দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 9

0
1110

…………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
…………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:09………………………….

আনাহীর তৈরি ভ্যাক্সিন ট্রুডোর শরীরে কাজ করতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে ট্রুডোর ভ্যাম্পায়ার শক্তি কমে আসতে লাগলো। অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করলো ট্রুডো। সে ড্রেকইনস এর সামনে থাকার সময় যে মায়ার বলয় তার উপর এসে পড়েছিলো সেটাও মূলত ভ্যাম্পায়ার শক্তিকে চুষে নেওয়ার জন্য। এদিকে ট্রুডোর শরীর থেকে ভ্যাম্পায়ার শক্তি বেরিয়ে এলিনার শরীরে গিয়ে ঢুকতে লাগলো। ট্রুডোর ঘাড়ের ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটা আস্তে আস্তে বিলিন হয়ে যেতে লাগলো আর একটা নতুন ধরনের চিহ্ন ভেসে উঠতে লাগলো। আনাহী মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে আফসোস করতে লাগলো,”আমি এটা কি করলাম। জেফারীর রুপ নেওয়া একটা ড্রেকইনস এর কথায় ট্রুডোর ভ্যাম্পায়ার শক্তিকে নষ্ট করে দিলাম!!”

আনাহীর মাথায় হাত দেখে ব্লেডিকো একটু রাগি কণ্ঠে বললো, “তুই কি করলি এটা? এখন এই চুপাকাবরার হাত থেকে মিউরিস আর অন্যদের বাঁচাবে কে? ভ্যাম্পায়ার শক্তি থাকলে হয়তো তা সম্ভব হতো কিন্তু তুই?ছিঃ, স্বার্থপরের মতো নিজের ভালোবাসাকে বড় মনে করে বন্ধুদের বিপদের মুখে ফেলে দিলি?”
আনাহী আফসোসের স্বরে বললো,”কি করতাম বল, আমি চাইনা ট্রুডো অন্য কারো হোক। আমি বুঝতে পারিনি জেফারী একটা ড্রেকইনস। ?”
ভিরেক্স আনাহীর কষ্ট দেখে নিজেও কেমন গুমড়ে গুমড়ে মুখটা ভার করে আছে। ভিরেক্স তার ভালোবাসার কথা আর বলতে পারলো না আনাহীকে। কারণ এটা নিশ্চিত যে তার ভালোবাসা লুটিয়ে যাবে জঙ্গলের শুকনো পাতার ঘ্রাণ আর মাটির গন্ধের সাথে। তার অপ্রকাশিত ভালোবাসা মনের কোণেই রেখে দিলো ভিরেক্স।

ব্লেডিকো এসব দেখে একটু রেগে গেলো। সবাইকে বুঝিয়ে বললো,”পরিস্থিতি যেমনই হোক আমাদেরকে তো মোকাবিলা করতে হবে। আর তোরা কি করছিস, ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয়ে নিজেদেরকে আরও ঘোর বিপদের মুখে ফেলে দিচ্ছিস। কয়েকটি প্রকৃত ভালোবাসা হতে পারে দৈহিক কিংবা ঐশ্বরিক। সত্য ভালোবাসা এমন কিছু যা শাশ্বত ও অধিক শান্তিপূর্ণ। তোরা ভালোবাসা সেটাকেই বুঝিস যার সুন্দর দেহটাকে পাওয়া যায়। ক্ষণিকের জন্য সুখ আর আনন্দ উপভোগ করা যায়।”
ব্লেডিকোর কথা শুনে আনাহী আর ভিরেক্স এর ভালোবাসার ঘোর একটু কাটলো। বন্ধুদের কথা চিন্তা করতে লাগলো। ভেবে দেখলো ব্লেডিকো একদম সত্যি কথা বলেছে। আনাহী সরি বলার জন্য ট্রুডোর কাছে যেতেই ভিরেক্স বললো,”দাঁড়া। ওকে ধরিস না। ও খানিকক্ষণের মধ্যেই সুস্থ্য হয়ে যাবে। ওর ভ্যাম্পায়ার শক্তি বেরিয়ে যাচ্ছে। ওকে ধরলে তোর উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। যা হয়েছে সেটা ভুলবশত। এখন জেনেশুনে ভুল করারটা বোকামী হবে।”
ভিরেক্স এর কথা শুনে আনাহী ট্রুডোর থেকে খানিক দূরে সরে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমাকে ক্ষমা করে দিস ট্রুডো। আমি জেনেশুনে এটা করিনি। আমার সাথে ষড়যন্ত্র করে এসব করানো হয়েছে। আমাকে মাফ করে দিস।”

আনাহী কাঁদতে শুরু করলে ব্লেডিকো আর ভিরেক্স এসে তার পাশে বসলো। তাকে শান্তনা দিলো। হয়তো এটাই হওয়ার ছিলো। আনাহী কান্না থামিয়ে তাদের দিকে তাকাতেই দেখে ব্লেডিকোর হাতের কয়েক জায়গায় ড্রেকইনস ড্রাগনের আগুনে ঝলসে গেছে। দগদগে ঘা হয়ে গেছে। আর ভিরেক্স এর পীঠে ও বা হাতের কয়েক জায়গায়। ঘায়ে কিছু লাগানোর জন্য আনাহী ঝটপট উঠে দাঁড়ালো। সামনের দিকে তাকাতেই দেখে তাবুগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তার আনা সকল ডাক্তারী সরঞ্জামও পুড়ে গেছে। যে এন্টিসেপ্টিক ও অষুধগুলো এনেছিলো সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি আশেপাশে ছুটাছুটি করে এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে এমন প্রকৃতিক কিছু লতাপাতা খুঁজতে লাগলো। অনেক খুঁজাখুঁজি করার পর একটা গাছের পাতা এনে তা তালুতে ঘষে ভিরেক্স আর ব্লেডিকোর ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলো। এদিকে ট্রুডোর ঘাড়ের ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি পুরোটাই উঠে গিয়ে অন্যরকম একটা চিহ্নে পরিণত হয়েছে। উঠে দাঁড়ালো ট্রুডো। আনাহীকে বললো,”আমাকে সাধারণ মানুষে পরিণত করেছিস ঠিকই কিন্তু আমাকে তুই কোনোদিন পাবি না।”
আনাহী ট্রুডোর কথা শুনে আরও মন খারাপ করে কেঁদে দিলো। ব্লেডিকো বললো,”এটা ভালোবাসা দেওয়া-নেওয়ার সময় নয়।এখন আমাদের বন্ধুদের বাঁচাতে হবে।”
ব্লেডিকোর কথাটা সবাই একাধারে সমর্থন করলো। যা হয়েছে সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে সবাই একজায়গায় হলো এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্য। ট্রুডোর ধারণা অনুযায়ী সে বললো,”এই পাহাড়ের পাদদেশে জেরায়াস উপজাতির বাস। খুব ভয়ঙ্কর আর অদ্ভুত নিয়ম সেখানে। আমার মনে হয় জেফারী আর মেডেকি সেখানেই বন্দি আছে। আর মিউরিস বন্দি হয়ে আছে চুপাকাবরার কাছে।”
ভিরেক্স অবাক হওয়ার স্বরে বললো,”মিউরিস বন্দি আছে মানে? এতো হিংস্র চুপাকাবরার দল এখনো কি তাকে আস্ত রেখেছে? ”
ট্রুডো ভেবে ভেবে উত্তর দিলো,”অবশ্যই৷ চুপাকাবরার দলকে একজন কমান্ড দিচ্ছে। তাই সে যতক্ষণ পর্যন্ত না বলবে চুপাকাবরা মিউরিসকে মারবে না।”
ভিরেক্স বললো,”তুই এতোসব জানলি কিভাবে? আর মিউরিস যদি এখনো জীবিত থেকে থাকে তাহলে তাকে বাঁচাবি কিভাবে? আমি তো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। ”
ট্রুডো সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বললো,”মিউরিস আমরা কেউ বাঁচাতে পারবো না কারণ ড্রেকইনস ড্রাগন আর চুপাকাবরার সাথে লড়াই করার মতো শক্তি আর সাহস আমাদের কারোরই নেই। ভ্যাম্পায়ার শক্তি থাকলে হয়তো চেষ্টা করতাম কিন্তু সেটা তো হলো না। ”
ট্রুডোর কথা শুনে বাকীসব একসাথে বলে উঠলো,”তাহলে কি মিউরিসকে এভাবেই এমনি এমনি মরে যেতে দেখতে হবে? তাকে বাঁচানোর কি কোনো উপায় নেই। ”
ট্রুডো ভেবে কোনোভাবে উত্তর দিলো,”উপায় আছে। তবে ঠিক সময়ে আমি সেই উপায় প্রয়োগ করবো। এখন বাকী রইলো জেফারী আর মেডেকি।”
ব্লেডিকো বললো,”জেফারী তো একটা ড্রেকইনস ড্রাগন। তাকে আবার উদ্ধার করবি কিভাবে?”
ট্রুডো কথাটা শুনার পর তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো,”না, এখানে যে জেফারী ছিলো সে ড্রাগন কিন্তু আসল জেফারী মেডেকির সাথে হয়তো সেই উপজাতির কাছে বন্দি আছে।”
আনাহী বললো,”তাদের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য কি কোনো উপায় জানা আছে? থাকলে আমাদের এখনই বল।”

ট্রুডো আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো তাবু আগুনে পুড়ে গিয়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। চারদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। শুক্লপক্ষ শেষ হতে চলেছে। এক্ষুণি রওনা না দিলে কাউকেই বাঁচানো যাবে না। হয়তো ওদিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। ট্রুডো বললো,”আমাদের হাতে সময় নেই। সবাই চল। যেতে যেতে বলছি।”
অসুস্থ্য শরীরে সবাই রওনা দিলো সেই গোত্রের আস্তানার উদ্দেশ্যে। পেছন পেছন উড়ে যেতে লাগলো সেই কালো কুচকুচে দাঁড়কাক। অন্যদিকে নজর না দিয়ে সবাই দ্রুতপায়ে হাঁটতে লাগলো। অ্যাডোনিস গাছের পাশ দিয়ে যেতেই আনাহী হঠাৎ একটা কালো ছায়া দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। সবাই আনাহীকে খেয়াল না করে তাড়াহুড়োর বশে তাকে ফেলেই চলে গেলো। আনাহীকে বশ করে নিলো সেই কালো ছায়া। কালো ছায়াটা আনাহীকে নিজের মায়াবিদ্যা দ্বারা বশ করে নিজের আসল রুপে ফিরে এলো। হয়ে গেলো শয়তানের পূজারী সেই কাইরো। খিলখিল করে পৈশাচিক হাসি দিলো কাইরো। আনাহীকে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করানোর জন্য তাকে গোত্রের দিকে পাঠিয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ পর। শুক্লপক্ষ প্রায় শেষ। ট্রুডো সবাইকে ঝোপের আড়ালো লুকিয়ে থাকতে বললো। যখন ইঙ্গিত পাবে তখন ঝাপিয়ে পড়বে সেই উপজাতিদের উপর। ট্রুডো অনুষ্ঠানের ভেতরে প্রবেশ করলো। অনেক আয়োজনের মধ্য ট্রুডোকে কেউ খেয়ালও করলো না। হঠাৎ গোত্রপ্রধান ঘোষণা করার জন্য পাহাড়ের সর্বশেষ সিড়ির উপর দাঁড়ালো। এদিকে এলিনাকে সাজিয়ে গুজিয়ে আনা হলো বলি দেওয়ার জন্য। রক্ত সংগ্রহ করার জন্য সামনে কয়েকটি পাত্র রাখা। কয়েকটি গ্লাসও রাখা হয়েছে।
..
..
..
..
..(চলবে………)
..
..
..
.. গল্পটি সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করার আশা করছি। ধন্যবাদ সকলকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে