নিশি_কাব্য পর্ব-১৭

0
688

নিশি_কাব্য পর্ব-১৭
(রোমান্টিক সংসারে গল্প)
লেখা-Rudro khan himu

আমি কি গাধা ছিলাম। নিশি আমার জীবনে এসে পক্ষান্তর ঘটিয়ে ফেলল।তারপর আমাকে একের পর এক নতুন নতুন অনুভূতির সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।জীবনের শুরু থেকে যদি নিশি আমার জীবনে থাকত তবে কতই না ভালো হতো।আমি সবকিছু অনেক বেশি বেশি করে উপভোগ করতে পারতাম।পুতুলটা বুকের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে।চুপ করে নিয়ে ওকে শুইয়ে দিয়ে আমি শুধু দেখছি নিশিকে।ভাবছি এই মেয়েটা আমার জীবনকে রাঙিয়ে দিল।কি আছে এই মেয়ের মাঝে?একা একটা মেয়ে,ছোট্ট একটা দেহ কিন্তু তার মাঝে এতটা ভালোবাসা,রোমান্টিকতা,প্রেম।মেয়েটাকে যদি আগেই পেতাম তাহলে আরো কতকিছু শিখতে পারতাম,কত অভিজ্ঞতা হতো।সন্ধা হয়ে যাওয়ার পর নিশি ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখে আমি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।
–কি হলো কি দেখছো?
–আমার ছোট্ট আদুরে পুতুলটাকে দেখছিলাম।
–তুমি ঘুমাওনি?
–না।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



–কেন?
–তোমাকে এত সুন্দর লাগছে যে বারবার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল।তাই না ঘুমিয়ে তোমাকে দেখছিলাম।আমার কথা শুনে নিশি কেমন যেন হয়ে গেল।বুঝতে পারছেনা ও কি বলবে।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল।হুট করে আমাকে জড়িয়ে ধরল।পিচ্চি বর তোমাকে ভালোবাসি।কতক্ষণ এরকম ছিলাম জানিনা। নিশি আমাক জড়িয়ে ধরলে আমার মেডিটেশন হয়ে যায়।ও আমার বুকে থাকলে ঘুম পালিয়ে যায়।হঠাৎ আযানের শব্দে দুজনের ঘোর কাটল।আমি নিশির দিকে তাকিয়ে আছি।
–নামায পড়বেনা?
–হ্যা,যাও ওযু করে আসো।নামায শেষ করলাম দুজন তারপর ডিনার করতে বের হলাম বাইরে।একটা ভালো রেস্টুরেন্টের খোঁজ নিলাম হোটেল বয়ের কাছ থেকে।সেখানে গিয়ে দেখলাম লোকজন খুব কম।একদম পাহাড়ের চুড়ায় রেস্টুরেন্ট।চারদিক অনেক সুন্দর করে সাজানো গোছানো।দুইদিকে জানালা খুলে দেয়া।আসলে খাবার খুব একটা মুখরোচক না হলেও জায়গাটা দেখেই মন ভরে যায়। নিশি তো ওখান থেকে আসতেই চাইছিল না।রাতে হোটেলে ফিরলাম দুজনে।নিরব নিস্তব্ধ রাঙামাটির রাস্তাগুলো।ওই দুর পাহাড় থেকে কিছু অজানা শব্দ কানে ভেসে আসে মাঝে মাঝে।তাছাড়া সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত সুন্দর। নিশি রাতে চুলে তেল দিয়ে দিতে বলল।ওর মাথা নাকি অনেক চুলকাচ্ছে।চুলে তেল মেখে দিচ্ছি পুতুলটাকে।মেঘকালো চুলে নিশিকে আমার বেশ ভালোই লাগে।জানালার পাশে বসে ঝিরি ঝিরি বাতাসে বউয়ের চুলে তেল দেয়াটা কেমন যেন বেমানান লাগছে।কিন্তু নিশিকে যদি আমি শুধুই বউ ভাবতাম তাহলেই শুধু এমনটা মনে হত।কিন্তু নিশি আমার অক্সিজেন যাকে ছাড়া একমুহূর্ত বেঁচে থাকা অসম্ভব।ও সকালবেলা আমার সাথে এমন করাতে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।বুঝতে পারছিলাম নিশিকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটা অসম্ভব।মেয়েটা কয়েকদিনেই আমার সবকিছু কেড়ে নিল।শান্তিমত শ্বাস-প্রশ্বাস নিব সেটাও অনেক কঠিন হয়ে গেছে।আমি নিশিকে আমার করে নিতে পারলাম না।উল্টো নিশি আমাকে ওর করে নিলো।মাথায় তেল দিয়ে চিরুনি করে দিলাম।অনেক রাত হয়ে গেছে।দু একটা পাহাড়ি শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে।রাতটা কেমন যেন বেশিই রোমান্টিক।উহু.. সেটা আবার নিশির জন্যই।কালকে সকালে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হব। সকাল ৭ টায় বাসে ।
খুব সকালে ওঠে দুজন মিলে সব গুছিয়ে নিলাম। রাঙামাটির অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ ছাড়া যাতে ইচ্ছা করছে না ।এক অদ্ভুত মায়া কাজ করছে। ঢাকার উদ্দেশে রওনা শুরু করলাম আমরা মুগ্ধ করে কিছু স্মৃতি নিয়ে। আমার কাঁধে মাথা রেখে নিশি পিচ্চি বাবুদের মত ঘুমিয়ে আছে। আমি নিশির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি । হালকা বাতাসে নিশির খোলা চুল গুলো ছোঁয়া যাচ্ছে । চুল গুলো ছোঁয়া দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নিশি যদি মিষ্টি ঘুম ভেঙ্গে যায় তাই শুধু দেখা যাচ্ছি।

আমাদের সামনের সিটে থেকে একটা ফুটফুটে একটা শিশু মায়াবী দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সিটের উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে নিশির মুখে স্পর্শ করলো। নিশির কোলে আসার জন্য কান্নাকাটি শুরু করেছে। নিশির কোলে আসার পর একদমই কান্না বন্ধ। এই অল্প সময়ে মধ্যে নিশির সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে।

বাবুর আম্মু বলছে –
–এখন কেউ দেখলে বলবে ও আমার মেয়ে। আপনার সাথে কতো চেহারা মিল আল্লাহ।
নিশি এই কথা শুনে খুশি হয়ে বাবুটাকে অনেক গুলো আদর করছে। এমন সময় হঠাৎ করেই একটা শব্দ হয়
চারিদিকে অন্ধকার দেখছি। মানুষের কান্না আর্তনাদের শব্দে ভরে হয়ে ওঠেছে চারপাশ।

মুখোমুখি বাসের ধাক্কায় মুহুর্তের মধ্যে সুন্দর পরিবেশটা নরকে পরিণত হয়েছে।
কান্না আহাজারিতে ভারী হয়েছে পরিবেশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করতে চলে এসেছে।
বাসের মধ্যে রক্তের লোল লেগে গেছে। আমার মস্তিষ্ক কাজ করছে না। কিছুক্ষন বোবার মত বাকরুদ্ধ হয়ে থাকার পরও যখন স্নায়ু কাজ করা শুরু করলো তখন নিশি দিকে তাকিয়ে দেখি পিচ্চি বাবুটা কে গভীর মমতায় বুকে আগলে রাখেছে ।
5P
Tptt
O
Orl

নিশির মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাচের টুকরো ঢুকে আছে।
তারপরও পিচ্চি বাবুটার যেন কিছু না হয়। ঐটার জন্য বুকের মাঝে গভীর মমতায় আগলে রাখছে।
ফায়ার সার্ভিস লোকদের সহযোগিতায় নিশিকে বাস থেকে বাইরে নিয়ে আসি ।
বাসটা একদম দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এখুনি রক্ত বের হয়ে নিশির সেন্সলেস হয়ে গেছে। তারপরও বাবুটাকে ছাড়ছে না। আমি তাড়াতাড়ি করে নিশি কে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম। নিশিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর ডাক্তারের কাছে ওর অবস্থা জানতে চাইলাম।
— আপনার মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। হাত-পাও অনেকখানি কেটে গেছে।( ডাক্তার)
নিশির জন্য এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমার কখন মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে খেয়ালই করিনি।
— আপনি চিন্তা করবেন না আপনার wife একদম ঠিক হয়ে যাবে। এখন আপনাকে ভর্তি হতে হবে। আপনার মাথা ফেটে অনেক রক্ত বের হচ্ছে।

আমার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিল। নিশির এখন জ্ঞান ফিরেছে। নিশি মাথায় তিনটা সিড়ি লাগছে এখন মোটামুটি নিশির অবস্থা ভালো।

নিশি কে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি মাঝে বাবুর আব্বু আম্মুর কথা ভুলেই গেছিলাম। নিশি এখন একটু সুস্থতাই। বাবুর টার আব্বু আম্মুকে খুঁজতে বের হলাম।

কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারলাম বাবুটার আম্মুর অবস্থা খুবই খারাপ আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছে।
আর বাবুটার আব্বু দুর্ঘটনা অবস্থাতেই মারা যায়।
এই কথাটা শুনে তো আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

বাবুটার আম্মুর অবস্থা জানার জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বললাম–
ডাক্তার বলল তার অবস্থা বেশি ভালো না। তার জ্ঞান ফিরার পর আমার সাথে নাকি কথা বলতে চায়। আর বাবুটাকে একবার দেখতে চাচ্ছে। আমি বাবুটাকে করলেন নিয়ে তার সামনে গেলাম। ওনার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছে বাবুটাকে তার পাশে শুইয়ে দিলাম। মায়ের মমতায় বাবুর কপালে গালে চুমু দিল। বাবুটাকে আমার কোলে উঠিয়ে দিয়ে বললো–

— দেখান ভাই আপনাদের কি বলে ধন্যবাদ জানাব আমার ভাষা নেই। আপনার স্ত্রীর নিজের জীবনের চিন্তা না করে আমার মেয়েটাকে বাঁচিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে আমি আর বাঁচবো না।
আমাদের পরিবারের তেমন কেউ নেই। যারা আমার মেয়েটাকে আদর করে মানুষ করবে। আমি জানি আপনারা আমার মেয়েকে খুব আদর করেই বড় করবেন। আমি আমার মেয়েকে আপনার হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি। এখন শান্তিতে মরতে পারবো।
— আপনি এসব কি বলছেন আপনি ভাল হয়ে যাবে। একদম কোন চিন্তা করবেন না। আপনার খুব ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।(আমি)
— না ভাই আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। আমি ঠিক বুঝতে পারছি আমি আর কিছুসময়ের মেহমান।
ভাই আপনার হাতটা একটু দিবেন?
— হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।
— আমি জানি আপনারা আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো করেই আদর করবেন এবং মানুষ করবেন।
হাত তারপরও আমার মেয়েকে আপনার হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। এই এতিম মেয়েটার খেয়াল রাইখেন।
— আপনি একদম চিন্তা করবেন না কথা দিলাম আমার নিজের মেয়ের মতোই ওকে মানুষ করবে।
আমার কথা শেষ না হতে উনি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন।

ফুটফুটে ফুলের মতো শিশুটা জানিনা ওর সাথে কতকিছু ঘটে গেছে। মুখে মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার শার্টের কলার ধরে টানছে। আমি একটা ওর কপালে চুমু দিলাম। তারপরও বাবুটাকে নিশির কাছে নিয়ে শুয়ে দিলাম। আর বললাম এখন থেকে ও আমাদের মেয়ে পুতুল বউ। নিশির সাথে সাথে বাবু টাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো । সব কিছু ভেঙে বললাম নিশির কাছে ওর বাবা-মার কথা।

আমাদের লক্ষী সোনা মেয়েটাকে নিয়ে আমরা বাসায় ফিরলাম। ওদেরকে বাসায় রেখে আমি সাথে সাথে বাবুর জন্য খেলনা কিনার জন্য চলে গেলাম। অনেকগুলো খেলনা কিনে আনলাম।
— এই হাঁদারাম বাবুর খাবার কোথায়?
— হায় আল্লাহ আমি তো একদমই ভুলে গেছিলাম।
— তুমি তো ভুলেই যাবা! শুধু শুধু তোমাকে হাদারাম বলে না। বাবুর জন্য জামা কাপড় কিনতে হবে।
আমরা তারপর আমরা বাবুর জন্য শপিং নিয়ে বের হলাম। লক্ষি সোনা মেয়েটার আমার কাঁধে মাথা রেখে শার্টের কলার খাচ্ছে।
— এটা দেখে খেয়ে নিশি আমাকে ধমক লাগিয়ে দিল! শার্টের কলারে কত জীবাণু ময়লা লেগে থাকে। আর কখনো ওকে সব খেতে দিবানা।
— আচ্ছা মহারানী আমার ভুল হইছে আর কখনো এমন ভুল হবে না।
— হুম এইবারের জন্য মাপ করলাম। সামবাবুর খুব ভালো করে যত্ন নিবা বুঝছো।

আমাদের সংসারে এমন একটা angel এরই অভাব ছিল।

এমন করে বাবা হবো কখনো আশা করিনি। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাদের দুইজনের ইচ্ছাটি পূরণ করলো।

–এই পিচ্চি বর বাবু কি নাম রাখবো?
— পরী নামটা রাখলে কেমন হয়?
— আচ্ছা ঠিক আছে আমার লক্ষী মেয়েটার ডাকনাম পরী।

আমাদের ভালোবাসাগুলো সব সময় প্রতিস্থাপিত হয়। যেমন আমরা ছোট থাকতে আব্বু আম্মুকে অনেক বেশি ভালবাসতাম তারপর বিয়ে হওয়ার পর স্বামী স্ত্রীকে সন্তান হওয়ার পর সন্তানদের। এখন আমাদের দুজনেরই সব চিন্তা পরীর জন্য। পরীকে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ এনে দেওয়ার জন্য আমাদের পরিশ্রমের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিলাম।
এখনই নিশি ঠিক করে রাখছে কোন স্কুলে পড়ি ভর্তি করবে। সবকিছু পরিকল্পনা করে ফেলছে।
কিছু দিন পর পরীর দাদু বাড়ি থেকে ওর চাচার নিয়ে যাওয়ার জন্য আসে। আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা। নিশির মুখের দিকেও তাকানো যাচ্ছে না।
চলবে ?
( ভুলত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। এই পর্বটা কেমন হল মতামত জানাতে ভুলবেন না)
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে