নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_4

0
1157

নীলাকাশ_কালো_মেঘ part_4
#adrin_anisha
.
-তুই কখন এলি? আর কারো রুমে যে নক করে ঢুকতে হয় সেটা জানিস না? তাছাড়া আজ এতো তাড়াতাড়ি কেন? আর তুই এসেছিস তো মা ডেকে দেয় নি কেন আমাকে?
নীলা আরো কিছু বলবে তার আগেই ওর মুখ চেপে ধরল আকাশ।
– চুপ একদম চুপ। এতো প্রশ্ন কেউ একসাথে করে? আমাকে বলার সুযোগ দে।
নীলা আকাশের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
– হুম, বল
– আমি একটু আগেই এলাম। আন্টি রান্নাঘরে কাজ করছিল, আন্টি ডাক দিতে চেয়েছিল আমিই বারণ করেছি। আর তাছাড়া তোর রুমে আসতে আমায় নক করতে হবে নাকি? এইটুকু একটা মেয়ে, তার রুমে আসতে নাকি আমার নক করতে হবে। তাছাড়া এতো বড় দামড়া মেয়ে হয়েছিস এখনো তো কাজ কিছুই শিখলি না। আন্টি একা একা কাজ করছে ওখানে গিয়ে সাহায্যও তো করতে পারিস।
– তোর কি? আমার মা, আমার ইচ্ছা। তোর এতো দূরদ লাগলে তুই গিয়ে সাহায্য করে আয়।
– এই এই চুপ। একে তো অকর্মার ঢেকি তার উপর বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না? তাছাড়া তোর না আমাকে তুমি করে বলার কথা ছিল?
– ধুর তোকে তুমি বলতে কেমন যেন আজব লাগে।
– তা তো লাগবেই। এজন্যই বলছি এখন থেকে অভ্যাস করে নে। এখন যা বই নিয়ে আয়।
– না আগে ফ্রেশ হয়ে আসি,
– এতো টাইম নেই আমার৷ যেটা বলেছি সেটা কর।
– ওফফ, মেরেই ফেলবি তুই আমাকে।
নীলা বই আনতে গেল আর আকাশ নিজের ফোনে গেম খেলতে লাগল। নীলা বই নিয়ে এলে সেদিকে না তাকিয়েই পড়া গুলো দেখিয়ে দিল। কিছুক্ষন পর হঠাৎ করেই ফোন রেখে বলে উঠলো,
– এই নীলা।
নীলা চমকে উঠলো।
– কি হলো?
– তোর বাবাকে কিছুদিনের মাঝে কেউ ফোন করেছিলো?
– ধুর বাবা, এটা কেমন প্রশ্ন? বাবাকে তো প্রতিদিনই কতজন ফোন দেয়।
– না আসলে কি হয়েছে জানিস? কালকে একটা ছেলে আমার ফুফুকে কল দিয়েছিল। ফুফুর ওই সিম টা আগে আমার বাবার কাছে ছিল। ছেলেটা ভেবেছে ওটা বাবার নাম্বার৷ তাই ফুফু পরে ওকে বাবার নাম্বার টা দেয়। বাবাকে ফোন দিয়ে ছেলেটা তোর বাবার কথা জিজ্ঞেস করেছে। জিজ্ঞেস করল বাবা কি আংকেলের সাথে কাজ করে নাকি? বাবা বলল হ্যাঁ করে। পরে বাবার থেকে আংকেলের নাম্বার নিল। আমার কাছে ব্যাপার টা আজব লাগলো। বাবার এতো আগের নাম্বারটা ও পেল কোথায়? ফুফুর থেকে বাবার নাম্বার, আর বাবার থেকে আংকেলের নাম্বার। তাই জিজ্ঞেস করলাম এমন কেউ কল করেছিল কিনা?
আকাশের কথায় নীলার চিন্তা আবার শুরু হলো। গঠনা শুনে নীলার সবার আগে সেই ছেলেটার কথাই মনে হলো। ওই ছেলেটাও আকাশের বাবার কথা জিজ্ঞেস করেছিল। রেদোয়ান আকাশের বাবার আরেক নাম। তবে এটা সবাই জানে না।এখন সবাই ওনাকে রাকিব নামেই চেনেন। শুধু ওনার অনেক আগের বন্ধুরাই ওনাকে এই নামে ডাকেন। তাহলে ওই ছেলেটা এই নাম জানলো কি করে? তাছাড়া ছেলেটা ওর বাবার নাম্বার ও বলে দিল।
নীলা আকাশকে জিজ্ঞেস করলো,
– আচ্ছা, ছেলেটার নাম বলেছে কি?
– কি জানি? বাবাকে তো নাম বলতে শুনি নি। বলেনি হয়তো। কেন?
– এমনিই, বাবার কোন নাম্বারটা দেয়েছে ওকে।
– ওই তো আংকেলের এয়ারটের নাম্বার টা।
এবার নীলা সব বুঝতে পারল, ওর বাবার এয়ারটেল নাম্বারের শেষের তিনটা নাম্বার ৪৪০। তাহলে এইভাবে ও নাম্বার যোগার করেছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছেলেটা কি চায়?
.
.
.
আজ সাদিয়া আর নীলা একসাথে যাচ্ছে স্কুলে। সেদিন যেখান থেকে ছেলেটা ফলো করেছিল আজও সেই জায়গায় ছেলেটাকে দেখতে পেল নীলা। দূর থেকে সাদিয়াকে চোখের ইশারায় দেখালো। ছেলেটাও ওদের দেখতে পেয়েছে। সাদিয়া আর নীলা দুজনই ছেলেটার সামনে দিয়ে কথা বলতে বলতে চলে গেল। এমন ভাব করলো যেন ওকে দেখতেই পায়নি। ছেলেটাকে পার করতেই ওরা তাড়াতাড়ি হাঠতে লাগল। তবে নরমালের মতই কথা বলতে বলতে গেল। মাঝে মাঝে আড়চোখে পেছনে চেয়ে দেখলো। ছেলেটা স্কুল পর্যন্ত ওদের পিছু পিছু এসেছে।
.
.
স্কুলে এসেই যেন হাফ ছেড়ে বাচলো নীলা। কিন্তু ক্লাসে যেতে যেতে আরেক ঝামেলা। নীলা আর সাদিয়া ক্লাসে গিয়ে দেখে মুন্নিও এসে গেছে। মুন্নির বাসা উলটো দিকে হওয়ায় ও নীলাদের সাথে আসতে পারে না। মুন্নিকে আজকের ঘটনা বলতে লাগলো সাদিয়া আর নীলা। এর মাঝেই ক্লাস টেনের দুটো সিনিয়র আপু হাসতে হাসতে আসলো নীলাদের ক্লাসে। একজনের নাম রুমা আরেকজনের নাম সীমা। নীলাকে ক্লাসের একপাশে নিয়ে গেল ওরা। নীলার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। আর বলল,
– নীলা আমাদের ক্লাসের মেঘ কে তো চেনো তাই না?
নীলা কিছুই বুঝতে পারছে না৷ ভ্রু কুঁচকে বলল,

– হুম, চিনি। কেন?
– ও তোমাকে অনেক পছন্দ করে। আর তুমি?
ভ্রু সোজা করে এবার আবাগহীন ভাবে বলল,
– না আপু আমি পছন্দ করি না। আর ওকে বলো সাহস থাকলে ও যেন নিজে এসে বলে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। ও নিজে বললে তুমি হ্যাঁ বলবে তো?
– আমি কেন হ্যাঁ বলব। আমি তো বললাম আমি ওকে পছন্দ করি না।
ওরা চলে গেলে সাথে সাথে সাদিয়া আর মুন্নি নীলার কাছে দৌড়ে এলো। ওরা এতক্ষন আড়াল থেকে সব শুনছিলো। নীলার হাত থেকে কাগজ টা নিয়ে দেখলো ওখানে মেঘের নাম্বার লেখা।
সাদিয়া আর মুন্নি নীলাকে আর মেঘকে নিয়ে মজা করতে লাগলো।
.
কিছুক্ষন পর ক্লাস শুরু হলো। মেঘ ক্লাসে ঢুকতেই রুমার সাথে কিছু কথা বলছিলো আর নীলার দিকে তাকাচ্ছিল। নীলা সেটা লক্ষ্য করেছে। কিন্তু না দেখার ভান করে ক্লাসে মনোযোগ দেয় নীলা। প্রতিদিনের মতো আজও মেঘ সারাক্লাস নীলার দিকে তাকিয়ে ছিলো৷
নীলাদের স্কুল ছুটি হলে আগে মেয়েরা বের হয় তারপর ছেলেরা। আজও ছুটি হওয়ার পর সব মেয়েরা বের হচ্ছিল৷ আর মেঘ তার ক্লাসের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু নীলা আর মেঘের ক্লাস মুখোমুখি তাই নীলা বের হতেই নীলাকে ডাক দিক মেঘ। নীলা পেছন্দ তাকাতেই মেঘ বলল,
– নীলা, আই লাভ ইউ।
সাথে সাথে মেঘের সাথে থাকা তার সব বন্ধুরা চেচাতে লাগলো যেন মেঘ কোনো এভারেস্ট জয় করে ফেলেছে। নীলা পেছনে তাকিয়ে দেখলো একটা স্যার ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তার সারা স্কুলের সাথে সাথে স্যার ও শুনেছে। নীলা তাড়াতাড়ি চলে যেতে লাগলো। স্কুলের সবাই নীলার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাসছে। নীলার প্রচুর লজ্জা লাগছে।
.
.
.
.
চলবে.…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে