নিষ্প্রভ প্রণয় পর্ব-০১

0
941

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#সূচনা পর্ব
লেখনীতেঃএকান্তিকা নাথ

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ই পাত্রপক্ষের সামনে সাতমাসের ভরা পেট নিয়ে বসে আছে সেতু।চোখমুখে তার বিস্তর রাগ আর বিরক্তি।ডিভোর্স হওয়ার ছয়মাসের মধ্যেই তাকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে?তাও আবার এই অবস্থায়?বড় ভাইয়ের ঘাড়ে সে এতটাই বোঝা হয়ে গিয়েছে?এখন পাত্রপক্ষের সামনে না আসলেও বউদির পাঁচটা ত্যাড়া কথা শুনতে হবে তাকে।এমনিতেই বউদির মতে সে তাদের অন্ন ধ্বংস করছে।বাধ্য হয়েই মুখচোখ কুঁচকে বসে রইল সে।পাত্রপক্ষের মধ্যে বয়স্ক দেখতে মহিলাটি পাশের মহিলাটিকে উদ্দেশ্য করেই ফিসফিসিয়ে বলল,

” এ কি !মেয়েতো দেখি পোয়াতি।আমরা তো ভেবেছিলাম কেবল ডিভোর্সী।আমাদের ছেলে কিনা শেষে ডিভোর্সী আর পোয়াতি এক মেয়েকে বিয়ে করবে? তা আমাদের ছেলে কোন দিক দিয়ে কম শুনি?এখনো হাজারটা মেয়ে লাইন ধরবে।এই মেয়ের মধ্যে কি আছে এমন?”

কথাটা সেতুর কানে যেতেই মগজ বিগড়ে উঠল তার।সত্যিই তো!একটা অবিবাহিত ছেলে কেন যেচে পড়ে একটা ডিভোর্সী আর অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে বিয়ে করবে?আশ্চর্য!সেতু ভ্রু কুঁচকে সামনে তাকাল।দুইজন মহিলা। কোন ছেলেপেলে নেই এখানে।তার মানে পাত্র আসেনি।ছোট শ্বাস টেনেই কুশলাদি বিনিময় করল।দুইজন ভদ্রমহিলাই মেকি হাসল।বয়স্ক দেখতে মহিলাটির পাশের মহিলাটি বলে উঠল,

” তুমি কি আমাদের দেখে বিরক্ত মা?”

সেতু উত্তর খুঁজে পেল না।ছোট ছোট চোখে একবার তাকাতেই তার বউদি এগিয়ে আসল।হেসেই তৎক্ষনাৎ বলে উঠলেন তিনি,

” এমাহ!কি যে বলেন।বিরক্ত হবে কেন?আমাদের সেতু অনেক ভালো মেয়ে। আসলে এই অবস্থায় একটু খারাপ লাগছে হয়তো তাই।আপনারা কিছু মনে করবেন না।”

সেতু বউদির অতি ভালো আচরণে মুগ্ধ না হয়ে পারল না।যেভাবে এখানে তার প্রশংসা করছে সেভাবে যদি নিজের মনে মনে হলেও সেতুর একটু প্রশংসা করত তাহলে তো কথায় ছিল না।সেতু তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।পাত্রপক্ষের মাঝে বয়স্কা মহিলাটি এবার প্রকাশ্যেই বলে ফেলল,

” তা আপনারা তো বলেননি আপনাদের মেয়ে পোয়াতি?”

সেতুর বউদি এবার ভ্রু কুঁচকাল।নাস্তা এগিয়ে দিতে দিতেই বলল,

” বলার সুযোগই তো দিলেন না কাকিমা।আপনারা তো তখনই পারলে বিয়েটা সেরে ফেলছেন।কি তাড়াহুড়ো আপনাদের!আমি তো তখনই বলে দিতে চেয়েছিলাম।আপনাদের তাড়াহুড়োর জন্যই তো বলা হলো না।”

বয়স্কা মহিলাটা এবার মুখ কালো করলেন।তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে উঠলেন,

” আমাদের ছেলে তো আপনাদের মেয়ের জন্য দেওয়ানা হয়ে গেছে।কি এমন দেখল এই মেয়ের মাঝে আমার ভাই পো কিজানি!”

পাশের মহিলাটি হাত চেপে ধরলেন বয়স্ক মহিলাটির।মৃদু কন্ঠে বললেন,

” আহ, দিদি!থামুন না। নিষাদ শুনলে রাগ করবে।”

বয়স্কা মহিলাটা ফাংসে মুখ করে চুপ থাকলেন।পাশের মহিলাটি আবারও বলল,

“আমান ছেলে চায় আপাদত পাকা কথা হয়ে যাক। বিয়েটা নাহয় পরেই হবে।মানে পরের বছর বা আরো পরে।আপনারা কি বলুন?”

সেতু চমকাল।বুকের ভেতর অজানা এক ভয়ে কম্পন শুরু হলো।সে এসব বিয়ে সংসারে আর বিশ্বাস করে না।উল্টো ভয় পায় এসব।এখন আবার এসব বিয়ে সংসারে জড়াতে হবে?প্রথমে ভেবেছিল সে অন্তঃসত্ত্বা এটা দেখে পাত্রপক্ষ বিয়ে ভেঙ্গে দিবে।কিন্তু নাহ!পাত্রপক্ষ একমুহুর্তের দেখাতেই বিয়ে পাকা করে ফেলছে?কি আশ্চর্য!সেতু ভীত চোখে একবার বউদির দিকে তাকাল।বউদির মুখে গদগদ হাসি।ঠোঁট চওড়া করেই উনি বলে উঠলেন,

” কেন নয়?আমরা রাজি।সেতুর দাদা আসলেই সবটা বলব।”

সেতু চোখ বন্ধ করল।বউদির হাত চেপে ধরেই অস্ফুট স্বরে বলল,

” ব্ বউদি?”

বউদি কথা শুনলেন না।উল্টো চোখ রাঙ্গিয়ে তাকে থামিয়ে দিল।দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলল,

” দয়া করে কিছু বলতে যেও না সেতু।আগের বিয়েটাতো টিকিয়ে রাখতে পারোনি।এবার অন্তত চুপ থাকো।”

সেতু চুপ রইল।চোখ টলমল করছে।বিয়েটা ভাঙ্গাতে তার কোন দায় ছিল কি?সে তো বিয়ের পর আকাশকে সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেছে।আকাশরর পরিবারের কারোর সাথেও তো কোনদিন ঝগড়া-ঝামেলা করেনি।তাহলে তার দোষ কোথায়?আকাশ যদি তাকে ভালো না বাসে সেটা কি তার দোষ?জোর করে কি ভালোবাসা আদায় করা যায়?তাই তো সেতু মুক্তি দিল আকাশকে।কিন্তু বউদি তাকে প্রত্যেকবার এমনভাবে দোষারোপ করে যেন তার দোষেই সংসারটা ভেঙ্গে গেল।সেতু ছোট্ট শ্বাস ফেলল।ভদ্রমহিলারা চলে যেতেই নিজের রুমে গিয়ে খাটে সটান শুঁয়ে পড়ল।পেটের ভেতর বাচ্চাটা নড়াচড়া করছে।মাঝেমাঝে পেটের চামড়ায় চিনচিনে ব্যাথাও হচ্ছে।হঠাৎ রিংটোনের তীক্ষ্ণ আওয়াজেই পাশ ফিরে চাইল।মোবাইলের স্ক্রিনে অচেনা নাম্বার!প্রথম দুইবার রিং হয়ে কেঁটে গেলেও তৃতীয়বার কল রিসিভড করল সে।রাশভারি গলায় বলে উঠল,

” কে বলছেন?”

ওপাশের লোকটি চুপ থাকল কিয়ৎক্ষণ।তারপর হুট করেই বলল,

” মিসেস সেতু?উহ স্যরি!মিস সেতু।রাইট?”

সেতু থমকাল।পরিচিত কন্ঠ শুনেই বুকের ভেতর কম্পন উঠল।আজ কত বছর পর সেই কন্ঠস্বর!সে শুকনো ঢোক গিলল।কন্ঠ স্বাভাবিক রেখেই বলল,

” হ্যাঁ?কে আপনি?”

লোকটা দৃঢ় গলায় উত্তর দিল,

” আমি?তোমার প্রতি শতসহস্র ঘৃণা পুষে রাখা এক মানব।”

সেতু চোখজোড়া বন্ধ করে নিল।নিঃশ্বাসের বেগ দ্রুত হলো।হৃদয়ের ভেতর অপরাধবোধ জ্বলন্ত হয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ।পরমুহুর্তেই চোখে ভেসে উঠল মানুষটার ঘৃণাভরা চাহনী!সেই চাহনীতে সেদিন একঝুড়ি ক্ষোভ, রাগ আর ঘৃণা ছিল।মানুষটা এখনো তাকে ঘৃণা করে?এখনো রেগে আছে তার উপর?এখনও কি তার উপর ক্ষো’ভ পুষছে?সেতু কিছু বলতে পারল না।ওপাশের মানুষটা আবারও বলে উঠল,

” কি হলো? চিনতে পারলে না বুঝি?বরকে ভালোবাসতে বাসতে ভুলে বসেছো?অবশ্য, আমি তো তোমার মনে কোনদিন ছিলামও না। ভুলার প্রশ্নই আসে না।তাই না?”

সেতু ঠোঁট চেপে ধরল। অস্পষ্ট গলায় উত্তর দিল,

” ন্ নিষাদ!”

নিষাদ তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল।বলল,

“চিনতে পারলে তবে?”

” হ্ হু।”

” প্রাক্তন বরকে এখন খুব করে মনে পড়ে না?এতটা ভালোবাসলে তাও বেঁধে রাখতে পারোনি?”

কাঁ’টা গায়ে নুন ছিটানোর মতোই আঘাত করল কথাটা।তাও সেতু নিশ্চুপ থাকল।নিষাদ যে এমন কোন কথা বলবে সে জানত।নিষাদের কিসের এত রাগ তার উপর?কেন এতটা কষ্ট দেওয়ার মনোভাব?সে কি আসলেই কোন অন্যায় করেছিল?সবটাই তো পরিস্থিতির দায়ে হয়েছিল।পরিস্থিতিই তো বাধ্য করেছিল।সেতু ছোট করেই উত্তর দিল,

” হু,পারিনি।”

” সেদিন আমারও এমনটা লেগেছিল।এতটা ভালোবেসেও বেঁধে রাখতে পারিনি।তুমি তো বেশ সুখী ছিলে সেদিন তাই না?তোমার বরও তো বেশ ভালো ছিল তাহলে হঠাৎ…”

নিষাদ পুরো কথাটা শেষ করতে পারল না।তার আগেই সেতু দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

” আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন? এতদিন পর আবার যোগাযোগ করছেন কেন?কি বলতে কল করেছেন?”

নিষাদ এবার বোধ হয় হালকা হাসল। বলল,

” কোনটার উত্তর দিব?”

সেতু ভাবল।অতিরিক্ত প্রশ্ন করে ফেলেছে?বোধ হয়।তিন তিনটে প্রশ্ন করা উচিত হয়নি।বলল,

” আমার কন্ট্যাক্ট নাম্বার কিভাবে পেলেন?”

” তোমার বউদি দিয়েছেন।”

ব্যস!সেতুুর মস্তিষ্কে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল যেন।তখনকার বিয়ের সম্বন্ধটা যে নিষাদের পরিবার থেকেই এসেছে তা ভেবেই রাগে শরীর শিরশির করছে। নিষাদ তাকে ঘৃণা করে!তবে কি ঘৃণার মাশুল হিসেবেই তাকে দয়া করে বিয়েটা করতে চাইছে?কথাগুলো ভেবেই কঠিন কন্ঠে বলে উঠল সে,

” আপনিই?তার মানে আপনিই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন?আপনি তো আমায় ঘৃণা করেন।তাহলে বিয়ের প্রস্তাব কেন?”

” প্রতিশোধ শব্দটা শুনোনি?প্রতিশোধ নিতে চাই।যতোটা কষ্ট আমি পেয়েছি সেই কষ্টের দশগুণ আমি মিটিয়ে নিতে চাই তোমার থেকে!একটা সময় বেকার বলেই তো গুরুত্ব দাওনি, আজ দেখো আমি সাবলম্বী!তোমার পরিবার নাচতে নাচতে রাজি হয়ে গিয়েছে বিয়েতে। যেন আমাকে হাতছাড়া করলেই বিরাট বড় লস হয়ে যাবে!অথচ একটা সময় আমি কতোটা ঠুনকো ছিলাম তোমার আর তোমার পরিবারের কাছে!”

” অহংকার করছেন?নাকি আমার পরিবার নিয়ে উপহাস করছেন?”

” ভেবে নাও দুটোই।”

সেতু আর কিছু না বলে চুপ করে রইল কিয়ৎক্ষন।নিষাদ পুণরায় বলল,

” শুনলাম তোমার বর নাকি ডিভোর্সের পরপরই দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়েছে?ঠকিয়েছিলে না আমায়!ঠকানোর ফল পেয়ে গেলে তো? তোমাকেও কেউ ঠকিয়ে গেল হুহ?”

কথাটা বলেই নিষাদ হেসে উঠল।সেতু জ্বলে উঠল।নিষাদের সব কথা মেনে নিতে পারলেও এই কথাটাই যেন তীরের মতো গিয়ে বিঁধল বুকের ভেতর!দাঁতে দাঁত চেপে তৎক্ষনাৎ কঠিন কন্ঠে বলে উঠল,

” জাস্ট শাট আপ নিষাদ ভৌমিক! আমি আপনাকে ঠকাইনি।ঠকাইনি আমি আপনাকে।আপনার সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্ক ছিলই না যে আমি আপনাকে ঠকাব।বারবার এই একই দায় আমার উপর দেবেন না বলে দিলাম।”

নিষাদ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। বলল,

” ওহ রিয়েলি?ঠকাওনি তুমি আমায়?প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা বুঝি ঠকানোর মধ্যে পড়ে না?যাকগে বাদ দাও জয়ীতা।বি রেডি ফর নেক্সট ! ওকে?”

কথাটা বলেই নিষাদ কল রেখে দিল।সেতু মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।কি করবে নিষাদ?কি প্রতিশোধ নেবে সে?তার গর্ভে একটা নিষ্পাপ প্রাণ বেড়ে উঠছে।নিষাদ প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সেই নিষ্পাপ প্রাণের কোন ক্ষতি করে ফেলবে নাতো?

.

সন্ধ্যা হতে হতেই অন্ধকার নামল।সেতুর রুমটাও অন্ধকার!বাইরে গুড়গুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে।দুপুরেও খাওয়া হয়নি। পেটের ভেতর বাচ্চার নড়চড় বুঝতে পেরেই শোয়া থেকে উঠে বসল সে।পা চালিয়ে দরজা মেলতেই সোফায় ভাই আর বউদিকে দেখতে পেল।কিছু না বলেই এড়িয়ে রান্নাঘরে ডুকল।প্লেটে খাবার বেড়ে নিতে নিতেই কানে আসল,

” দুপুরে তো তেজ দেখিয়ে খেলে না।এখন তো সেই খেতে হচ্ছে তাই না সেতু?রাগ জেদ এসব একটু কমাও বুঝলে।যখন মা বেঁচে ছিল তখন মায়ের সাথে রাগ জেদ দেখিয়েছো ভালো কথা।কিন্তু আমাকে তোমার মা ভেবো না।”

কথাগুলো শুনেই সেতুর চোয়াল শক্ত হলো।বলল,

” কি বলতে চাইছো তুমি বউদি?”

” এটাই যে পরবর্তী সংসারটা অন্তত টিকিয়ে রেখো।এই যে রাগ জেদ এসব স্বামীর সংসারে গিয়ে দেখিও না।পারলে তাদের মনমতো চলার চেষ্টা করো।”

” তুমি কি বলতে চাইছো আগের সংসারে আমি সবার মনমতো চলিনি? ”

সেতুর বউদি উপহাস করেই বলল,

” মনমতো যদি চলতেই তাহলে সংসারটা ভেঙ্গে ঢ্যাংঢ্যাং করে বাপের বাড়ি এসে বসে থাকতে না।”

সেতু খাবারের প্লেটটা আগের মতোই টেবিলের উপর রেখে দিল।খাবারটা আর গলা দিয়ে নামবে না।এক গ্লাস পানি নিয়ে ডগডগ করে খেয়েই বলল,

” আমি যদি কিছু একটা করতে পারতাম তাহলে সত্যিই কোনদিন তোমাদের বাড়িতে আসতাম না বউদি!দরকার হলে না খেয়ে ম’রে যেতাম।তোমার এত কথা শুনেও কেন পড়ে আছি জানো?আমার সন্তানের জন্য!ওকে যে না খাইয়ে মা’রতে পারব না। ”

সেতুন কথাটায় সন্তুষ্ট হলেন না ওর বউদি।গলা উঁচিয়ে ঝাঝালো গলায় বলে উঠলেন তিনি,

” তুমি কি বলতে চাইছো তোমাকে আর তোমার সন্তানকে না খাইয়ে মে’রে ফেলছি আমরা? ভাইয়ের ঘাড়ে বসে বসে আজ ছয়মাস গিলে যাচ্ছো তাও এই কথা বের হলো তোমার মুখ দিয়ে?কি করছে না তোমার ভাই তোমার জন্য?তোমার ভাইয়ের তো আর ভেঙ্গে বেয়ে পড়ে যাচ্ছে না ধনসম্পদ সেতু।ঐ দুই টাকার চাকরিতে আমাদেরই চলে না তার উপর তুমি এসে জুটেছো। তাও তো না খাইয়ে রাখছি না।এই যে তোমার দ্বিতীয় বিয়েটা হবে?বিয়ের খরচ কি তোমার মৃ’ত বাবা মা এসে দিয়ে যাবেন?তোমার ভাইকেই তো টাকাপয়সা খরচ করে বিয়েটা দিতে হবে।তাও এত তেজ আসে কিভাবে তোমার?”

সেতু রান্নাঘর থেকে বেরুতে বেরুতেই বলল,

” বিয়েটা তো আমি করতে চাইছি না বউদি! টাকাপয়সা খরচ করে আমাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে দিতে তো বলিনি আমি।”

” তো সারাজীবন ভাইয়ের ঘাড়ে বসে বসে গিলে যাবে এই চিন্তাধারা তোমার?এখন তো তুমি একা!দুদিন পর যে তোমার বাচ্চাও গিলবে সেই খেয়াল আছে?সংসারে এমনিতেই টানাপোড়ন, তার উপর তোমাদের দুই দুইজন মানুষের খরচ সারাজীবন টানবে কিভাবে তোমার ভাই?”

সেতুর পা থামল এবার।ভেতরটা কেমন জানি করল।আজ যদি কিছু একটা করতে পারত তাহলে নিশ্চয় এতগুলো কথা শুনতে হতো না তাকে।নিজের অমতে বিয়েও করতে হতো না।কিন্তু কিছু করার উপায়টাও যে তারাই বন্ধ করে দিয়েছিল।উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার আগেই ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে ভালো পাত্র পেয়ে।তারপর তো স্বামীর সংসারে গিয়ে পড়ালেখাও করা হয়ে উঠল না।আজ যদি পড়ালেখাটা করত তাহলে ও একটা ভরসা ছিল।কি করবে সে?নিষাদও কি তাকে সুখে রাখার জন্য বিয়েটা করবে?না তো।সে তো কষ্ট দিবে বলেই যত্ন দেখিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।সেতু লম্বা শ্বাস ফেলল।ধীর পায়ে নিজের ঘরে ডুকতে গিয়েই ভাইয়ের গম্ভীর গলা কানে আসল,

” সেতু!তোর বউদির সাথে এত কিসের ঝগড়া তোর?যখনই বাসায় থাকি তোদের দুইজনের চেঁচামেচি চলতেই থাকে।কেন?একটু মানিয়ে নিতে পারিস না তোর বউদিরর সাথে?”

সেতু হাসল।তাচ্ছিল্যের হাসি!ঠোঁট প্রশস্ত করে বলল,

” কি করব বলো দাদা?তোমার বোন যে সভ্য হতে পারল না আজও।যাকগে, বিয়ে হলে তো চলেই যাব।ততদিন পর্যন্ত বরং তোমরা একটু মানিয়ে নাও।হু?”

কথাটা বলেই ঘরে ডুকল সে।দরজা লাগিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল।বুকের ভেতরটা কেমন ভার হয়ে আসছে।জমানো কষ্টরা নিজেদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে খুব যত্ন করে।জীবনে প্রথম অনুভূতিটা আজ ভীষণ করে মনে পড়ছে তার।নিষাদকে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখা, প্রথম প্রথম প্রেমে পড়া, আনমনেই নিষাদের কথা ভাবা!আরো কতশত পাগলামো!কিন্তু ঐ যে পরিবার?পরিবারের কথা ভেবেই তো কখনো নিষাদের দিকে পা বাড়ায়নি সে।নিষাদকে কখনো বলাও হয়নি তার এই গোপণ ভালোবাসার কথা।তার আগেই পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করতে হলো।নিজের প্রথম অনুভূতিকে বিসর্জন দিয়ে সেদিন আকাশকে বিয়ে করেছিল এই পরিবারের কথা ভেবেই।অথচ পরিবার আজ তাকে বোঝা ব্যাতীত কিছুই ভাবে না।তার বোধহয় শুরুতেই নিষাদের হাত ধরা উচিত ছিল।পরিবারের কথা না ভেবে নিষাদেরর ভালোবাসায় মত্ত হওয়া উচিত ছিল।কি লাভ হলো পরিবারের কথা ভেবে?পরিবার তো তাকে একবিন্দুও বুঝল না।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে