ধর্ষক_থেকে_বর_পর্ব__২৩+২৪

0
4498

ধর্ষক_থেকে_বর_পর্ব__২৩+২৪

.
লামিয়া দূত হাটতে শুরু করলো।লামিয়া সামনে আর আমি ওর পিছনে হাঁটতেছি।কিছু পথ চলার পর লামিয়া নিমিশেই মাথা ঘুরে মাটিতে পরে গেল।
আমি লামিয়ার এমন অবস্থা দেখে থমকে দাড়ালাম।দৌড়ে লামিয়ার কাছে চলে আসলাম।লামিয়ার এমন অবস্থা দেখে বুকের বা পাশটা কেঁপে উঠলো।
আমি বললাম:
— লামিয়া কি হয়েছে তোমার।
— ওঠো।এমন করে মাটিতে
পড়ে গেলে কেন?
— তোমার কিছু হলে আমি
বাঁচবো কি নিয়ে।
— লামিয়া ওঠো।
আমি লামিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে দূত বাড়িতে আসছি।এমন সময় লামিয়া আমাকে চোখ টিপ মারলো।লামিয়া না অঙ্গান হয়ে গিয়েছে তবে আমাকে চোখ টিপ মারলো কিভাবে।তার মানে ও আমার সাথে এতো সময় মজা করছিল।একটা মুচকি হাসি দিয়ে লামিয়া বললো:
— কেমন দিলাম।
— ভয় পেয়েছো।
— এমন মজা করার কোন মানে হয়।
— যতসব আজাইরা।
কথাটা বলেই আমি লামিয়াকে ছেরে দিলাম।লামিয়াকে ছেড়ে দিতেই ওও সোজা মাটিতে পড়ে গেল।আমি সেখান থেকে হাটতে শুরু করলাম।মাটিতে পড়েই লামিয়া বললো ও মাগো আমার কোমরটা মনে হয় ভেঙে গেল।আমি লামিয়ার কথায় কান না দিয়ে হেটেই চলেছি।কিছু দূর যাওয়ার পর লামিয়া দৌড়ে এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।আমি লামিয়াকে সাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।কিন্তুু লামিয়া ছাড়ছে না শুধু আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
— লামিয়া কি করছো ছাড়ো।
সবাই দেখছে তো।
— না…. ছাড়বো না।
— আগে বলো তুমি আমাকে
ভালবাস।
— ভালবাসি।
— কাকে?
— আমাকে যে পেত্নিটা এখন
জরিয়ে ধরে আছে তাকে।
— কি আমি পেত্নী?তবে রে!
আমারে আর পায় কে কথাটা বলেই দিছি একটা দৌড়।এক দৌড়ে বাড়িতে চলে এসেছি।লামিয়াও আমার পিছন পিছন দিছে দৌড়।আসতে আসতে সোজা রুমে চলে আসলাম।লামিয়া ওর নিজের ওপর ব্যালেন্স রাখতে না পেরে সোজা আমার উপর এসে পড়লো।আর আমি পড়লাম খাটের উপর।আমি নিচে আর লামিয়া উপরে।আমি পাশে শুয়ে লামিয়াকে নিচে ফেললাম।
— এবার কই যাবা চান্দু।
— এই ছাড়ো।
— ছাড়বো বলে তো ধরিনি।
— ছাড়ো বলছি।
— এখন সব স্বুধে আসলে
পুশিয়ে নেব।
— না ছাড়ো তো।
আমি আমার ঠোঁঠ দুটা লামিয়ার ঠোঁঠের সাথে লাগিয়ে দিলাম।ঠোঁঠ লাগিয়ে আলতো করে লামিয়ার কোমরে হাত রাখলাম।কোমরে হাত রাখতেই লামিয়া আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।বাকিটুকু ইতিহাস।পরের দিন নীলকে সাথে নিয়ে আমি লামিয়া আর মেঘলা গ্রামটা ঘুরে দেখতে বের হয়েছি।
গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেটে চলেছি চারজন।রাস্তার এক পাশ ধরে নীলা আর মেঘলা হাটছে অন্য পাশ ধরে হাটছি আমি আর লামিয়া।গ্রামের অপরূপ সৌন্দয্য দেখতে দেখতে।আমরা যমুনা নদীর তীরে এসে পৌছালাম।এখানে দিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন মানুষ বেরাতে আসে।যার ফলে এই এলাকাকে ঘিরে বিভিন্ন রকমের খাবারের দোকান বসেছে।
আমি বললাম:
— ঝাল মুড়ি খাবে।
— কই ঝাল মুড়ি।
— ওই যে দূরে।
— হু চলো।
আমরা সকলে ঝাল মুড়ির দোকানের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।২০ টাকার ২০ টাকার করে মোট চার জায়গার অর্ডার দিলাম।সেখান থেকে একটু দূরে এসে বাদাম কিনে নদীর তীরে এসে বসলাম।ওদেরকে নিয়ে নদীর তীরে বসে আছি।আর নদীর বয়ে চলা দেখছি।নদী কত নিষ্ঠুর এর মাঝে হাজারো মানুষের চাওয়া পাওয়া ভেঙে নিশ্বেস হয়ে যায়।সেখানে বসে বেশ কিছু সময় কাটানোর পর আমরা বাসায় চলে আসলাম।
আজ শুক্রবার নীলার বিয়ে।নীলার বিয়ের জন্য বাড়িতে অনেক অত্নীয় স্বজন এসেছে।লামিয়ার বাবা মাও এই বিয়েতে এসেছে।সবাই যার যার মতো করে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।বাড়ির চারদিকে লাইটের আলোতে ঝলমল করছে।আর কিছু সময় পর বর চলে আসবে।আমি লামিয়াকে নিয়ে বাহির থেকে ভেতরে আসছি।।লামিয়ার পড়নে লাল শাড়ি আর আমি সাদা একটা পাঞ্জাবী পড়ে আছি।আমার পাঞ্জাবী পড়তে তেমন ভাল লাগে না।কিন্তুু কি বা করবো বলেন বউ বলে কথা।তার কথা তো আর ফেলেতে পারি না।পাঞ্জাবীটা পড়েছি লামিয়ার কথায়।পড়নে লাল শাড়ী..হাতে নীল চুরি…পায়ে আলতা…. ঠোঁঠে লিপস্টিক সব মিলিয়ে লামিয়াকে বেশ লাগছে কিন্তুু।লামিয়া ওর বাম হাত দিয়ে আমার ডান হাত আকড়ে ধরে হাটছে।কিছু পথ চলার পর লামিয়া আমার হাতটা ছেড়ে দিল।হাতটা ছেরে দিতেই লামিয়া মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল।আমি লামিয়ার হাতটা অকড়ে ধরলাম।হাতটা ধরতেই লামিয়া আমার বুকে ঢলে পড়লো।
— লামিয়া কি হচ্ছে এসব সবাই
দেখছে কিন্তু।
— এখান ওই সব ফাজলামি বাদ দাও।
— তুমি আমার কথা বুঝ না।
— লামিয়া ছাড়ো।
কথাটা বলেই আমি লামিয়াকে আমার বুক থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।লামিয়াকে ছাড়িয়ে আমার পাঞ্জাবীর দিকে তাকাতেই মাথা ঘুরে গেল।পাঞ্জাবীতে দেখলাম রক্ত লেগে আছে।রক্তের জন্য আমার সাদা পাঞ্জাবী সম্পর্ণ লাল হয়ে আছে।সামনে তাকিয়ে দেখি লামিয়া মাটিতে পড়ে আছে।আমি লামিয়াকে জরিয়ে ধরে উচ্চ স্বরে লামিয়া বলে একটা চিৎকার দিলাম।আমার চিৎকারে সব কিছু নিরব হয়ে গেল।সব কিছু যেন নিমিশেই থমকে দাড়ালো।
.
আমি মেঘলা আর লামিয়ার বাবা মা সহ বাড়ির সকলে হাসপাতালের রুমের সামনে বসে আছি।ভেতরে ডাক্তার লামিয়ার চিকিৎসা করছে।লামিয়ার কোন কিছু হয়ে গেলে।আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।এদিকে আব্বু আম্মুকেও ফোন করে দিয়েছি।ওনারা কিছু সময়ের মাঝে চলে আসবে।একটু পর ডাক্তার সাহেব মন খারাপ করে মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।বেরিয়ে এসে ডাক্তার যা বললো।তা শোনার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না।
.
,,,

#ধর্ষক_থেকে_বর
.
#_____পর্ব__২৪_____
.
.
একটু পর ডাক্তার মন খারাপ করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।বেরিয়ে এসে ডাক্তার যা বললো।তা শোনার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না।হাতে লামিয়ার চিকিৎসার ফাইল নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো।
তখন আমি বললাম:
— ডাক্তার লামিয়ার কি হয়েছে।
— ওনার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
রোগটা অনেক আগে থেকেই ওনার
সমস্ত শরীরকে গ্রাস করে
নিয়েছে।
— এর জন্য জটিল একটা
অপরেশন করতে হবে।
— অপরেশনটাতে রোগীর প্রাণ
সংশয়েরও ঝুঁকি রয়েছে।
— যত টাকা লাগে আমি দেব।তবুও প্লিজ
আমার মেয়েটাকে সুস্থ করে তুলন।
— আমরা আমাদের যথা সাধ্য চেষ্টা করবো।
বলেই ডাক্তার সাহেব চলে গেল।আমি সেখান থেকে রুমের ভেতরে ঢুকলাম।ভেতরে ঢুকে দেখলাম লামিয়া ডান দিক ঘুরে শুয়ে রয়েছে।আমাকে দেখেই লামিয়া উঠতে ছিল।আমি লামিয়াকে শুয়ে দিয়ে ওর ডান হাতটা আমার হাতের মাঝে রেখে ওর হাতটা শক্ত করে অকড়ে ধরলাম।ওর হাতটা ধরতেই আমার দূ চোখে পানি চলে আসলো।
— কি হয়েছে তুমি কাঁদছো কেন?
— ডাক্তার সাহেব কি বললো।
— কি হয়েছে আমার।
— তেমন কিছুই না অতিরিক্ত চিন্তার
কারণে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলে।
কোন ক্রমে দুচোখের পানি মুছে কথাগুলো বললাম।এখন যদি লামিয়াকে সত্যি কথাটা বলি তবে ও নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না।কান্নায় ভেঙে পড়বে হয়তো।যার ফলে ওর রোগটা আরো বেড়ে যেতে পারে।কিছু সময় নিরব থাকার পর লামিয়া বললো:
— একজন মৃত্য পথযাত্রীর কাছেও
মিথ্যা কথা বলছো।
— আমি দরজার আড়াল থেকে
সব শুনেছি।
— আমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে।
আমি আর বেশী দিন এই পৃথিবীতে
থাকবো না।
— লামিয়া চুপ আর কখনো এই সব
কথা বলবে না।আমি তোমার কোন কিছুই
হতে দেব না।
কথাটা বলেই আমি লামিয়াকে জরিয়ে ধরলাম।লামিয়াকে জরিয়ে ধরে একাধারে দুচোখের পানি ফেলছি।লামিয়াও আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে।এমন সময় আব্বু আম্মু সহ সকলে রুমে চলে আসলো।তাদেরকে
দেখে লজ্জায় লামিয়া আমাকে ছেড়ে দিল।তখন আব্বু বললো:
— লামিয়া এখন কেমন লাগছে।
— এখন একটু ভাল লাগতেছে।
— জামাই ডাক্তার এই ঔষধগুলো
আনতে বলছিল।এখন গিয়ে একটু
নিয়ে আসবে।
— আচ্ছা দিন।
বাবার হাত থেকে প্রেকসিপশনটা নিয়ে বাহিরে চলে আসলাম।বাহিরে এসে সোজা হাসপাতালের ঔষুধের দোকানের সামনে আসলাম।সেখানে এসে প্রেকসিপশনটা দেখিয়ে বললাম:
— এই ঔষুধগুলো দেনতো।
— সরি স্যার..ওই ঔষুধটা
আমাদের কাছে নেই।
— তাহলে এইগুলো কোথায়
পাবো।
— মোড়ের ওই দোকানটাতে পেয়ে
যাবেন।
— ঠিক আছে।
আমি সেখান থেকে মোড়ের দোকানে এসে ঔষুধগুলো নিয়ে বাজার থেকে কিছু ফল নিয়ে লামিয়ার রুমে ঢুকলাম।রুমের ভিতর ঢুকে দেখি লামিয়া
এখন ঘুমিয়ে আছে।তাই আর ওর ঘুম না ভাঙিয়ে ঔষুধ গুলো রেখে চলে আসতেছি।এমন সময় লামিয়া আমার হাতটা ধরে টান দিল।আমি পিছনে
ফিরে তাকাতেই লামিয়া বললো।
— কোথায় যাচ্ছো।
— কোথাও না তো।
— আমাকে ছেড়ে তুমি কোথাও
যেওনা প্লিজ।
— আচ্ছা যাব না।
আমি লামিয়ার পাশে বসলাম।বসে টেবিলে রাখা একটা ফল কাটলাম।ফলটা কেটে লামিয়াকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম।ফলগুলো খাওয়ানোর পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধগুলো খাইয়ে দিলাম।আমি লামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর নিরবে দুচোখের অশ্রু ফেলেই চলেছি।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতেই পারি নি।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি লামিয়া এখনও ঘুমিয়ে আছে।আর আমি ওর বুকের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম।ঘুম থেকে উঠে একটু দূরে তাকিয়ে দেখি।বাড়ির সকলে আড়াআড়ি করে ঘুমিয়ে রয়েছে।একটু সময় পর সূর্য উকি দিয়ে উঠলো।আমি বাহিরে গিয়ে পাশের রেস্তুুরেন্স থেকে সকলের জন্য খাবার নিয়ে আসলাম।খাবার নিয়ে এসে দেখি সকলে ঘুম থেকে মাত্র উঠেছে।কিন্তুু লামিয়া এখনো ঘুমিয়ে আছে।আমি খাবারের প্যাকেট গুলো রেখে লামিয়ার পাশে গিয়ে বসলাম।ওর পাশে গিয়ে কিছু সময় বসে থাকার পর লামিয়া ঘুম থেকে উঠে পড়লো।বিকালে ডাক্তার সাহেব লামিয়ার রুমে আসলো।লামিয়ার রুমে এসে ডাক্তার বললো:
— রোগী অবস্থা বর্তমানে অনেকটা
পরিবর্তন হয়েছে।
— আপনারা এখন এনাকে বাড়িতে
নিয়ে যেতে পারেন।
— পরে আমরা অপারেশনের তারিখ
আপনাদের জানিয়ে দেব।
— তখন আপনারা রোগীকে নিয়ে
চলে আসবেন কেমন।
— ঠিক আছে….ডাক্তার।
আমরা সকলে লামিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।আল্লাহ লামিয়ার যদি কিছু একটা হয়ে যায় তবে আমি বাঁচবো কিভাবে।আমি তো একটা মুহুত্বও লামিয়াকে ছাড়া চলতে পারবো না।লামিয়া যদি সত্যি মারা যায় তবে……….
.
.
.
.
#______চলবে______
.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে