নিয়তি পর্ব-১২

0
1006

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট১২

রাত দুটো। শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে।ব্যস্ত শহরটাও খানিকটা হলেও শান্ত হয়েছে।হৃদির ঘরে এখনো লাইট জ্বলছে।কী দরকার ছিলো ঘর গুছানোর?এখন রাত জেগে নোট তুলতে হচ্ছে।বিভোর উঠে হৃদির ঘরে যায়।দরজায় হেলান দিয়ে বলে,,

-খুব দরকার ছিলো দিনে ঘর পরিষ্কার করার?

হৃদি অপ্রস্তুত হয়ে যায়।পেছন ফিরে বিভোরকে দেখতে পায়।সারাদিন ডিউটি করে এত রাত পর্যন্ত লোকটা জেগে আছে?অন্যকেউ হলে এতক্ষণে মরার মতো ঘুমোতো।তোতলাতে তোতলাতে বলে,,,

-আপনি জেগে আছেন?
-হু ঘুম আসছিলো না।
-সারাদিন ডিউটি করে এসে বলছেন ঘুম আসছিলো না?লাইক সিরিয়াসলি?আপনি মানুষ না এলিয়েন।
-যেটা ধরে নেন।

হৃদি আর কিছু বলে না।মুচকী হেসে নোট তুলতে লাগে।বিভোর কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হৃদিকে বলে,,

-আচ্ছা এত রাত জেগে নোট তুলছেন আপনার ক্ষুধা লাগে নাই?

বিভোর কথা শুনে হৃদি ভ্রু কুঁচকে বিভোরের দিকে তাকায়।

-এক মিনিট!

কথাটা বলেই বিভোর নিজের ঘরের দিকে যায়।কিছুক্ষণ পরে একটা বড় ডিব্বা নিয়ে আসে।ল্যাম্পের আবছা আলোয় হৃদি ডিব্বার মধ্যে কিছু প্যাকেটজাত খাবার দেখতে পায়।বিভোর ডিব্বার ঢাকনা খুলতে খুলতে বলে,,,

-চিপস না বিস্কিট?
-অ্যাহ!
-আরেহ বলেন না কী খাবেন!অনেক ধরণের চিপস বিস্কিট পাবেন এখানে।
-হ্যাঁ তা তো কিচেনেও আছে বিস্কিট।তবে এত বড় ডিব্বায় আলাদা ভাবে চিপস বিস্কিট রাখার কারণটা কী জানতে পারি?
-হাসবেন না তো?
-অদ্ভুত!হাসির কথা হলে অবশ্যই হাসবো।

কথাটা বলে হৃদি হাসতে লাগে।বিভোর শান্ত গলায় বলে,,

-থাক শুনতে হবে না।
-আরেহ ভাই রাগ করছেন কেন?আচ্ছা হাসবো না।আপনি বলেন।
-আসলে আমার ভাত খাইতে ভাল্লাগে না।কিন্তু আম্মু জোর করে ভাত খাওয়ায়।মাঝে মাঝে রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়তাম।রাত্রে ক্ষুধা লাগতো।একদিন রাত্রি বেলা বিস্কিট খেতে গিয়ে আম্মু দেখে ফেলছিলো।তার পর থেকে সেই ঘটনা নিয়ে আম্মু ক্ষেপায়।আর যাতে কিচেনে না যেতে হয় তার জন্য একটা বড় ডিব্বা কিনে এনে বিস্কিট চিপস রাখি।
-ভাইরে ভাই তাই বলে আলমারিতে রাখবেন ডিব্বা?
-আম্মু দেখে ফেললে আবার ক্ষেপাতো
-স্বাভাবিক।

কথাটা বলেই হৃদি হাসতে লাগে।বিভোরের কথা শুনে হৃদির হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে।কিছুতেই হৃদি হাসি থামাতে পারছে না।অনেকদিন পর মনে হয় মেয়েটা প্রাণ খুলে হাসলো।হৃদির হাসি দেখতে বিভোরের বেশ ভালোই লাগছে।

দেখতে দেখতে কিভাবে দিন কেটে যায়।সেদিনই হৃদিকে বিউটি আম্মার ডেরা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় আনলো।হাসপাতালে এত জোরাজোরির পর যার মুখ থেকে টু শব্দ পর্যন্ত বিভোর বের করতে পারে নি আজ সে বিভোরের সাথে এতটা ক্লোজ!মানুষ পরিবর্তনশীল। সময়ই মানুষকে পালটে দেয়।

সিঁথির অনুপস্থিতিও হয়তো একটা সময় বিভোরকে সাময়িক ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছিলো।সে ধাক্কা বিভোর সামলেও নিয়েছিল।ভুলে গিয়েছিলো সিঁথিকে।কিন্তু হৃদির প্রশ্নে….
যাক গে যা হওয়ার হয়ে গেছে।সে তো আর জেনে বুঝে এমন করে নি।আর বিভোরও সিঁথির ঘটনাটাকে বয়সন্ধিকালের নষ্ট আবেগ হিসাবে উড়িয়ে দিয়েছে।আর সিঁথি যদি বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে তো বিভোর কেন থাকতে পারবে না।হ্যা সিঁথি বিভোরের প্রথম প্রেম।আর কৈশরের। যা যে কেউ আবেগ হিসাবে উড়িয়ে দিতে পারে।এম্নেতেও টিনেজার এইজে ছেলেমেয়েরা বেশি আবেগী হয়।

-কী খাবেন বললেন না!

বিভোরের কথা শুনে হৃদি পেছন ফিরে তাকায়।মুচকী হেসে বলে,,

-আপনি যা দেন

বিভোর ডিব্বা থেকে ওরিও বিস্কিট বের করে দেয়।এই বিস্কিটটা বিভোরের খুব পছন্দের।বিভোরের জানামতে ছোট বড় সবাই এই ওরিও বিস্কিটটা পছন্দ করে।হৃদিও অবশ্যই করে।বিভোরের আন্দাজ ভুল হয় নি।ওরিও বিস্কিটটা হৃদিরও খুব পছন্দের।হৃদি প্যাকেট থেকে একটা বিস্কিট নিয়ে কামড় দেয়।

-এই দেখছেন!দুধই আনা হয় নাই।
-আরেহ,লাগবে না।
-না না ওরিও দুধ ছাড়া জমেই না।

কথাটা বলে বিভোর কিচেনের দিকে যায়।ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে গরম করে দুই গ্লাস দুধ নিয়ে এসে হাজির হয়।টুকটাক কথা বলতে বলতে যে কখন দুজনে আড্ডায় চলে গেছে কেউ খেয়াল করেনি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত সাড়ে তিনটা বাজে। এত রাত হয়ে গেলো!

-সাড়ে তিনটা বাজে।ঘুমাবেন না?সকালে তো ডিউটি আছে না আপনার?
-হ্যাঁ।আচ্ছা গুড নাইট।ঘুমিয়ে পড়ুন আপনিও

কথাটা বলে বিভোর গ্লাস দুটো নিয়ে কিচেনের দিকে যায়।তা দেখে হৃদি,,

-আপনি যান ঘুমান।আমি গ্লাস পরিষ্কার করছি।
-আমিই করি!
-নাহ।আপনি যান

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে