নীরবে ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
1019

গল্প:#নীরবে_ভালোবাসা
লেখিকা:#সুরভী_আক্তার
#পর্ব:০৯

আজ আমি সকাল থেকেই খুশি। বাসায় যেতে হবে তো!
বাসায় মেহমানও কম থাকবে কারণ বিয়ে আর বৌভাত শেষ হয়ে গেছে। আম্মুর সাথে অনেক কথা বলব।

“এই তুমি রেডি?”

“হুম, কখন থেকে বসে আছি আপনারই তো হয় নি”

“ওমা,৬ টার সময় থেকে বসে থাকলে তো অনেকক্ষণ মনে হবেই তাই না?”

“আচ্ছা আচ্ছা এবার চলেন!”
______________
বাসায় যাওয়ার পর দেখি আমার ফুপি আর তার মেয়ে এখনো আমাদের বাসায় আছে।
যাই করি না কেন ফুপির চোখে কখনো ভালো হতে পারি নি।সবসময় তার মেয়ের সাথে আমার compare করতে থাকে যদিও তার মধ্য বিশেষ কোন গুণ নেই।
ফুপি এখানে থাকে না। তার শশুর বাড়ি আমাদের দাদু বাড়ীর দিকে।উনি আমার আব্বু আর চাচারো বড়। মানে উনি সবার বড় কিন্তু ওনার মেয়ে রিফা ওনার বিয়ের আটবছর পর হয়।রিফা আপু মানহা আপুর বয়সেরই তবুও তার বিয়ে হয় নি। অবশ্য এই নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথাও নেই।

আব্বু আজ অফিসে গেছে ওনার সাথে একদম সন্ধ্যায় দেখা হবে।তাই সৈকতকে আমার রুমে বসিয়ে ওকে ফ্রেশ হতে বলে আমি আম্মুর কাছে মানে রান্নাঘরে গিয়েছিলাম।
আম্মু রান্না বসিয়ে আমার সাথে এটা ওটা আলোচনা করছিল। এরই মধ্যে ফুপি এসে হাজির হয় আর তার কুটনামি শুরু করে দেয়। প্রথমেই আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“কিরে? মেয়ের বিয়ে তো দিচ্ছিলে না স্বাধীনতাও দিচ্ছিলে একটামাত্র মেয়ে নাকি!তো এমন কি হলো যে হঠাৎ বিয়ে দিয়ে দিলে?কোন আঘটন ঘটিয়েছে নাকি মেয়ে?”

এই কথা শুনে আমার প্রচুর রাগ হলো। আম্মু যে কিভাবে তার মেয়ের বদনাম শুনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কে জানে? আমার তখনি বলতে মন চাচ্ছিল”নিজের মেয়ের তো বিয়ে দিচ্ছেন না আমরা কিছু বলেছি?”
কিন্তু বলতে পারলাম না কারণ উনি বয়সে অনেক বড় আর আম্মু উনার সাথে লাগতে নিষেধ করেছেন।

আমি অসহায় হয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে আমার হাতে এক বাটি ফল ধরিয়ে দিয়ে বলল রুমে যেতে আমিও বেরিয়ে এলাম।আর আম্মু ফুপিকে বলল”আপনার মেয়ের ও তো বয়স হয়েছে,কই আপনার মেয়ের তো বিয়ে দিলেন না?”

“শুনো! আমার মেয়েকে নিয়ে তোমার ওত ভাবতে হবে না!”

“আপনার মেয়েকে নিয়ে ভাবার মত সময় আমার নেই! কিন্তু আমার মেয়ের বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার আপনার নেই! আপনার কি মনে হয়? কোন অঘটন ঘটালে আপনার ভাই ওকে ছেড়ে দিত?”

ফুপি মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলেন।

রুমে এসে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।ফলের বাটিটা জোরে টেবিলের ওপর রেখে আমি রিফা‌ আপুকে জোর করে ঘর থেকে বের করলাম।
সে যেন লজ্জায় আমার দিকে তাকাতে পারছে না। আমি জোরে জোরে ফুপিকে ডাকলাম। ফুপি এসেই আমার দিকে চেয়ে বলতে লাগল”এরকম ষাঁড়ের মত চেচাচ্ছিস কেন? আর আমার মেয়েকে এভাবে ধরে রেখেছিস কেন?”

“তা তোমার মেয়েকেই নিজ মুখে বলতে বলো!”

“কি হয়েছে!কিরে রিফা বল?”জিজ্ঞাসা করল আম্মু

“ও কি বলবে আম্মু?আমি বলছি! ও আমাদের রুমে কি করছিল?”

“তো? এখন কি ও তোর ঘরেও যেতে পারবে না?”বলল‌ ফুপি

“পারবে! কিন্তু আপনি মনে হয় ভু‌লে যাচ্ছেন এখন আমি বিবাহিত আর রুমে সৈকত ছিল আর ও… ওকেই জিজ্ঞেস করুন।” বলেই আমি রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।আর বিছানায় বসলাম।রিফা সৈকতের সাথে জোর করে কিস করছিল।ওর হয়ত লজ্জা নেই কিন্তু আমার তো আছে?আম্মু না থাকলে আমি ফুপির মুখের উপরেই বলে দিতাম।তাতে যদি ওনার ভিতর একটু লজ্জা আসত!

আমি সৈকতের দিকে চেয়ে দেখলাম সে এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।রিফাকে সৈকতের থেকে আলাদা করার পর থেকে সে ওভাবেই দাড়িয়ে আছে Trauma-র মধ্যে আছে বেচারা।

আমি গিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওর একটা হাত ধরলাম।ও আমার দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলল। আমি ওকে বিছানার পাশে এসে বসতে বললাম তারপর ওর হাঁটুর বরাবর নিচে পা ভাঁজ করে বসলাম।সে আমার দিকে তাকালো।আমি বললাম”সৈকত? দোষটা তো আপনার ছিল না তাই না? তাহলে এভাবে মাথা নিচু করে রেখেছেন কেন?”

সৈকত আমার দিকে তাকিয়ে বলল”তুমি কিভাবে জানলে দোষটা ওর ছিল?”

“কারণ ওকে আমি খুব ভালো করে চিনি! ফুপি ওকে সবার সাথে যতই তুলনা করুক,ওর চরিত্র কারো সাথে তুলনা করার মতই না!”

“এত বিশ্বাস?”

“বিয়ে করেছি আপনাকে! অর্ধাঙ্গিনী আমি আপনার তাহলে আপনাকে বিশ্বাস করব না তো কাকে করব?”

“তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে maybe আজ আমার ইজ্জত চরিত্র সব শেষ হয়ে যেত!”

“ওর কথা বাদ দিন!আপনি এই ফল খান আর আমি বাইরের সিনেমা দেখে আসি!”

আমি বাইরে এসেই ফুপিকে খুঁজতে লাগলাম। চলে গেছে নাকি?
আম্মুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম”আম্মু এই ফুপি কোথায়?”

“যেই সিনেমা তার মেয়ে করেছে তারপর কি সেই মুখ তোর সামনে দেখাতে পারত? আসছিল তোর নামে কলঙ্ক দিতে!”

“ঠিক বলছ আম্মু!”

ঘরে এসে আয়েশ করে পড়ার টেবিলে বসলাম। চারিদিকে হাত বুলালাম। আমার বই!

“কি হলো?”

“এ্যাঁ?”

“বাইরে কি হলো?”

“চলে গেছে!আমি থাকতে ঐ ফুপিকে আর বাসায় আসতে দিব না!”

“By the way, তোমার আব্বু কখন আসবে?”

“সন্ধ্যায়, কেন?”

“একটা important কথা ছিল তাই”

“আমার নামে বিচার দিবেন নাকি?”

“Absolute right!”এই বলে সৈকত শয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেল আর শান্তিতে ফোন use করতে লাগলো।

আমি ভাবতে লাগলাম যে আমি আবার কি করলাম?

সন্ধ্যায় আব্বু আসলে সৈকতের সাথে ডাইনিংয়ে বসে কিসব আলোচনা করছিল আমি ঘরে ছিলাম। মূলত সৈকত আর আব্বুই বলেছে আমার সেখানে নাকি কোন কাজ নেই আর আসলেই! ওদের কথার মাঝে আমার কাজ কি?

তাই ঘরে ছিলাম। একটু পর সৈকত এসে বিছানায় বসল।আমি ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম

“কি কথা হলো এত?”

“তাড়াতাড়ি পড়ার প্রিপারেশন নাও”

আমি না বুঝে বললাম”প্রিপারেশন? কিসের পড়ার?”

সৈকত আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে বলল “তোমার না ২ মাস পর পরিক্ষা?”

“হ্যাঁ,ওয়েট ওয়েট আপনি আব্বুর সাথে আমার ভার্সিটি তে পড়ার ব্যাপারে বলছিলেন?”

“হ্যাঁ”

আমি খুশি হয়ে গেলাম কিন্তু পরমূহূর্তে সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললাম”চাচা?”

“কি করবে তোমার চাচা?”

“কিন্তু সত্যটা?”

“বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের আর কি বলে ব্ল্যাকমেইল করবেন? তুমি নিজের পড়াশোনা টা ঠিক করে করো আগে”

“আচ্ছা”

“যাও পড়ো আর রাত ১০ টার আগে উঠবানা”

“এহ! আসছে নিজের বাড়িতেই নয়টায় উঠতাম আর ১০টা?”

“যাও”

“যাচ্ছি! কিন্তু আপনার বাবা মা মেনে নিবেন?”

“না মানার কি আছে?জব তো আর করছ না নিজেকে যোগ্য করে রাখছ।যেকোন সময় যাতে কারো ওপর নির্ভরশীল হয়তে না হয় আর বলব আমি ভার্সিটি দিয়ে নিয়ে আসব।”

“এখানে?”

“আরে এতদূর আমি রোজ রোজ আসব নাকি? আমাদের বাসার পাশে।”

“ওহ!”

দুই দিন পর আমরা বাসায় ফিরে গেলাম।সৈকত তার কিছুদিন পরই যা যা কাগজ পত্র লাগে তা ভার্সিটি থেকে উঠায় নিসে আর এখানে পাশের একটা ভার্সিটি তে ভর্তি হয়ছি।সব কাজ punctually করতে হয় যদিও এমন না যে আগে টাইমের ব্যাপারটায় আমি সচেতন ছিলাম না কিন্তু তখন এক আধটু দেরি করলেও কোন প্রবলেম হতো না বাট সৈকত যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছে আমার তাই আমাকেও সব কিছু করতে ওর সহায়তা করতে হবে।ওর প্রবলেমই আমার প্রবলেম।
তারপর মাসখানেক চলে গেল।১০-১২ দিন পর আমার পরিক্ষা শুরু তাই পড়াশোনার প্রতি আরো হার্ড হয়েছি। বলতে গেলে সৈকত হতে বাধ্য করেছে।আর এই মাসখানেকের মধ্যে যা বুঝলাম তা হলো সৈকতকে যে আমি সোনার খনি সোনার টুকরা ছেলে মনে করেছিলাম সেটা সম্পুর্ণ ভুল।বহুত জ্বালিয়েছে আমাকে।
উনাকে কখনো বাথরুমে লক করে দিলে বলত”সারাদিন বের হব না কিন্তু!ভেবে নাও”

আর আমাকে বন্ধ করলে আমি ভয়েই শেষ হয়ে যেতাম। মাঝে মাঝে উনার ডায়ালগ উনাকেই দিলে বলত”থাকো,যত ইচ্ছা।আমি তো এমনিতেও অফিস যাচ্ছি” আরো বহুত কিছু।

চলবে….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে