দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন 7

0
1203

…………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
…………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:07………………………….

ট্রুডো বুঝতে পারলো যে লোকটা তার কাছ থেকে ভ্যাম্পায়ার লকেটটি নেওয়ার জন্যই এই কাজটা করেছে কিন্তু সেখানে যাওয়ার রাস্তা তো জেফারী দেখিয়ে দিয়েছিলো। তাহলে জেফারী কি লোকটার এজেন্ট? নাকি জেফারীকে নিজের মায়াবী শক্তি দ্বারা আয়ত্তে এনেছে? সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে গেলো ট্রুডোর। মাথা ঠান্ডা করে আবার এলিনাকে প্রশ্ন করলো, “লোকটার নাম কি? আর এখন সে কোথায় থাকে?”
ট্রুডোর প্রশ্ন শুনে এলিনা একটু বিভ্রান্ত হলো। হঠাৎ তাকে নিয়ে এতো আগ্রহ কেন। অন্যমনষ্ক হয়ে উত্তর দিলো এলিনা, “তার নাম কাইরো। এখন সে এই জঙ্গলের মাঝে বিলিন হয়ে আছে। আমার যখন প্রয়োজন হয় তখন আমি ডাকি। ”
ট্রুডো বললো, “তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়েই গেলো। কাইরোকে ডেকে আপনি বলি হওয়া থেকে বাঁচুন। সব সমস্যা মিটে গেলো। ”
এলিনা একটু রেগে গেলো। ট্রুডো তার দিকে তাকাতেই দেখে চোখের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শিরাগুলো লাল হয়ে গেছে। এলিনা রাগান্বিত স্বরে বললো,” তিনি আমাকে সাহায্য করেন ঠিকই তবে এসব সাধারণ কোনো ঘটনায় নয়। কোনো জাদুবিদ্যা, মায়াবিদ্যা বা অলৌকিক সব বিষয়ে পাশে থাকেন। কিন্তু এতে আমার মৃত্যু হলেও তিনি সাহায্য করবেন না।”
ট্রুডো আর কিছু বললো না। শুধু কাইরোর উপর একটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মনে মনে তৈরি হতে লাগলো। তার ভ্যাম্পায়ার লকেটটি এমনভাবে হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ট্রুডোর কাছে কাইরো এক জঘন্য আত্মার প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হলো। কারণ তার কাছে এখনো অজানা কাইরো আদৌ মানুষ কি না।

এলিনা সত্যিই ভ্যাম্পায়ার কিনা তা আবার যাচাই করার জন্য ট্রুডো এলিনাকে ভিন্ন আঙ্গিকে প্রশ্ন করলো, “আপনি তো ভ্যাম্পায়ার। তো আপনি নিজেই তো নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।”
এলিনা বললো,”আমি এখনো ভ্যাম্পায়ার হয়নি। ভ্যাম্পায়ার হওয়ার জন্য শুধু প্রাথমিকভাবে আমার উপর মায়া প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কেন জানিনা গতকাল রাত থেকে সম্পূর্ণ ভ্যাম্পায়ারের মতো সবকিছু করতে পারছি।”

ট্রুডো এলিনার কথা শুনে চমকে গেলো। একজন মানুষ কি সত্যিই ভ্যাম্পায়ার হতে পারে? আর যদি তা কোনোভাবে সম্ভবও হয় তাহলে এ কেমন কাজ? অর্ধেক ভ্যাম্পায়ারের শক্তি পেয়ে আবার পূ্র্ণতা লাভ করা যায় এমনি এমনি! এলিনার সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে ও নির্দিষ্ট কোনো তথ্যই পাচ্ছে না ট্রুডো। তার সম্পর্কে যতোই জানছে আরও গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মনে মনে এলিনাকে ভালোবেসে ফেলেছে একথা বলতেও পারছে না ট্রুডো। আবার এলিনাকে বাঁচানোট জন্য পালানোর পর যদি তাকে ভালোবাসার কথা বলা হয় তাহলে সুযোগ নিচ্ছে বলে ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হতে পারে। ট্রুডো বুঝে উঠে পারছে না এখন সে কি করবে।

বিকেলবেলা। চারদিকে শান্ত পরিবেশ। জঙ্গলের ভেতরে আলোছায়ার ক্লান্ত ছুটাছুটি। ট্রুডো তার তাবুর ভেতরে শুয়ে আছে আর কি যেন ভাবছে। ব্লেডিকো আর ভিরেক্স তাদের তাবুতে জঙ্গলের এসব অদ্ভুত কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে তাদের অন্যান্য মিথলজিস্ট বন্ধুদের ফোন করে। আনাহী আর জেফারী তাদের তাবুর ভেতর একসাথে কাজ করছে কিন্তু ট্রুডো যে কাজ করতে বলেছিলো সেটা নয় বরং তার উল্টোটা। জেফারী শুধু আনাহীর কাজগুলো দেখে যাচ্ছে। আনাহী প্রশ্ন করলো জেফারীকে,”তোকে যে কাজটা দিয়েছে সেটা না করে এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?”
জেফারী উত্তর দিতে না পেরে উল্টো আনাহীকে প্রশ্ন করলো,”আমি নাহয় করবো কিন্তু তুই এটা কি করছিস?তোকে কি বলেছে আর তুই কি করছিস?”
জেফারীর কথা শুনে আনাহী পুরো অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। একদম স্থির। চোখদুটো বড় বড় করে জেফারীকে দেখতে লাগলো আনাহী। জেফারী আনাহীর চোখের সামনে হাত নেড়ে বললো,”কি হলো অবাক হলি নাকি? ”
আনাহী বললো,”যে কোনোদিন কাজ পেলে এক সেকেন্ডও দেরি না করে ঝটপট করে ফেলে সে কিনা বলছে পরে করবো!! তো এটা শুনে অবাক না হয়ে কিভাবে থাকি বল। সত্যিই জঙ্গল থেকে তোকে খুঁজে আনার পর থেকেই কেমন জানি হয়ে গেছিস তুই। সারাদিন শুধু আমার দিকেই তাক করে থাকিস। হঠাৎ করে তোকে দেখলে মনে হয় আমাকে পুরোই গিলে খাবি।”
জেফারী একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে যেন আনাহীর কথাটা আড়াল করতে চাইলো। নিজেকে আড়াল করে হঠাৎ করে ট্রুডোর বিষয়ে বললো,”তুই ট্রুডোকে খুব ভালোবাসিস তাই না?”
আনাহীও জেফারীর ফাঁদে পা দিলো। নম্রকণ্ঠে বললো,”বাসি তো কিন্তু বলতে পারছি কই?”
জেফারী বললো,”কিন্তু ট্রুডো তো মানুষই না। তাকে ভালোবাসবি কি করে?”
আনাহী প্রথমে কথাটাকে নিছক মজাচ্ছলে নিলেও একটু ভাবনার পর দেখলো কথাটা সত্যিও হতে পারে। ট্রুডোর আচার-আচরন, খাওয়া-দাওয়া এসব এমনিতেই কেমন অদ্ভুত লাগে। তাছাড়া বাস্তব একটা প্রমাণ হলো ট্রুডোর তাবুতে রক্তের ব্যাগ পাওয়া। কথাটা নিয়ে ভাবতে লাগলো আনাহী। জেফারী আনাহীকে সারপ্রাইজ দেওয়ার মতো কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে ভৌতিক কণ্ঠে বললো,”ট্রুডো একটা ভ্যাম্পায়ার। আর সে তোকে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে সাধারণ মানুষে রুপান্তরিত না হয়।”
আনাহী বুঝে গেলো তার এখন কি করতে হবে। ট্রুডোর প্রেমে অন্ধের মতো হয়ে গেছে আনাহী। জেফারী যা যা বললো আনাহী তাই বিশ্বাস করে নিলো। ট্রুডোকে মানুষে রুপান্তরিত করার জন্য ভ্যাম্পায়ার ডিএনএ পরিবর্তন করে একজন সাধারণ মানুষের ডিএনএ তে পরিণত করতে ভ্যাক্সিন তৈরি করতে লাগলো। ভ্যাক্সিন তৈরিতে সাহায্য করতে লাগলো জেফারী।
এদিকে মাথায় হাজারো চিন্তা একটুও স্বস্তি দিচ্ছে না ট্রুডোর। একটা রহস্যের উদঘাটন করতে গেলে বাকীগুলোর হাল বেহাল হয়ে যাচ্ছে। মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেরে ফেলে আস্তে আস্তে হাটতে শুরু করলো আবার সেই চুপাকাবরার আস্তানার সেই সরু রাস্তাটা ধরে। হয়তো একটা রহস্যের উদঘাটনে আরও দুইটা রহস্যের জট খুলবে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর মাঝপথে থেমে গেলো ট্রুডো। চারদিকে তাকিয়ে দেখলো শুধু ঘন জঙ্গল। কিন্তু সরু রাস্তাটার একপাশ দিয়ে একটা কৃত্রিম রাস্তামতো জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে। ভালোমন্দ না ভেবে সেই বিকল্প রাস্তা ধরে এগোতে লাগলো ট্রুডো। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর চলে গেলো সেই জায়গায় যেখানে জেফারীকে সে খুঁজে পেয়েছিলো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফিরে চুপাকাবরার আস্তানার অভিমুখে যাত্রা শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে উপর নিচে, চারদিকে খুব সতর্কভাবে নজর রাখতে লাগলো ট্রুডো। এবার আর পেছনে পেছনে নয় সরাসরি সামনে দিয়েই সেই লাল চোখের রক্ত নিংড়ানো কালো কুচকুচে দাঁড়কাক উড়ে যেতে লাগলো। ভয় নেই। তবে অবাক হওয়ার জন্য ঘটনাটি যথেষ্ট কেননা যে কাকটা দু-একদিন আগে এমনিতেই পুড়ে ছাই হয়ে মাটির সাথে মিশে গেলো সেই কাক ট্রুডোর সামনে দিব্বি উড়ে বেরাচ্ছে। নজর রাখছে ট্রুডোর উপর। নেহাৎ ভ্যাম্পায়ার লকেট হারানোর পর উড়তে পারছে না ট্রুডো তা নাহলে উড়ে গিয়ে কাকটাকে ধরে রক্ত চুষে খেতো ট্রুডো। তবে এখন আর তেমন রাগ উঠলো না। কাকের দিকে নজর না দিয়ে সামনে এগোতে লাগলো সে।
বেশকিছুক্ষণ পর। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। জঙ্গলের ভেতর থেকে ভারী হাওয়ার সাথে ভেসে আসতে লাগলো চুপাকাবরার ভয়ানক গর্জনের প্রতিধ্বনি। বাদুড়ের কিচিরমিচির শব্দ। সব মিলিয়ে মনে হলো যেন এক অন্য জগতে চলে এসেছে ট্রুডো। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে গেলো ট্রুডো। সে যেখানে চলে এসেছে সেখানের সামনের অনেকখানি জায়গাই সমতল। কোনো ঝোপঝাড় নেই। গাছপালা কিংবা একটা ঝরাপাতাও নেই। লালচে রক্তের মাটি সন্ধ্যার আবছা আলোয় ভয়ানক হয়ে উঠেছে। থেকে থেকে আসছে কোনো এক অজানা প্রাণীর ভয়ানক গর্জনের শব্দ। জায়গাটুকু জুড়ে নীলচে আলো ঝলকাতে শুরু করলো। সন্ধ্যার আলোও রাতের তমাধারের আড়ালো গিয়ে লুকালো। শুধুমাত্র জায়গাটুকু ছাড়া আর চারদিক নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকপ গেছে। আবহাওয়া ভালোই ছিলো কিন্তু হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলো। ট্রুডো বুঝতে পারলো না এসব কি হচ্ছে। এটা কি কোনো স্বাভাবিক নাকি অলৌকিক কোনো বিপর্যয় আসতে চলেছে। ট্রুডোর মুখে হালকা ভয়ের আভাস দেখা দিলো। চারদিকে ছটফট করে তাকাতে লাগলো ট্রুডো। হঠাৎ এক দিকে চোখ আটকে গেলো তার। একটা কালো ছায়া ট্রুডোর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ট্রুডোও মনে মনে ভ্যাম্পায়ার হওয়ার জন্য তৈরি হতে লাগলো। আস্তে আস্তে ছায়াটা এগোচ্ছে আর নীলচে আলোয় স্পষ্ট হয়ে আসছে লোকটার দেহ। ট্রুডো ভাবলো ইনিই হয়তো সেই কাইরো। তাই তার উপর এক আচমকা আক্রমণের জন্য তৈরি হতে লাগলো। কিন্তু ছায়াটা স্পষ্ট হওয়ার পর পুরো থমকে গেলো ট্রুডো। তার রহস্যের সমাধান পেলো নাকি আরও একটা রহস্যের মধ্যে জড়ালো বুঝতে পারলো না সে। ছায়াটার মুখ স্পষ্ট হওয়ার পর ট্রুডো মৃদুস্বরে বলে উঠলো,”জেফারী!!!”
..
..
..
..(চলবে………)
..
..
গল্পটি এখন থেকে নিয়মিত দেওয়া হবে। আর এই গল্পটিকে ১৫০ পর্ব দিয়েই শেষ করা হবে। পুরো গল্পটা পড়তে সি ফার্স্ট করে নিতে পারেন যাতে কোনো পর্ব মিস না হয়। আর আশা করছি গ্রুপে গল্পটি নিয়ে আলোচনামূলক পোস্ট করবেন। ধন্যবাদ সকলকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে