নীলপদ্ম ১৫তম পর্ব(শেষ পর্ব)

0
2199

#নীলপদ্ম
#১৫তম_পর্ব

কালো মুখোশধারী কিছু মানুষ এসে তার হাত পা,মুখ চেপে গাড়িতে তুলে দিশাকে। ঘটনার আকর্ষিকতায় কি করবে বুঝে পাচ্ছে না দিশা। তারা তাকে একটি অন্ধকার রুমে নিয়ে আছে। দিশার চোখ মুখ বাধা থাকার কারণে না সে কাউকে দেখতে পাচ্ছে, না সে চিৎকার করতে পারছে। বুকের ভেতর ভয়েরা সব দলা পাকিয়ে রয়েছে। দুবছর আগে ঠিক এভাবে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো। নিশাত তখন সেই কাজটি করে। আজও কি তবে সেই। কিন্তু তার সাথে তো হৃদয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তাহলে কেনো এই কাজ করছে সে!! এতোটা ঘৃণা কেনো করে নিশাত দিশাকে। অবান্তর চিন্তায় যখন মগ্ন তখন ই খটখট শব্দ শুনতে পায় সে। দিশা বুঝতে পারছে কেউ একজন তার সামনে বসেছে। এবার একজন এসে দিশার মুখ খুলে দেয়। মুখ খুলতেই একরকম চিৎকার করে বলে উঠে দিশা।
– কেউ কি আছেন? আমাকে কেনো এখানে আনা হয়েছে?
-…….
– আমি জানি আপনি আমার সামনে বসা। আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন?
– একেবারে শেষ করে দেবার জন্য।

কথাটি শোনা মাত্র স্তব্ধ হয়ে যায় দিশা। কন্ঠটি যে তার অত্যন্ত পরিচিত একটি কন্ঠ। এটি আর কেউ নয়, দিশা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে তার সামনে কে বসা। রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ে দিশা। কড়া এবং স্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠে,
– নিশাত
– যাক এতো বছর পর ও আমাকে তোমার মনে আছে।
– আমাকে এখানে কেনো এনেছো নিশাত। হৃদয়ের সাথে তোমার বিয়ে তো হয়ে গেছে। নিজের বিয়ে ছেড়ে এখানে আসার কি মানে?
– বিয়ে হতে দিয়েছো তুমি? আজ তোমার জন্য আমার বিয়েটা ভেংগে গেছে। হৃদয় প্রেয়সী প্রেয়সী করে বিয়ে অবধি ভেঙ্গে দিয়েছে। এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।

নিশাতের কথাগুলো শুনে দিশার বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়। এই লোকটা কেনো সব কিছু ভুলে যায় না। দিশা তো ভেবেছিলো হৃদয় নতুন করে তার জীবনটা সাজাবে। কিন্তু কোথায় কি! এক মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে লোকটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। বুকের কষ্টগুলো চোখের পানির রুপ নিচ্ছে। ঠোঁট চেপে কানা আটকে রেখেছে। নিশাত আবার বলতে থাকে,
– তোমাকে ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম। ভুল হয়েছে গতবার তোমাকে ছেড়ে দেওয়াটা। ভেবেছি বাপ পঙু হবার পর তুমি বুঝবে। কিন্তু দেখছি তুমি ওয়ারনিংটার গুরুত্ব ই দেও নি। এবার তার ফল তোমাকে পেতে হবে।
– মা…মানে?
– ভাবো, তোমার বাসায় শুধু তোমার বাবা এবং মা রয়েছে। হঠাৎ গ্যাসের চুলো লিক হয়ে আগুন ধরে গেলো। দাও দাও করে জ্বলছে আগুন। মাঝে তোমার বাবা এবং মা। হাহাহাহা

কথাগুলো শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। নিশাত এতো ভয়ংকর সে সব কিছু করতে পারে। ঢোক গিলে বলে,
– কি করেছো তুমি?
– এখনো কিছু করি নি তবে শেষ সুযোগ দিবো তোমায় যদি না শুনো
– আর কত ক্ষতি করবে তুমি? আর কত? আমি আমার ভালোবাসাকে তো তোমাকে দিয়েই দিয়েছি। বিয়ে করা বউ হওয়া সত্ত্বেও সব অধিকার ছেড়ে দিয়েছি। তোমার জন্য, আজ শুধু তোমার জন্য হৃদয়কে জেনেবুঝে কষ্ট দিচ্ছি। তোমার জন্য আজ আমার বাবা হুইল চেয়ারে জীবন কাটাচ্ছে।

বলতে বলতে গলা ধরে এসেছে দিশার। জমা কষ্টগুলো যেনো বাধ ছাড়তে। হঠাৎ কেউ চোখের বাধা কাপড়টি খুলে দেয়। চোখের বাধনটা খুলতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দিশা। সামনের মানুষটি দিশা নয়। দিশার সামনে হৃদয় পকেটে হাত দিয়ে বেশ পোজ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। দিশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে হৃদয়ের দিকে। মুচকি হাসি হেসে হৃদয় বলে,
– শেষমেশ স্বীকার করলে তুমি প্রেয়সী। তোমার লুকোচুরি কি তবে ক্ষান্ত হলো?

দিশা কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। এতোক্ষণ তো নিশাতের কন্ঠ শুনছিলো তাহলে!! দিশার অবাক নয়ন দেখে ধীর কন্ঠে হৃদয় বলে,
– এটা টেকনোলজির খেলা প্রেয়সী। তোমার খেলা থামাতে এটা তো করতেই হতো। নয়তো তুমি তোমার লুকোচুরি যে থামাতেই না। আর স্বীকার ও করতে চাইতে না তুমি ই যে আমার প্রেয়সী।
– কিন্তু নিশাত
– ও জেলে আছে, ওর পাপের শাস্তি পাচ্ছে। ডোন্ট ওয়ারি, আমি ওকে সুদে আসলে ফিরিয়ে দিয়েছি সব। এবার অন্তত আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্রেয়সী। মরে যাব, সত্যি মরে যাব।

হৃদয়কে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে দেয় দিশা। এতোদিনের জমানো কষ্টের আজ যেনো অবসান হয়েছে। হৃদয় হাটু গেড়ে দিশার সামনে বসে। আলতো হাতে মুখটা উচু করে। চোখের জলগুলো মুছিয়ে দিয়ে ঠোঁট জোড়া পরম আদরে আয়ত্ত করে নেয়। এতোদিনের পিপাসার আজ যেনো অবসান। এতোদিনের সকল অতৃপ্তির আজ সমাধান। আজ তার প্রেয়সী কেবল তার, একান্ত যতনে নিজের প্রেয়সীকে আগলে রেখেছে সে। সেও ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।

এক সপ্তাহ পর,
ফুলের বিছানায় বধুরুপে বসে রয়েছে দিশা। লাল বেনারসী পড়ে হৃদয়ের অপেক্ষায় সে অপেক্ষমাণ। আজ যেনো নতুন রুপে সেজেছে সে তার হৃদয়ের জন্য। আজ তাদের সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়েছে দুবাড়ির সম্মতি নিয়ে। খট করে আওয়াজ হতেই দরজার দিকে চোখ যায় দিশা। গোল্ডেন শেরোয়ানিতে হিরোর চেয়ে কম কিছু লাগছে না হৃদয়কে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আছে দিশার। হৃদয় আসতে করে পাশে এসে বসলে খানিকটা নড়েচড়ে বসে সে। আলতো হাতে লাজে রাঙা মুখটা উচু করে হৃদয় বলে,
– বারবার তোমার লজ্জামাখা মুখে নিজেকে হারাতে চাই প্রেয়সী। প্রতি সকাল যাতে তোমাতে নিজেকে পাই। প্রতি রাতে যাতে তোমাতেই বিলীন হতে পারি। কথা দাও আমায় আর ছেড়ে যাবে না। কথা দাও
– শেষ নিঃশ্বাস অবধি তোমারই থাকবো কথা দিলাম। কথা দিলাম
– ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো– তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো– তোমার
চরণমঞ্জীরে॥

হৃদয়ের কথাটি শুনে লজ্জায় আবারো চোখ নামিয়ে নেয় দিশা। হৃদয় মুচকি হেসে বলে,
– আজ কোনো বাধা মানতে চাই না। তোমাতে বিলীন হতে চাই, অনুমতি আছে।

দিশা আলতো ভাবে মাথাটি নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। গভীর ভালোবাসায় দিশাকে জড়িয়ে ধরে হৃদয়। আজ ভালোবাসার পূর্ণতার রাত। পূর্ণ চাঁদটি সাক্ষী তাদের মিলনের। তাদের ভালোবাসার। হৃদয় তার নীলপদ্মকে সারাটাজীবনের জন্য নিজের করে পেয়েছে। ভালোবাসায় সাগরে ডুবে আছে তারা। এভাবেই পূর্ণ হোক অপূর্ণ ভালোবাসাগুলো। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো

||সমাপ্ত||

মুশফিকা রহমান মৈথি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে