নিয়তি পর্ব-০৪

0
994

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট৪

তিন দিন হলো হৃদি আলভীর ভাই অভিকে পড়াচ্ছে।মামার বাসা থেকে আলভীর বাসায় আসতে প্রায় দশ মিনিট লাগে রিক্সায় গেলে।আর হেঁটে গেলে আধঘন্টা লেগে যায়।কিন্তু একটা বিষয়ে হৃদির খটকা লাগছে।সে এখন পর্যন্ত আলভীর মা বাবাকে দেখেনি।এত বড় বাড়িতে একটা ছেলে একটা বাচ্চাকে নিয়ে তো কখনোই একা থাকতে পারবে না।হৃদি আবার সোজা কথার মেয়ে।সেদিন হৃদিকে আলভী এগিয়ে দিচ্ছিলো।এমন সময় হৃদি বলে উঠে,,,

-আচ্ছা পুরো বাসায় কী তুমি আর অভি একাই থাকো?
-আরেহ তুমি পাগল নাকি?আমি একা থাকবো কিভাবে?
-নাহ মানে তোমার বাবা মা কাওকে দেখলাম না তো!তাই জিজ্ঞাস করলাম আর কী!

হৃদির কথা শুনে আলভী মুচকী হাসে।আর বলে,,

-বাবা ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছেন অনেক দিন আগে।মা চাকরি করেন তাই এখন পর্যন্ত মাকে দেখতে পাও নি।

হৃদি আর কিছু বলে না।আলভীর কথা শুনে মুচকী হাসে।ইদানীং হৃদির মুচকী হাসি দেওয়া খুব বেড়েছে।কথায় কথায় সে মুচকী হাসে।রিক্সা না পাওয়ায় আজ হৃদি হেঁটেই বাসায় যায়।বোরখাটা ছেড়ে মুখ ধুয়ে সিঁথির ঘরে যায়।সিঁথি তখন ফোনে কথা বলছিলো।হৃদি গিয়েই সিঁথিকে ডাক দেয়।হৃদির ডাকে সিঁথি অনেকটা চমকে যায়।সাথে রেগেও যায়।ধমকের সুরে হৃদিকে বলে,,

-জানিস না ? কারও ঘরে ঢোকার আগে নক করে ঢুকতে হয়!

সিঁথির এমন ব্যবহারের জন্য হৃদি মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।একটু ঘাবড়ে যায় সে।কাঁপা কন্ঠে বলে,,

-স..স..সরি সিঁথি দি।আমি বুঝতে পারি নাই।
-কি জন্যে আসছিলি বল।
-মা..মা..মামী তোমায় ডাকছে।
-আচ্ছা আসছি।তুই যা।

সিঁথির কথা মতো হৃদি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। হৃদি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই সিঁথি আবার ফোনে কথা শুরু করে। হ্যা এতক্ষণ সে তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে কথা বলছিলো।অবশ্য প্রাক্তন বলাটা অত মানায় না।কারণ সিঁথি এখনো ছেলেটার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে।ছেলেটা সিঁথির নাম্বার যোগার করে সিঁথির সাথে যোগাযোগ করে।সিঁথি কয়েকদিনে ওর প্রাক্তনকে ভুলে গেলেও ছেলেটা যে চে সিঁথিকে ফোন করায় পুরোনো মায়াটা জেগে উঠে।আমারদের সমাজে না কিছু মানুষ আছে!খুব বোকা। সবাইকে নিমেষেই নিজের আপন ভেবে নেয়।হৃদিও তাদের একজন।হৃদি সিঁথিকে নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবলেও সিঁথি হৃদিকে আমলেই নেয় না। ফুপির মতো সিঁথির কাছেও হৃদি এই বাড়ির আশ্রিতা। আগে যা ভালো ব্যবহার করেছে সিঁথি হৃদির সাথে তা সব লোক দেখানো ছিলো।এক কথায় যাকে বলে আগলা পিরিত।মামীর মতো হৃদির সিঁথি দিও চায় সে বিদায় হোক।

-মা ডাকছিলে?

সিঁথির ডাকে পিছন ফিরে তাকায় বিলকিস বেগম।তার পাশে বসেই তরকারি কাটছিলো হৃদি।বিলকিস বেগম সিঁথিকে তরকারি কাটার নির্দেশ দেন আর হৃদিকে বলেন ঘর ঝাড়ু দিয়ে মুছে ফেলতে।হৃদি মামীর আদেশ পালনের জন্য লেগে পড়ে ঝাড়ু নিয়ে।ঘর ঝাড়ু দেওয়া হলে একে একে ঘর মুছে হৃদি।এরই মধ্যে বাসার সবাই গোসল সেরে ফেলে।ঘর মোছা শেষ করে সবে ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়েছে তো মামির ডাক পড়ে,,,

-হৃদি!কাপড়গুলো ধুয়ে দে।
-যাই মামী।

সাম্য বরাবরই অগোছালো টাইপের ছেলে।কোনো কিছুর ঠিক নেই।প্রায় এক সপ্তাহের জামা কাপড় জমে আছে।একরাশ বিরক্তি নিয়ে সিঁথি সেগুলো হৃদির দিকে ছুড়ে মারে।ইদানীং সিঁথির আচরণ হৃদির কাছে কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগছে।আজ আরও বেশি লাগছে।নক না করে ঘরে যাওয়ার কারণে হয়তো সিঁথি রাগ করেছে।আর রাগ করাটা স্বাভাবিক। নিশ্চয়ই কোনো দরকারি কথা বলছিলো।আর সেই সময় হৃদি ঢুকায় সিঁথি হয়তো বিরক্ত হয়েছে।কাপড় গুলো ধুয়ে ছাদে রোদে দিতে যায় হৃদি।তখনই সিঁথি চুল ঝাড়া দিতে দিতে ছাদে আসে।সিঁথিকে দেখে হৃদি গলা ঝেড়ে কাশে।সিঁথি হৃদির দিকে তাকিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলে,,

-কিছু বলবি?
-হ্যা।সরি সিঁথিদি।
-কেন?
-নক না করে ঘরে ঢুকেছিলাম।তুমি মেইবি রাগ করছো আমার ওপর।

সিঁথি মুচকী হাসে।তোয়ালেটা রোদে শুকা দিয়ে হৃদিকে রেলিংয়ের কাছে নিয়ে যায়।হাত দুটো রেলিঙে ভর দিয়ে বলে,,

-জানিস হৃদি?ইদানীং না নিজের একটা বেড সাইড নিজেই ধরছি।এই বেড সাইডটা না আগে ছিলো না।হঠাৎ করে কিভাবে এই বেড সাইডটা আমার মধ্যে এলো আমি নিজেই বুঝছি না।
-কী বেড সাইট সিঁথিদি?
-অল্প কিছুতেই রিয়াক্ট করে ফেলি।ঠিক যেমনটা তোর সাথে করেছিলাম!তুই রাগ করিস না প্লিজ।
-আরেহ রাগের কী আছে।আমার দোষ ছিলো বলেই তো তুমি আমায় ধমক দিয়েছিলে।

হাসতে হাসতে সিঁথির কথার জবাব দেয় হৃদি।সিঁথি মুচকি হেসে হৃদির গালে হাত দিয়ে বলে,,

-পাগলী মেয়ে।

অফিস থেকে আসতেই সাম্য হৃদির ঘরে যায়।হৃদি তখন বিছানায় হেলান দিয়ে বই পড়ায় ব্যস্ত।সাম্যকে দেখা মাত্রই হৃদি উঠে দাঁড়ায়।হৃদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাম্য বলে,,

-সিঁথি কই?
-বিকেলের দিকে বের হইলো।বললো বান্ধবীর বাসায় যাইতেছে বেড়াইতে।কোনো দরকার?
-আমার নীল টি শার্টটা খুঁজে পাচ্ছি না।
-আসো আমি দিতেছি।

বইয়ে বুক মার্ক দিয়ে হৃদি সাম্যের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সাম্যও পেছন পেছন যায়।সাম্যের ঘরে ওর জামা কাপড় রাখার জন্য আলাদা আরএফএল এর একটা ওয়ার্ডফ আছে।বিকেলে ছাদ থেকে কাপড় গুলো নিয়ে এসে সাম্যের কাপড়গুলো ভাজ করে সেখানেই রেখেছিলো হৃদি।ড্রয়ার থেকে টিশার্টটা বের করে সাম্যের হাতে দেয় হৃদি।

-এত অলস হলে চলবে না।দুইদিন পর বাচ্চার বাবা হবা।আর এখনো তোমায় জিনিস খুঁজে দিতে হয়?!

কথাটা বলেই হৃদি রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায়।অফিস থেকে এসে সন্ধ্যায় চা খাওয়ার অভ্যেসটা সাম্যের বেশ পুরোনো।আগে হৃদিই সাম্যকে চা বানিয়ে খাওয়াতো।বিয়ের পর সিঁথি সেই দায়িত্ব পালন করে। আজ সিঁথি না থাকায় হৃদিকেই সাম্যের জন্য চা বানাতে হচ্ছে।সাম্যের ঘরের চৌকাঠ পেরোনোর আগে হৃদিকে সাম্য পেছন থেকে ডাক দেয়।হৃদি পেছন ফিরে তাকায়।

-তোর কথায় তো সিঁথিকে বিয়ে করলাম।কী মনে হয় তোর সিঁথিকে বিয়ে করে আমি সুখে আছি?
-কম আসি তোমার সামনে।কথাও কম বলি যাতে তোমার মন আমার ওপর থেকে সরে যায়।আসলে কী জানো?একই ছাদের তলে আছি তো।তাই আমাদের কারও মায়া কাটতে চাচ্ছে না একে অপরের প্রতি।তাড়াতাড়ি এই বাসা থেকে বিদায় হতে পারলে আমিও শান্তি পাই আর তুমিও।
-হ্যা তাই কর।তবে আমি বলে দিলাম ভেতরে ভেতরে যে আগুনে আমি পুড়ে মরছি তার জন্য দ্বায়ী বাসার সবাই।বিশেষ করে তুই।
-জানি আমি।কিন্তু আমার কাছে নিজের ভালো থাকা থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মামা মামীর ভালো থাকা।মা মরা এতিম মেয়ের জন্য তারা যা করেছে তার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো কি না জানি না।বাবা-মার ভালো থাকার জন্য ছেলে হিসাবে তুমি এইটুকু সেক্রিফাইজ করতেই পারো।আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।

কথাটা বলেই হৃদি দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।সাম্য হৃদিকে ডাক দিতে গিয়েও থেমে যায়।সাম্যের হাতে চায়ের কাপ খানা দিয়ে হৃদি আবার নিজের ঘরে যায়।চা খেয়ে সাম্য দেখে ঘড়ির কাটায় সন্ধ্যা সাতটা বাজে।অথচ এখনো সিঁথির আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।সে সিঁথিকে ফোন লাগায়।কিন্তু ফোন বন্ধ!হয়তো চার্জ শেষ।অফিসের কিছু ফাইল আলমারিতে ছিলো।সাম্য সেগুলো বের করতে আলমারি খুলে।আলমারি খুলতেই সে আকাশ থেকে পড়ে।আলমারি সিঁথির কোনো জামা কাপড় নেই।লকারটাও খোলা।সাম্য দেখে লকারে সিঁথির কোনো গয়না নেই।সব ফাঁকা।সাম্য হন্তদন্ত হয়ে বিলকিস বেগমকে ডাক দেয়।

-আম্মু সিঁথি কই?
-বান্ধুবীর বাসায় গেছে।
-কোন বান্ধবীর বাসায় গেছে কিছু বলছে?আর সঙ্গে কী ছিলো।
-কি আর থাকবে ছোট পার্স।ও নিজে থেকে বলে নাই কোন বান্ধুবীর বাসায় গেছে।আমিও যে চে জিজ্ঞাস করি নাই।
-বোকার মতো কাজ করছো।
-কেন কী হইছে?
-ঘরে সিঁথির জামা কাপড় গয়না গাটি কিছু নাই।
-কীহ?

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে