নসীব_পার্ট_২

0
6301

নসীব_পার্ট_২

আরবি_আরভী

খালামনিকে হাজার বার আমার পরিচয় দেয়ার পরেও উনি আমাকে চিনতে পারলেন না হয়তো না চেনার ভান করছে উল্টো আবিরকে আড়ালে নিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলেন,,,

-এই মেয়ে এখানে কেন তাড়াতাড়ি বিদায় কর,, কি রে কথা বলছিস না কেন বিয়ে টিয়ে করে নিলি নাকি,,
-উউফফ থাম তো আম্মু পৃথিবীতে যদি মেয়ের জাতি শেষ হয়ে যায় তাহলেও আমি একে বিয়ে করব না আর তুমি কি না,,,
-দেখ এই মেয়ে যেন আমাদের পারিবারিক বিষয় কখনো নাক না গলায় এই বলে দিলাম,,
-ওকে কিচ্ছু করবে না তুমি নিশ্চিত থাকো,,

তারপর আবির একটা স্টার্ফের কাছে গিয়ে আমার থাকার রুমটা দেখিয়ে দিয়ে বলে রুমটা যেন ওর রুমের সাথেই হয় যাতে উনার যখন ইচ্ছা আমার রুমে আসতে পারেন।।খুব একা একা লাগছিল ঐ দিন এত্ত মানুষ কিন্তু আমার সাথে কথা বলার কেউ নেই সবাই সবার মত।। তার পর থেকে আমি এখানে।। আবির খুব হ্যান্ডসাম একটা ছেলে খুবই স্ট্রেইট এন্ড স্মার্ট।। তাহলে কেন আমার মত একটা সাধারন মেয়ের সাথে উনি এসব করেন তাও আবার এত্ত এত্ত টাকা দিয়ে।। শুধু আমার সাথেই কেন।। কথাগুলো প্রায় আমি চিন্তা করি। কিন্তু দিনশেষে বাবার সাথে কথা বললে নিজেকে অনেকটা হালকা লাগে।।

-নিলা মা কবে আসবি তোকে দেখতে অনেক ইচ্ছা করে,,
-আসব বাবা ছুটি পেলেই চলে আসব তুমি চিন্তা কর না ঔষুধ গুলো ঠিক মত খাবা,, আচ্ছা এই সপ্তাহে চেকআপের এপয়েন্টমেন্ট আছেনা তোমার।। টাকাটা পেয়েছ তো বাবা,,
-হ্যা রে মা কিন্তু এত টাকা,,, তুই খুব হার্ডোওয়ার্ক করছিস তাই না,
-না বাবা আমার কিচ্ছু করতে হয় না,,আচ্ছা আমি রাখি ভালো থেকো,

আবির যখন তখন আমার রুমে ঢুকে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে বলে ঘরের মেয়ে স্টার্ফগুলো আমার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।। আমার মত চরিত্রহীন মেয়েদের জন্য নাকি হাজারো সংসার ভাঙে।। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে নিপা একটু আলাদা শুরু থেকেই তার সাথে আমার একটা পজিটিভ কনভেনশন।। আমাকে নিয়ে তার ভিন্ন এক ধারনা তার মতে আবির আমার খালাতো ভাই তাই আমার রুমে আসে তাছাড়া আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই তাই তার সাথে আমি আমার মনের কথাগুলো একজন আপন ভেবে শেয়ার করতাম কিন্তু সেদিন যখন সে আমার রুম ঝাড়ু দিচ্ছিল আর আমি ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছিলাম তখন আবির শাওয়ার নিতে আসলে নিপা বাধা দিয়ে বলে ,,,

-আরে কোথায় যাচ্ছেন ছোট সাহেব,, ভিতরে নিলা আপু শাওয়ার নিচ্ছেন,,

কিন্তু তার কথার পাত্তা না দিয়ে আবির ওয়াশরুমে ঢুকে পরলে তার সম্পুর্ণ ধারনা বদলে যায় তাছাড়াও এক রাতে আমাকে আর আবিরকে একসাথে শুয়ে থাকতে দেখে সকালে বলেই ফেলে,,

-আপনার সাথে কি ছোট সাহেবের বিয়ে হয়েছে,,
-নাতো,, (একটু হেসে)
-ছ্বি ছ্বি ছ্বি আপনাকে ভালো ভাবছিলাম এই আপনাদের মত মেয়েদের জন্য আমাদের মেয়েজাতির এত্ত বদনাম,, আপনার কি মা বাবা নাই বেড়াতে এসে খালাতো ভাইয়ের সাথে এসব,, এখন বুঝেছি বড় ম্যাম সাহেব( খালামনি) কেন আপনাকে পছন্দ করে না,,

এভাবেই পেরিয়ে গেল ৪ টি মাস বাবা এখন কিছুটা সুস্থ।। আমাকে নিয়ে নাকি তার অনেক গর্ব হয়।। বাড়ি ফিরলে উনি আর আমাকে কাজ করতে দিবেন না একটা রাজকুমার খুজে তার সাথে উনার নিস্পাপ রাজকুমারী বিয়ে দিবেন।। বাবার মুখে কথাগুলো শুনলে সত্যি খুব কষ্ট লাগে।।

ইদানিং খুব মাথা ব্যথা অনুভব হয় তার সাথে বমি ফ্রি।। ৩ mas পিরিয়ড অফ।। খুব ভয় ও টেনশনে আছি ।। এমন কেউ নেই যার সাথে আমার সমস্যাগুলো শেয়ার করব তাই নিজে নিজে একদিন সকালে প্রেগন্যান্সি টেস্টার দিয়ে টেস্ট করে যা দেখলাম তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলাম না।। আমি প্রেগন্যান্ট!!! আমার ভেতর আরেকটা প্রান।। আমি মা হব।। কিন্তু আবির কি আমাকে মেনে নিবে।। আমার কুমারীত্ব নষ্ট করে সে কি পেল জানি না কিন্তু আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে তা বলতে পারি ।।বাবা সমাজে মুখ দেখাবেন কি করে।।আমি উনার মান সম্মান সব মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি।। কথাগুলো ভেবে ডুকরে কেদে উঠলাম।।আমি আসলে মেয়ে নামে কলঙ্ক।।

সারাদিন রুমে থেকে কান্না করছি ।। অবশ্য তাতে কারো মাথা ব্যাথা নেই।। আবির অফিস থেকে এসে চেইঞ্জ করে হাতে মোবাইল আর কানে হেডফোন দিয়ে ডাইরেক্ট রুমে ঢুকে পরেন। সোফায় বসে ফোনে গেইমস খেলছে হঠাৎ আমার দিকে চোখ পরতেই ইশারায় জানতে চাইলে আমি মুখ লুকিয়ে আরও জোরে জোরে কাদতে থাকি।। তারপর উনি কাছে এসে বেখেয়ালী হয়ে বলতে লাগলেন,,

– এসব মরাকান্না থামিয়ে কি সমস্যা সেটা বল,,
-আবির আমি,,,,
-কি আরও টাকা লাগবে,,, ইট’স নট এ ফ্যাক্ট ডারলিং পেয়ে যাবা,,
-না আবির,, (কান্না করতে করতে)
-তাহলে নিশ্চয়ই আরও কাস্টমার দরকার ওকে চিন্তা কর না আমি আমার বন্ধুদের বলব কিন্তু উরা শুধু দিনে রাতটা কিন্তু আমার,,, ঠিক আছে,,
রেগে কষে উনাকে থাপ্পড় মেরে উচ্চ সুরে বলতে লাগলাম,,

-আমি প্রেগন্যান্ট ।।(জোরে জোরে কান্না করে)
-তা আর এমন কি,, কংগ্রেস, (অন্য দিকে তাকিয়ে ফোনে ব্যাস্ত হয়ে)

-বিয়ের আগেই আমি মা হয়ে গেছি বুঝতে পারছেন একমাত্র আপনার এই নোংরা অফারটার কারনে। আপনে ইচ্ছা করলেই ফ্রিতে টাকাটা দিতে পারতেন কিন্তু না আপনে একটা সরল মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন ।। আমি আমার বাবার আদর্শ মান সম্মান সব শেষ করে দিয়েছি।।
-সো সেড তোমার আব্বু জানতে পারলে অনেক রাগ করবে তাই না,
-একদম মরেই যাবেন, (কান্না করতে করতে)
-আচ্ছা চল,, (হাত ধরে উঠিয়ে)
-কোথায়,?
-তোমার আব্বুর কাছে উনার একমাত্র মেয়ে প্রেগন্যান্ট সুসংবাদটা উনাকে দিতে হবে না,,
-না আবির আপনার পায়ে পরছি প্লিজ আব্বুকে কিছু বলবেন না প্লিজ,,
-চল তো,, আমার আম্মুকে তো অনেক বড় লেকচার শুনিয়েছিলেন উনি চরিত্র নিয়ে এবার উনার মেয়ের সম্পর্কেও সবার জানা দরকার ,,
-আবির আমার প্রতি দয়া করুন প্লিজ প্লিজ আবির আমার বাবা অনেক অসুস্থ উনি এসব মেনে নিতে পারবেন না প্লিজ,,

কে শুনে কার কথা আবির আমার হাতটা ধরে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে ফুল স্পিডে ড্রাইভ করতে লাগলেন যেন টাইম ওয়েস্ট না যায়।। খুব কান্না পাচ্ছে।। বাবা জানতে পারলে কি পাগল হয়ে যাবেন।।

বাসায় এসে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছি।। আবির আমার হাতটা ধরে আছেন।। বাবা চেয়ারে বসে পেপার পরছিলেন হঠাৎ আমাকে দেখে মুখে এক ঝাক হাসি নিয়ে ,,,

-নিলা মা কেমন আছিস রে মা তুই এত দিন পরে মনে পরল বাবার কথা,,
আমি চুপ হয় কান্না করতে থাকলে বাবা কাছে এসে আতংকিত কন্ঠে বলতে থাকেন,,
-কি রে মা কি হয়েছে,,, আর এই ছেলে কে তোর সাথে,,,, (আবির আমার হাত ধরে আছে সেদিকে নজর দিয়ে)
-আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল আমি আবির,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে