নিষিদ্ধ প্রেম।

0
4171
রাইমানের জন্য আমি একটা শার্ট দেখছি আর তখনি সাফিন এসে আমাকে বল্লো,তোর নাকি বাচ্চা পেটে?ওই বাচ্চা টা কার?ওর না আমার?ওই **(গালি) বাচ্চা টা তো আমার। বিয়ের ২মাস পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে রাইমান আমাকে শপিং করতে নিয়ে এসেছে। রাইমান, আমার নব বিবাহিত বর। আর সাফিন আমার প্রাক্তন। যাকে আমি ২ বছর যাবত ভালবেসে এসেছি।কত যে স্বপ্ন দেখেছিলাম ওকে নিয়ে,তা গুনে শেষ করা যাবেনা। একটা সময় ভাবতাম ওকে পেলে আমার বাবার বাড়ী না এলেও চলবে, একটুও কষ্ট হবেনা বাসার মানুষ গুলোর জন্য।
সাফিন দেখতে অনেকটা লম্বা আমার থেকে। যেদিন ও আমাকে প্রথম প্রপোজ করলো একটা ফুল নিয়ে এসে হাটু গেড়ে বসে বল্লো,ভালবাসি অন্তরা। আমি ওকে জাস্ট বলেছিলাম,এত লম্বা আপনি?? এরপর ও একটা হাসি দিয়ে চলে যায়। পরের দিন হুট করেই আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, সারাজীবন আমার এই বুকে থাকার জন্য রাজি আছো? আমি:আপনি এত লম্বা আর আমি কত ছোট দেখেছেন?আপনার বুক পর্যন্ত হই আমি। সাফিন:সেই জন্যইতো ভালো,সারাজীবন আমার বুকে থাকতে পারবে। সেদিন সাফিনের কথায় আমি অনেক টা লজ্জা পাই। দিন যায়,ওর প্রতি একটা ভালো লাগা কাজ করতে থাকে।ও প্রতিদিন আমার স্কুলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।দূর থেকে আমাকে একটু দেখে চলে যায়। ওর এই পাগলামো গুলো ওকে ভালবাসতে বাধ্য করে আমাকে। ভালবেসে ফেলি ওকে। শুরু হয় দিন রাত মোবাইলে কথা। আমি স্কুলে থেকে ফেরার পথে,স্কুলে যাওয়ার পথে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকে সাফিন। হয় চোখাচোখি। স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে কলেজে উঠলাম,কঠিন প্রেম চলছে আমাদের। একদিন না দেখলে যেন পাগল হয়ে যাই, ওর ও জেদ প্রতিদিন দেখা করতেই হবে। নইলে যা তা ব্যবহার শুরু করে। কলেজে উঠার পর থেকেই শুরু হয় অর অন্য রকম একক ব্যবহার। -আজ আমার এত টাকা লাগবে অন্তরা। দিতে পারবা প্লিজ? -হুম পারবো তো,এই বলে টাকা দেই। কিছু দিন পর পর ই এখন ওর টাকার প্রয়োজন পরে,আজ এই গেঞ্জি কিনবে। কাল প্যান্ট,পরশু দাদীর জন্য শাড়ী। সব টাকা আমার কাছে চায়। আমিও ভালবেসে,লজ্জায় পড়ে দিতে বাধ্য হই। আব্বু প্রতি মাসে আমাকে হাত খরচ দেয়। সেই টাকা থেকে দিতে তেমন সমস্যা হতোনা। কিন্তু এত দেবার পরও যখন ওর সাথে মিট করতে যেতাম, তখন ও আমার কলেজ ব্যাগটা আমার কাছ থেকে নিয়ে পুরোটা ঘাটতো। আর যে কয়টাকা থাকতো ব্যাগে সব নিয়ে নিতো। অনুরোধ করে রিক্সা ভাড়াটা রেখে দিতে বলতাম।২০ টাকা রেখে দিতো। বাকিটা নিয়ে নিতো। দিন যাচ্ছে আমি ওকে ভালবেসে ফেলছি আরো বেশি।আর ওর মুখের ভাষা জঘন্য হচ্ছে।
ওর শুধু টাকা লাগবে টাকা। যেদিন মিট করতে বলবে সেদিনই মিট করতে হবে। না করলেই বাজে বিহেভ। এমন কোন দিন নেই যে ওর বিহেভে আমি কান্না না করতাম। কত বুঝাতাম,দেখো এমন রাফ বিহেভ না করলে কত সুন্দর হবে আমাদের সম্পর্কটা।আমরা ভালো থাকবো। কিন্তু ওর কোন পরিবর্তন নেই। আমার ওকে গিফট দিতে হবে, ওর যা যা প্রয়োজনীয় সব কিছু ওকে দিতে হবে। কিন্তু ও আমাকে একটা চকলেটও কিনে দিবেনা। দিন দিন ওর অত্যাচার বেড়েই চলছিলো আমার প্রতি। আর আমি প্রতিদিন সকালে ফোন দিয়ে ওর ঘুম ভাঙানো,দুপুরে খেয়েছে কিনা। সারাদিন কি করলো না করলো খোঁজ খবর নিতেই লাগলাম। একদিন ও আমাকে ফোন করে বল্লো,আজ আমি তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো। তুমি সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে থেকো। সুন্দর একটা ড্রেস পরো। মার সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেবো আজ। আমি সুন্দর করে রেডি হই। চোখে হালকা কাজল এঁকে নেই। ঠোঁটে হালকা লিপ্সটিক। আম্মুকে বলি আমার চুল গুলো বেধে দাও। আম্মু সুন্দর করে আমার চুল গুলো বেধে দেয়। সাফিন ফোন দিলে আমি রিক্সা নিয়ে গন্তব্যে পৌছাই। -সাফিন, -হুম। -মা আমাকে পছন্দ করবেতো? -কি যে বলোনা,মা বাবার এক মাত্র ছেলে আমি।আমার পছন্দই তাদের পছন্দ। -সত্যি? -হুম সত্যি।আর কয়দিন পরই আমরা বিয়ে করবো। আমি সাফিনের কাধে মাথা রেখে রিক্সায় করে ওর বাসায় যাই। বাসায় ঢুকতেই বলে চলো রুমে চলো। যেই আমি রুমে ঢুকলাম, দেখি কেউ নেই। পুরো বাসা একদম খালি। -সাফিন,মা বাবা কই? -বাসায় কেউ নেই।সবাই খালার বাড়ীতে বেড়াতে গেছে। -তাহলে তুমি যে বললে তাদের সাথে দেখা করাবে আজ আমাকে। -যদি বলতাম তারা বাসায় নেই তাহলে তুমি আসতে?আসতেনা। আজ তোমাকে আমার খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে। -মানে কি সাফিন? -মানে হলো,তোমার ওড়নাটা আমার একটুও পছন্দ না,ছিঃ কি বিচ্ছিরি দেখতে।ফেলে দাও তো ওড়নাটা। এই বলে সাফিন আমার বুক থেকে ওড়নাটা কেড়ে নিলো। (চলবে) (প্রথম পর্ব) নিষিদ্ধ প্রেম। তিতিশ্মা মুসাররাত কুহু।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে