নীল আকাশের চাঁদনি পর্ব-০৬

0
1174

#নীল আকাশের চাঁদনি🌸❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ রোজ
#পর্ব- ৬

নীল চুপচাপ করে বসে রইলো। না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কখন যে চাঁদনিকে এত ভালবেসে ফেলেছে নিজেও বুঝতে পারেনি। যদি আগে জানতো আকাশও চাঁদনিকে ভালবাসে। তাহলে নিজের মনকে হয়তো আটকে নিতো। কিন্তুু চাইলেই কি সব হয়? নীল কি চাইলেই পারতো মনকে আটকাতে? নীল কি চাইলেই পারবে চাঁদনিকে ভুলতে? চাইলেই কি পারবে ভালবাসার কবর দিতে? চাইলেই কি আগের মতো হাসি, খুশী থাকতে পারবে? ভালবাসা না তো ভোলা যায়। আর না তো কবর দেয়া যায়। তবে নীল হয়তো একটা কাজ করতে পারবে। আর সেটা হচ্ছে আগের মতো হাসি, খুশী থাকার অভিনয়। শুধু মাএ ভালবেসে এই পৃথিবীতে হাজারও লোক বেঁচে আছে। তাদের সবার ভালবাসা সফলও হয়নি। নীলও হয়তো তাদের দলের একজন হয়ে বেঁচে থাকবে। নীল এটা ভেবে তাচ্ছিল্য হাসলো। আজ রাতটা নীল না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলো। পরেরদিন নীল ভার্সিটি যেতে চায়নি। কিন্তুু আকাশ জোড় করে নিয়ে গেলো। ভার্সিটি যেতেই চাঁদনি দুর থেকে আকাশকে দেখে বললো।”

—-” হেই আকাশ,

আকাশ চাঁদনির মুখে আকাশ শুনে চমকে গেলো। নীল মনে, মনে বললো।”

—-” চাঁদনি কি আকাশকে ভালবাসে?”

চাঁদনি এক প্রকার দৌড়ে এসে বললো,

—-” কেমন আছেন আপনি?”

আকাশ মুচকি হেসে বললো।”

—-” ভাল, তুমি?”

চাঁদনিও হেসে বললো,

—-” খুব, খুব ভাল।”

আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” এত ভাল থাকার কারণ কি?”

চাঁদনি একটা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো।”

—-” সময় হলে বলবো,

নীল তাচ্ছিল্য হেসে মনে, মনে বললো।”

—-” চাঁদনিও আকাশকে ভালবাসে। আমিই বোকা যে কি না ওদের মাঝে থার্ড পার্সন হয়ে ঢুকতে চেয়েছিলাম। তবে আর না ভুলে যাবো চাঁদনিকে। কেউ কোনদিন আমার মনের কথা জানবে না,

নীল স্লান হেসে বললো।”

—-” আকাশ আমি ক্লাসে যাচ্ছি,

আকাশ নীলকে কিছু বলার আগেই নীল চলে গেলো। চাঁদনি কিছুটা অবাক হয়ে বললো।”

—-” কি হলো?”

আকাশ কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো,

—-” জানিনা ওর কি হয়েছে।”

চাঁদনি সেদিকে তাকিয়েই বললো,

—-” হ্যা খুব আপসেট লাগছিলো।”

ক্লাসের টাইম হওয়ায় চাঁদনি বললো,

—-” আচ্ছা ক্লাসে যান।”

আকাশ মাথা নাড়িয়ে চলে এলো। নীল আজকে চুপচাপ ক্লাস করছে। এটা দেখে ক্লাসের সবাই অবাক হলো। এমনকি স্যার ও অবাক হয়ে বললো,

—-” নীল আর ইউ ওকে?”

নীল দাড়িয়ে বললো।”

—-” জ্বি স্যার আমি ঠিক আছি,

নীলের দাড়ানোতে স্যার বেশী অবাক হলো। কারণ নীল কখনোই দাড়িয়ে কথা বলে না। ক্লাসে সবাই দাড়ালেও নীল দাড়াতো না। স্যার ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” কিন্তুু আমার মনে হচ্ছে তুমি ঠিক নেই,

আকাশও নীলের দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে আছে। সেটা দেখে নীল নিজেই ভাবলো।”

—-” ও শিট আকাশ ডাউট করতে পারে। আমার এমন চুপচাপ থাকা যাবে না,

নীল হু হা করে হেসে বললো।”

—-” আরে টাকলা স্যার। আপনি এমন কেন ভাবছেন?”

আসলেই স্যারের মাথায় চুল নেই। নীলের কথায় সবাই হেসে দিলো। স্যার রেগে বললো,

—-” তাই তো বলি বাদর কি ঠিক হয়?”

নীল মুখ বাঁকিয়ে বসে রইলো। আকাশ বিরবির করে বললো।”

—-” এই তুই এমন কেন?”

নীল ভেংচি কেটে বললো,

—-” তাতে তোর কি?”

আকাশ মাথা ধরে বললো।”

—-” তুই কি ঠিক হবি না?”

নীল ভাব নিয়ে বললো,

—-” আমি ভুল ছিলাম কবে?”

আকাশ আর কথা বাড়ালো না। ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে এলো। আকাশ চাঁদনিকে দেখে সেখানে গেলো। নীল আর গেলো না বাইকে বসে রইলো। নীল আর আকাশ হেসে, হেসে কথা বলছে। ওদের দেখে বোঝা যাচ্ছে ওদের দুজনের জন্যই দুজনের ফিলিংস এক। আকাশ কথা বলতে, বলতে বললো।”

—-” চাঁদনি কাউকে ভালবাসো?”

চাঁদনি মুচকি হেসে বললো,

—-” আপনি ভালবাসেন?”

আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো।”

—-” আগে আমি জানতে চেয়েছি,

চাঁদনি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” সময় হোক বলবো,

বলে চাঁদনি চলে গেলো। আকাশ কিছুটা হলেও বুঝতে পারলো। আকাশ হেসে নীলের কাছে এসে বললো।”

—-” চল বাড়ি যাই,

নীল কপাল কুঁচকে বললো।”

—-” এত খুশী কেন তুই?”

আকাশ নীলকে ধরে বললো,

—-” আমার মনে হয় চাঁদনিও আমাকে ভালবাসে।”

নীল হাত মুঠ করে ফেললো। মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে বললো,

—-” এটাতো ভাল কথা।”

আকাশ হেসে বললো,

—-” হ্যা রে এখন চল বাড়ি।”

নীল হ্যা বলে বাইকে উঠলো। নিজেকে সামলে বাইক স্টার্ট দিলো। নীল আর আকাশ প্রতিদিন এক টাইমে বাড়ি যায়। কিন্তুু আজকে অনেক পরে গেলো। তার কারণ নীল জায়গায়, জায়গায় বাইক থামিয়েছে,

______________

বাড়িতে এসে নীল রুমে চলে এলো। আকাশ কিছুটা অবাক হচ্ছে নীলের বিহেভিয়ারে। প্রতিদিন ক্লাস থেকে এসে দুষ্টুমি করে। আর আজকে কেমন একটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। রাহেলা চৌধুরী এসে আকাশকে বললো।”

—-” ওই বাদরটা কোথায়?”

আকাশ একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললো,

—-” বুঝতে পারছি না মম নীলের কি হয়েছে?”

রাহেলা চৌধুরী চমকে বললো।”

—-” নীলের কি হয়েছে মানে?”

আকাশ নিজেকে সামলে বললো,

—-” তেমন কিছু না মম। মানে নীল আজকে চুপচাপ আছে তাই।”

রাহেলা চৌধুরী শিরি দিয়ে উপরে গেলো। নীলের রুমে গিয়ে দেখলো নীল চুপচাপ বসে আছে। উনি গিয়ে নীলের পাশে বসে বললো,

—-” নীল কি হয়েছে বাবা?”

নীল ওনার ভয়েস শুনে তাকিয়ে বললো।”

—-” কই কিছু হয়নি তো,

রাহেলা চৌধুরী নীলের কপালে হাত রেখে বললো।”

—-” শরীর খারাপ লাগছে নাকি?”

নীল মুচকি হেসে বললো,

—-” আমি একদম ঠিক আছি।”

রাহেলা চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” ঠিক তো?”

নীল হালকা হেসে বললো।”

—-” একদম ঠিক মম,

রাহেলা চৌধুরী হেসে চলে গেলো। রাহেলা চৌধুরী যেতেই নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। রাতে নীল আকাশের রুমে এলো। রুমের ভেতর যাবে এমন সময় শুনলো।”

—-” আরে চাঁদনি আমি সত্যি বলছি,

নীল তাকিয়ে দেখলো আকাশের কানে ফোন। বুঝতে পারলো আকাশ চাঁদনির সাথে কথা বলছে। নীল আর ভেতরে গেলো না রুমে চলে এলো। বিছানায় বসে মোবাইলটা ধরলো। গ্যালারীতে গিয়েই চাঁদনির একটা ছবি দেখতে পেলো। চাঁদনি হেসে রয়েছে ছবিটাতে। নীল যেদিন বুঝেছিলো ও চাঁদনিকে ভালবাসে। তখনি চাঁদনি রায়জাদা দিয়ে ফেসবুকে আইডি সার্চ দেয়। আর আইডি পেয়েও যায়। তখনি ছবিটা সেভ করে রাখে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” এক তরফা ভালবাসা বুঝি এভাবেই কষ্ট দেয়? হ্যা এক তরফাই কারণ তোমাকে দেখে এটা বুঝেছি। তুমিও আকাশকে ভালবাসো। তোমার চোখে আকাশের জন্য ভালবাসা দেখেছি আমি। আমিও চাই তোমরা দুজন সুখে থাকো,

বলে নীল ছবিটা ডিলিট করে দিলো। নীলের চোখ থেকে পানি পড়ে মোবাইলের স্কিন ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে ওর খেয়াল নেই। নীল কাঁদছিলো এরমাঝে আকাশ এলো। নীল চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো।”

—-” আকাশ কিছু বলবি?”

আকাশ বিছানায় বসে বললো,

—-” চাঁদনিকে আমি আমার মনের কথা বলতে চাই।”

নীলের বুকটা ধুক করে উঠলো। তবুও নিজেকে সামলে বললো,

—-” কবে বলবি ভাবছিস?”

আকাশ মুচকি হেসে বললো।”

—-” কালই বলবো,

নীল মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো।”

—-” কালই বলবি?”

আকাশ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” হ্যা কালই বলবো। কিন্তুু তোর কি হলো?”

নীল জোড়পূর্বক হেসে বললো।”

—-” আমার কি হবে?”

আকাশ মাথা চুলকে বললো,

—-” নীল হেল্প করবি প্লিজ?”

নীল আরেকদিকে তাকিয়ে বললো।”

—-” কি হেল্প?”

আকাশ দাড়িয়ে বললো,

—-” আমি কালকে অনুরাগ ক্যাফে ফুল বুক দেবো। এরপর ওটা ফুল সাজাবো। তুই প্লিজ চাঁদনিকে নিয়ে আসবি?”

নীলের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। নীল আকাশের দিকে না তাকিয়ে বললো।”

—-” আমি তোকে হেল্প করবো ভাইয়া,

আকাশ নীলকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো।”

—-” থ্যাংক ইউ সো মাচ,

______________

আকাশ নিজের রুমে চলে গেলো। আকাশ যেতেই নীল একটু জোড়ে হেসে বললো।”

—-” বাহ কি ভাগ্য আমার তাই না? যাকে ভালবাসি তাকে অন্যকারো হতে হেল্প করবো। না, না অন্যকারো না তো আমার ভাইয়ের হতে। আর আমার ভাইয়ের জন্য আমি সব করতে পারি সব,

পরেরদিন, নীল আর আকাশ ভার্সিটিতে গেলো। আকাশ ভার্সিটিতে চাঁদনিকে দেখে নীলকে বললো।”

—-” তুই ওকে নিয়ে আসিস,

নীল ওকে বলে ভেতরে গেলো। চাঁদনি অনুর সাথে কথা বলছে আর গেইটের দিকে তাকাচ্ছে। এটা দেখে অনু মুচকি হেসে বললো।”

—-” আকাশ ভাইয়াকে খুজছিস বুঝি?”

চাঁদনি আমতা, আমতা করে বললো,

—-” আমি ওনাকে কেন খুজবো?”

অনু হেসে বললো।”

—-” সেটা তো তুই জানিস,

এরমাঝে নীল সেখানে এসে বললো।”

—-” চাঁদনি একটু এদিকে আসবে?”

চাঁদনি ভ্রু কুঁচকে বললো,

—-” কেন?”

নীল মিনমিন করে বললো।”

—-” দরকার আছে,

চাঁদনি কপাল কুঁচকে গেলো। নীল হেটেই যাচ্ছে দেখে চাঁদনি বিরক্তি নিয়ে বললো।”

—-” কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

নীল বনিতা না করে বললো,

—-” আকাশ তোমাকে আমার সাথে যেতে বলেছে।”

চাঁদনি এবার কিছু না বলে নীলের গাড়িতে উঠলো। এরপর ওরা গিয়ে অনুরাগ ক্যাফেতে পৌছালো। চাঁদনি হা করে চারপাশ দেখছে। পুরো ক্যাফেটা সাজানো। নীল আকাশকে দেখে বললো,

—-” আমি যাচ্ছি।”

আকাশ নীলের কাছে এসে বললো,

—-” তুই থাক না প্লিজ।”

নীল বাধ্য হয়ে থেকে গেলো। চাঁদনি গিয়ে ভেতরে বসলো। চাঁদনি আর আকাশ এক টেবিলে বসেছে। নীল একা একটা চেয়ার নিয়ে দুরে বসা। হঠাৎ করেই আকাশ গোলাপের তোরা নিয়ে চাঁদনির সামনে বসে বললো,

—-” আই লাভ ইউ চাঁদনি। আই লাভ ইউ সো মাচ। উইল ইউ বি মাইন প্লিজ?”

চাঁদনিও যেন এটার অপেক্ষাই করছিলো। চাঁদনি মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে। একটুপর চাঁদনি তোরাটা নিয়ে বললো।”

—-” আই লাভ ইউ টু,

আকাশ বাম পকেট থেকে একটা রিং বের করলো। এরপর চাঁদনির আঙুলে পড়িয়ে দিলো। নীলের চোখ ছলছল করছে। চাঁদনি আকাশকে জড়িয়ে ধরে আছে। নীল ফোনের টোন নিজে বাজিয়ে বললো।”

—-” ভাইয়া আমার ফোন এসেছে,

বলে বাইরে চলে এলো। চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে নীলের।”

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে