই ব্যস্ত হয়ে যায় সুপ্ত কে নিয়ে। সুপ্তর মা তো কান্না জুড়ে দেয় কারণ সুপ্ত খুব সহজে এমন ভাবে জ্ঞান হারায়নি কখনো এতো অসুস্থ হয়ে ও।

তাহিয়া নামের মেয়েটা সুপ্তর মাকে শান্ত হতে বলে। কিছু হয়নি সব ঠিক হয়ে যাবে বলে শান্তনা দেয়।
মায়ের মন কি শান্ত হয়? উনি উনার মতো সুপ্তর জন্য বিলাপ করে কান্না করছে। আহিয়া দ্রুত গিয়ে রিপ্তকে ডেকে আনে।কারণ তাদের পক্ষে সুপ্ত কে তোলা কিছুতেই সম্ভব নয়।

রিপ্ত মাত্রই তৈরি হয়েছে অফিস যাওয়ার জন্য। এরমধ্যে আহিয়ার ডাকে দ্রুত ছুটে যায়। রিপ্ত সুপ্ত কে ধরে বিছানায় শুইয়ে দেয় অনেক কষ্টে।

তাহিয়া সুপ্ত কে চেক-আপ করে টেনশন করতে বারণ করে। তারপর সুপ্ত কে একটা ইনজেকশন পুশ করে দেয়। তারপর তাহিয়া আহিয়া কে নিয়ে আলাদা কথা বলার জন্য নিয়ে যায় কারণ আহিয়ার সব কিছু খোলসা করার আছে। অনেক কিছু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মনে হচ্ছে তাহিয়া তার রহস্যের সমাধান পাবে এখানে।

কি-কি হলো তাহিয়া আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস কেন? আহিয়ার হুট করেই কেন জানি ভয় হতে লাগে।

তোকে আমি আগে কি বলতাম তোর মনে আছে আহিয়া? জানতে চায় তাহিয়া।

আহিয়া আমতা আমতা করে বলে,, কি-কি?

আমার সাথে আর আমার বোনের সাথে তোর চেহারার কিছুটা মিল।আমার চেহারার সাথে ও তোর অনেকটাই মিল আছে। আর আমার একটা বোন ছিলো তোর মনে আছে? আমি বলেছিলাম কোনো একদিন তোকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।

হ্যা কিন্তু এখন এসব কথা বলছিস কেন তুই তাহিয়া?

কারণ আমার কাছে সবকিছু পানির মতো এখন পরিষ্কার লাগছে। তুই আমাকে একটা কথা বল আহিয়া তুই কি তোর বাসুরের আহিয়া কে কখনো দেখেছিস?

না। এমনকি কেউ নাকি দেখেনি। মা বাবা জানতে চাইলে দেখতে চাইলে নাকি বলতো সারপ্রাইজ। সারপ্রাইজ দিবো করে করে আর কাউকে দেখায়নি।

তাহিয়া মুচকি হেসে তার ফোন নিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। তারপর পেয়ে গিয়ে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,তোকে সব সময় আমিও বলতাম তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে নে দেখ বলেই একটা ছবি দেখায় ফোনে।

আহিয়া ফোনের দিকে তাকাতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাহিয়ার দিকে তাকায়।

তাহিয়া মুচকি হেসে বলে,, কি বুঝলি?

তু-তুই দুইটা কি করে ইডিট করেছিস নাকি?

নাহ্ ওটা আমার বোন আহিয়া।(তাহিয়া)

তোর বোন আহিয়া মানে?

হ্যা আমরা জমজ আর আমার বোনের নাম ছিলো আহিয়া আর আমার নাম তাহিয়া। তোকে এটাই সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম দুইজনের নামই আহিয়া।কিন্তু তার আগেই বলতে বলতে তাহিয়ার চোখ দিয়ে পানি এসে যায়। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চোখ দুটো মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, আমার বোন আহিয়াই সুপ্তর আহিয়া। আমি দেশের বাইরে চলে যাই পড়াশোনার জন্য আর আমার বোন আর্মিতে জয়েন হয়। জানিস আহিয়া আমার বোন ফোন দিয়ে সারাক্ষণ শুধু সুপ্তর কথা বলতো।কি যে পাগলামি করতো। সুপ্তর এখনকার অবস্থা দেখলে আমার বোন নিজেই পাগল হয়ে যেতো। বেচারি মরে গিয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে পাগল করে দিয়ে গেলো।

তুই যখন আমাকে ফোন দিয়ে সব কাহিনী বললি তারপর নাম বললি তখন আমি নিশ্চিত হয়ে যাই এটা আর কেউ নয় আমার বোনেরই ভালোবাসা। আমার বোন যাকে ভালো থাকার জন্য রেখে গেছে সে আসলে আমার বোন কে ছাড়া ভালো নেই। আমাকেই উনাকে সুস্থ আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।

আহিয়া সবকিছু শুনে নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলে। তারপর কিছু একটা ভেবে বলে,,কিন্তু তুই কি করবিরে? সুপ্ত ভাই তো এখন তোকেই তার আহিয়া ভাবছে।

তাহিয়া এবার একটু চিন্তায় পরে যায়। সবই তো ঠিক আছে কিন্তু সুপ্ত তো তাহিয়া কে আহিয়া ভেবে পাগলামি শুরু করবে।তখন কি করে সব সামলাবে তাহিয়া। মনের মধ্যে হাজার খানেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকলেও কিছু করার নাই এখন তাহিয়া যে করেই হোক সুপ্ত কে আগের মতো সুস্থ করে তুলবে বলে মনে মনে পণ করে নেয়।

আজ থেকে এই বাড়িতে থেকেই সুপ্তর চিকিৎসা করবে তাহিয়া। আহিয়া গিয়ে বাড়িতে সবাই কে সব জানায়। সকলেই সবকিছু শুনে বেশ অবাক হয়। এটা ভেবে স্বস্তি ও পায় এবার মনে হয় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তবে সকলের মধ্যে এক ভাবনা থাকলেও সুপ্তর মা সবকিছু শুনে মনে মনে অন্য কিছু পরিকল্পনা করে রাখে কাউকে অবশ্য উনার করতে রাখা পরিকল্পনা জানায় না। মনের টা মনেই রেখে দেয় সঠিক সময়ে সকলেই জানতে পারবে।

সুপ্তর ঘুম ভাঙে অনেক বেলা করে। সুপ্তর মা তখন মাথার পাশেই বসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর নানান ধরনের ভাবনা ভাবছিল। সুপ্ত কে উঠতে দেখে উনি তড়িঘড়ি করে টেবিল থেকে পানির গ্লাসে পানি ঢেলে সুপ্তর সামনে ধরে।

সুপ্ত আস্তে আস্তে জানতে চায় আহিয়া কোথায় মা?

সুপ্তর মা বলে,,একটু পানি খা তুই বাবা ভালো লাগবে।

আহিয়া কই? ওরে ডেকে দাও।

একটু পানি খা না বাপ।

আহ্ মা আমি বলছিনা তুমি আহিয়া কে ডেকে দাও। তুমি কি শুনতে পাচ্ছো না আমার কথা? কি এক কথা লাগিয়ে রেখেছো পানি খা পানি খা। খাবো না আমি পানি জোরে কথা গুলো বলে গ্লাস ফেলে দেয় ধাক্কা দিয়ে।

তাহিয়া তখন নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে রাখছিল গেস্ট হাউজের আলমারিতে। এখানে যে অনেক দিন থাকতে হবে সেটা ভালো করেই জানে। এরমধ্যে চেঁচামেচি আর গ্লাস ভাঙার শব্দে রুম থেকে বেরিয়ে সুপ্তর রুমে যায়।

দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পায় সুপ্ত শুধু একটা কথাই বলছে আমার আহিয়া কোথায়? তোমরা কি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছো?

তাহিয়া দরজায় নক করতেই সুপ্তর চোখ তার উপর পরে। সুপ্ত দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরে তাহিয়া কে। তাহিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।

#চলবে,,,,,?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে