ধূসর অনুভূতি পর্ব-০২

0
978

#ধূসর অনুভূতি
পর্ব:০২
লেখক:-শাপলা

পরদিন সকাল সাতটার সময়ই ইশু ভাবী আমাদের বাসায় এসে হাজির।তিনি তার বোন তিশিদের বাসায় যাচ্ছে তিশিকে আনতে।এই খবরটাই মাকে দিতে এসেছেন।মা বললেন, আচ্ছা যাও। সাবধানে যেও। ঝিনুক আপু বললো,মা সত্যিই তোমার মাথার স্ক্রু ঢিলা? এইটুকু মেয়ের সাথে তুমি ভাইয়ার বিয়ে দেয়ার কথা ভাবছো?মেয়ে মাত্র টেনে পড়ে। বাচ্চা একেবারে।টেনে থাকতে তো আমি বিছানায় হিসু করতাম।
মা প্রচন্ড রেগে গেলেন। বললেন, চুপ থাক গাধার বাচ্চা।এরপর মা রান্নাঘরে গিয়ে তার হবু পুত্রবধূর জন্য পায়েস চড়ালেন।আমরা দুইবোন জল্পনা-কল্পনা করছি মেয়েটিকে নিয়ে।মেয়েটা নিশ্চয়ই গরিব আর তাই এই ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে দিবে বাবা-মা। মেয়েটার মনে নিশ্চিত কত দুঃখ জমে থাকবে।আহা!
সকাল তখন এগারোটা।ইশু ভাবী আমাদের বাসায় আবার আসলেন।এসে ফিসফিস করে বলতে লাগলেন,মেয়েকে ভুংভাং বুঝিয়ে নিয়ে এসছি।আপনি আসেন আন্টি দেখে যান।বিয়ের পাত্রী হিসাবে দেখাতে এনেছি এটাকি আর বলা যায়,লজ্জা পাবে ছোট মেয়ে।
মা বললেন,ভালো করেছো ইশিতা।এখন চলো।
মা চলে গেলেন তিশি নামক বালিকা কে দেখতে।
কিছু ক্ষন পর আবার বেল বাজলো।আমরা ভাবলাম মা বোধহয় ফিরে এসেছে। আমি দরজা খুলে দেখি একটা অপরিচিত ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।পরনে নীল পাঞ্জাবী।চোখে সরু ফ্রেমের চশমা। খুব সুন্দর আর ভদ্র একটা ছেলে। আমার প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেলো।
এদিকে আমার গায়ে একটা ওড়নাও নেই আছে একটা গামছা।এর জন্য খুব অস্বস্তি লাগছিল।ছেলেটা মাথা নিচু করে সালাম দিলো।বললো, মিজান আংকেল আমাকে আসতে বলেছে।
মিজান আমার বাবার নাম।কাজেই আমি ছেলেটিকে বসার ঘরে এনে বসালাম।
এমন সময় ঝিনুক আপু তিতলিকে কোলে নিয়ে বসার ঘরে প্রবেশ করল। আমাকে ধমক দিয়ে বলতে লাগলো,ঐ গাধা যাকে তাকে ঘরে ঢুকাস কেন?চোর না ডাকাত কোনো গ্যারান্টি আছে?
আমার আপুর উপর খুব রাগ হতে লাগলো। আপুর কোনো কান্ডজ্ঞান নেই। এইভাবে সামনাসামনি কেউ বলে?ছেলেটা খুব মলিন ভাবে বললো,আমাকে মিজান আংকেল এই সময়ে আসতে বলেছে।
আপু ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভিতরের রুমে চলে গেল।
একটু পরেই তিশি আমাদের ঘরে ঢুকলো।আমি তিশিকে দেখে পুরোই হা হয়ে গেলাম।পার্লার থেকে সেজে এসেছে সে।ব্রাইড-ও মনে হয় এতো ভারী সাজ দেয় না।পরনে লাল জামদানি শাড়ি। মাথায় আবার ফুল লাগিয়েছে।সে স্বাভাবিক ভাবেই হেসে বললো, তুমি যুথি না ঝিনুক? আমার চোয়াল ঝুলে পরলো।এই মেয়ে নাম ধরে বলছে কেন আমাদের?
তিশি আবারো বললো,আন্টি ইশু আপুর সাথে গল্প করছে।আমাকে বললো,বাড়িটা ঘুরে-টুরে দেখতে।
আমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলাম। কোনো রকম কাঁপা গলায় বললাম,জ্বি আ…আচ্ছা আপু আপনি ভি…ভিতরে আসেন।
তিশি বললো, তুমি কি তোতলা নাকি?
আমি চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে রইলাম।এই মেয়ে আসলেই টেনে পড়ে?একটু ডর-ভয়,জড়তা, লজ্জা কিছুই নেই এর মধ্যে।
ঘরে ঢুকেই মেয়েটা তাকালো সোফার দিকে। সেখানে একটু আগে আসা নীল পাঞ্জাবী পরা আগন্তুক বসে আছে।তিশি গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,এইটা কি তোমার ভাইয়া?
আমি এমনিতেই তিশির আচরনে যথেষ্ট ভড়কে আছি।তাই বেখেয়ালি ভাবে হুম বলে ফেললাম।
এরপর, শোবার ঘরে চলে গেলাম আপুকে ডাকতে।
আপু ,তিতলি আর আমি এসে দরজার ধারে দাঁড়িয়েছি।ওমা,দেখি তিশি সোফার মধ্যে বসে নীল পাঞ্জাবী ওয়ালার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।
আমরা দুইজন দাঁড়িয়ে রইলাম এক রাশ বিস্ময় নিয়ে।
তিশি আর সেই ছেলের কথোপকথন এইরকম:
তিশি জিজ্ঞেস করছে,কেমন আছেন?
ছেলেটা দাঁড়িয়ে পরলো।তিশি বললো,আরে বসেন না লজ্জার কিছু নাই। ছেলেটা অনিচ্ছা নিয়েই বসলো। এরপর ঢোক গিলে বললো,জ্বি ভালো আছি।
তিশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,আর ভালো…আপনি যে কতটা ভালো আছেন তা কি আর আমার অজানা? আপনি যে কতটা কষ্ট বুকে চেপে রেখেছেন আমি জানি।
ছেলেটা বললো,কি বলছেন এইসব? আমার বুকে কষ্ট চেপে রাখবো কিসের জন্য?
তিশি হাসলো। বললো,এই যে আপনার বউ পালিয়ে গেলো তাও আপনার প্রিয় বন্ধুর সাথেই এই কষ্ট কি যেনতেন কষ্ট।বউ পালানো টা একটা পুরুষ মানুষের কাছে যে কি অপমানের বিষয়!
ছেলেটার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।সে আতংকিত হয়ে বলতে লাগলো,কি…ইই বলছেন এ..এসব?আন্দাজে ক কথা?
তিশি ভ্রু কুঁচকে বললো,ইয়া আল্লাহ বোনের মতো ভাইও দেখি তোতলা।এই পরিবারের সবাই কি তোতলা না কি?
হঠাৎ,তিতলি চেঁচিয়ে বলে উঠলো,না আমি তো তিতলি।
এইবার তিশি আমাদের দিকে তাকালো।
ঝিনুক আপু এগিয়ে গিয়ে বললো,এই মেয়ে এই… একটা নতুন জায়গায় এসে যে ভদ্রতা মেইনটেইন করতে হয় জানো না?
তিশি বললো,আমি অভদ্রতা করলাম কখন?কি বলছো এসব?
ঝিনুক আপু বললো, তুমি আমাকে তুমি করে বলছো কোন সাহসে? এইটুকু মেয়ে।
তিশি বললো,আমি বয়সে ছোট হতে পারি কিন্তু সম্পর্কে তো বড় নাকি?
– কিসের সম্পর্ক?
তিশি মাথা নিচু করে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গী করলো। এরপর বললো,আমার আর আপনার ভাইয়ের বিয়ে তো ধরতে গেলে হয়েই গেছে। শুধু কাজি ডেকে কবুল পড়ানো টা বাকি….
আমি বোকার মত তাকিয়ে রইলাম।কাজী ডেকে কবুল পড়ানো যদি বাকিই থাকে তাহলে বিয়েটা ধরতে গেলে হয় কেমনে?
তিশি তার হাত ছড়িয়ে ধরলো আমার সামনে।একি তিশির আঙুলে আমার মায়ের আংটি কেন?
তিশি লাজুক স্বরে বলল,মা আমাকে পছন্দ করে আংটি পরিয়ে দিয়েছেন।
ঝিনুক আপু বললো, তুমি তো আচ্ছা মেয়ে। আমার ভাইকে এখনো দেখোই নি কিন্তু আংটি পরে বসে আছো।
তিশি বললো,প্রথমে একটু মনটা খচখচ করেছিলো কিন্তু এখন আপনার ভাইকে দেখে সব খচখচানি দূর হয়ে গেছে।
আপু বললো,কই আমার ভাই?
তিশি নীল পাঞ্জাবী ওয়ালার দিকে তাকিয়ে বললো,এইযে আপনি বাদশাহ না?
বেচারা ছেলেটা ভয়ে ভয়ে মাথা নেড়ে বললো,না আমি তো ছাত্র।
…….
রাতের বেলা পরিবারের সবাই ডিনার করতে বসেছি। শুধু ভাইয়া নেই। ভাইয়া তার কোন এক কলিগের বাসায় গেছে কি একটা দরকারে।তিশি বিদায় হয়েছে সন্ধ্যায়।মা তো তখনো যেতে দিতে চাচ্ছিল না। এতোই তার মনে ধরেছে এই অকালপক্ক মেয়েকে।
মা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,কাজটা কি তুমি ঠিক করলা?ঘরের মধ্যে দুইটা বড় বড় মেয়ে আছে,দোতলার আসমত সাহেবেরও একটা মেয়ে আছে।এমন বাসায় তুমি ব্যাচেলর ১টা ছেলেকে থাকতে দেও কোন আক্কেলে? মেয়েগুলো একটু ছাদেও উঠতে পারবে না এই ছোকরার জ্বালায়।
বাবা নির্বিকার ভাবে বললেন,এই ছেলের মতো ভদ্র-নম্র ছেলে আর হয় না বুঝেছো? মেয়েদের জ্বালানো তো দূর তাকাবেও না।
মা মুখ অন্ধকার করে বসে রইলো।
কথা হচ্ছিলো সকাল বেলার সেই নীল পাঞ্জাবী ওয়ালাকে নিয়ে। ছেলেটার নাম মেহেদী। আমার বাবার পুরানো কোন বন্ধুর ছেলে যেন। পড়াশোনার সুবাদে আমাদের শহরে থাকছে অনেক দিন ধরেই।হলের খাবার নাকি তার মুখে রোচে না।তাই, তার বাবা আমার বাবাকে বলেছেন সবটা।আর, আমাদের বাড়িতে থাকতে বলেছেন বাবা।বাবা আরো বলেছে, খাবার-দাবার আমরা যা খাই সেই ছেলেও আমাদের সাথেই খাবে।আর থাকবে হলো ছাদের ঘরে। আমাদের ছাদে বাড়তি দুইটা রুম বানানো হয়েছিল। সেগুলো সবসময় খালিই থাকতো।আগে সেই রুমে আমার বড় চাচার ছেলে শাহীন ভাই থাকতো। কিন্তু, এখন উনারা স্বপরিবারে বিদেশে চলে গেছে অনেক বছর।
যাইহোক, খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আর আপু আমাদের ঘরে এলাম।তিতলি গেছে তার দাদার রুমে ভূতের গল্প শুনতে।
আমি আপুকে বললাম,আপু শুনলা বাবা কি বললো?ঐ মেহেদী ছেলেটা নাকি এতোই ভদ্র যে মেয়েদের দিকে তাকায়ও না।
আপু বললো, মেয়েদের দিকে তাকানোর মতো সাহস আছে ঐ হাবলার?দেখিস নি আজ সকালে তিশির ভয়ে হিসি করে দিতে নিছিলো।
আমি আর আপু হাসতে লাগলাম।আপু বললো,ভালোই হইছে মেহেদী পাতা আমাদের বাড়ি থাকতে আসছে।ওরে মুরগি বানিয়ে মজা নিবো। অনেক দিন ধরেই জীবনে কোনো ভিন্নতা নাই। গড়পরতা জীবন।
আমি উৎসাহিত হয়ে বললাম,কি করবা আপু?
আপু হেসে কি যেন বলতে গিয়েও থেমে গেলো।কারণ, পাশের ঘর থেকে মায়ের চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।
আমরা তেমন বিচলিত হলাম না।মায়ের অল্পতেই চেঁচামেচি করার স্বভাব।তাই, নিজেদের মতো করে কথা বলতে লাগলাম।এমন সময় হঠাৎ ভাইয়া আমাদের রুমে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো।বললো,এই যে আপা আপনারা একটু সাহায্য করবেন?মালিহার সব ড্রেস মা পুড়িয়ে ফেলছে।প্লিজ আপনারা একটু এসে মানা করেন।মালিহা কি পরবে বলেন তো!
আমি আর আপু তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম ভাইয়া কি মজা করে আমাদের সাথে এভাবে কথা বলছে?
কিন্তু, ভাইয়ার চেহারাটা তো খুব করুন হয়ে আছে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে,ভাইয়া যেন আমাদের চিনতে পারছে না।
ঝিনুক আপু উঠে ভাইয়াকে ধরলো।আমি রুম থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে গেলাম।দেখি মা সত্যিই মালিহা ভাবীর সব শাড়ি,ব্লাউজ,জামাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন।তিতলি ভয়ে কান্না করে দিয়েছে আগুন দেখে।আমি দ্রুত জগ ভর্তি পানি এনে এনে আগুনে ঢাললাম। মায়ের চোখে তখনো রাগের চিহ্ন।মা চেঁচাতে লাগলেন, কু**র বাচ্ছা তুই কেইক আনছ কার জন্য হ্যাঁ?মুখপুড়ি যে আরেক বেডার লগে ভাগছে তুই মনে হয় জানছ না?সব জ্বালায় দিবো আমি।ঐ ডাইনীর কোনো চিহ্ন এইবাড়িতে থাকবে না।
দেখলাম ফ্লোরের মধ্যে একটা বার্থডে কেইকও পরে আছে। হঠাৎ মনে পরলো,আজ ভাবীর জন্মদিন ছিল।
আমি তিতলিকে কোলে নিয়ে মায়ের সামনে থেকে চলে এলাম।তিতলি বেচারি খুবই ভয় পেয়েছে।
রুমে এসে দেখি ভাইয়া মাথানিচু করে বসে আছে।আমাকে দেখে বললো,কি লজ্জার ঘটনা। আমার এক ফোঁটাও মনে নেই যে মালিহা চলে গেছে।আমি কেইক কিনে নাম নাম টাম লিখিয়ে বাসায় এসে পরেছি।
আপু বললো, ভাইয়া তোমার উচিৎ কিছু দিন ছুটি নিয়ে বিশ্রাম নেয়া। তোমার মনের উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছে।এর জন্য এমন হয়েছে।
ভাইয়া লজ্জিত ভঙ্গীতে উঠে চলে গেলো।
আমরা তিনজন শুয়ে পরলাম। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি,তিতলি বিছানায় নেই।
আমি উঠে ভাইয়ার ঘরের দিকে গেলাম।হ্যাঁ যা ভেবেছি তাই তিতলি এখানেই।ডীম লাইটের আলোয় দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট,ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে।আর তিতলি বুড়ি ভাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম।এর চেয়ে পবিত্র আর সুন্দরতম দৃশ্য কি আর হতে পারে। এইটুকু বয়সেই তিতলি অনেক খানি বড় হয়ে গেছে।অন্য বাচ্চাদের মতো একদমই নয় সে।কিছু ক্ষন হাত বুলিয়ে দিয়ে আবার ভাইয়ার কপালে চুমু দিয়ে দিলো।যেন ভাইয়াই ছোট একটা ছেলে আর সে মা।আমি না হেসে পারলাম না। কেন জানি চোখের কোণে পানিও জমলো।
……
সকালবেলা আবার ভাইয়া একদমই স্বাভাবিক।নাস্তা টাস্তা করলো। আমার পড়াশোনার খোঁজ নিলো।তিতলিকে আদর করলো কিছুক্ষণ। এরপর অফিস এ চলে গেল।
মা বললো,বাদশাকে তো এখনও তিশির ব্যাপারে কিছুই বলা হলো না। ভেবেছিলাম রাতে বলবো।আর,রাতে ও যা কান্ডটা করলো।রাগে আমার …..
আমি মাকে বললাম,বাদ দেও মা। ভাইয়ার উপর দিয়ে অনেক স্ট্রেস গেছে তো…..
একটু পর ঝিনুক আপু ইউনিভার্সিটি তে চলে গেল। আমার আজকে ক্লাস নেই তাই আমি বিছানায় গড়াগড়ি করতে লাগলাম।এমন সময় মা এসে বললো,যা মেহেদী কে খাবার দিয়ে আয়।ঐ ছেলেও তো নিশ্চয়ই ক্লাসে যাবে।
আমি মায়ের কথা মতো খাবারের ট্রে নিয়ে ছাদে উঠলাম। মেহেদী ভাইয়ার রুমে ঢুকে তো আমি অবাক।পুরো ঘরটাকে লাগছে এক টুকরো স্বর্গের মতো।বুঝাই যাচ্ছে উনি অনেক ঘষা-মাজা করে ফ্লোর ধুয়েছে।একদম চকচক করছে।ঘরের দেয়াল জুড়ে তিনটা বড় বড় পেইন্টিং। যেগুলো তে সমুদ্র আর নীল আকাশ মিশে আছে একসাথে। জানালায় হালকা নীল পর্দা। বিছানার চাদরেও সাদার মধ্যে নীল ফুলের কাজ।ঘরে ফার্ণিচার বলতে একটা খাট,পড়ার টেবিল-চেয়ার, ছোট একটা বুক সেলফ।কি সুন্দর ছিমছাম গুছানো সবকিছু।উনি মাথানিচু করে বললো,আমার আসলে ঘর-দোর গুছানো না থাকলে ভাল্লাগে না।
আমি বললাম,এই ছবি গুলো কি আপনি এঁকেছেন?
– হুম আমিই এঁকেছি। বিছানার চাদরের ফুলগুলোও আমার আঁকা।শখ আরকি আঁকাআঁকি টা।
আমি নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম, অসাধারণ!
খাবারের ট্রে নিয়ে টেবিলের উপর রাখলাম। দেখলাম, টেবিলে একটা খালি কাঁচের ফুলদানি।
তাই আমি বললাম, ভাইয়া ছাদে তো ফুলের টব আছেই। আপনি চাইলে ফুল এনে ফুলদানি তে রাখতে পারেন। এমনিতেও ফুল গুলো একদিন পর ঝরেই যায়।
উনি বললো,তুলিনি ফুল।পারমিশন ছাড়া অন্যের জিনিস নষ্ট করবো কেন?একটু থেমে আবার বলল,জানো বাড়িতে আমার পড়ার টেবিলের জানালার সামনে একটা হাসনাহেনার গাছ আছে।এতো ঘ্রান হয় তুমি ভাবতেই পারবা না বিশেষ করে মাঝরাতে।
খুব সহজভাবেই আমি উনার বাড়িতে থাকা ফুল বাগানের গল্প শুনলাম কিছুক্ষণ। ভালোই লাগছিলো উনার কথা শুনতে।
এরপর,চলে আসার সময় কি মনে করে টব থেকে দুইটা গোলাপ ছিড়ে উনার হাতে দিলাম। ফুলদানি তে রাখার জন্য। গোলাপ দুটো দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি মা দাঁড়িয়ে আছে। আমার বুক কেঁপে উঠলো।মা নিশ্চিত অন্য কিছু ভাববে…মা যা সন্দেহপ্রবন।
চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে